কিন্তু মুসাকে আক্রমণ করতে এল না ওগুলো। ছুটে গেল গুহামুখের দিকে। গিয়ে পড়ল একেবারে হেরিঙের গায়ে। আঁউ করে উঠলেন তিনি। পড়ে গেলেন মাটিতে।
ঢোক গিলল মুসা। ড্রাগনের ভয় করছিল সে, কিন্তু কুকুর আশা। করেনি। মিস্টার হেরিঙকে বাঁচাতে হলে কিছু একটা করা দরকার। নইলে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে কুত্তার দল। আর কিছু না পেয়ে হাতের টর্চটাই উঁচু করে ধরল বাড়ি মারার জন্যে।
উনিশ
কিশোর আর রবিনও পড়েছে বেকায়দায়। আলমারিতে বসে দরজায় কান পেতে শুনছে।
ইস, কত কাজ যে করলাম, তিক্ত কণ্ঠ শোনা গেল একজনের। এসব লাইন-টাইন পরিষ্কার–তারপর কি খোঁড়াটাই না খুঁড়লাম।
খামোক কষ্ট করোনি, নিক, জবাবে বলল আরেকজন। বিফলে যাবে না। পুরস্কার শিগগিরই পাবে।
তা ঠিক। কিন্তু, জো, লোকটা খুব হারামী। বিশ্বাস করা যায়?
হেসে উঠল নিক। ও একলা, আর আমরা দুজন। নৌকাটাও আমাদের। গিয়ে দেখো, ও-ও হয়তো ভাবছে আমাদের বিশ্বাস করা যায় কিনা।
মই বেয়ে লোক নেমে আসার শব্দ শোনা গেল। সরু গলিপথে পদশব্দ।
জীবন্ত হলো ইঞ্জিন। কেঁপে উঠল সাবমেরিন, একবার ধাক্কা দিয়েই মসৃণ গতিতে চলতে শুরু করল লাইনের ওপর দিয়ে।
অন্ধকারে কিশোরের হাঁটুতে হাত রাখল রবিন। ফিসফিসিয়ে বলল, দুই ডাইভার না তো? সাগরে নামতে যাচ্ছে নাকি?
মনে হয় না। ডুবিয়ে রাখার মত ভার তোলা হয়নি সাবমেরিনে। পানিতে নামার আগে ভার বোঝাই করে নিতে হবে।
না নামলেই বাঁচি, মুখ দিয়ে বাতাস ছাড়ল রবিন।
পেছনে চলেছি। সুড়ঙ্গের গভীরে।
বুঝতে পারছি। কিন্তু কেন যাচ্ছে? কি করবে?
জানতে পারলে ভাল হত। তবে যা-ই করুক, ব্যাপারটা গোলমেলে।
হঠাৎ আবার ঝাঁকুনি খেয়ে দাঁড়িয়ে গেল ড্রাগন। পেছনে ধাক্কা খেল কিশোর আর রবিন।
ড্রাইভার ফিরে এল মইয়ের কাছে। চলো, নিক। মাল বোঝাই করার সময় সাবধান থেকো।
ব্যাটা কোনরকম চালাকি করবে না তো? অস্বস্তি যাচ্ছে না জো-র। করলে কিন্তু বিপদে পড়বে সে। ওই ইট দিয়েই মাথায় বাড়ি মেরে বসব।
মেরো। চালাকি করলে আমিও ছাড়ব না। দুই কোটি ডলারের মামলা, সোজা কথা?
অন্ধকারের দিকে শূন্য চোখে তাকিয়ে রয়েছে দুই গোয়েন্দা। দুই কোটি ডলার? ঠিক শুনছে তো?
মই বেয়ে ওঠার শব্দ হলো। হ্যাঁচ উঠল..নামল…দুই বার। দু জনেই বেরিয়ে গেছে।
রবিনের কাঁধে হাত রাখল কিশোর। বেরোও।
সাবধানে দরজা খুলে বেরিয়ে এল ওরা। কয়েক পা এগিয়েই থমকে দাঁড়াল। বাইরে কথা বলে উঠেছে কেউ, খসখসে কণ্ঠ, কথার মাঝে মাঝে কাশছে।
জলদি করো, বলল সে। গার্ডকে ঠাণ্ডা করে দিয়েছি। কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে থাকবে। ও জাগার আগেই সরিয়ে নিতে হবে ইটগুলো।
কনুই দিয়ে কিশোরের গায়ে গুতো দিল রবিন। রোভার মারটিনের গলা চিনতে পেরেছে। তোমার অনুমান ঠিকই ছিল।
ড্রাগনের কাশি রহস্যেরও সমাধান হলো। বাকি রইল আর একটা রহস্য।
ওরা কি করছে এখানে, সেটা তো?
না। বার বার ইটের কথা বলছে। কিসের ইট?
রবিনের পিঠে ঠেলা দিয়ে চলার নির্দেশ দিল কিশোর। ম্লান আলোয় আলোকিত গলি ধরে এসে আস্তে করে বাইরে মাথা বের করল সে।
হাঁ হয়ে গেল দেখে। ড্রাগনের পাশেই কংক্রিটের দেয়াল। মস্ত একটা গর্ত করা হয়েছে ওতে, একজন মানুষ হেঁটে ঢুকে যেতে পারবে ওতে, এতটাই বড়। হাতে পাঁজাকোলা করে কি যেন নিয়ে গর্তের মুখে দেখা দিল একজন লোক, ভারের চোটে পেছনে বাঁকা হয়ে গেছে।
উফ, ভারিও! বলল লোকটা। এক টন হবে।
তুমি কি ভেবেছিলে, শোলার মত পাতলা? বললেন মারটিন। এতই যদি সহজ হবে, তোমাদের ভাড়া করতে যাব কেন?
আমি সে কথা বলছি না। বলছি, বেজায় ভারি।
তা ঠিক। একেকটা ইট সত্তর পাউণ্ড। বাইরে সারি দিয়ে রাখো। পরে ঢোকাবে।
বোঝা নামিয়ে রেখে আবার গর্তের দিকে চলল লোকটা। সে ঢোকার আগেই বেরোল তার সঙ্গী। পাঁজাকোলা করে ইট নিয়ে এসেছে। হাঁপাচ্ছে। ওই অবস্থায়ই হেসে বলল, সাংঘাতিক ভারি, হে, জো।
মারটিনের নির্দেশ মত সে-ও বোঝা নামাল ড্রাগনের পাশে। আরও আনতে ফিরে চলল।
নিঃশব্দে হ্যাঁচ নামিয়ে নেমে এল কিশোর।
একেকটা ইট সত্তর পাউণ্ড, রবিনকে শুনিয়ে শুনিয়ে হিসেব শুরু করল সে। নিক আর জো বলল, দুই কোটি ডলার। কিসের ইট বোঝাই যাচ্ছে। স্বর্ণ।
স্বর্ণ! জোর করেও কণ্ঠস্বর খাদে রাখতে পারল না রবিন। আনছে কোত্থেকে?
সরকারী হঁট, বর্তমানে সবচেয়ে বড় স্ট্যাণ্ডার্ড, সত্তর পাউণ্ড। ব্যাটারা ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক লুট করছে।
নরম সুরে শিস দিয়ে উঠল রবিন।
চুপ! তার মুখ চেপে ধরল কিশোর। শুনে ফেলবে।
কিশোরের হাত সরিয়ে ফিসফিস করে বলল রবিন, চলো, পালাই। দেখলে আমাদের ছাড়বে না ডাকাতেরা, খুন করে ফেলবে।
কিন্তু পালাই কি করে? প্রশ্নটা নিজেকেই করল কিশোর। বেরোতে গেলেই মারটিনের চোখে পড়ব।
সামনের দিকে রওনা হলো কিশোর। রবিন ভাবল, নতুন কোন গুপ্তস্থানের সন্ধান করছে গোয়েন্দাপ্রধান, যেখানে নিরাপদে লুকিয়ে থাকা যায়।
হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল কিশোর। গায়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল। রবিন। কথা বলে উঠল, সরি…
তাড়াতাড়ি তার মুখ চেপে ধরল কিশোর, ফিসফিস করে বলল, তুমি দেখছি ধরা পড়িয়েই ছাড়বে! উত্তেজনায় চকচক করছে তার চোখ। ইগনিশান কী রেখে গেছে!
মানে-তুমি, মানে ড্রাইভ করবে? চালাবে এটাকে? গাড়ি তো চালাতে জানে না। তাছাড়া জানালাও নেই। তাকাবে কোনখান দিয়ে?