এবার বুঝলে তো? কুকুর-হারানো রহস্যের সমাধান হলো।
ঘটনাটা কি? দেখে মনে হচ্ছে নড়াচড়ার ইচ্ছে নেই বিশেষ। কুকুরের এত ঘুম?
ইচ্ছে করে ঘুমাচ্ছে না। ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে।
ওষুধ? কেন?
জেগে থাকলে হয়তো কারও অসুবিধে হয়। কুকুরগুলোকে শান্তও রাখতে চায় সেই লোক, আবার ক্ষতি হোক এটাও চায় না। সেজন্যেই মারেনি, ধরে এনে আটকে রেখেছে।
আবার গুঙিয়ে উঠল একটা কুকুর, ঘুমঘুম চোখে তাকাল। খানিক আগেও এটাই গুঙিয়েছে, স্বর শুনেই বোঝা যায়।
আইরিশ সেটার! চেঁচিয়ে উঠল রবিন। মিস্টার জোনসেরটা না তো?
কুকুরটার দিকে চেয়ে ডাকল কিশোর, পাইরেট, আয়।
লালচে রোমশ কুকুরটা শরীর টানটান করল, হাই তুলল, আড়মোড়া ভাঙল, তারপর উঠে দাঁড়িয়ে শরীর ঝাড়া দিল আলস্য তাড়ানোর ভঙ্গিতে। লটপট করে উঠল লম্বা লম্বা কান।
আয়, পাইরেট, আবার ডাকল কিশোর। আয়। হাত বাড়িয়ে দিল।
হাত শুঁকল কুকুরটা। লেজ নাড়তে শুরু করল। লাফিয়ে নেমে এল আলমারির তাক থেকে। টলছে মাতালের মত। সামলে নিতে সময় নিল। কিশোরের পায়ে গা ঘষছে, কুঁই-কুঁই আওয়াজ বেরোচ্ছে নাক দিয়ে।
দারুণ কুকুর, মাথা চাপড়ে দিতে দিতে বলল কিশোর। খুব। ভাল।
মিস্টার জোনসও তাই বলেছেন অবশ্য। হাত বাড়াল রবিন। কুকুরটা চলে এল তার কাছে, পায়ে গা ঘষতে লাগল।
আরে, যে ডাকে তার কাছেই তো যায়।
বাড়ি যাবি? কুকুরটাকে বলল কিশোর।
কি বুঝল পাইরেট কে জানে, ঘেউ ঘেউ শুরু করল। তার ডাকে আস্তে আস্তে চোখ মেলল অন্য কুকুরগুলোও। শুরু হলো নানারকম বিচিত্র মিশ্র শব্দ। কেউ কেউ নেমে এসে কুকুরের কায়দায় স্বাগত জানাল দুই গোয়েন্দাকে।
ছয়টা, গুনল রবিন। হারানো সবগুলোই এক জায়গায়।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। প্রতিটি কুকুরের গলার কলারে আটকে দিল এক টুকরো লেখা কাগজ।
কি? জিজ্ঞেস করল রবিন।
মেসেজ। কুকুরের মালিকেরা জানবে, কে, কিভাবে বের করেছে। এগুলোকে। বিজ্ঞাপন হবে আমাদের সংস্থার।
গোঁ গোঁ করে উঠল পাইরেট।
ঝুঁকে তার গলা চাপড়ে আদর করে বলল কিশোর, ও-কে ও-কে, তুইই আগে যাবি।
কোলে করে কুকুরটাকে তুলে নিয়ে এল হ্যাঁচের বাইরে। যা, দৌড় দে, সোজা বাড়ি।
আনন্দে আরেকবার কো কো করল পাইরেট, লাফ দিয়ে মাটিতে নেমে দৌড় দিল দেয়ালের ফাঁকের দিকে।
নিচ থেকে এক এক করে কুকুরগুলোকে তুলে দিল রবিন, ওপর থেকে ধরল কিশোর। ভোলা বাতাসে ওষুধের ক্রিয়া পুরোপুরি কেটে গেছে কুকুরগুলোর, তরতাজা হয়ে উঠেছে। আইরিশ সেটারটার পেছনে ছুটল সব কটা।
কাপড়ে হাত মুছতে মুছতে বলল রবিন, মুসা শুনলে খুব অবাক হবে। তো, আমরা আর এখানে থেকে কি করব? কাজ তো শেষ। চলো, যাই।
এখন যাওয়া যাবে না।
কেন?
সুড়ঙ্গের ভেতরে কিছু নড়ল দেখলাম। আসছে কেউ।
হায় হায়! গেলাম তো আটকে। লুকাই কোথায়?
সাবমেরিনের ভেতরে এসে ঢুকল আবার দু-জনে। রবিনকে নিয়ে আলমারিটার কাছে চলে এল কিশোর, যেটাতে কুকুর রাখা হয়েছিল। টান দিয়ে খুলল আলমারির দরজা।
আঠারো
ঠাণ্ডা বেশি নয়, তবু ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে মুসার হাত। তালুতে তালু ঘষে গরম রাখার চেষ্টা করছে। জায়গামত বসিয়ে ফেলেছে প্রোজেকটর। সুইচ টিপলেই ছবি শুরু হবে এখন।
শেষবারের মত আরেকবার সবকিছু চেক করে নিল সে, দেখল ঠিকঠাক আছে কিনা। তারপর দেয়ালে হেলান দিয়ে পা লম্বা করে বসে। রইল চুপচাপ। সঙ্কেত শুনলেই চালু করে দেবে মেশিন।
শব্দ শুনল, তবে সঙ্কেত নয়। তাছাড়া সামনের দিক থেকেও নয়, পেছন থেকে আসছে খসখস শব্দটা।
স্থির হয়ে গেল সে। ভুল শোনেনি তো? না, আবার শোনা গেল।
ছোট্ট গুহার বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে কেউ। প্রবেশ মুখের তক্তার নিচের বালি সরাচ্ছে।
নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরল মুসা। কি করবে? উঠে দৌড়ে বেরিয়ে যাবে বড় গুহায়? কিশোর আর রবিনের কাছে? কিন্তু তাহলে তো সব পণ্ড হবে। জায়গা ছেড়ে নড়তে মানা করে দিয়ে গেছে কিশোর। তার কথা অমান্য করলে আবার না আরও বড় বিপদে পড়ে। এসব ব্যাপারে অতীত অভিজ্ঞতা আছে মুসার। কিশোর পাশার নির্দেশ না মেনে অনেক বড় বিপদে পড়েছে।
সরে যাচ্ছে তক্তা। দ্রুত চিন্তা চলছে তার মাথায়। যা করার জলদি করতে হবে। কিছু একটা অস্ত্রের জন্যে মেঝে হাতড়াল অহেতুক। এই সময় খেয়াল হলো, টর্চটা জ্বলছে।
তাড়াতাড়ি নিভাল ওটা। গাঢ় অন্ধকার গ্রাস করে নিল তাকে। কিন্তু এই অন্ধকার কতক্ষণ আচ্ছাদন দেবে? লোকটার হাতেও তো আলো থাকতে পারে।
বেশি ভাবার সময় পেল না মুসা। দেয়াল ঘেঁষে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল।
সরে গেল তক্তা। আবছা আলোর পটভূমিকায় মূর্তিটাকে দেখতে পেল সে। এত মোটা মানুষ, সরু ফাঁক দিয়ে সামনাসামনি ঢুকতে পারবেন না, পাশ ফিরে আসতে হবে। আকার দেখেই তাকে চিনতে পারল। বদমেজাজী হেরিঙ! হাতে শটগান।
গুহার দেয়াল নিচু। মাথা ঠেকে যায়। নুয়ে নুয়ে এগোতে হলো হেরিঙকে। দুই পা এগিয়েই থমকে দাঁড়ালেন। কান পেতে কিছু শুনছেন মনে হলো।
শব্দ মুসাও শুনতে পাচ্ছে। কুকুরের ঘেউ ঘেউ। শিকারী কুত্তা ছেড়ে দেয়া হয়েছে? প্রমাদ গণল সে। মিশে যেতে চাইল দেয়ালের সঙ্গে। কিন্তু খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হলো না তার। চোখ নাহয় এড়াতে পারল, কিন্তু গন্ধ?
তীব্র গতিতে ছুটে এল ওগুলো। পাথরের দরজার পাল্লা ফাঁক করে রেখে গেছে কিশোর। সেদিক দিয়ে স্রোতের পানির তোড়ের মত ঢুকল একটার পর একটা।