অবাক হলো দুই সহকারী।
মনে হবে? বুঝতে পারল না মুসা।
হ্যাঁ, হবে।
হবে মানে… হঠাৎ বুঝে ফেলল মুসা, ড্রাগনের গুহায় ছবি দেখাতে যাচ্ছি নাকি আমরা?
হ্যাঁ। প্রোজেকটরটা ভাল, আমাদের কাজের উপযুক্ত। বিল্ট-ইন, স্পীকার রয়েছে, শব্দ সৃষ্টি করতে কোন অসুবিধে হবে না। চলেও ব্যাটারিতে। গুহায় গিয়ে চমৎকার চালাতে পারব।
বাবার কাজের জিনিস তো, পোর্টেবল, এখানে-ওখানে নিয়ে যায়। দেখে-শুনেই কিনেছে।
হয়েছে, কথা থামিয়ে ছবিটা দেখি, এসো, বলে উঠল রবিন। চালাও।
আবার চলল প্রোজেকটর। তাজ্জব হয়ে পিঁপড়েদের কাণ্ডকারখানা দেখল রবিন আর কিশোর।
শেষ হলো রীলটা। প্রোজেকটর বন্ধ করে মুসা জিজ্ঞেস করল, আরেকটা চালাব?
অন্ধকারে হেসে বলল কিশোর, না, এটাতেই চলবে।
আলো জ্বালল রবিন।
ফিল্ম গুটিয়ে নিতে নিতে মুসা বলল, কি করতে চাইছ তুমি, বলো তো? পিঁপড়ের ছবি দেখিয়ে গুহার ভূত তাড়াবে?
ধরো, অনেকটা ওই রকমই। তবে রসিকতার জবাব রসিকতা দিয়ে দিলে কি ঘটে আমার দেখার খুব ইচ্ছে।
রসিকতা? রবিন জানতে চাইল, আমাদের চেনা কাউকে সন্দেহ করছ?
মিস্টার হেরিঙ? মুসার প্রশ্ন।
না, শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর। ড্রাগনটা তিনি বানাননি। শটগান হাতে যে হুমকি দিচ্ছিলেন, সেটাও রসিকতা মনে হয়নি।
এত শিওর হচ্ছ কি করে? মুসা চোখ নাচাল।
কথা বলার সময় প্রচুর চেঁচামেচি করেছেন মিস্টার হেরিঙ, কিন্তু কাশেননি। ঠাণ্ডা লাগেনি তার। কিন্তু মারটিনের লেগেছিল। কথা বলার সময় কাশছিলেন।
ড্রাগনটা তাঁরই কীর্তি বলতে চাইছ?
বানালে অসুবিধে কি? হাত নাড়ল কিশোর। এসব কাজে তো তিনি ওস্তাদ।
কিন্তু স্বার্থটা কি? নিজের বাড়িতে নানা রকম খেলনা বানিয়েছেন, সেটা আলাদা কথা। অনুমতি না নিয়ে কেউ ঢুকে পড়লে তাকে তাড়াতে কাজে লাগে। গুহায় ড্রাগন ঢোকাতে যাবেন কেন? গুহাটা তার সম্পত্তি নয়। ওখান থেকে তোক তাড়ানোরও কোন প্রয়োজন নেই।
আছে কিনা সেটাই দেখতে যাব আজ। তবে মিস্টার জোনসের কাজও হতে পারে। ড্রাগন বানানোর অভিজ্ঞতা তারও আছে। হাতঘড়ির দিকে তাকাল কিশোর। তৈরি হওয়া দরকার।
এক মিনিট, হাত তুলল মুসা। তোমার ধারণা, জোনস কিংবা মারটিন দু-জনের একজন বানিয়েছেন ড্রাগনটা। বেশ। কিন্তু সেদিন যে দু-জন ডুবুরীকে গুহায় ঢুকতে দেখলাম, তারা কারা?
হ্যাঁ, তারা কারা? রবিনেরও জিজ্ঞাসা।
প্রোজেকটর বাক্সে ভরে ফেলেছে মুসা। তালা আটকে দিয়ে মুখ তুলে তাকাল কিশোরের দিকে। বলল, কারা?
সেটাও আজ রাতেই জানতে পারব। হেসে বলল কিশোর, বেশ ভাল একখান সিনেমা দেখতে পাবে ওরা।
আর ড্রাগনটাও যদি আসে?
তাহলে তো আরও ভাল, আরেকটা পরীক্ষা হয়ে যাবে, রহস্যময় কণ্ঠে বলল কিশোর। ভয় দেখিয়ে ইঁদুর যে হাতি তাড়িয়েছে সেই গল্পটা শোনোনি? ইঁদুর যদি হাতি তাড়াতে পারে, পিঁপড়ে কেন ড্রাগন তাড়াতে পারবে না?
সৈকতের পাশে পাড়ের ওপরে অন্ধকার। শান্ত পথের মোড়ে গাড়ি রাখল হ্যাঁনসন।
সবার আগে নামল রবিন। নির্জন পথের এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখল কেউ আছে কিনা। এত দূরে রাখতে বললে কেন? নিচু গলায় জিজ্ঞেস করল সে। সিঁড়ি তো অনেক দূরে।
ভারি বোঝা নিয়ে কোনমতে বেরোল মুসা, প্রোজেকটরের ভারে নুয়ে পড়েছে। আল্লারে, কি ভার, হাত না লম্বা হয়ে যায়!
ভালই তো, হেসে বলল রবিন। গরিলা হয়ে যাবে। তোমাকে দেখলে ভয়ে পালাবে তখন ড্রাগন।
জবাবে গোঁ গোঁ করে কি বলল গোয়েন্দা-সহকারী, স্পষ্ট হলো না। বোঝাটা কাঁধে তুলে নিল।
দেখি, হাত বাড়াল কিশোর, আমাকেও কিছু দাও।
মাথা নাড়ল মুসা। নো, থ্যাঙ্কস, আমিই পারব। কষ্টটা যদি কাজে লাগে তাহলেই খুশি।
তোমার খুশি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, হাসল কিশোর।
হ্যানসনকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে নির্জন পথ ধরে দ্রুত হেঁটে চলল তিনজনে। মেঘে ঢাকা পড়েছে চাঁদ। সৈকতে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের গর্জন ছাড়া আর কোন শব্দ নেই।
সিঁড়ি থেকে বিশ কদম দূরে থাকতে কানে এল পদশব্দ।
জলদি লুকাও! বলতে বলতেই ভারি বোঝা নিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ল মুসা। হামাগুড়ি দিয়ে এগোল ছোট্ট একটা হালকা ঝোঁপের দিকে।
তাকে অনুসরণ করল অন্য দুই গোয়েন্দা।
কাছে আসছে পায়ের আওয়াজ। আরও কাছে এসে কমে গেল গতি, কেমন যেন অনিশ্চিত। কিছু সন্দেহ করেছে? গায়ে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে এল ছেলেরা।
অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এল আবছা ছায়াটা…কাছে, আরও কাছে…দুই কদম পাশে সরলেই এসে পড়বে একেবারে গায়ের ওপর
দুরুদুরু করছে গোয়েন্দাদের বুক। মোটা ওই মানুষটাকে আগেও দেখেছে। চোখ চলে গেল তার হাতের দিকে। আছে সেই ভয়ঙ্কর চেহারার ডাবল-ব্যারেল শটগানটা। মিস্টার জন হেরিঙ; যিনি কুকুর দেখতে পারেন না, বাচ্চাদের ভালবাসেন না, পছন্দ করেন না দুনিয়ার কোন কিছুই।
মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছেন তিনি, বোঝা যায় কিছু সন্দেহ করেছেন। অবাক কাণ্ড! আপনমনেই বিড়বিড় করলেন। নড়তে যে দেখেছি তাতে কোন ভুল নেই…
আরেকবার মাথা নেড়ে, ভাবনা ঝেড়ে ফেলে হাঁটতে শুরু করলেন।
পায়ের শব্দ দূরে মিলিয়ে যাওয়ার পরও খানিকক্ষণ নড়ল না ওরা।
অবশেষে মাথা তুলল রবিন। হউফ! করে মুখ দিয়ে বাতাস ছেড়ে বলল, বাচা গেল! আমি তো ভাবলাম, দেখেই ফেলেছেন।
আমিও, মুসা বলল। কিন্তু বন্দুক নিয়ে কি করতে বেরিয়েছেন? খুঁজছেন কাউকে?