প্লাইউড? ভুরু কাছাকাছি হলো মুসার। তা নাহয় হলো। কিন্তু তাতেই কি প্রমাণ হয় সব কিছু নকল?
না হলে আরও প্রমাণ আছে। তারপরের গুহাটার কথা ধরো। বড় গুহাটা, রবিন যেটা আবিষ্কার করেছে, সেটার দরজাটা কি প্রাকৃতিক? মোটেও না, মানুষের তৈরি। বড় গুহাটার শেষ মাথায় কি দেখলাম? দেয়াল। অন্য পাশে যাওয়ার পথ নেই। অথচ আমরা আশা করেছিলাম। ওই গুহা ধরে এগিয়ে গেলে একটা সুড়ঙ্গ-টুড়ঙ্গ পাব। কি মনে হয়?
একমত হলো দুই সহকারী।
ছুরি দিয়ে খোঁচাচ্ছিলে, মনে পড়ছে, মুসা বলল। পাথরে ঘষে নষ্ট করেছিলে ছুরিটা?
পকেট থেকে ছোট ছুরিটা বের করল কিশোর। নিজেই দেখো।
কি লেগে আছে ফলায়?
শুঁকে দেখো।
আরি! রঙ! চেঁচিয়ে উঠল গোয়েন্দা-সহকারী।
রবিনও শুঁকে একমত হলো।
ভাঁজ করে আবার ছুরিটা পকেটে রেখে দিল কিশোর। পুরানো গুহার দেয়ালে বাড়িঘরের মত রঙ করা হয়, শুনেছ কখনও? ছুরির আঁচড়ের দাগ বসেছে দেয়ালে। আমার অনুমান, ওটা পাথরের দেয়াল নয়, প্ল্যাসটারবোর্ড। তার ওপর ধূসর রঙ করা হয়েছে। এবং তার ওপর বালি আর পাথরের কণা এমনভাবে লাগিয়েছে, দেখে মনে হয় আসল দেয়াল।
মানে? রবিন বলল। অন্য পাশের কোন মূল্যবান আবিষ্কার লুকিয়ে রাখতে চাইছে কেউ?
হতে পারে।
ঠিক, আঙুল তুলল মুসা। পুরানো সুড়ঙ্গটা হয়তো কেউ আবিষ্কার করে ফেলেছে। জানাজানি হলে লোকে ভিড় করে নষ্ট করে ফেলবে, তাই লুকিয়ে রাখতে চাইছে।
নাকি আগেব চোর-ডাকাতেরাই কোন কারণে ওই দেয়াল লাগিয়েছিল? রবিনের প্রশ্ন।
না। মাথা নাড়ল কিশোর। প্ল্যাসটারবোর্ড ছিল না তখন।
চুপ হয়ে গেল রবিন।
আরেকটা ব্যাপার, কিশোর বলল, আমরা ঢুকেছি চিচিং ফাঁক দিয়ে। কিন্তু ড্রাগনটা?
ঢোক গিলল মুসা। নিশ্চয় পাহাড়ের আরেকটা চিচিং ফাঁক দিয়ে ঢুকেছে। আমাদের চোখে পড়েনি ওটা।
তাহলে ওই দরজা কে বানাল? কি সিসটেমে খোলে ওটা?
নিশ্চয় ড্রাগনটা জানে, মুখ ফসকে বলে ফেলল রবিন।
অনেকটা সে রকমই। বলেছি তো, সব নকল। ওই ড্রাগনটাও। গিয়ে দেখোগে, মানুষে চালায় ওটা।
চোখ মিটমিট করল মুসা। রবিনের দিকে তাকিয়ে নিল একবার চট করে। আবার কিশোরের দিকে ফিরল, কি বলছ?
যা বলা উচিত, তাই।
তোমার ধারণা, উত্তেজনায় লাল হয়ে গেছে রবিনের মুখ, আমাদের কেশো ড্রাগনটা একটা রোবট?
এখনও শিওর না। হতে পারে। আর তা হয়ে থাকলে, পাহাড়ের যে দরজা দিয়ে ওটা ঢোকে, সেটা মানুষের তৈরি। সিনেমায় যেমন করে বানানো হয়।
রোলস রয়েসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল মুসা। আজ রাতে দরজাটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করব। কিশোরের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা, ড্রাগনটা আসল নয় কিভাবে বুঝলে?
সীটে হেলান দিল কিশোর, কোলের ওপর রাখল দুই হাত। ড্রাগনটা যখন সামনে এল, কি দেখলাম, কি শুনলাম, মনে করার চেষ্টা করো।
চুপ করে ভাবতে লাগল রবিন আর মুসা।
গুঞ্জন, অবশেষে বলল রবিন। আর গোঙানি। মাঝে মাঝে কাশি।
উজ্জ্বল আলো দেখেছি, মুসা যোগ করল। সার্চ লাইটের মত।
হ্যাঁ। আর চলে কিভাবে খেয়াল করেছ?
খুব দ্রুত।
রবিনের দিকে ফিরল কিশোর, কিভাবে চলে?
হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছল রবিন। মুসা ঠিকই বলেছে, খুব দ্রুত ছোটে। যেন উড়ে যায়।
সিনেমায় যে ড্রাগনটা দেখলাম, ওটা কি ওভাবে চলে?
মাথা নাড়ল রবিন। না, ওটা হাঁটে। আমাদেরটা ওড়ে।
দেখে ওরকমই লাগে বটে, আসলে ওড়ে না। ওটার চেহারাটাই শুধু ড্রাগনের মত, কাজেকর্মে অন্যরকম। মানুষকে ভয় দেখানোর জন্যে কিংবা দূরে সরিয়ে রাখার জন্যেই ওরকম চেহারা তৈরি করা হয়েছে। আর ওড়ে মনে হয় কেন বলো তো? চাকায় ভর করে চলে বলে। সৈকতের বালিতে চাকার দাগ দেখেছিলাম মনে আছে?
হাঁ করে কিশোরের দিকে তাকিয়ে রইল দুই সহকারী।
ড্রাগনের আবার চাকা! বিড়বিড় করল মুসা।
তার সঙ্গে যোগ করল রবিন, আরও একটা ব্যাপার, মিস্টার জোনসের সিনেমার ড্রাগন গর্জন করে, আর আমাদেরটা গোঙায়, কাশে।
হ্যাঁ, মুচকি হাসল কিশোর। মানুষের তৈরি বলেই এই কাণ্ড করে। কাশিটা ড্রাগনের না হয়ে মানুষেরও হতে পারে।
মানে? বুঝতে পারছে না মুসা।
হাসি বিস্তৃত হলো কিশোরের। ওই ড্রাগনের ভেতরে বসা কোন একজন মানুষের হয়তো ঠাণ্ডা লেগেছে, খুকুর খুকুর সে-ই করে…
বেরসিকের মত বাধা দিল হ্যাঁনসনের কণ্ঠ, ইয়ার্ডে পৌঁছে গেছি।
নামতে গেল কিশোর।
জিজ্ঞেস করল শোফার, আমি থাকব?
হ্যাঁ, থাকুন। কয়েকটা জিনিস নিতে হবে আমাদের। আজ রাতে আবার সী-সাইডে যাব।
ষোলো
ছবিটার কিছু অংশ আগেই দেখে নেয়ার ইচ্ছে কিশোরের।
প্রোজেকটর চালাচ্ছে মুসা। ফিতে গুটিয়ে নিয়ে সুইচ টিপল সে। পর্দায় ফুটল ছবি। বাড়িয়ে বলেনি ও। রবিন আর কিশোরও দেখল; ঠিকই, বিশাল সব পিঁপড়ে ভয়ানক ভঙ্গিতে চলাফেরা করছে পর্দায়।
মিনিটখানেক পরই থেমে গেল প্রোজেকটর। অন্ধকারে মুসার গলা শোনা গেল, রবিন, লাইটটা জ্বালবে, প্লীজ?
কি হয়েছে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
ভুল ফিল্ম লাগিয়েছি, জবাব দিল মুসা। এটা ছয় নম্বর। অনেক পরের সিরিয়াল।
সিনেমা দেখতে বসিনি, মুসা, বাধা দিয়ে বলল কিশোর।
এটাতেই চলবে। চালাও।
প্রথমটা দেখো। ওটাতেও অনেক ভয়ঙ্কর ব্যাপার-স্যাপার আছে। পিঁপড়েরা কি করে শহর আক্রমণ করে…
দরকার নেই। যেটা দেখছি এটাই ভাল। মনে হবে গুহা আক্রমণ করতে আসছে পিঁপড়েরা।