ভালমত লক্ষ করতে বলেছিলে, রবিন বলল, করেছি। মুসা ঠিকই বলেছে, গতকাল যেটাকে গুহায় দেখেছি তার সঙ্গে কোন পার্থক্য নেই।
কিছুই না? কিশোরের প্রশ্ন।
না, কেবল ওই গর্জনটা বাদে, মুসা জবাব দিল। ছবিরটা বেশি গর্জাচ্ছিল, আর গুহারটা গোঙাচ্ছিল, আর মাঝে মাঝে ছোট ছোট কাশি।
একদম ঠিক। তুড়ি বাজাল কিশোর।
গুহার ওটার ঠাণ্ডা লেগেছে বোধহয়।
ড্রাগনের ঠাণ্ডা লাগে কি করে? ব্যাঙের সর্দির মত হয়ে গেল না। ব্যাপারটা? ড্রাগনটা থাকে পানিতে আর ভেজা গুহায়। ঠাণ্ডা লাগে কি করে?
জবাব দিতে পারল না দুই সহকারী গোয়েন্দা।
আশা করি, আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভেদ করে ফেলব কাশির রহস্য, বলল কিশোর। আর সেটা পারলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে অনেক কিছু।
যদি ততক্ষণ জীবিত থাকি, জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল মুসা। ড্রাগনের পেটে চলে যাই।
বলা যায় না, রহস্যময় কণ্ঠে বলল কিশোর, শেষ পর্যন্ত ড্রাগনের পেটেও ঢুকতে হতে পারে আমাদের!
পনেরো
ড্রাগনের পেটে! আঁতকে উঠল মুসা। কি বলতে চাও তুমি, কিশোর? কিছু একটা ভাবছ, বুঝতে পারছি। এরকম অন্ধকারের মধ্যে না রেখে খুলে বলো না। হাজার হোক, আমরা তোমার সহকারী। তুমি যেমন মরতে যাচ্ছ, আমরাও যাচ্ছি। জানার অধিকার আমাদের আছে। কি বলো, রবিন?
হাসল গবেষক। তা তো নিশ্চয়। বলল, কিশোর। আগে থেকে জানা থাকলে হুঁশিয়ার থাকতে পারব। আমরা মরে গেলে এত ভাল সহকারী আর কোথায় পাবে?
রবিনের শেষ কথাটায় কিশোরও হাসল। আসলে আমি নিজেই শিওর না। ঝুঁকি একটা নিতে যাচ্ছি আর কি।
জোরে মাথা নাড়ল মুসা। না জেনে কোন ঝুঁকি নিতে রাজি না আমি। বলতে ভুলে গেছি, গতরাতে একটা ছবি দেখেছি বাসায়। একটা সাইন্স ফিকশন। বোকার মত না বুঝে ঝুঁকি নিয়েছেন এক বিজ্ঞানী, প্রাণটা খোয়াতে হয়েছে তাঁকে।
ভ্রুকুটি করল কিশোর। কি ছবি?
দাঁত বের করে হাসল মুসা। পোকামাকড়।
পোকামাকড়?
পিঁপড়ে আর সামান্য বিষাক্ত পোকা দুনিয়া দখল করতে চায়। যে ছবিটা এইমাত্র দেখে এলাম তার চেয়ে কম ভয়ঙ্কর নয়। একশো ফুট লম্বা একেকটা পিঁপড়ে, পঞ্চাশ ফুট উঁচু। বড় বিল্ডিঙের সমান।
করে কিভাবে এটা? আনমনে বলল কিশোর।
আসল পিঁপড়ে দিয়ে।
আসল পিপঁড়ে? রবিন বিশ্বাস করতে পারছে না। কিভাবে, জানো?
বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, মুসা বলল।
বলেছেন? জানতে চাইল কিশোর।
বলেছে। আতস কাঁচের ভেতর দিয়ে প্রথমে পিঁপড়ের ছবি তোলে। তারপর বড় করে ছবিকে, সুপার ইমপোজ করে, সেগুলোকে। আবার বিল্ডিঙের ছবির পটভূমিকায় রেখে ছবি তোলে। পর্দায় দেখে মনে হয় জ্যান্ত পিঁপড়েগুলো একেকটা বিল্ডিঙের সমান। যে ছবিটা দেখেছি, তার গল্পটা হলো মহাকাশের কোন এক গ্রহ থেকে এসে হাজির হয়েছে একদল পোকামাকড়…
মাঝপথে থেমে গেল মুসা।
শুনছে না কিশোর। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটা শুরু হয়েছে, তারমানে গভীর চিন্তায় ডুবে গেছে। হঠাৎ যেন ডুব দিয়ে উঠে এল ভাবনার জগৎ থেকে। ছবিটা দেখেছ?
বললামই তো, হাত নাড়ল মুসা।
ফিল্ম, না ক্যাসেট?
ফিল্ম। দেখতে চাও? চলো আজ রাতে।
মাথা নাড়ল কিশোর। রাতের আগেই দরকার হতে পারে ওটা। ঘড়ির দিকে তাকাল। তোমাদের প্রোজেকটরে দেখেছ, না?
কিশোরের কথা বুঝতে পারছে না মুসা। তো আর কারটা দিয়ে দেখব?
আনমনে বিড়বিড় করল কিশোর, জিনিসটা হয়তো আমাদের প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করবে। হয়তো রহস্যের সমাধান করতে পারব। মুসা, আজ রাতের জন্যে প্রোজেকটরটা আনতে পারবে?
চোখ মিটমিট করল মুসা। কেন, আমাদের বাড়ি গিয়ে দেখতে অসুবিধে কি?
হ্যাঁ। ছবিটা কাউকে দেখাতে চাই। ওই ছবিই এখন আমার দরকার।
মাঝেমাঝে রহস্য করে কথা বলা কিশোরের স্বভাব। রবিন আর মুসাও বুঝতে পারে না তখন তার কথার অর্থ।
নাক ডলল মুসা। আনা যাবে। মাকে বললেই দিয়ে দেবে। তবু বাবাকে একবার জিজ্ঞেস করে নিলে ভাল, তার জিনিস তো।
ঠিকই বলেছ, বলল কিশোর। আংকেলকে ফোন করে অনুমতি নিয়ে নাও।
ধরে নাও, প্রোজেকটর পেয়ে গেছ, মুসা বলল। তবে তার আগে জানতে হবে, আজ রাতে কি করতে যাচ্ছি আমরা। অন্ধকারে থাকতে রাজি না আমি।
রবিনও মুসার সঙ্গে একমত হলো।
দু-জনেই তাকাল কিশোরের দিকে।
দ্বিধা করল কিশোর। ধড়াস করে দুই হাত ফেলল টেবিলে।
আমার নিজের কাছেই স্পষ্ট নয় এখনও ব্যাপারটা। পুরো রহস্যটাই কেমন যেন অদ্ভুত, ঘোরাল। শুরু করেছি কুকুর হারানো দিয়ে, জড়িয়ে পড়েছি ড্রাগন শিকারে। ২ বার বার একটা কথাই বোঝাতে চাইছ, ড্রাগনটা নকল, রবিন বলল। কেন এই সন্দেহ?
অনেক কারণে। গুহাটা আসল নয়। পুরানো সুড়ঙ্গটা আসল নয়। গুহামুখ আসল নয়। ড্রাগনটাও আসল হওয়ার কোন কারণ নেই।
এসব তো খেয়াল করিনি! বিস্ময় ঢাকতে পারল না রবিন।
প্রথমে গুহার কথাই ধরো। তা সরিয়ে একটা ছোট গুহায় ঢুকলাম।
হ্যাঁ, অদ্ভুত চোখে তখন তাকিয়েছিলে আমার দিকে। আসল নয় বুঝলে কি করে?
গুহাটা পুরানো সন্দেহ নেই। চোর-ডাকাতের আড্ডা ছিল। কিছু কিছু তক্তাও পুরানো।
কিছু কিছু? কথাটা ধরল মুসা। সব নয় কেন?
সবগুলো পুরানো নয়, সেজন্যে। যে তক্তা আমরা সরিয়েছি ওগুলো পুরানো। কিন্তু পাশেই আরও কিছু রয়েছে, যেগুলো অনেক পরে লাগানো হয়েছে। প্লাইউড। মাত্র এই সেদিন আবিষ্কার হয়েছে। ওগুলো প্রাচীন চোর-ডাকাতেরা লাগায়নি। পায়ইনি, লাগাবে কোত্থেকে?