বিড়বিড় করল কিশোর, মিস্টার জোনসের কথায় নড়চড় আছে।
অ্যাঁ! ভুরু কুঁচকে গেল সহকারী গোয়েন্দার।
মিথ্যুক বলতে চাও? রবিনও অবাক।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। বলেছেন পাড়ে দাঁড়িয়ে ড্রাগনটাকে গুহায় ঢুকতে দেখেছেন।
ভুরু আরও কুঁচকে গেল মুসার। তাতে দোষটা হয়েছে কোথায়? তাছাড়া শিওর হয়েছেন এ কথা তো বলেননি, বলেছেন মনে হলো।
মাথা চুলকাল মুসা। কি জানি। বুঝতে পারছি না। শিওর হওয়া যায় কিভাবে?
আজ বিকেলে আবার যাব গুহায়। আশা করি আজই ড্রাগন রহস্যের সমাধান করে ফেলতে পারব।
চুপ করে রইল দুই সহকারী গোয়েন্দা।
মিস্টার জোনসকেও সন্দেহের বাইরে রাখতে পারছি না আর, বলে চলল কিশোর। আমাদের ভেবে দেখতে হবে, এই শহরের লোকের ওপর কার ব্যক্তিগত আক্রোশ রয়েছে। এবং কারা কারা গুহা আর সুড়ঙ্গগুলো চেনে। মিস্টার জোনস চেনেন। শহরবাসীর ওপরও আক্রোশ থাকতে পারে। হেরিঙ আর মারটিনের তো আছেই। এর সঙ্গে ড্রাগনটাকে যদি কোনোভাবে যোগ করতে পারি, খোলাসা হয়ে যাবে স। দেখি আজ রাতে গুহায় গিয়ে।
আবার, মিনমিন করল মুসা, জানে প্রতিবাদ করে লাভ নেই। কিশোর যখন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, যাবেই।
জবাব না দিয়ে সামনে রাখা প্যাডে খসখস করে কিছু লিখল গোয়েন্দাপ্রধান। হাত বাড়াল ফোনের দিকে। ইস্, আরও আগেই মনে পড়া উচিত ছিল।
চোদ্দ
প্লীজ, মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফারকে দিন, ফোনে বলল কিশোর। বলুন কিশোর পাশা বলছি।
শূন্য দৃষ্টিতে একে অন্যের দিকে তাকাল মুসা আর রবিন।
ভেসে এল চিত্রপরিচালকের ভারি কণ্ঠ, কি ব্যাপার, কিশোর?
স্যার, আপনার বন্ধু মিস্টার জোনস তো হরর ফিল্ম বানাতেন।
হ্যাঁ, বাদুড়, মায়ানেকড়ে, ভ্যাম্পায়ার, ভূত-প্রেত, ড্রাগন…মানে যা যা মানুষকে ভয় দেখাতে পারে, সব।
আচ্ছা, তাঁর দানবগুলোকে কি ছবিতে আসল মনে হয়?
নিশ্চয়। না হলে লোকে সেসব দেখবে কেন?
দানবগুলো কে বানাত?
স্টুডিওতে ওই পেশার অনেক লোক আছে, তারাই।
কাজ হয়ে গেলে ওগুলো কি করে? ফেলে দেয়?
কিছু কিছু রেখে দেয়, পরে আবার কাজে লাগায়। কিছু নিলামে কিনে নিয়ে যায় লোকে, সংগ্রহে রাখে। বাকি সব নষ্ট করে ফেলা হয়।
স্যার, মিস্টার জোনসের কোন ছবি সংগ্রহে আছে আপনার? এমন কিছু, যাতে ড্রাগন আছে?
আছে একটা, অবাক মনে হলো পরিচালকের কণ্ঠ। দেখতে চাও?
তাহলে খুব ভাল হয়, স্যার। ফিল্ম, না ক্যাসেট?
ফিল্ম।
তাহলে তো আপনার ওখানে গিয়েই দেখতে হয়। কখন সময় হবে, স্যার।
চলে এসো, এখুনি। চার নম্বর প্রোজেকশন রুমে থাকব আমি। লাইন কেটে দিলেন পরিচালক।
আস্তে করে ক্রেডলে রিসিভার নামিয়ে রাখল কিশোর। দুই সহকারীর দিকে তাকাল। খুব ভালমত লক্ষ করবে, ছবির ড্রাগন কি করে না করে, আচার-আচরণ, স্বভাব। হয়তো পরে কাজে লাগতে পারে। কে জানে, প্রাণও বাঁচতে পারে।
মানে? একই সঙ্গে প্রশ্ন করল রবিন আর মুসা।
মানে? আবার রিসিভারের দিকে হাত বাড়াল কিশোর। আমার ধারণা, সী-সাইডের দানবটা মানুষের বানানো।
.
সময় মতই রোলস রয়েস নিয়ে পৌঁছল হ্যাঁনসন। তিন গোয়েন্দাকে নিয়ে চলল হলিউডে।
চার নম্বর প্রোজেকশন রুমে অপেক্ষা করছেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। মেশিনপত্র, ফিল্ম সব রেডি। ইশারায় তিন গোয়েন্দাকে চেয়ার দেখিয়ে বসতে বললেন। তারপর ইশারা করলেন মেশিনম্যানকে।
শুরু হলো ছবি। কয়েক মিনিটেই ভুলে গেল ছেলেরা, কোথায় রয়েছে। সত্যি ছবি বানাতেন বটে মিস্টার জোনস। দর্শককে এভাবে সম্মোহিত করে ফেলার ক্ষমতা সব পরিচালকের থাকে না।
পর্দায় চলছে একটা গুহার দৃশ্য। ঝাঁকুনি দিয়ে বেরোল একটা মুখ, গুহামুখ জুড়ে দাঁড়াল। বিশাল দানব। এতই আচমকা ঘটল ঘটনাটা, চমকে উঠল তিন গোয়েন্দা। তাদের মনে হলো, যেন সত্যি সত্যি একটা ড্রাগন তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
কানফাটানো গর্জন করে উঠল দানবটা। হাঁ করতেই দেখা গেল বড় বড় বাঁকা ধারাল দাঁত।
খাইছে! চেয়ারের পেছনে পিঠ চেপে ধরল মুসা। আসল ড্রাগন।
ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে ড্রাগন। চেয়ারের হাতল খামচে ধরল রবিন।
কিশোর শান্ত। গভীর মনোযোগে দেখছে ড্রাগনের প্রতিটি নড়াচড়া। ছবির গল্পের দিকে তার কোন খেয়াল নেই।
স্তব্ধ হয়ে ছবিটা শেষ পর্যন্ত দেখল ওরা। ছবি শেষে উজ্জ্বল আলো জ্বলার পরও বিমূঢ় হয়ে রইল কিছুক্ষণ, যেন ঘোরের মধ্যে রয়েছে।
মিস্টার ক্রিস্টোফার নেই। কোন এক ফাঁকে চলে গেছেন তার অফিসে।
সেদিকে চলল তিন গোয়েন্দা। পায়ে জোর নেই যেন, কাঁপছে।
সব্বোনাশ, কিশোর! প্রথম কথা বলল মুসা। গতরাতে যেটা দেখেছি ঠিক ওই রকম। যেন জ্যান্তটাই এনে ছবিতে বসিয়ে দিয়েছে।
মাথা ঝাঁকাল কিলোর। গুণী লোকের কাজই এমন। একটা ছবি দেখেই বোঝা গেল কতখানি দক্ষ পরিচালক ছিলেন মিস্টার জোনস। আরিব্বাপরে, কি ছবি! ভয় পাবে না এমন মানুষ কম আছে।
ফাইলে ডুবে ছিলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার, ছেলেদের সাড়া পেয়ে। মুখ তুললেন। কেমন দেখলে?
মাথা কাত করল কিশোর। সাংঘাতিক।
অনেক প্রশ্নের ভিড় জমেছে মনে, এক এক করে করার ইচ্ছে ছিল তার, কিন্তু পরিচালককে ব্যস্ত দেখে আর করা হলো না। এমনিতেই তার অনেক সময় নষ্ট করেছে ওরা। ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এল অফিস থেকে।
রোলস রয়েসে উঠে রকি বীচে ফিরে যেতে বলল কিশোর। স্টুডিও থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে এল হ্যাঁনসন।