হ্যাঁ হ্যাঁ, পড়ো, বলল কিশোর।
অনেক জানোয়ার আছে, মানুষকে আক্রমণ করে, মেরে খেয়েও ফেলে অনেকে। এর একটা হিসেবও টুকে এনেছি। এই যে, রোগজীবাণুবাহী পোকামাকড়ের কারণে প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে দশ লাখ মানুষ মারা যায়। চল্লিশ হাজার মরে সাপের কামড়ে, দুই হাজার বাঘে মারে, এক হাজার যায় কুমিরের পেটে, আরও এক হাজার। হাঙরের শিকার হয়। মুখ তুলল সে।
মুসা, শুনলে তো, কিশোর বলল। ড্রাগনের কথা কিন্তু এখানেও বলা হয়নি।…হা, রবিন, পড়ো।
অন্যান্য জন্তু-জানোয়ারের আক্রমণেও মরে মানুষ। হাতি, গণ্ডার, জলহস্তী, নেকড়ে, সিংহ, চিতা, হায়েনা-সুযোগ পেলে কিংবা কোণঠাসা হলে এদের কেউই মানুষ মারতে ছাড়ে না। এগুলোর মাঝে আবার মানুষখেকোও আছে কিছু।
ম্যান ইজ দ্য প্রে বইতে জন ক্লার্ক লিখেছে: মেরুভালুক, পুমা, অ্যালিগেটর, এমন কি কিছু কিছু ঈগলও মানুষকে আক্রমণ করে মেরে ফেলে। তবে সেটা খুব রেয়ার। টারানটুলা মাকড়সার কামড়েও মানুষ মরে, গ্রিজলি ভালুক আর গরিলাও মাঝেসাঝে মারে। সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গা হলো, আফ্রিকা আর ভারতের জঙ্গল। সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা আয়ারল্যাণ্ড। নোট বই বন্ধ করল রবিন।
কিছুক্ষণ চুপ করে রইল সবাই।
মুসার দিকে ফিরল কিশোর। কোন মন্তব্য?
মাথা নাড়ল মুসা। ক্লার্ক মিয়া সী-সাইডে আসেনি, এলে অন্য কথা বলত। ওসব বইটইয়ের কথা কমই বিশ্বাস করি। নিজের চোখে ড্রাগন দেখে এলাম। ওরা বললেই হবে নাকি? বিশ্বাস করতে পারি, যদি তুমি দেখিয়ে দাও ওটা আসল নয়।
বেশ… টেলিফোনের শব্দ বাধা দিল কিশোরকে। রিসিভারে হাত রাখল, তুলতে দ্বিধা করছে।
তোলো, মাথা ঝাঁকিয়ে বলল মুসা। গুহার ভূতটাই হয়তো করেছে আবার।
মৃদু হেসে রিসিভার তুলে কানে ঠেকাল কিশোর।
হ্যালো? অন করল স্পীকারের কানেকশন।
হ্যালো, পরিচিত কণ্ঠস্বর। ডেভি ক্রিস্টোফার। কিশোর?
ও, স্যার, আপনি। নিশ্চয় কুকুরের খোঁজ নিতে করেছেন?
হ্যাঁ, স্পীকারে গমগম করছে ভারি কণ্ঠ। জোনসকে বড় মুখ করে বলেছি এ-রহস্যের সমাধান তোমরা করতে পারবেই। কুকুরের খোঁজ পেয়েছ?
এখনও পাইনি। তবে ড্রাগনটা দেখে এসেছি।
সত্যি আছে! তাহলে তো ড্রাগন বিশেষজ্ঞের সঙ্গেই তোমাদের আবার কথা বলা উচিত।
কে, স্যার?
কেন, আমার বন্ধু জোনস। বলেনি? সারাজীবন দৈত্য-দানব আর ড্রাগন নিয়েই ছিল তার কারবার।
হ্যাঁ, বলেছেন। সিনেমার জন্যে নাকি খেলনা ড্রাগন বানাতেন। ঠিক আছে, এখুনি ফোন করছি তাকে।
দরকার নেই। আমি লাইন দিচ্ছি। সে লাইনেই আছে। ফোন করে কুকুরের খবর জানতে চাইছিল।
সেক্রেটারীকে নির্দেশ দিলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার।
কয়েক সেকেণ্ড খুটখাটের পর স্পীকারে ভেসে এল বৃদ্ধ পরিচালকের কণ্ঠ। হাল্লো, কিশোর?
হ্যাঁ, মিস্টার জোনস। আপনার কুকুরের খোঁজ এখনও পাইনি, তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
ভেরি গুড। এত তাড়াতাড়ি পাবে আশাও করিনি, তবু মন মানছিল না…
আপনার পড়শীদের কুকুরগুলো পাওয়া গেছে?
না। প্রায় একই সময়ে সবগুলো হারাল, এটাই অবাক লাগে।
হ্যাঁ।
আমার পড়শীদের সঙ্গে দেখা করেছিলে?
করেছিলাম দু-জনের সঙ্গে, যাঁদের কুকুর নেই। মিস্টার হেরিঙ আর মিস্টার মারটিন।
বলেছে কিছু?
আজব লোক দু-জনেই। মিস্টার হেরিঙ শটগান নিয়ে এসে গুলি করার হুমকি দিলেন। কুকুর দু-চোখে দেখতে পারেন না। তার বাগান টাগান নাকি সব নষ্ট করে ফেলে।
হাসি শোনা গেল। ও এমনি ভয় দেখিয়েছে। মানুষ তো দূরের কথা, একটা ইঁদুর মারার ক্ষমতা নেই তার। মারটিন কি বলল?
ভয় তিনিও দেখিয়েছেন, তবে অন্যভাবে।
আবার হাসলেন বৃদ্ধ চিত্রপরিচালক। ওর বাড়ির আজব খেলনাগুলোর কথা বলছ তো? আসলে খুব রসিক লোক। এই রসিকতার জন্যে মস্ত ক্ষতি হয়ে গেছে তার। ভাল একটা চাকরি হারিয়েছে।
মুসা ও রবিনের সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় করল কিশোর।
কি হয়েছিল?
সেটা বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনা। সিটি প্ল্যানিং ব্যুরোতে ইঞ্জিনিয়ার ছিল সে। তার এক জন্মদিনে কি জানি কি করে সারা শহরের কারেন্ট ফেল করিয়ে দিল। তার বক্তব্য, শহরে আলোই যদি থাকল, কেকের ওপর মোম জ্বেলে কি লাভ?
তারপর? আগ্রহী হয়ে উঠেছে কিশোর।
কয়েক ঘণ্টা কারেন্ট বন্ধ থাকায় অনেকের অনেক রকম ক্ষতি হলো। বড় বড় কয়েকজন কর্তাব্যক্তি গেল খেপে। চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো মারটিনকে। শুধু তাই নয়, শহরে আর কোথাও যেন চাকরি না পায় সে ব্যবস্থা করে ছাড়ল।
তারপর আর চাকরি পাননি? চলেন কিভাবে?
ভাল ইঞ্জিনিয়ার, কাজ জানে। এটা-ওটা টুকটাক প্রাইভেট কাজ করে। সবই আজব ধরনের। তবে তাতে বিশেষ আয় হয় বলে মনে হয় না।
হুঁ। দেখে কিন্তু মনে হয় না অসুবিধেয় আছেন। খেলনা বানিয়ে মানুষকে ভয় দেখান, সুখেই তো আছেন।
ভয় দেখানোর রসিকতা সব সময় পছন্দ করে না লোকে। আচ্ছা, রাখি?
আরেকটা প্রশ্ন, স্যার। যে ড্রাগনটা দেখেছেন আপনি, সেটা কি গোঙায়?
নিশ্চয়ই। কি রকম যেন গোঁ গোঁ করে।
পাড়ে দাঁড়িয়ে নিচে গুহায় ঢুকতে দেখেছেন, না?
হা। রাতে দেখেছি তো, মনে হলো গুহায়ই ঢুকেছে। তবে ড্রাগন দেখেছি তাতে কোন সন্দেহ নেই।
থ্যাংক ইউ, স্যার। শিগগিরই যোগাযোগ করব আপনার সঙ্গে। লাইন কেটে গেল।
মারটিন তাহলে ভাল লোক নন, বলে উঠল মুসা। মানুষকে অহেতুক ভয় দেখানোটা আমারও ভাল লাগে না। বাজপাখিটার কথাই ধরো, ড্রাগনের চেয়ে কম কিসে… তার কথায় কিশোরের কান নেই দেখে থেমে গেল।