কী? চমকে উঠল মুসা। আবার। একবার যে বেঁচে ফিরেছি, যথেষ্ট নয়?
হত, যদি বোকামিটা না করতাম।
একবার যাওয়াটাই তো বোকামি হয়েছে। আরেকবার গেলে আরও বড় বোকামি হবে, কারণ এবার ড্রাগন আছে জেনেশুনে যাচ্ছি।
কিন্তু যেতেই হবে, উপায় নেই। ক্যামেরা, রেকর্ডার সব কিছু ফেলে রেখে ভয়ে দিয়েছি দৌড়। ওগুলো আনতে হবে।
ইচ্ছে করে ফেলে রেখে আসোনি তো? আবার ফিরে যাওয়ার
ছুতো?চ্ছে করে কেহ দৌড়। ওই ক্যামেরা
ছুতো? নাহ, আরেক দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকাল কিশোর।
কিছু বলবে মনে হয় তুমি? কিশোরের উসখুস ভাবটা ধরে ফেলল রবিন।
বোম ফাটাল কিশোর, আমার ধারণা, ড্রাগনটা আসল নয়।
বোকা হয়ে গেল অন্য দু-জন। বলে কি?
আসল না? বিড়বিড় করল মুসা। আমাদের খেয়ে ফেলতে চাইল, আর তুমি বলছ ওটা আসল না?
মাথা নাড়ল কিশোর, না।
তাহলে কামড়াতে চাইল কেন? রবিনের প্রশ্ন।
চায়নি, হয়তো ভঙ্গি করেছে।
তাই বা কি করে করল?
আসলে, ভঙ্গিও করেছে কিনা, সে ব্যাপারেও শিওর নই। জ্যান্ত জানোয়ারের মত আচরণ করেনি ওটা, ওটুক বলতে পারি। আরেক বার গুহায় গিয়ে দেখলেই পুরো শিওর হতে পারব। তবে প্রাণী যে নয় ওটা, বাজি ধরে বলতে পারি।
কখন মরতে চাও? জিজ্ঞেস করল মুসা।
এমন ভঙ্গিতে প্রশ্নটা করল সে, কিশোরও বুঝতে পারল না।
মরতে চাই মানে?
বুঝলে না। আরেকবার গুহায় দেখলে তো আর ছাড়বে না, গিলে খাবে আমাদের। তাই জিজ্ঞেস করছি, ড্রাগনের নাস্তা হতে চাও কখন?
ও, এই কথা, হাসল কিশোর। এখন আর সময় নেই। কালকে সকালের আগে হবে না। এতক্ষণ না খেয়েই থাকতে হবে ড্রাগনটাকে।
তেরো
সে-রাতে ভাল ঘুম হলো না রবিনের।
ভীষণ ক্লান্ত হয়ে শুয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ার কথা। পড়লও তাই, কিন্তু চোখ বোজার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিল দুঃস্বপ্ন, গুহা থেকে গুহায় তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াতে লাগল ভয়ঙ্কর এক ড্রাগন, আগুনের হলকা আর বাষ্পের মত গরম নিঃশ্বাস দিয়ে পুড়িয়ে দিল চামড়া।
দুঃস্বপ্ন কখন গেল, বলতে পারবে না রবিন, ঘুম ভাঙল মায়ের ডাকে। নাস্তা রেডি।
খাবার টেবিলে এসে দেখল, তার বাবার খাওয়া প্রায় শেষ। মাথা সামান্য ঝাঁকিয়ে ইশারায় গুড মর্নিং জানিয়ে ঘড়ি দেখলেন মিলফোর্ড।
গুড মর্নিং, বাবা।
মুখের খাবারটুকু গিলে নিয়ে বাবা জিজ্ঞেস করলেন, কাল রাতে বন্ধুদের সঙ্গে কেমন কাটালে?
ভাল, আরেক দিকে তাকিয়ে জবাব দিল রবিন।
গুড! ন্যাপকিনে মুখ মুছে দলেমুচড়ে ওটা টেবিলে ফেলে উঠে দাঁড়ালেন মিলফোর্ড। ও হ্যাঁ, ভাল কথা, কাল সী-সাইডের কথা বলছিলে না, তুমি যাওয়ার পর নামটা মনে পড়ল! স্বপ্নের শহর বানাতে গিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন যে মানুষটা…
তাই? কি নাম?
ডন হেরিঙ।
হেরিঙ? জন হেরিঙের কথা মনে পড়ল রবিনের। বদমেজাজী, হাতে শটগান।
হ্যাঁ। ভাল স্বাস্থ্য ছিল। কিন্তু সী-সাইড টাউন কাউন্সিল যখন তার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিল, স্বাস্থ্যও ভাঙতে লাগল তার। টাকা, স্বাস্থ্য, সুনাম হারালে আর কি থাকে একজন মানুষের? বেঁচে থাকার আর কোন যুক্তি দেখলেন না তিনি।
হ্যাঁ, শুনলে খারাপই লাগে। তার পরিবারের আর কেউ নেই?
আছে। হেরিঙ মারা যাওয়ার কিছুদিন পরেই তার স্ত্রীও মারা গেলেন। থাকল শুধু একমাত্র ছেলে জনহেরিঙ।…এখনও বেঁচে আছে। কিনা জানি না। অনেক কাল আগের কথা তো।
বেরিয়ে গেলেন মিলফোর্ড, অফিসে যাবেন।
তথ্যগুলো নোট করে রাখল রবিন। খেতে খেতে ভাবল, এসব শুনলে কি করবে কিশোর? এমন একজন মানুষকে পাওয়া গেছে, যিনি সুড়ঙ্গগুলো চেনেন। বাবার মৃত্যুর কারণ হয়েছিল বলে টাউন কাউন্সিলের ওপর যার রাগ আছে।
তাড়াহুড়া করে নাস্তা সেরে বেরিয়ে গেল রবিন।
.
খাইছে, বলে উঠল মুসা, কিশোর, আজব কথা শোনাল তো রবিন!
হেডকোয়ার্টারে জড় হয়েছে তিন গোয়েন্দা। আগে হেরিঙের খবর জানাল রবিন। তারপর বলল, বাড়ি থেকে সোজা লাইব্রেরিতে গিয়েছিলাম। ড্রাগনের ওপর যত বই পেয়েছি, ঘেঁটে দেখে এসেছি।
রবিনের নোট বইয়ের গিজিগিজি লেখার দিকে তাকাল কিশোর এক পলক। কি জানলে? জ্যান্ত ড্রাগন আছে?
মাথা নাড়ল রবিন। না। নো ড্রাগন। একটা বইতেও লেখেনি। এমন কি ড্রাগন আছে, এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহও প্রকাশ করেনি কেউ।
গাধা! ফেটে পড়ল মুসা, ব্যাটারা আস্ত গাধা। বই যারা লিখেছে, কিছুদিন এসে সী-সাইডের গুহায় বাস করা উচিত তাদের। তাহলেই বুঝবে আছে কি নেই। ধরে ধরে যখন গিলবে…
হাত তুলল কিশোর। আহ, আগে রবিনের কথা শুনি। হ্যাঁ, তারপর, নথি?
আবার নোটের দিকে তাকাল রবিন। একটি মাত্র ড্রাগনের নাম লেখা আছে, একমাত্র প্রজাতি, কমোডো ড্রাগন। বিশাল গিরগিটি, দশ বারো ফুট লম্বা হয়। আমরা যেটাকে দেখেছি ওটার চেয়ে অনেক ছোট।
মানুষের মধ্যে দানব আছে না, ফস করে বলল মুসা, ওটাও হয়তো তেমনি। একটা কমোডো ড্রাগনের গায়ে ভিটামিন বেশি জমেছে আর কি।
হুঁ, বলেছে তোমাকে, অধৈর্য হয়ে হাত নাড়ল কিশোর। রবিন, বলো।
কিন্তু কমোডো ড্রাগনের নিঃশ্বাসের সঙ্গে আগুন বা ধোয়া কিছুই বেরোয় না, রবিন বলল। ওয়েস্ট ইনডিজের ছোট্ট একটা দ্বীপ কমোডোতে ছাড়া দুনিয়ার আর কোথাও পাওয়াও যায় না। গুহায়। যেটাকে দেখেছি, চেহারায়ও ওটার সঙ্গে কোন মিল নেই। জোর দিয়ে বলা যায়, ড্রাগন নেই পৃথিবীতে। ওই ধরনের কোন জীব কাউকে আক্রমণ করেছে বলেও শোনা যায়নি। অথচ… মুখ তুলল রবিন। আরও পড়ব?