মেঝেতে আলো ফেলল রবিন। ডাকাত হলে কিছু মোহর কি আর ফেলে যায়নি?
মোহরের কথায় রবিনের সঙ্গে মুসাও খুঁজতে লেগে গেল। বসে পড়ে বালির স্তর সরিয়ে দেখতে লাগল কোথায় লুকিয়ে আছে গুপ্তধন।
আগে হাল ছাড়ল মুসা। দূর, কিছু নেই।
রবিন খুঁজতে খুঁজতে চলে গেল শেষ মাথার কাছে। কোণের দিকেই মোহর স্তূপ করে রাখে ডাকাতরা। আঁউ!
তক্তাগুলোর ওপর আলো ফেলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কি দেখছিল কিশোর, ঝট করে ঘুরল। কি হলো, রবিন?
ঘড়ঘড় একটা শব্দ। রবিন গায়েব।
রবিন! চেঁচিয়ে উঠে দৌড় দিল কিশোর। দাঁড়িয়ে গেল যেন। হোঁচট খেয়ে, হাঁ হয়ে গেছে।
কি হয়েছে? উঠে দাঁড়িয়েছে মুসা।
হাত তুলে দেখাল কিশোর। মুহূর্ত আগেও ওখানে ছিল। দেখনি? তারপর দেয়ালটা যেন গিলে ফেলেছে ওকে!
কী? কিশোরের পাশ দিয়ে দেয়ালের দিকে ছুটল মুসা। কাছে গিয়ে আলো ফেলে ভালমত দেখল। কই, কিছু তো নেই। গর্ত-টর্তও নেই।
খানিক আগে রবিন মোহর খুঁজছিল যে জায়গাটায় সেখানে মাটিতে বসে হাত বুলিয়ে দেখল মুসা। আবার হলো ঘড়ঘড় শব্দ। চমকে সরে এল সে। চোখ বন্ধ করে ফেলল ভয়ে।
ও-কে, হাসিহাসি কণ্ঠ কিশোরের, আবার উদয় হচ্ছে রবিন।
চোখ মেলল মুসা। ছোট্ট একটা অংশ সরে গেছে, দেয়ালের ওখানে কালো ফোকর যেন মুখব্যাদান করল। হামাগুড়ি দিয়ে ওপথে বেরিয়ে এল রবিন। আবার বন্ধ হয়ে গেল ফোকর।
কি বুঝলে? মিটিমিটি হাসছে রবিন। পাথরের গোপন দরজা। ঠেস দিয়ে বসেছিলাম ওটায়। ব্যস, গেল সরে।
ওপাশে কি আছে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
ঝুলে পড়ল রবিনের চোয়াল। দেখারই সময় পাইনি। এত তাড়াতাড়ি ঘটে গেল সব কিছু…দেখি তো আবার খোলা যায় কিনা।
দেয়ালে আবার হেলান দিয়ে বসল সে। চাপ দিল। কিছুই ঘটল। না। সামান্য সরে কাঁধ দিয়ে আবার ঠেলা দিল। ক্লিক করে মৃদু একটা শব্দ হলো, তারপরই শুরু হলো ঘড়ঘড়। পাথর সরে যেতেই পেছনে হেলে পড়ল তার শরীর। আবার ঢুকছি! জলদি এসো, বন্ধ হয়ে যাবে।
লাফ দিয়ে এগিয়ে এল কিশোর আর মুসা। ঢুকে গেল রবিনের পিছু পিছু।
বাব্বারেহ্! গাল ফুলিয়ে ফুস করে মুখ দিয়ে বাতাস ছাড়ল মুসা। আরব্য রজনীর জিন নাকি? চিচিং ফাঁব বলতেই, দুই হাত দুই দিকে ছড়াল সে, হাঁ!
এটা অনেক বড় গুহা, ছড়ানো। ছাতও অনেক উঁচু।
ফোকরের কাছ থেকে সরে এল ওরা, গুহাটা ঘুরেফিরে দেখার জন্যে।
ক্লিক করে শব্দ, পরক্ষণেই ঘড়ঘড়। ঘুরল ওরা, কিন্তু দেরি হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে ফোকর।
খাইছে! আঁতকে উঠল মুসা। বেরোব কি করে?
রবিন যেভাবে বেরিয়েছে, শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর।
ও কিছু না। সহজ কোন লিভারেজ সিসটেম। চলো আগে গুহাটা দেখি, পরে এসে লিভার খুঁজে বের করব। ভয় পেয়ো না, খোলা যাবে ঠিকই।
ছাতের দিকে তাকাল রবিন। কিশোর, আমার মনে হয় এটাই। এটার কথাই পড়েছি রেফারেন্স বইয়ে। সাইজ দেখেছ?
হতে পারে, কিশোর বলল। কিন্তু, রবিন, লক্ষ করেছ আর সব প্রাকৃতিক গুহার মত এটার দেয়ালও রুক্ষ, খসখসে। ছাতে খোঁচা খোঁচা পাথর বেরিয়ে আছে। মানুষের তৈরি হলে সমান হত, মসৃণ। পাতাল রেলের সুড়ঙ্গ সিমেন্ট দিয়ে তৈরি হয়, সমান হতেই হবে।
আলো ফেলে ফেলে দেয়াল, ছাত আবার দেখল সে, মাথা নাড়ল। নাহ, প্রাকৃতিক গুহাই মনে হচ্ছে। সাগরের দিক থেকে ঢোকার সরাসরি কোন পথ দেখছি না। নিরেট পাথরের দেয়াল। চলো, এগিয়ে। দেখি। যে সুড়ঙ্গটা খুঁজছি, হয়তো সামনেই আছে সেটা।
যাক, বাঁচা গেল। হাত নাড়ল মুসা। সাগরের দিকে পথ নেই। তারমানে ড্রাগন ঢুকতে পারবে না এখানে।
তা তো হলো, হেসে বলল কিশোর। কিন্তু ভুলে যাচ্ছ, গুহাটা বিরাট। জায়গা হয়ে যাবে, চমৎকার বাসা হবে ড্রাগনের।
মনে করিয়ে দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ, অস্বস্তি ফিরে এল আবার মুসার কণ্ঠে। একটা সেকেণ্ডের জন্যে নিশ্চিত হওয়ার জো নেই, এমনই কাণ্ড!
মেঝে বেশ সমান, মসৃণ বলা না গেলেও আর সব গুহার মত খসখসে নয়।
শেষ মাথায় এসে থমকে দাঁড়াল ওরা। ছাত থেকে খাড়া নেমেছে। পাথরের দেয়াল.। পথ নেই।
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর।
কি ভাবছ? জিজ্ঞেস করল রবিন।
ওই দেয়ালটা, সামনে হাত তুলে দেখাল কিশোর, ঠিক দেয়ালের মত লাগছে না।
আমার কাছে তো দেয়ালই লাগছে।…ভেবেছিলাম পথটথ পাব, সুড়ঙ্গে… থেমে গেল সে। কিশোরের মনোযোগ তার দিকে নেই।
চোখ আধবোজা হয়ে গেছে গোয়েন্দাপ্রধানের, এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল দেয়ালের কাছে। থাবা দিল, কিল মারল, টোকা দিল। কান খাড়া করে আওয়াজ শুনছে। আরেকটা জায়গায় আঘাত করে শুনল, হাত রেখে অনুভব করল কি, যেন।
তফাৎ আছে, অবশেষে বলল সে। বোঝাতে পারব না কেমন, তবে…
তাতে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেল? অধৈর্য হয়ে পড়েছে। মুসা। চলো। শীত করছে আমার।
উজ্জ্বল হলো কিশোরের মুখ। পেয়েছি! চুটকি বাজাল দুই আঙুলে। ঠাণ্ডা…
সে কথাই তো বলছি…
আমি শীতের কথা বলছি না। বলছি, দেয়ালটা ঠাণ্ডা নয়। কিন্তু এই গুহারই অন্য সব দেয়াল ঠাণ্ডা। বিশ্বাস নাহলে গিয়ে হাত রেখে দেখতে পারো।
দেখল দুই গোয়েন্দা।
ঠিকই তো, মাথা দোলাল মুসা। তত ঠাণ্ডা নয়। কিন্তু তাতে কি? ছাতের ওপর বাড়িঘর আছে, ওগুলো থেকেই কোনভাবে নেমে এসেছে। উত্তাপ। দেয়াল গরম করেছে।
তাপ ওপর দিকে ওঠে, নিচে নামে না।