নিঃশ্বাস বন্ধ করে রইল তিন গোয়েন্দা।
গুহার ভেতরে আলো ফেলে ফেলে দেখছে লোকটা।
তক্তার ফাঁকে চোখ রেখে দেখছে কিশোর। তার ওপর ঝুঁকে রয়েছে রবিন আর মুসা, ওরাও দেখছে।
দু-জনের পরনেই কালো ওয়েট স্যুট, পানির নিচ থেকে উঠে এসেছে। আলো ফেলে গুহার চারপাশটা একবার দেখে অন্য দিকে চলে গেল। ফ্লিপার পরা পায়ের শব্দ মিলিয়ে গেল, হারিয়ে গেল আলো।
দ্বিতীয় লোকটা, অর্থাৎ নিকের খসখসে গলা শোনা গেল গর্তটার ধার থেকে, যেটাতে পড়েছিল রবিন, কই, জো? কোথায় ওরা? ভুল করেছ তুমি। এখানে ঢোকেনি।
আরেকটা সিঁড়ি যে আছে ওদিকে, ওটা বেয়ে উঠে গেল না তো? অনিশ্চিত শোনাল জো-র কণ্ঠ।
তা-ই গেছে হয়তো।
টুলুপ টুলুপ করে মৃদু শব্দ হলো, তারপর নীরবতা। কিছুই আর কানে এল না কিশোরের, কিছু দেখছে না। ফাঁক থেকে চোখ সরিয়ে আনল সে। চোখের কোণে, নাকের ভেতরে কিচকিচ করছে বালি। সুড়সুড় করছে নাক। হাঁচি এলে এখন সর্বনাশ। তার সঙ্গীদেরও কি একই অবস্থা নাকি?
মুসাকে বিশ্বাস নেই। অসময়ে হাঁচি দেয়ার জুড়ি নেই তার। বিপদ, দেখলে কিংবা বেশি উত্তেজিত হলেই যেন সুড়সুড় করতে থাকে তার নাকটা। হুশিয়ার করল কিশোর, দেখো, হাঁচি দিও না। নাক ধরো।
শুধু মুসাই নয়, রবিনও নাক টিপে ধরল। চুপ করে বসে আছে। অন্ধকার গুহায়, অস্বস্তিতে ভুগছে।
কিছুক্ষণ পর উঠে দাঁড়াল কিশোর। নেই মনে হচ্ছে। চলো, সময় থাকতে কেটে পড়ি।
তক্তা সরিয়ে বেরোল ওরা। জায়গামত আবার তক্তাগুলো দাঁড় করিয়ে গোড়া বালি দিয়ে ঢেকে সমান করে দিল আগের মত।
কিশোর, তুমি আগে বেরোও, ফিসফিস করে বলল মুসা। আমি আর রবিন পেছনে নজর রাখছি।
নিঃশব্দে গুহামুখের কাছে চলে এল ওরা। খুব সাবধানে বাইরে। উঁকি দিল কিশোর। নির্জন সৈকত। কাউকে দেখা যাচ্ছে না। পিছিয়ে এসে বন্ধুদের বলল, কেউ নেই। এসো।
নয়
তারপর, কি বুঝলে? প্রশ্ন করল কিশোর।
হেডকোয়ার্টারে বসেছে সে আর মুসা। ঘণ্টাখানেক হলো ফিরে এসেছে রকি বীচে। রবিন বাড়ি গেছে। তার শরীর আর কাপড়চোপড়ের যা অবস্থা হয়েছে কাদায়, শুধু হাতমুখ ধুলে হবে না, গোসল দরকার।
ঠোঁট ওল্টাল মুসা। কিছুই বুঝতে পারছি না। ডুবুরীরা কারা, তা-ও জানি না; শুধু নাম জানি-নিক আর জো। স্পীয়ারগান তুলে আমাদের নিশানা করেছিল কেন, জানি না। জানি না কেন আমাদের পিছু নিয়ে এসে ঢুকেছিল গুহায়। তারপর কিভাবে কোথায় গায়েব হয়ে গেল, জানি না। এমনকি এ-ও জানি না, কি করে বেঁচে ফিরে এলাম আমরা।
নিচের ঠোঁটে চিমটি কেটে মাথা ঝাঁকাল কিশোর। হ্যাঁ, আরও অনেক কিছুই জানি না। সিঁড়ি কে কেটে রাখল? কুকুর কিভাবে গায়েব হলো? কেউ কি চুরি করল ওগুলোকে? তাহলে কেন করল? এই কেসের–কিনারা করতে হলে এ-ধরনের অনেক কেনর জবাব জানতে হবে আমাদের।
এক কাজ করলে আর দরকার হবে না, পরামর্শ দিল মুসা।
উ! রিভলভিং চেয়ার ঘুরিয়ে মুসার দিকে ফিরল কিশোর। চোখে জ্বলজ্বলে আগ্রহ। কি?
ফোনটা দেখাল মুসা। ওটা তুলে ফোন করো মিস্টার জোনসকে। বলো, হারানো কুত্তা নিয়ে আর মাথা ঘামাচ্ছি না আমরা। আরেকটু হলে আমরাই হারিয়ে যাচ্ছিলাম। বলে দাও, ড্রাগনের কথাও ভুলে যেতে রাজি আছি আমরা।
নিরাশ হলো কিশোর। দপ করে নিভে গেল চোখের আলো। দুঃখিত। তোমার পরামর্শ মানতে পারছি না। এখন আমাদের প্রথম সমস্যা, এক আঙুল তুলল সে, ডুবুরীরা কে, এবং গুহায় কি করছিল সেটা জানা?
ওদের নিয়ে এত মাথা ঘামানোর কি হলো? আমরাও তো গিয়েছিলাম গুহায়। কেন? সেটাই কি জানি?
মিস্টার জোনসের ড্রাগন দেখার সপক্ষে সূত্র খুঁজছিলাম, মাঝে মাঝে কঠিন শব্দ ব্যবহার, কিংবা লম্বা বাক্য, কিংবা দুর্বোধ্য করে কথা বলা কিশোরের স্বভাব। এবং তার আইরিশ সেটার কুকুর পাইরেটের সন্ধানে গিয়েছিলাম, রাতারাতি হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে যেটা।
এবং তাহাতে আমরা মোটেও কৃতকার্য হই নাই, কিশোরের সুরে সুর মেলাল মুসা। অবশ্য কুয়া আবিষ্কারের ব্যাপারটা বাদ দিতে রাজি আমি, যদি ওটা কোন সূত্র হয়। এবং সেজন্যে রবিনের কাছে মহাকৃতজ্ঞ আমরা, নাকি?
মুসার টিটকারি গায়েই মাখল না কিশোর। কিছু পাইনি, তাই বা বলি কিভাবে? তক্তার ওপাশে আরেকটা সুড়ঙ্গ পেয়েছি, হয়তো কোন গোপন গুহায় যাওয়ার পথ ওটা। হয়তো পুরানো আমলে দস্যু-তস্কররা হেডকোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহার করত ওটাকে।
তাতে আমাদের কি? কুত্তা লুকিয়ে রাখার জায়গা নিশ্চয় নয় ওটা?
ভ্রূকুটি করল কিশোর। একটা কথা ভুলে যাচ্ছ, মুসা আমান, আমরা গোয়েন্দা। সামান্যতম সূত্রকেও অবহেলা করলে চলবে না আমাদের। ওই গুহা আর সুড়ঙ্গগুলো আরও ভালমত দেখা দরকার, কি বলো?
তা তো নিশ্চয়, ভোতা গলায় বলল মুসা। তবে খামোখা যাবে। ওখানে কুত্তা পাওয়ার আশা নেই। লুকিয়ে রাখা হয়নি। আবোল তাবোল ভাবনা হচ্ছে, অথচ অবাক হওয়ার মত যেটা ব্যাপার, সেটা নিয়েই ভাবছি না?
কী? আবার আগ্রহে সামনে ঝুঁকল কিশোর।
রবিন যে কুয়াটায় পড়েছিল, দুই ডুবুরী ওটাতে পড়ল না কেন? তারমানে এই নয় কি, ওরা গুহার ভেতরে কোথায় কি আছে জানে?
দ্বিতীয়বার নিরাশ হতে হলো কিশোরকে। ভাবার কি দরকার? ওদের হাতে টর্চ ছিল, রবিনের কাছে ছিল না। আর ওরা কোথায় কিভাবে গায়েব হলো, টর্চ নিয়ে আমরা যখন যাব…