হয়তো, স্বীকার করল কিশোর। তবে সেগুলো খুঁজতে পারব না এখন। বাড়ি যাওয়া দরকার।
হ্যাঁ, সেই ভাল, মুসা বলল।
গুহামুখের কাছে চলে এসেছে, সাগরের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে গেল কিশোর। তার গায়ের ওপর এসে পড়ল অন্য দু-জন।
কি হলো? মুসার প্রশ্ন।
নীরবে হাত তুলে দেখাল কিশোর।
তার পাশে দাঁড়িয়ে অন্য দু-জনও তাকাল। চোখ মিটমিট করল।
হাত দিয়ে চোখ ডলে আবার তাকলি মুসা। বিশ্বাস করতে পারছে না।
ইয়াল্লা!বিড়বিড় করল সে।
কালো, চকচকে কিছু একটা মাথা তুলছে পানির ওপরে।
কি ওটা! ফিসফিস করল রবিন।
কম্পিত কণ্ঠে মুসা বলল, ড্রাগনের মাথার মতই তো লাগছে!
গড়িয়ে এল মস্ত এক ঢেউ, ঢেকে দিল কালো জিনিসটা।
চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে ছেলেরা। চোখ সরাচ্ছে না।
প্রচণ্ড শব্দে সৈকতে আছড়ে পড়ে ভাঙল বড় ঢেউটা। তার পেছনে এল আরেকটা ছোট ঢেউ, ওটাও ভাঙল, সাদা ফেনার নাচানাচি চলল কয়েক মুহূর্ত, তারপর সরতে শুরু করল পানি।
ঢেউ সরে যেতেই আবার দেখা গেল কালো জীবটা। নড়ছে। সাগর থেকে উঠে এল টলোমলো পায়ে।
স্কিন ডাইভার, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল মুসা। ফেস মাস্ক…ফ্লিপার…অথচ কি ভয়ই না পেলাম। চলো, আমাদের পথে আমরা যাই।
ঘুরতে গিয়েও দাঁড়িয়ে গেল কিশোর। ফিসফিসিয়ে বলল, সাবধান! ওর হাতে স্পীয়ারগান!
হেসে উঠল সহকারী গোয়েন্দা। তাতে কি? মাছ মারতে নেমেছিল হয়তো সাগরে।
মাথা নাড়ল কিশোর। এদিকে আসছে দেখছ না?
হঠাৎ হাঁটু গেড়ে বসল ডুবুরি। স্পীয়ারগান তুলল।
আরে! চেঁচিয়ে উঠল রবিন। আমাদেরকেই তাক করছে!
অ্যাঁ! চমকে গেল মুসা। কেন… দ্রুত চোখ বোলাল আশপাশে।
কিশোর, রবিন ঠিকই বলেছে! আর কেউ নেই, আমাদেরকেই নিশানা করছে!
একশো গজ দূরে রয়েছে লোকটা।
দৌড় দাও! চেঁচিয়ে বলল কিশোর। একেকজন একেকদিকে।
কিন্তু দেখা গেল, একদিকেই দৌড় দিয়েছে তিনজন, ওপরে ওঠার কাঠের সিঁড়ির দিকে। কাছে যাওয়ার আগে মনেই পড়ল না, ওটা ভাঙা। ওরাই ভেঙেছে খানিক আগে। পেছনে পাহাড়ের খাড়া পাড়, বেয়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব।
আরেকটা সিঁড়ি যেটা আছে, ওটার দিকে তাকাল কিশোর। অনেক দূরে। নরম বালির ওপর দিয়ে তাড়াতাড়ি দৌড়াতে পারবে না, সিঁড়ির কাছে যাওয়ার আগেই স্পীয়ারগান থেকে ছোঁড়া বর্শা বিধবে শরীরে। খোলা সৈকতে খুব সহজ টার্গেট হয়ে যাবে ওরা।
দ্রুত সিদ্ধান্ত নিল কিশোর। একটাই উপায় আছে। আবার গুহায় ঢুকতে হবে। কুইক!
ঘুরে আবার গুহামুখের দিকে দৌড় দিল ওরা। ফিরে তাকানোর সাহস নেই। ভাবছে, এই বুঝি এসে পিঠে বিধল চোখা ইস্পাত।
আলগা নরম বালি, জুতোর ঘায়ে ছিটকে যাচ্ছে।
ডাইভ দাও! হাঁপাতে হাঁপাতে বলল কিশোর।
গুহামুখের ভেতরে ঝাঁপ দিয়ে পড়ল তিনজনে। হামাগুড়ি দিয়ে সরে গেল একটা বড় পাথরের আড়ালে।
ওফ, মুখ দিয়ে বাতাস ছাড়ল মুসা। বাঁচলাম!…এবার?
লুকাতে হবে, জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে কিশোর। বাঁচিনি
এখনও। খানিকটা সময় পেয়েছি মাত্র।
কোথায় লুকাব? রবিন বলল। ভেতরে আরও সুড়ঙ্গ নাকি আছে? চলো, খুঁজে বের করি। ওগুলোর কোনটাতেই ঢুকব।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। তাই বোধহয় করতে হবে। তবে এখুনি নড়ছি না। লোকটা আসুক আগে। তেমন বুঝলে পাহাড়ের একেবারে ভেতরে ঢুকে যাব।
কিশোরের কাঁধের ওপর দিয়ে তাকিয়ে রয়েছে মুসা। এখুনি সরতে হবে। আসছে।
যাব কোন দিক দিয়ে? রবিন বলল। আবার গিয়ে ওই গর্তে পড়তে চাই না, কাদার মধ্যে।
গুহার দেয়ালের কাছে পিছিয়ে গেল কিশোর। হঠাৎ ডাকল, এই, দেখে যাও।
মেঝে থেকে ছাতের কাছে খাড়া উঠে গেছে কয়েকটা তক্তা।
খাইছে, মুসা বলল। তখন দেখলাম না কেন?
ধুলোবালিতে কেমন ঢেকে আছে দেখছ না? সহজে চোখে পড়ে না। তক্তায় থাবা দিল কিশোর, ফাঁপা শব্দ হলো। গোপন পথ-টথ আছে। মনে হয় খোলা যাবে। মুসা, চট করে দেখে এসো তো ও আসছে কিনা?
গিয়েই সঙ্গে সঙ্গে ফিরে এল মুসা। উত্তেজিত কণ্ঠে বলল, ভাল বিপদে পড়েছি! একজন না, দু-জন আসছে!
দু-জন? জলদি এসো, হাত লাগাও।
তক্তার ফাঁকে আঙুল ঢুকিয়ে ধরে জোরে জোরে টানতে শুরু করল ওরা।
এভাবে হবে না, রবিন বলল। ওপরে-নিচে শক্ত করে গেঁথে দিয়েছে।
মাথা নাড়ল কিশোর। নিশ্চয় হবে। পায়ের কাছে মাটিতে জুতোর ডগা দিয়ে খোঁচা দিয়ে দেখল মাটি আলগা। বসে পড়ে দু-হাতে খুঁড়তে শুরু করল তক্তার গোড়ার কাছে।
অন্য দু-জনও হাত লাগাল।
কিছুটা খুঁড়ে টান দিতেই নড়ে উঠল তক্তা।
এই তো হয়েছে, বলল কিশোর। এটাই তো সবচেয়ে চওড়া, নাকি?…হ্যাঁ, সরালে ভেতরে ঢোকা যাবে… মাথা ঢুকিয়ে দিল সে, কিন্তু কাধ ঢোকাতে পারল না, চাড় দিয়েও কাজ হলো না।
আরও খানিকটা মাটি সরাল মুসা আর রবিন। টান দিয়ে আরও ফাঁক করল তক্তা, হ্যাঁ, এবার ঢোকা যায়।
ঢুকে গেল কিশোর। পেছনে দুই সহকারী। তারপর আবার টেনে আগের জায়গায় লাগিয়ে দিল তক্তা।
অন্ধকার গুহায় বসে কান পেতে রয়েছে ওরা।
ওপাশে কথা শোনা গেল। তক্তার ফাঁক দিয়ে টর্চের আলো দেখল।
নিক, বলল একজুন, ওরা এখানেই ঢুকেছে, আমি শিওর। তুমি পড়ে গেলে, আমিও চোখ সরালাম। নইলে ঠিকই দেখতে পেতাম। ঢুকেছে এখানেই। বাতাসে তো আর মিলিয়ে যেতে পারে না।
এখানে থাকলে যাবে কোথায়? বলল অন্যজন। বের করে ফেলব। আর না থাকলে তো নেই-ই। আমাদের কাজ শুরু করব।