অউ! বিচিত্র শব্দ করে উঠল রবিন। তোমার বাবার কাছে তোমার দাদার খোঁজ চেয়েছিল তিন-ফোঁটা!
বাবা মিথ্যে বলেনি। সত্যিই জানত না তখন দাদা কোথায় আছে।
রক্তচক্ষু! আনমনে বলল কিশোর। মিস্টার হ্যামার, ওরকম কিছুর কথা কখনও বলেছিলেন মিস্টার হোরাশিও?
না, মাথা দোলাল উকিল। বিশ বছর ধরে তাকে চিনতাম। কখনও ওই শব্দ উচ্চারণ করেননি। ইসস, রিপোর্টার ব্যাটার কাছে মুখ খুলে ভুলই করেছি! তখন কি আর জানতাম…ভেবেছি, মৃত লোকের আর কী এমন ক্ষতি করবে সে? একটা কথা অবশ্য বলিনি ওকে, শেষ দিকে কেমন জানি সারাক্ষণ অস্থির হয়ে থাকতেন হোরাশিও। শত্রুরা যেন ঘিরে রেখেছে তাকে, তার ওপর চোখ রাখছে। আমাকেও অবিশ্বাস করতেন তখন। কল্পিত শত্রুদের কাছ থেকে কী জানি লুকিয়ে রাখতে চেয়েছেন। অগাস্টের দিকে তাকাল হ্যামার। তারপরই তোমার কাছে সাঙ্কেতিক চিঠি পাঠালেন তিনি।
হুঁ! বলল কিশোর, মিস্টার হেরাশিওর কথা আপনার কাছে জানতে এসেছিলাম, জেনেছি। একবার ডায়াল ক্যানিয়নে যেতে চাই। কী বলেন? ওখানে নতুন কিছু জানতে পারব?
আমার মনে হয় না, উকিল বলল। একেবারে খালি বাড়ি। বললামই তো, ধার শোধ করার জন্যে তাঁর সমস্ত জিনিসপত্র বেচে দিয়েছি। বই, আসবাবপত্র, সব। যে লোকের কাছে বাড়ি বাধা ছিল, তিনি তিন-চার দিনের মধ্যেই বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করবেন। নতুন বাংলো তুলবেন ওখানে।
তবে, তোমরা যেতে চাইলে, যাও। কিছু পাবে কিনা জানি না। গতকাল পর্যন্ত কয়েকটা বই ছিল, আর কয়েকটা মূর্তি, আবক্ষ মূর্তি। বিখ্যাত লোকদের মূর্তি। গতকাল ওগুলো এক স্যালভেজ ইয়ার্ডের মালিকের কাছে নিলামে বেচে দিয়েছি…
আবক্ষ মূর্তি! বোলতা হুল ফোঁটাল যেন কিশোরের গায়ে। মিস্টার হ্যামার, আমরা যাই। যা জানার জেনেছি। থ্যাঙ্ক ইউ।
দরজার দিকে রওনা দিল কিশোর। অবাক হয়ে তাকে অনুসরণ করল মুসা, রবিন আর অগাস্ট।
ঘষে ঘষে রোলস রয়েসের কালো উজ্জ্বল শরীরকে আরও চকচকে করে তুলছে হ্যাঁনসন, গাড়িটাকে ভালবাসে সে।
হ্যানসন, জলদি বাড়ি চলুন! তাড়া দিল কিশোর। যত তাড়াতাড়ি পারেন!
নিঃশব্দে রকি বিচের দিকে ছুটল গাড়ি। গতিবেগ ইচ্ছেমত বাড়ানোর। উপায় নেই, ট্রাফিক আইনে গতিবেগ বেঁধে দেয়া আছে।
হঠাৎ এত তাড়া কেন, কিশোর? আর থাকতে না পেরে জিজ্ঞেসই করে ফেলল মুসা।
রক্তচক্ষু! মুচকি হাসল গোয়েন্দাপ্রধান।
কী! ভুরু কুঁচকে গেল মুসার।
মিটিমিটি হাসছে কিশোর। রহস্যভেদ।
হাঁ হয়ে গেছে অগাস্ট। সত্যি বলছ!
মনে তো হয়, কিশোর জবাব দিল। তোমার দাদার শার্লক হোমসপ্রীতি আর আবক্ষ মূর্তিতেই রয়েছে রহস্যের সমাধান।
তুমিই জানো কী বলছ, গোঁ গোঁ করে করে উঠল মুসা। শার্লক হোমস…আবক্ষ মূর্তি…সাঙ্কেতিক চিঠির সঙ্গে কী সম্পর্ক?
পরে খুলে বলব, কিশোর বলল। আপাতত একটা লাইন নিয়েই আলোচনা করা যাক। অগাস্ট তোমার সৌভাগ্য।
কী সৌভাগ্য? শূন্য দৃষ্টিতে তাকাল মুসা।
অগাস্টও কিছুই বুঝতে পারছে না।
কিন্তু রবিন বুঝে ফেলল। আবক্ষ মূর্তি…রাশেদ চাচা যেগুলো কিনে এনেছেন!.ওয়াশিংটন…লিঙ্কন…আর, আর অগাস্টাস অভ পোল্যাণ্ড…
অগাস্ট তোমার সৌভাগ্য! উত্তেজিত হয়ে পড়ল অগাস্ট।
অগাস্ট…অগাস্টাস! তার মানে অগাস্টাসের মূর্তির ভিতরে কিছু লুকানো রয়েছে!
আমি শিওর, কিশোর বাল। খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে। শার্লক হোমস পড়তে ভালবাসতেন তোমার দাদা। কোনান ডয়েলের একটা গল্পের নাম: দ্য অ্যাডভেঞ্চার অভ দ্য সিক্স নেপোলিয়নস, তাতে নেপোলিয়নের মূর্তির ভেতরে একটা মূল্যবান জিনিস লুকানো থাকে। ওটা পড়েই বুদ্ধি এসেছে মিস্টার হোয়াশিও অগাস্টের মাথায়। সাধারণ একটা মূর্তির ভিতরে রক্তচক্ষু লুকানো আছে এটা কেউ ভাববে না। অগাস্টাসকে বেছে নিয়েছেন, কারণ, এর সঙ্গে অগাস্ট নামের মিল রয়েছে।
ক্ষণিকের জন্যে চুপ হয়ে গেল অন্য তিন কিশোর, তারপরই ফেটে পড়ল উল্লাসে।
পাশা স্যালভেজ ইয়ার্ডের গেট দেখা গেল। গেটের সামনে এসে গাড়ি থামাল হ্যাঁনসন। সে নেমে দরজা খুলবে কখন? তার আগেই ঝটকা। দিয়ে দুদিকের দরজা খুলে গেল, হুড়মুড় করে নেমে পড়ল চার কিশোর।
অফিসের কাছে টেবিলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে মূর্তিগুলো। সেদিকে চেয়েই দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে যেন থেমে গেল কিশোর। গায়ের ওপর এসে পড়ল অন্য তিনজন, আরেকটু হলে ধাক্কা দিয়ে মাটিতেই ফেলে দিয়েছিল তাকে। ওরাও দেখল, বুঝল, কেন ওভাবে দাঁড়িয়ে পড়েছে কিশোর।
সকাল বেলাও যে টেবিলটাতে তেরোটা মূর্তি সাজানো ছিল, এখন সেখানে রয়েছে মাত্র পাঁচটা: ওয়াশিংটন, ফ্র্যাঙ্কলিন, লুথার এবং থিওডর রুজভেল্ট।
অগাস্টাস অভ পোল্যাণ্ডের মূর্তিটা নেই।
পাঁচ
পায়ে পায়ে এগোল চার কিশোর। টেবিলের ওপাশে অফিসের দেয়ালে বড় করে লেখা একটা নোটিশ টাঙানো: মূর্তি দিয়ে বাগান সাজাতে চান? মাত্র পঞ্চাশ (৫০.০০) ডলার, প্রতিটি।
হতাশায় কালো হয়ে গেছে ছেলেদের মুখ।
কাঁচেঘেরা ছোট্ট অফিস ডেস্কে বসে কী যেন পড়ছেন মেরি চাচী।
ঢোক গিলল কিশোর, গলা চড়িয়ে ডাকল, চাচী! আর মূর্তি কই?
বল তো কোথায়? দরজায় বেরিয়ে এলেন চাচী, হাসি হাসি মুখ।
বিক্রি হয়ে গেছে?
নিশ্চয়। আজ শনিবার, মনে নেই? শনিবারে সবচেয়ে বেশি কাস্টোমার আসে জানিসই তো। অনেকেই এসেছিল, চোখে পড়ল, পছন্দ হলো, আর কী রাখে? দামও কম। নিয়ে গেল।