আসলে, আমার জন্মের একটা ছায়া আছে, অগাস্ট বলল। কালো ছায়া বলতে পারো। আমাকে জন্ম দিয়েই মারা যায় আমার মা। এটাই হয়তো বোঝাতে চেয়েছে দাদা।
হয়তো, কিশোরের কণ্ঠে সন্দেহ। তবে খাপে খাপে মিলছে না। পরের বাক্যটা: গভীরে খোঁড়ো; আমার কথার অর্থ শুধু তোমার জন্যেই। তার মানে, এই মেসেজ শুধু তোমার জন্যেই, ভালমত ভেবেচিন্তে এর মানে বের করো। কিন্তু গভীরে খোঁড়ার মানে কী? তারপরের বাক্য: স্পষ্ট করে বলতে পারছি না, তা হলে অন্যরা বুঝে ফেলবে। এটা খুব পরিষ্কার কথা।
হ্যাঁ, সায় দিলেন পরিচালক। কিন্তু তারপরের বাক্যটা? ওটা আমার, ওটার জন্যে মূল্য দিয়েছি, ওটার মালিক হয়েছি, অথচ ওটার ভয়ে অস্থির আমি। এর কী মানে?
মিস্টার হোরাশিও বলেছেন, কিশোর বলল, জিনিসটা তাঁর সম্পত্তি, ওটা নাতিকে দেয়ার ক্ষমতা তার আছে। কিন্তু কোন কারণে জিনিসটার ব্যাপারে তার একটা ভয়ও আছে, দারুণ ভয়!
জোরে জোরে পড়ল কিশোর, তবে পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেছে, অর্ধশতাব্দী পর নিশ্চয় ওটার পঙ্কিল ক্ষমতা দূর হয়েছে। কিন্তু তবু ওটাকে জোর করে কিংবা ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে দখল করার উপায় নেই; ওটা হয় কিনতে হবে, কিংবা কারও কাছ থেকে উপহার পেতে হবে, কিংবা খুঁজে বের করতে হবে। মুসা আর রবিনের দিকে তাকাল সে। কিছু বুঝেছ?
মুসা বলল, মিস্টার হোরাশিও বলছেন, জিনিসটা পঞ্চাশ বছর ধরে আছে তার কাছে। এতদিনে ওটা বিশুদ্ধ হয়ে গেছে, লোকের ক্ষতি করার ক্ষমতা হারিয়েছে।
তা হলে ওটাকে বিপজ্জনক কেন মনে করেছেন মিস্টার হোরাশিও? রবিন প্রশ্ন রাখল। কেন বলছেন: ওটাকে জোর করে কিংবা ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে দখল করা যাবে না? কেন সাবধানে থাকার জন্যে হুশিয়ার করছেন গাসকে? আরও একটা ব্যাপার, সময়ের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। কেন? সাবধানেও থাকতে বলছেন, একই সঙ্গে তাড়াহুড়োও করতে বলছেন।
শেষ লাইন, কিশোর পড়ল, ওটা আর আমার সব ভালবাসা তোমাকে দিয়ে গেলাম। মুখ তুলল সে। মেসেজ শেষ। কিছু কিছু বোঝা গেল, কিন্তু শুরুতে যে অন্ধকারে ছিলাম, সে-অন্ধকারেই রয়েছি।
অমাবস্যার অন্ধকার, আগেই বলেছি, মুসা বিড়বিড় করল।
মিস্টার হোরাশিও অগাস্টের সম্পর্কে ভালমত জানা দরকার, অগাস্টের দিকে ফিরল কিশোর। গাস, তোমার দাদা কেমন মানুষ ছিলেন?
জানি না, মাথা নাড়ল ইংরেজ কিশোর। কখনও দেখিনি। পরিবারের রহস্যময় লোক সে। ছেলেবেলায় বাড়ি থেকে পালিয়েছিল, এক সওদাগরী জাহাজে চেপে পাড়ি জমিয়েছিল দক্ষিণ সাগরে। কিছুদিন পর একটা চিঠি এল তার, তারপর নিয়মিত কয়েকটা। শেষে হঠাৎ করেই একদিন চিঠি আসা বন্ধ হয়ে গেল। পরিবারের সবাই ধরে নিল, জাহাজ ডুবে কিংবা অন্য কোন দুর্ঘটনায় মারা গেছে হোরাশিও। অনেক দিন পর আবার তার খবর পেয়ে চমকে উঠল আমার বাবা। হলিউডের এক উকিলের কাছ থেকে চিঠি এল: জনাব হোরাশিও অগাস্ট এই কদিন আগে মারা গেছেন। তাঁর নাতি অগাস্ট অগাস্টের জন্যে কিছু তথ্য আর সম্পদ রেখে গেছেন। উকিলের চিঠির সঙ্গেই এই সাঙ্কেতিক চিঠিটা ছিল।
চিঠি পেয়েই ইংল্যাণ্ড থেকে চলে এসেছ? কিশোর জিজ্ঞেস করল।
যত তাড়াতাড়ি পেরেছি, অগাস্ট জানাল। প্লেনে এলে আরও অনেক আগে আসতে পারতাম। কিন্তু টাকা নেই বাবার। অনেক চেষ্টা করে শুধু একজনের জাহাজ ভাড়া জোগাড় করেছে, তাই আমি একা এসেছি। কয়েক হপ্তা লেগেছে আসতে। চিঠিটা পেয়েছি প্রায় দুমাস
এসেই নিশ্চয় উকিলের সঙ্গে দেখা করেছ?
মাথা নাড়ল অগাস্ট। এসে ফোন করেছি, কিন্তু উকিল তখন শহরের বাইরে, তাই দেখা করতে পারিনি। আজ করার কথা। আমেরিকায় কাউকে চিনি না আমি আঙ্কলকে ছাড়া, মিস্টার ক্রিস্টোফারকে দেখাল অগাস্ট। বাবাও বিশেষ কাউকে চেনে না। সব শুনে আঙ্কলই তোমাদের কথা বললেন, তোমাদের সাহায্য চাইতে বললেন।
মনে হচ্ছে, কিশোর বলল, তোমার সঙ্গে আমাদেরও উকিলের কাছে যাওয়া দরকার। তোমার দাদার ব্যাপারে জানা খুব জরুরি। কোন না কোন শত্রু পেয়ে যেতে পারি।
ঠিকই বলেছ, মাথা কাত করলেন পরিচালক। গাস, ওরা তোমাকে সাহায্য করবে। আর আমি তো আছিই। তো, এখন যাও, তোমাদের কাজ শুরু করো গিয়ে। আমারও জরুরি কয়েকটা কাজ আছে, একটা ফাইল টেনে নিলেন তিনি।
ছেলেদেরকে দেখেই রাজকীয় রোলস রয়েস থেকে বেরিয়ে এল। দীর্ঘদেহী ইংরেজ শাফার, হ্যাঁনসন। দরজা খুলে ধরল।
পকেট থেকে আরেকটা চিঠি বের করল অগাস্ট। তাতে হলিউডের সেই উকিলের নাম আর ঠিকানা রয়েছে। শহরতলীর একটা, ঠিকানা, উকিলের নাম রয় হ্যামার। কোথায় যেতে হবে হ্যাঁনসনকে বলল কিশোর। নিঃশব্দে ছুটে চলল বিশাল রোলস রয়েস।
নানারকম আলোচনা চলল চার কিশোরের মাঝে। বেশিরভাগ প্রশ্ন করছে অগাস্ট; আমেরিকা, বিশেষ করে হলিউডের ব্যাপারে জানতে চাইছে সে, জবাব দিচ্ছে তিন গোয়েন্দা।
চওড়া রাস্তা ছেড়ে সরু একটা গলিপথে গাড়ি নামিয়ে আনল হ্যাঁনসন। পুরানো ধাঁচের ছোট একটা পুরানো বাড়ির সামনে এসে থামল।
হুমম! বাড়িটার দিকে চেয়ে গম্ভীর হয়ে গেছে কিশোর। চিন্তিত ভঙ্গিতে নামল গাড়ি থেকে। বেশি পুরানো। উকিল সাহেব বাড়িতেই অফিস করে, মনে হচ্ছে।
দরজার পাশে বেলের সুইচের গা ঘেঁষে বসানো হয়েছে একটা নেমপ্লেট। তাতে লেখা: