আবার তার চেয়ারে গিয়ে বসল অগাস্ট। আশা করছি, তোমরা আমাকে সাহায্য করতে পারবে। আমার দাদার ভাই, মানে আমার আরেক দাদা, হোরাশিও অগাস্ট, এই কিছুদিন আগে মারা গেছে। তার উকিল আমাকে একটা চিঠি পাঠিয়েছে, চিঠিটার মাথামুণ্ডু কিছু বুঝতে পারছি না।
আমিও না, মাথা নাড়লেন চিত্রপরিচালক। অথচ হোরাশিও অগাস্টের ধারণা, তার নাতি সেটা বুঝতে পারবে। অগাস্ট, ওদেরকে দেখাও চিঠিটা।
পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে সেটা থেকে একটা কাগজ নিয়ে সাবধানে ভাজ খুলল অগাস্ট। কাঁপা হাতের লেখা রয়েছে তাতে। নাও, কিশোরের দিকে বাড়িয়ে ধরল সে চিঠিটা। দেখো, কিছু বুঝতে পারো কিনা।
দুপাশ থেকে রবিন আর মুসাও ঝুঁকে এল চিঠিটার ওপর।
লেখা রয়েছে:
আমার নাতি, অগাস্ট অগাস্ট,
অগাস্ট তোমার নাম, অগাস্ট তোমার খ্যাতি, অগাস্ট তোমার সৌভাগ্য। পাহাড়-প্রমাণ বাধাকেও বাধা মনে করবে না; তোমার জন্মতারিখের ছায়াতেই ওর অস্তিত্ব।
গভীরে খোঁড়ো; আমার কথার অর্থ শুধু তোমার জন্যেই। স্পষ্ট করে বলতে পারছি না, তা হলে অন্যরা বুঝে ফেলবে। ওটা আমার, ওটার জন্যে মূল্য দিয়েছি, ওটার মালিক হয়েছি, অথচ ওটার ভয়ে অস্থির আমি।
তবে পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেছে, অর্ধশতাব্দী পর নিশ্চয় ওটার পঙ্কিল ক্ষমতা দূর হয়েছে কিন্তু তবু ওটাকে জোর করে কিংবা ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে দখল করার উপায় নেই; ওটা হয় কিনতে হবে, কিংবা কারও কাছ থেকে উপহার পেতে হবে, কিংবা খুঁজে বের করতে হবে।
সাবধান থেকো। সময় খুব মূল্যবান। ওটা আর আমার সব ভালবাসা তোমাকে দিয়ে গেলাম।-হোরাশিও অগাস্ট।
বাবা রে বাবা! ঠোঁট ওল্টাল রবিন। চিঠি বটে!
ইংরেজি না তো, গ্রিক! বিড়বিড় করল মুসা। পঙ্কিল ক্ষমতা মানে কী?
হতে পারে, খারাপ কোন ক্ষমতা, রবিন বলল। হয়তো ক্ষতি। করার ক্ষমতা বা ওই জাতীয় কিছু বোঝানো হয়েছে।
চুপচাপ চিঠিটা হাতে নিয়ে বসে আছে কিশোর, নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে, তার মানে গভীর ভাবনা চলছে তার মাথায়। আস্তে করে কাগজটা আলোর দিকে তুলে ধরল, লুকানো সাঙ্কেতিক লেখা আছে কিনা খুজছে।
নেই, কিশোর, বললেন পরিচালক। প্রথমেই ওকথা ভেবেছি। স্টুডিওর টেকনিক্যাল এক্সপার্ট দিয়ে পরীক্ষা করিয়েছি। অদৃশ্য কালি দিয়ে গোপন কিছু লেখা হয়নি। চিঠিটাই লেখা হয়েছে সাঙ্কেতিক ভাষায়। যে উকিল এটা অগাস্টের কাছে পাঠিয়েছে, সে জানিয়েছে, মৃত্যুর কয়েক দিন আগে নাকি চিঠিটা লিখেছিলেন হোরাশিও অগাস্ট। উকিলের হাতে চিঠি দিয়ে তাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, সময় এলে যাতে এটা তার নাতির কাছে পাঠানো হয়! তার মানে, যা কিছু বলার এই চিঠিতেই বলেছেন হোরাশিও। তো, কিছু বুঝলে?
ইয়ে, সাবধানে বলল কিশোর, একদিক থেকে, বলতে গেলে চিঠির মানে খুব পরিষ্কার।
পরিষ্কার! কোথায় রয়েছে ভুলে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠল মুসা। তুমি বলছ পরিষ্কার! আমার কাছে ওটা অমাবস্যার অন্ধকার!
শুনলই না যেন কিশোর। ধ্যানমগ্ন হয়ে তাকিয়ে আছে চিঠিটার দিকে। হঠাৎ মুখ তুলল। একটা ব্যাপার একেবারেই স্পষ্ট, মিস্টার হোরাশিও অগাস্ট এই চিঠির মানে তার নাতি ছাড়া আর কাউকে বুঝতে দিতে চাননি। কিছু একটা লুকিয়ে রেখেছেন তিনি, গত পঞ্চাশ বছর ধরে। মহামূল্যবান কিছু একটা। আর কেউ জানলে চুরি করে নিয়ে যেতে পারে, সেই ভয়ে নিজের নাতিকেও খুলে বলতে পারেননি, কোথায়। রেখেছেন জিনিসটা। এটুকু পরিষ্কার।
হ্যাঁ, তা বটে, মাথা দোলাল মুসা। কিন্তু বাকিটা কাদা-পানির মতই ঘোলা।
হয়তো, আগের কথার খেই ধরল কিশোর, কিছু কথার গভীর মানে আছে। বাকি কথাগুলো একেবারেই ফালতু, লোককে বিপথে সরানোর জন্যে। গোড়া থেকেই শুরু করি: অগাস্ট তোমার নাম।
হ্যাঁ, সায় দিল অগাস্ট। আর অগাস্ট আমার খ্যাতি, সেটাও এক অর্থে ঠিক। অদ্ভুত নামের জন্যে স্কুলে প্রায়ই টিটকারি শুনতে হয় আমাকে, স্কুলের সবাই একডাকে চেনে।
বুঝলাম, রবিন বলল। কিন্তু অগাস্ট তোমার সৌভাগ্য, এর মানে কী?
আমিও তাই ভাবছি, কিশোর বলল। এক হতে পারে, অগাস্ট মাসের মধ্যে অগাস্ট তার জিনিসটা খুঁজে পাবে, এটাই বোঝাতে চেয়েছেন, কিন্তু অগাস্ট না বলে অগাস্টে তোমার সৌভাগ্য বললেই ঠিক হত না?
হুমম! ভাল কথা ধরেছ, বললেন চিত্রপরিচালক। এমনও হতে পারে, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যা এসেছে কলমের মাথায়, লিখে ফেলেছেন।
মাথা নাড়ল গোয়েন্দাপ্রধান। উঁহু! তা হতেই পারে না। ভেবেচিন্তে খুব সাবধানে লেখা হয়েছে। এখনও ঠিকমত মানে বুঝতে পারছি না। আমরা, তাই উল্টোপাল্টা মনে হচ্ছে।
আর দুদিন পরেই আমার জন্মদিন, অগাস্ট বলল, ছতারিখে। অগাস্টের গোড়াতে জন্মেছি বলেই আমার নাম অগাস্ট রেখেছে আমার বাবা। বলে: অগাস্টে জন্মে যে, তার নামও হবে অগাস্ট। দাদার লেখা কিংবা বাবার কথার সঙ্গে আমার জন্মদিনের কোন সম্পর্ক নেই তো?
কথাটা ভেবে দেখল কিশোর।
জানি না, বলল সে। হতে পারে, তোমার জন্মদিন খুব কাছে বলেই চিঠিতে লেখা হয়েছে, সময় খুব মূল্যবান।
খাইছে! আঁতকে উঠল যেন মুসা। এই ঘোর রহস্যের কিনারা মাত্র দুদিনে! তা হলেই হয়েছে!
তুমি থামো তো, বিরক্ত হয়ে বলল রবিন। ওকে বলতে দাও।
চিঠির দিকে চেয়ে আছে কিশোর। দ্বিতীয় বাক্যটা: পাহাড়-প্রমাণ বাধাকেও বাধা মনে করবে না; তোমার জন্মতারিখের ছায়াতেই ওর অস্তিত্ব। প্রথম অর্ধেকটা বলছে, কিছুতেই পিছিয়ে আসবে না, কিন্তু শেষ অর্ধেকটা? নাহ, বোঝা যাচ্ছে না।