সাইকেল নিয়ে বাড়ি চলে এল রবিন। খাওয়ার পর খাওয়ার টেবিলে বসেই নোট লিখতে শুরু করল, সারাদিন যা যা ঘটেছে, বিস্তারিত। পরে খুঁটিনাটি সব মনে না-ও থাকতে পারে। লিখতে লিখতেই হাত থেমে গেল। এই সময় হঠাৎ: ডায়াল ক্যানিয়ন! তাই তো, ডায়াল ক্যানিয়ন কেন? অদ্ভুত নাম! খানিক দূরে বসে খবরের কাগজ পড়ছেন মিস্টার মিলফোর্ড। ডেকে জিজ্ঞেস করল রবিন, বাবা, হলিউডের উত্তরে ডায়াল ক্যানিয়নের নাম শুনেছ?
কাগজ নামিয়ে রাখলেন মিস্টার মিলফোর্ড। ডায়াল ক্যানিয়ন? বোধহয় শুনেছি। কেন?
নামটা অদ্ভুত লাগছে আমার কাছে!
তাই, না? দাঁড়া দেখছি। উঠে গিয়ে বুকশেলফ থেকে মোটা একটা বই নিয়ে এলেন মিস্টার মিলফোর্ড, আর একটা বড় ম্যাপ।
ম্যাপে পাওয়া গেল জায়গাটা। আঙুল রেখে বললেন, এই তো। বইটা খুললেন। ডায়াল ক্যানিয়ন…ডায়াল ক্যানিয়ন…এই যে, নিঃসঙ্গ ছোট্ট একটা গিরিসঙ্কট, হলিউডের উত্তরে। আগে নাম ছিল সানডায়াল ক্যানিয়ন, পরে সংক্ষেপ করে নেয়া হয়েছে। এই নামকরণের কারণ, সূর্যঘড়ির কাঁটার সঙ্গে চূড়াটার মিল আছে। রবিনের দিকে তাকালেন। সূর্যঘড়ির কাটা কেমন জিনিস? পিরামিডের মত। ওটার ছায়া পড়ে ডায়ালের ওপর, তা দেখেই আগে সময় অনুমান করত লোকে।
থ্যাঙ্কস, বলেই আবার লেখায় মন দিল রবিন।
লিখতে লিখতেই তার মনে হলো, তথ্যটা কিশোরকে জানালে কেমন হয়? হয়তো তেমন কিছুই না, কিন্তু কোন কথা থেকে যে কখন কী আবিষ্কার করে বসবে কিশোর পাশা, আগে থেকে বলা যায় না।
উঠে এসে ফোন করল রবিন।
ফোন ধরল কিশোর। রবিনের কথা শুনতে শুনতে হঠাৎ ঢোক গিলল, শব্দটা এপাশ থেকেও শুনতে পেল রবিন। পরক্ষণেই চেঁচিয়ে উঠল কিশোর, রবিন! পেয়েছি!
কী!
পেয়েছি! কাল সকালে লাইব্রেরিতে যাচ্ছ তো? দুপুরের আগেই ইয়ার্ডে চলে আসবে। ঠিক একটায়, দেরি কোরো না। সব কিছু তৈরি রাখব আমি।
কীসের তৈরি! কিছুই বুঝতে পারছে না রবিন।
কিন্তু লাইন কেটে দিল কিশোর।
স্তব্ধ হয়ে কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে রইল রবিন, আস্তে করে নামিয়ে রাখল রিসিভার। নোট লেখা শেষ আর হলো না, কাপড় ছেড়ে বিছানায় উঠল সে।
রাতে ঘুম ভাল হলো না। সকালে লাইব্রেরিতে গিয়েও কাজে মন বসাতে পারল না রবিন। থেকে থেকেই আনমনা হয়ে যাচ্ছে।
একটার আগেই ইয়ার্ডে পৌঁছে গেল রবিন। কিশোর, অগাস্ট আর মুসা তার জন্যে অপেক্ষা করছে। পিকআপটাও তৈরি, ড্রাইভিং সিটে বোরিস, পাশে রোভার। দুজনেই যাবে সঙ্গে। কিন্তু কোথায়? ট্রাকের পেছনে পুরু করে ক্যানভাস বিছানো, ছেলেদের বসার জন্যে। গোটা দুই বেলচাও আছে। কিশোরের কাঁধে ঝুলছে ক্যামেরা।
কিন্তু যাচ্ছিটা কোথায়? এই নিয়ে অন্তত দশবার প্রশ্ন করল রবিন। উত্তেজিত।
ছুটে চলেছে পিকআপ।
রাস্তার দিক থেকে মুখ ফেরাল মুসা। আমারও সেই প্রশ্ন! কিশোর, মাঝেমধ্যে তুমি এত বেশি বেশি করো না। আমাদেরকে ভাবনায় রেখে কী লাভ তোমার? আমরা তো তোমারই সহকারী, নাকি?
হহারাশিও অগাস্টের মেসেজের লেখা সত্যি কিনা, যাচাই করতে যাচ্ছি, অবশেষে মুখ খুলল গোয়েন্দাপ্রধান। বোরিস আর রোভারকে নিয়ে যাচ্ছি নিরাপত্তার জন্যে। ডাকাত ব্যাটারা যদি হামলা করে বসে, এই দুজনই যথেষ্ট। দশটা কালো-ফোরও সাধ্য হবে না দুভাইয়ের মোকাবেলা করে।
আরে, দূর, ওসব কথা শুনতে চেয়েছে কে? গোঁ গোঁ করে উঠল মুসা। পারবে না, সে তো আমরাও জানি। যা জানি না, সেটা বলো।
ঠিক আছে, বাবা, বলছি, হাত তুলল কিশোর। সূত্রটা রবিনই দিয়েছে, কাল রাতে। ডায়াল ক্যানিয়নের আগের নাম ছিল সানডায়াল ক্যানিয়ন। এটা শুনেই বুঝে গেছি। ইস, আরও আগেই বোঝা উচিত ছিল! কাল ওরা আমাকে বেঁধে রেখেছিল, রান্নাঘরের জানালা দিয়ে দেখেছি, লনে পাহাড়ের চূড়ার ছায়া! যেন একটা বিশাল সূর্যঘড়ি। গাস, বুঝেছ কিছু?
না, সোজাসাপ্টা জবাব।
দাঁড়াও, দাঁড়াও! হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল রবিন। বুঝেছি! সূর্যঘড়ি…তার মানে কাটার ছায়ার মাথা যেখানে পড়বে, সেখানেই রয়েছে। রক্তচক্ষু! মাটির নিচে। তাই না?
হ্যাঁ, কিশোর বলল।
কিন্তু মস্ত বড় লন, মুসা তত উৎসাহ পাচ্ছে না। একেক সময় কাটার ছায়া একেক জায়গায় পড়বে, কয় জায়গা খুঁড়ব? পুরো লন তো খোঁড়া সম্ভব না।
পুরো লন খুড়তে হবে কেন? পকেট থেকে মেসেজটা বের করে ক্যানভাসের ওপর বিছাল কিশোর। আবার গোড়া থেকে আলোচনা করছি, অগাস্ট তোমার নাম, অগাস্ট তোমার খ্যাতি, অগাস্ট তোমার সৌভাগ্য-এসব কথা গাসের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যেই লেখা হয়েছে। তারপর, পাহাড়প্রমাণ বাধাকেও বাধা মনে করবে না, তোমার জন্ম তারিখের ছায়াতেই ওর অস্তিত্ব; এটাই হলো গিয়ে আসল কথা। বলতে চেয়েছেন, গাসের জন্মদিনে পাহাড়ের ছায়া যেখানে পড়বে, সেখানেই পাওয়া যাবে পাথরটা। ওর জন্ম কবে? অগাস্টের ছয় তারিখে। কটার সময়?
আড়াইটা! বলল অগাস্ট।
হ্যাঁ, আড়াইটার সময় যেখানে ছায়া পড়বে, খুঁড়তে হবে সেখানেই। গভীর করে খুঁড়তে হবে। মেসেজ এখানেই শেষ, বাকিটা লিখেছেন ভাবনা গুলিয়ে দেয়ার জন্যে। হ্যাঁ, আরেকটা বাক্য: সময় খুব মূল্যবান। তার মানে, বেলা আড়াইটাকে প্রাধান্য দিয়েছেন, দিনের অন্য কোন সময়ের ছায়া হলে চলবে না।