হাঁ হয়ে গেছে রবিন। তাই হয়েছে! কিন্তু…
চুপ! আঙুল তুলল কিশোর। বাকিটাও পড়ছি…
রবিন আরও অবাক; দেখে, অগাস্টও হাসছে। কিশোরও। কিছুই বুঝতে না পেরে সে-ও হাসল। গোমড়া ভাবটা কেটে গেল, হালকা হয়ে গেল আবার পরিস্থিতি।
রবিন? বোরিসের ডাক শুনে ঘুরল চার কিশোর, পিকআপের কাছে দাঁড়িয়ে আছে ব্যাভারিয়ান। মূর্তিটা কী করব? পিকআপ গ্যারাজে তুলতে হবে।
ওই বেঞ্চে রেখে দিন, রবিন বলল। সঙ্গীদের দিকে ফিরে বলল, ফ্রানসিস বেকন। নিয়ে গিয়েছিলাম যদি মহিলা বদলে নেন! নিলেন না, টাকাই ফেরত নিলেন। পঞ্চাশ ডলার ধার নিয়েছিলাম মেরি চাচীর কাছ থেকে, অকটেভিয়ানকে ফেরত আনতে পারলে টাকাটা আর দিতে হত না।
ও নিয়ে ভেবো না, হাত নাড়ল কিশোর। টাকার ব্যবস্থা আমি করব।
মূর্তিটা নামিয়ে বেঞ্চে রাখল বোরিস।
কোন কিছু না ভেবেই এগিয়ে গেল মুসা। কাছে গিয়ে দেখেই চেঁচিয়ে উঠল, আরে! ঠিক দেখছি তো! এই, কিশোর, জলদি এসো!
ছুটে এল তিন কিশোর।
আঙুল তুলে মূর্তির পিছনের লেখা দেখাল মুসা: অকটেভিয়ান!
অকটেভিয়ান! চেঁচিয়ে উঠল অগাস্ট। কালো-ফোর দল নিতে পারেনি!
বুঝেছি! ঘোরের মধ্যেই যেন মাথা দোলাল রবিন। দুটো মূর্তি বগলে চেপে নিয়ে গিয়েছিল বোরিস, অকটেভিয়ানকে বাক্সে না ভরে, ভুলে বেকনকে ভরেছে। যাক, বাঁচলাম! ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল সে।
চট করে সবাই একবার দেখে নিল গেটের দিকে তাদের ভয়, তিন ফোঁটা না এসে হাজির হয় আবার। অমূলক ভয়, একেবারে নির্জন গেট আর রাস্তা।
কমবেশি সবাই চমকে গিয়েছে, আগে সামলে নিল কিশোর। চলো, চলো, দেরি করা উচিত না। ওয়ার্কশপে নিয়ে গিয়ে ভেঙে ফেলি মূর্তিটা।
জোশ এসে গেছে মুসার শরীরে, একাই মূর্তিটা বয়ে নিয়ে এল ওয়ার্কশপে।
একটা বাটালি আর হাতুড়ি বের করে আনল কিশোর। দেখো, অকটেভিয়ানের ঘাড়ের নিচে হাত বোলাচ্ছে সে। এখানে গর্ত করা হয়েছিল, তারপর আবার কাদা লেপে ঢেকে দেয়া হয়েছে। আঙুলে লাগছে। যাক, অবশেষে রক্তচক্ষু মিলল!
দূর, কথা থামাও! অধৈর্য হয়ে বাতাসে থাবা মারল মুসা। ভাঙো, ভাঙো! নইলে আমার কাছে দাও!
হেসে মূর্তির গায়ে বাটালি লাগাল কিশোর, হাতুড়ি দিয়ে জোরে বাড়ি মারল বাটালির পেছনে। আরেকবার বাড়ি মারতেই চলটা উঠে গেল, পরের বাড়িতে অকটেভিয়ান দুটুকরো। ছোট গোল একটা কাঠের বাক্স গড়িয়ে পড়ল মাটিতে।
ছোঁ মেরে ওটা তুলে নিল মুসা। কিশোরের দিকে বাড়িয়ে ধরল। খোলো! তুমিই খোলো! দেখি, পঞ্চাশ বছর ধরে কী জিনিস লুকিয়ে রেখেছে! উত্তেজনায় কাঁপছে তার গলা। আরে, দেরি করছ কেন? অভিশাপের ভয় করছ নাকি?
না, কেমন বদলে গেছে গোয়েন্দাপ্রধানের কণ্ঠ!
হালকা! এত হালকা হওয়ার তো কথা না! বাক্সটা হাতের তালুতে রেখে ওজন। আন্দাজ করছে সে।
মোচড় দিয়ে বাক্সের ঢাকনা খুলে ফেলল কিশোর। সবাই ঝুঁকে এল ভেতরে কী আছে দেখার জন্যে। না, জ্বলজ্বলে লাল কোন পাথর তো। নেই! শুধু রয়েছে ভাঁজ করা এক টুকরো কাগজ। ধীরে, অতি ধীরে। দুআঙুলে চেপে কাগজটা বের করে আনল গোয়েন্দাপ্রধান। খুলে পড়ল: গভীরে খোঁড়ো! সময় খুব মূল্যবান!
পনেরো
সেরাতে সহজে ঘুম এল না রবিনের চোখে। ভয়ানক উত্তেজনা গেছে। সারাদিন। অবশেষে কী মিলল! এক টুকরো কাগজ! নাহ, অতিরিক্ত হয়ে গেছে! বাক্সটা খোলার পর কী কী ঘটেছে, বার বার চোখের সামনে। ভাসছে তার।
হতাশ দৃষ্টিতে কাগজের টুকরোটার দিকে তাকিয়ে ছিল কিশোর। ও নিশ্চিত ছিল, বাক্সে পাথরটাই মিলবে। তার ধারণা ভুল। এবং ভুল হলে নিজের ওপর সাংঘাতিক রেগে যায় গোয়েন্দাপ্রধান।
আরেকটা মেসেজ! সবচেয়ে কম হতাশ হয়েছে মুসা।
গভীরে খোঁড়ো! আপনমনেই বলল কিশোর। মানে কী? রহস্যের গভীরে খোঁড়ো। লোককে বিপথে চালিত করার জন্যেই মূর্তির বুদ্ধি করেছেন হোরাশিও অগাস্ট। কিন্তু ধরে নিয়েছেন, কোন না কোনভাবে বুঝে যাবে তার নাতি। নিশ্চয় বোঝার জন্যে কোন ইঙ্গিতও রেখেছেন। সেটা কী?
জানি না, জবাব দিল অগাস্ট। ভাজ পড়েছে দুই ভুরুর মাঝে। দাদা খুব চালাক ছিল, নিজের বুদ্ধির মাপকাঠিতেই আর সবাইকে বিচার করেছে, ফলে থই পাচ্ছি না আমরা।
দেখি, মেসেজটা বের করো তো, হাত বাড়াল কিশোর। আছে সঙ্গে?
বের করে দিল অগাস্ট।
ছোট টেবিলে ছড়িয়ে বিছিয়ে আবার মেসেজটা পড়ল কিশোর, জোরে জোরে।
এখনও আমার কাছে আগের মতই দুর্বোধ্য! কুটি করল মুসা।
আমার কাছেও, অগাস্ট বলল। অগাস্ট আমার সৌভাগ্য, মানে কী? অগাস্টাসের কোন একটা মূর্তির ভেতরে, এ ছাড়া আর কী? কিংবা হতে পারে, অগাস্ট মাসের কথা বলেছে। আগামীকাল আমার জন্মদিন। অগাস্টের ছয় তারিখে বেলা আড়াইটায় জন্মেছি আমি। কিন্তু মাসের মধ্যে পাথর থাকে কী করে? কোন ক্যালেণ্ডারের কথা বলেনি তো?
মনে হয় না, নিজের ঠোঁটে চিমটি কাটতে শুরু করল কিশোর। অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে মুখ তুলল। সব ভাবনাচিন্তা এখন বাদ। শুতে যাব। আচ্ছা, দাঁড়াও, দেখে নিই, অকটেভিয়ানের মূর্তির ভাঙা ধারগুলো পরীক্ষা করে দেখল সে। বাক্সটা যেখানে ছিল, খাজ হয়ে আছে, আঙুল বুলিয়ে দেখল। মূর্তির ভেতরে পাথর রাখা নিরাপদ মনে করেননি মিস্টার অগাস্ট।
চুপ করে রইল অন্য তিনজন। বলার আছেই বা কী?
চলো, যাই, বলল গোয়েন্দাপ্রধান। পেটের ভেতর ছুচো নাচছে। খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ব। ঘুম দিয়ে উঠলে মাথাটা পরিষ্কার হবে, কোন একটা বুদ্ধি বেরিয়ে যাবে হয়তো তখন।