চাচীর কাছ থেকে পঞ্চাশ ডলার ধার নিল রবিন, যদি আর কোন মূর্তি নিতে রাজি না হন মহিলা, যিনি অকটেভিয়ান কিনেছেন, তাকে দিতে হবে। তবুও ফ্রানসিস বেকনকে সঙ্গে নিল।
পিকআপের পিছনে পুরু করে ক্যানভাস বিছিয়ে তাতে মূর্তিটা ভালমত বসাল বোরিস, যাতে গাড়ির ঝাঁকুনিতে পড়ে গিয়ে নষ্ট না হয়ে যায়। চারদিক ঘিরে পুরানো খবরের কাগজের গাদা আর কার্ডবোর্ডের বাক্স খুঁজে দিল এমনভাবে, হাজার ঝাঁকুনিতেও পড়া তো দূরের কথা, নড়বেও না মূর্তি।
ইয়ার্ড থেকে কম করে হলেও পঁয়তাল্লিশ মিনিটের পথ। আবাসিক এলাকার মধ্য দিয়ে চলে গেছে সুন্দর পথ, মসৃণ গতিতে ছুটে চলল। পিকআপ। পথ ভাল, ঘন লোকালয়ের ভিতর দিয়ে গেছে, ফলে গাড়ির ভিড়ও বেশি। ওদেরকে অনুসরণ করে আসছে একটা গাঢ় নীল সিড্যান, এটা লক্ষই করল না রবিন কিংবা বোরিস। গাড়িটাতে দুজন লোক, দুজনেরই কালো গোঁফ, হরিমড় ভারি চশমা।
যে অঞ্চলের ঠিকানা দিয়েছে মেয়েটা, সেখানে পৌঁছে গেল পিকআপ। গলির নাম্বার দেখতে শুরু করল রবিন। গলি পাওয়া গেল। মোড় নিয়ে গাড়ি ঢোকাল বোরিস।
এই যে, এই বাড়িই! চেঁচিয়ে বলল রবিন। রাখুন, রাখুন।
হো-কে, রিয়ারভিউ মিররের দিকে তাকিয়ে ব্রেক কষল বোরিস। গাড়ি থামাল। ওদের আধ ব্লক পেছনে থেমে গেল নীল সিড্যান। গাড়িতেই বসে রইল লোক দুজন, এদিকে দৃষ্টি।
এক পাশের দরজা খুলে নেমে পড়ল রবিন, অন্য পাশ দিয়ে বোরিস। ট্রাকের পেছন থেকে মূর্তিটা তুলে নিয়ে এগোল রবিনের পিছু পিছু।
বেল বাজাল রবিন।
দরজার ওপাশেই যেন অপেক্ষা করছিল মেয়েটা, সঙ্গে সঙ্গে খুলে দিল, বয়েসে রবিনের চেয়ে ছোট হবে।
তিন গোয়েন্দা! চেঁচিয়ে উঠল মেয়েটা, জীবন্ত শার্লক হোমসকে দেখছে যেন সামনে।
তিন গোয়েন্দায় যোগ দিয়েছে বলে গর্ব হলো রবিনের। গম্ভীর ভঙ্গিতে মাথা নোয়াল সামান্য।
অকটেভিয়ানকে নিতে এসেছ? কথার তুবড়ি ছুটল মেয়েটার মুখ দিয়ে। মা যেটা কিনে এসেছে? রহস্যময় কোন গোপন কারণ আছে নিশ্চয়? এসো। ইস, মাকে রুখতে জান বেরিয়ে যাচ্ছিল আমার! প্রায় দিয়েই দিয়েছিল পড়শীকে। শেষে বললাম, ভুল করে রেডিও অ্যাকটিভ পদার্থ দিয়ে প্রলেপ লাগানো হয়েছে মূর্তিটায়, মারাত্মক পদার্থ, সিকিউরিটির লোক নিতে আসছে, তবে গিয়ে থামল। নইলে দিয়ে ফেলেছিল।
এত দ্রুত কথা বলে মেয়েটা, শুনে তাল রাখাই মুশকিল হয়ে গেল রবিনের পক্ষে। চোখ পিটপিট করছে বোরিস।
আরে, এসো, এসো, দাঁড়িয়ে রইলে কেন? বলেই ঘুরল মেয়েটা।
তাকে অনুসরণ করল রবিন আর বোরিস।
বাড়ির পেছনে সুন্দর একটা বাগানে ওদেরকে নিয়ে এল মেয়েটা। মাঝখানে একটা ফোয়ারার ধারে রয়েছে অকটেভিয়ান, দেখেই এক লাফ মারল রবিনের হৃৎপিণ্ড। অকটেভিয়ানের গায়ে ছায়া ফেলেছে উঁচু গোলাপঝাড়, সবুজ পাতার মাঝে মাঝে ফুটে রয়েছে লাল গোলাপ; ধুলোয় মলিন সাদা মূর্তিটাকে এই পরিচ্ছন্নতার মাঝে বড় বেমানান, বড় নোংরা দেখাচ্ছে।
খানিক দূরে মরা পাতা ছাঁটছেন একজন হালকা-পাতলা মহিলা, সাড়া শুনে ঘুরলেন।
এই যে, মা, ওরা এসে পড়েছে, আবার কথা শুরু করে দিল মেয়েটা। তিন গোয়েন্দার লোক। বলেছিলাম না? ও ওদেরই একজন, রবিনকে দেখাল সে। অকটেভিয়ানকে নিতে এসেছে। আর কোন ভয় নেই তোমার। এখনও ছুঁয়ে ফেলোনি তো? বেশ বেশ, তা হলে আর ভয়, নেই। আরিব্বাপ রে, রেডিও অ্যাকটিভ! স্কুলের আপা বলেছে, সাংঘাতিক ক্ষতি করে শরীরের…
না, দুইনি, রুসা! মেয়েকে থামিয়ে দিলেন মহিলা। রবিনের দিকে চেয়ে মিষ্টি করে হাসলেন। যত সব উদ্ভট কল্পনা মেয়েটার, ফ্যানটাসির জগতে বাস। ওর চোখে দুনিয়ার সবই রহস্য, রাস্তার অচেনা সমস্ত লোক চোর-ডাকাত কিংবা স্পাই। নিশ্চয় বলেছে, রেডিও অ্যাকটিভিটির কথা বলে আমাকে ঠেকিয়েছে?
হ্যাঁ, মাথা নোয়াল রবিন। মূর্তিটা নিতে এসেছি, ম্যাডাম। ওটার বদলে যদি আরেকটা চান…এই যে, ফ্রানসিস বেকন…
না, আর মূর্তির দরকার নেই। ভেবেছিলাম, বাগানে রাখলে ভাল। লাগবে। কিন্তু লাগে না। নিজেই তো দেখছ।
হুঁ! পকেট থেকে টাকা বের করে বাড়িয়ে ধরল রবিন, এই নিন, পঞ্চাশই আছে।
খুব ভাল, খুব ভাল, খুশি হলেন মহিলা। প্যাশা স্যালভেজ ইয়ার্ডের সুনাম শুনেছিলাম, দেখছি ঠিকই শুনেছি।
বোরিস, রবিন বলল, দুটো মূর্তি একসঙ্গে নিতে পারবেন?
পারব, একটা মূর্তি বগলে চেপে ধরে রেখেছে বিশালদেহী ব্যাভারিয়ান। কিশোর বলে, ওর গায়ে মোষের জোর, ঠিকই বলে। অকটেভিয়ানকে আরেক বগলের তলায় তুলে নিল বোরিস অতি সহজে, যেন তুলোর পুতুল। রবিনের দিকে ফিরল। যাব?
হ্যাঁ, চলুন, ঘুরে দাঁড়াতে গেল রবিন।
দুই লাফে কাছে চলে এল রুসা। এখুনি চলে যাবে? এই প্রথম সত্যিকারের একজন গোয়েন্দার সঙ্গে দেখা হলো, কয়েক কোটি প্রশ্ন জমে আছে মনে, জিজ্ঞেস করব ভাবছিলাম…
কী… দ্বিধা করছে রবিন। রুসার কথা শুনতে মন্দ লাগছে না। তা ছাড়া, গোয়েন্দাদের ওপর অগাধ ভক্তি-শ্রদ্ধা যখন মেয়েটার…বোরিসের দিকে তাকাল সে। আপনি যান আমি আসছি। হ্যাঁ, অকটেভিয়ানকে একটা বাক্সে ভরে রাখবেন।
ঠিক আছে, তুমি তাড়াতাড়ি এসো, বলে হাঁটতে শুরু করল। বোরিস।
কথার মেশিনগান ছোটাল রুসা, একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে, কোনটারই জবাবের অপেক্ষা করছে না। কিছুই বলতে হচ্ছে না রবিনকে, শুধু শুনছে।