কিশোরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে রাইস, আনমনে গোঁফের মাথা ধরে টান মারল। খানিকটা সরে গেল গোফ। নকল! হুঁ! আরেকটা কথা বলো তো, অকটেভিয়ানের ভেতরেই যদি থাকবে, তুমি মূর্তিটা খুঁজছ না কেন? এ-বাড়িতে কী খুঁজতে এসেছ?
জবাব দেয়া কঠিন। কিশোরের ভাব ছিল, যে জিনিস নিয়ে এত গোলমাল, ওই লোক কোন বাড়িতে বাস করত, দেখা দরকার। কী জিনিস, বা কী ধরনের সূত্র খুঁজতে এসেছে, সে নিজেও জানে না।
অকটেভিয়ান কোথায় আছে জানি না, বলল কিশোর। তাই ভাবলাম, এখানেই খোঁজখবর করে যাই। নতুন কিছু মিলেও যেতে পারে।
নতুন কী?
নতুন ঠিক না, ভাবলাম, মানে আমার ভুলও হতে পারে, হয়তো অকটেভিয়ানের ভেতরেও লুকানো নেই পাথরটা। এ-বাড়িতেই কোথাও লুকিয়েছেন মিস্টার হোরাশিও অগাস্ট।
না, এখানে নেই, বিড়বিড় করল রাইস। তা হলে মেসেজে লেখা থাকত। নকলটা অগাস্টাসের ভেতরে ছিল, তার মানে আসলটা অকটেভিয়ানেই আছে। এখন তা হলে ওই মূর্তিটাই তাড়াতাড়ি খোঁজা দরকার, আর কেউ জেনে যাওয়ার আগেই।
কোথায় খুঁজব? প্রশ্ন করল জ্যাকি। এক এক করে বাড়ি খুঁজতে শুরু করলে, সারাজীবন খুঁজেও লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ওটা বের করতে পারব না।
হ্যাঁ, একটা সমস্যা বটে, মাথা দোলাল রাইস। কিশোরের চোখে চোখে তাকাল। সেটা কি আমাদের সমস্যা? মোটেও না। মুক্তি পেতে চাইলে উপায়টা তোমাকেই বাতলাতে হবে। ভাবো।
চুপ করে রইল কিশোর। ভূত-থেকে-ভূতের কথা বলে দিতে পারে, কিন্তু ওটা তাসের শেষ ট্রাম্প। এখনই হাতছাড়া করা ঠিক হবে না।
অকটেভিয়ান কোথায় জানি না, বলল কিশোর। তবে আমাকে ছেড়ে দিলে চেষ্টা করে দেখতে পারি, খুঁজে বের করা যায় কিনা।
কীভাবে করবে, উপায়টা বলো, কুৎসিত হাসি হাসল জ্যাকি। এখনও না জানলে, ভেবে বের করো, এখানে বসেই। সারাদিন বসে থাকতেও রাজি আছি আমরা। দরকার হলে সারারাত। তোমার বন্ধুরা ভাঁড়ারে আটকে আছে, ভুলে গেছ?
জবাব নেই কিশোরের। কী বলবে? ভাবনার তুফান চলছে মগজে। ওরা এখানে বন্দি হয়েছে এটা কি অনুমান করতে পারছে রবিন? রাতে যদি বাড়ি না ফেরে ওরা তিনজন, বোরিসকে নিয়ে কি আসবে? রবিনকে ফোনের পাশে থাকতে বলে এসেছে সে, তাই তাড়াহুড়ো করবে না রবিন। কিন্তু বেশি দেরি হয়ে গেলে? চাচা-চাচীও যখন চিন্তিত হয়ে পড়বেন?
ভূত-থেকে-ভূতের কথা বলল না কিশোর। অপেক্ষা করবে, সিদ্ধান্ত নিল। হয়তো রবিন…।
এই সময় দরজায় দেখা দিল আবার হ্যারিসন। রেডিও, জ্যাকি আর রাইসকে বলল সে। আপনাদের বন্ধুরাই বোধহয়, রেডিওতে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। জ্যাকি নামটা শুনলাম…
পাই করে ঘুরল রাইস। রেডিও। চেঁচিয়ে উঠল সে। ভুলেই গিয়েছিলাম। জ্যাকি, যাও তো, নিশ্চয় জিকো। ওদিকে খবর-টবর আছে বোধহয়।
ছুটে বেরিয়ে গেল জ্যাকি।
কিশোর অবাক! মৃত লোক রেডিওতে কথা বলে কী করে? তিন ফোঁটা না ছুরি মেরে মেরে ফেলেছে তাকে?
বড় আকারের একটা ওয়াকি-টকি নিয়ে ফিরে এল জ্যাকি। একদিকে কাত হয়ে পড়েছে সে; বোঝাই যাচ্ছে, বেজায় ভারি। ছোট যে জিনিস ব্যবহার করে তিন গোয়েন্দা, তার চেয়ে অনেক ভাল আর দামী এটা, অনেক বেশি শক্তিশালী। লাইসেন্স লাগে। আছে কিনা, কে জানে? সেটা নিয়ে জ্যাকি আর রাইসের মত লোক বিশেষ মাথা ঘামাবে বলে মনে হয় না।
জিকোই, ঘোষণা করল জ্যাকি। রেডিওটা মেঝেতে রেখে একটা বোতাম টিপে ধরল। মুখ নামিয়ে বলল, জিকো, জ্যাকি বলছি। শুনতে পাচ্ছ? ছেড়ে দিল বোতামটা।
গুঞ্জন উঠল রেডিওর স্পিকারে। কথা বলে উঠল একটা কণ্ঠ, কেমন। যেন যান্ত্রিক, একবার আওয়াজ কমছে, একবার বাড়ছে, দূর থেকে আসছে বলেই। জ্যাকি, কোথায় তোমরা? দশ মিনিট ধরে চেষ্টা করছি।
আমরা ব্যস্ত। কী খবর?
এদিকে উত্তেজনা। সোনালিচুলো ছেলেটা এইমাত্র পিকআপ নিয়ে বেরোল, সঙ্গে ড্রাইভার। ইয়ার্ডেরই একজন। হলিউডের দিকে চলেছে, আমরা পিছু নিয়েছি।
ধড়াস করে এক লাফ মারল কিশোরের হৃৎপিণ্ড। তাদেরকে খুঁজতে আসছে রবিন। বোরিসকে নিয়ে আসছে? জ্যাকি আর রাইসকে সামলাতে বোরিস একাই যথেষ্ট…
কিন্তু তার পরের কথা শুনেই আশা দপ করে নিভে গেল তার।
এদিকে আসছে? জ্যাকি বলল।
না, শহরের দিকে যাচ্ছে। আমরা পিছু নিয়েছি, জানে না।
দেখো, কোথায় যায়, নির্দেশ দিল জ্যাকি। রাইসের দিকে তাকাল। তুমি কিছু বলবে?
হ্যাঁ। অকটেভিয়ানের খোঁজ পেয়েছে ছেলেটা, আমি শিওর। জিকোকে বলো, যদি কোন মূর্তি পিকআপে তোলা হয়, ওটা ছিনিয়ে নেয় যেন।
নির্দেশ জানাল জ্যাকি রেডিওতে। তারপর সুইচ অফ করে হাসল রাইসের দিকে চেয়ে। রেডিওটা কিনে খুব ভাল করেছ। টাকা উসুল। বকের মত গলা বাড়িয়ে কিশোরের মুখের কাছে মুখ নিয়ে এল সে। দাঁত বেরিয়ে পড়েছে খুশিতে। এবার বসে বসে শুধু দেখার পালা, কী বলো, খোকাবাবু?
তেরো
বিকেল হয়ে এসেছে, তবু কিশোর আর মুসার দেখা নেই। আর অপেক্ষা করতে পারছে না রবিন। হয়তো জরুরি কোন ব্যাপারে আটকে গেছে। ওরা, ওদের জন্যে বসে থাকলে অকটেভিয়ানকে হারাতে হতে পারে। মনস্থির করে ফেলল রবিন, ওদেরকে ছাড়াই যাবে।
মেরীচাচীকে জিজ্ঞেস করল সে, পিকআপটার কোন দরকার আছে। কিনা। নেই। বোরিসের হাতেও টুকটাক কাজ, পরে করলেও চলবে। একবার দ্বিধা করেই রাজি হয়ে গেলেন মেরি চাচী।