আ! কীসের আ! মুসা জিজ্ঞেস করল। কী দেখলে?
দেখার চোখ থাকলে তুমিও দেখতে পেতে। নাক বরাবর সামনে হাত তুলল কিশোর। ওই তাকটা, দেখো।
তাকাল মুসা। কই, ধুলো ছাড়া আর কিছু দেখছি না!
শেষ মাথায়, অন্যগুলোর চেয়ে কোয়ার্টার ইঞ্চি বেশি লম্বা। নিশ্চয় কোন ব্যাপার আছে।
এগিয়ে এসে তাকের শেষ মাথায় হাত রাখল কিশোর। টানাটানি করল। শেষে জোরে চাপ দিতেই নিঃশব্দে খুলে গেল একটা ছোট গোপন দরজা, পাল্লাসুদ্ধ তাক ভেতরে সরে গেল, বেরিয়ে পড়ল একটা কালো ফোকর।
হুঁ! মাথা দোলাল কিশোর। বললাম না! কিছু একটা আছে।
ঠিকই তো! কালো ফোকটার দিকে চেয়ে আছে মুসা। পেলাম তা হলে কিছু!
টর্চ আনা উচিত ছিল। ভুলই করেছি। মুসা, চট করে গিয়ে সাইকেল থেকে একটা লাইট খুলে নিয়ে এসো।
ছুটে বেরিয়ে গেল মুসা। লাইট নিয়ে ফিরে এল। কিশোরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, তুমি আগে ঢুকবে?
কেন, তুমি আগে যেতে ভয় পাচ্ছ নাকি? কিশোর হাসল। ভয়ের কিছু আছে বলে মনে হয় না।
কিন্তু মুসা কথাটা মানতে পারল না। খালি বাড়ির অনেক গোপন ঘর দেখেছে সে এর আগে, কোনটাই পুরোপুরি নিরাপদ ছিল না।
আলো জ্বেলে সরু দরজা দিয়ে ঢুকে গেল কিশোর, তাকে অনুসরণ করল মুসা আর অগাস্ট।
তিন কদম এগিয়েই থেমে গেল।
না, মানুষের কঙ্কাল নেই, ভয় পাওয়ার মত কিছুই চোখে পড়ছে না। একেবারে খালি। দেয়ালে তাক, এখানেও বই ছিল, লাইব্রেরিরই একটা অংশ।
কিছু নেই। কঙ্কাল কিংবা মানুষের খুলি নেই দেখে হতাশই হলো। যেন মুসা।
কিছুই না? প্রশ্ন করল কিশোর।
ভাল করে পুরো ঘরে আবার চোখ বোলাল মুসা। না, আমি কিছুই দেখছি না।
ভুল জায়গার দিকে ভুলভাবে তাকিয়ে আছ। জিনিসটা এতই সাধারণ, তোমার মগজ ওটাকে গুরুত্বই দিতে চাইছে না, তাই দেখতে পাচ্ছ না।
চোখ পিটপিট করল মুসা; আরেকবার দেখার চেষ্টা করল, কিশোর দেখতে পেয়েছে। না, বাবা, আমি দেখছি না! কী দেখেছ?
দরজা! বলে উঠল অগাস্ট।
এইবার দেখতে পেল মুসা। বাদামী রঙের অতি সাধারণ একটা নব এমনভাবে বসানো, পাল্লার সঙ্গে প্রায় মিশে গেছে।
এগিয়ে গিয়ে নব ধরে মোচড় দিল কিশোর। সরু ছোট দরজা খুলে গেল সহজেই। ভেতরে আলো ফেলল সে। ধাপে ধাপে কাঠের সিঁড়ি নেমে গেছে।
ভাঁড়ার বোধহয়, কিশোর বলল। চলো, দেখি কী আছে।
সবগুলো দরজা খোলা থাক, মুসার কণ্ঠে অস্বস্তি। দরজা লাগিয়ে অচেনা ঘরে ঢুকতে ভয় লাগে আমার।
সিঁড়িতে পা রাখল কিশোর, নামতে শুরু করল। পেছনে অন্য দুজন। দুপাশে দেয়াল এত চাপা, ওরা একটু এদিক-ওদিক হলেই কাঁধ ঠেকে যাচ্ছে।
সিঁড়ি শেষ হলো। সামনে আরেকটা দরজা। নব ধরে ধরে টানতেই খুলে গেল। ছোট একটা ঘরে এসে ঢুকল ওরা, ঠাণ্ডা ভেজা, বাতাস, পাথরের দেয়াল।
ভাঁড়ার, আলো তুলে দেখছে কিশোর।
বিচিত্র আকারের সব তাক কেন ওরকম করে বানানো হয়েছে মাথায় ঢুকল না কিশোর কিংবা মুসার। খালি।
কিন্তু অগাস্ট চিনতে পারল। মদ রাখার ভাঁড়ার। বোতলের আকার আর মাপমত বানানো হয়েছে। ওই যে, একটা ভাঙা বোতল পড়ে আছে।
হঠাৎ বরফের মত জমে গেল যেন কিশোর, সঙ্গে সঙ্গে আলো নিভিয়ে দিল। গাঢ় অন্ধকার গিলে নিল ওদেরকে।
কী হলো! ফিসফিস করে উঠল আতঙ্কিত কণ্ঠ।
শশশ! কে জানি আসছে! দেখো!
আবছা আলো দরজার ওপাশে, বোধহয় সিঁড়ির মাথায় রয়েছে এখনও লোকটা। চাপা গলায় কথা শোনা গেল।
চলো, ভাগি! দরজার নব ধরে টান মারল মুসা, কোন কিছু না ভেবেই। পাল্লা বন্ধ হয়ে গেল, অনেক পুরানো নব, তার ওপর ভেজা বাতাসে ক্ষয় হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে ধাতু, হ্যাঁচকা টানে ছিঁড়ে ছুটে চলে এল তার হাতে।
এগিয়ে আসছে আলো আর কণ্ঠস্বর।
ভাঁড়ারে আটকা পড়ল ছেলেরা।
এগারো
কাছে আসছে কণ্ঠস্বর।
দরজার বাইরে এসে থামল পদশব্দ। পাল্লার নিচ দিয়ে টর্চের আবছা আলো আসছে।
এখানে তো আগেই খুঁজেছি, ভারি গলায় বলল একজন। গিয়ে আর কী হবে?
পুরো বাড়িই খোঁজা হয়েছে, আরেকটা কণ্ঠ, খসখসে, বিক্তি মেশানো। আর এই ভাঁড়ারে তো আধা ঘণ্টা নষ্ট করেছি। হ্যারি, আমাদের ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করলে…।
না না, ফাঁকি দিচ্ছি না, ফাঁকি দিচ্ছি না! কসম! তীক্ষ্ণ কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল তৃতীয় আরেকজন, বুড়ো মানুষের গলা। এ-বাড়িতে থেকে থাকলে। খুঁজে পেতামই। বলেছি না, এখানে লুকানোর মত আর কোন জায়গা নেই। বিশ বছর ধরে কাজ করেছি এ-বাড়িতে… থেমে গেল সে
হ্যারি, হ্যারিসন! মুসা অনুভব করল হঠাৎ শক্ত হয়ে গেছে কিশোর। রয় হ্যামার তা হলে ঠিকই বলেছে, হোরাশিও অগাস্টের চাকর হ্যারিসনও হাত মিলিয়েছে ষড়যন্ত্রে!
মিছে কথা বললে ভাল হবে না, হ্যারি, বলল প্রথমজন। ছেলেখেলা নয় এটা। অনেক টাকার ব্যাপার, তুমিও একটা ভাগ পাবে।
যা জানি, সবই তো বলেছি! হ্যারির কণ্ঠে অনুনয়। আমি আর অ্যানি যখন বাইরে যেতাম, নিশ্চয় তখন কোন ফাঁকে লুকিয়েছে জিনিসটা। শেষ দিকে কাউকে বিশ্বাস করত না, আমাদেরও না। থেকে থেকেই চমকে উঠত, এদিক-ওদিক দেখত, বোধহয় সন্দেহ করত কেউ তার ওপর চোখ রাখছে।
ভীষণ চালাক ছিল ব্যাটা! খসখসে কণ্ঠ। মাথায়ই ঢুকছে না, অগাস্টাসের মূর্তির ভেতরে নকল পাথরটা কেন রেখেছিল!
কান খাড়া করে শুনছে ছেলেরা, বিপদে যে রয়েছে ভুলেই গেছে। নকল পাথরটার কথা জানে লোকগুলো, তার মানে ওরা কালো-গুঁফো অথবা তিন-ফোঁটার দলের লোক। পরের কথায়ই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল।