হ্যালো, কিশোরকণ্ঠে জবাব এল, আমি জিম। আমার বোন পাশা স্যালভেজ ইয়ার্ড থেকে একটা মূর্তি কিনেছে।
ধক করে উঠল রবিনের বুক। নাম কী? অকটেভিয়ান?
নাম? দেখতে হচ্ছে। ধরে রাখো, আমি দেখে আসি।
বুকের ভেতর হাতুড়ির বাড়ি পড়ছে রবিনের। একেকটা সেকেণ্ড একেক যুগ বলে মনে হচ্ছে। এত তাড়াতাড়িই কাজ হয়ে গেল! বিশ্বাস করতে পারছে না সে।
সাড়া এল পুরো এক মিনিট পর। হ্যালো?
হ্যাঁ হ্যাঁ, বলো! কানের ওপর জোরে রিসিভার চেপে ধরেছে রবিন, ব্যথা পাচ্ছে সে খেয়ালও নেই।
বিসমার্ক, জবাব এল। অকটেভিয়ান না। চলবে?
না, থ্যাঙ্ক ইউ, হতাশা ঢাকতে পারল না রবিন। থ্যাঙ্ক ইউ। অকেটেভিয়ানকে দরকার আমাদের। তৃতীয়বার ধন্যবাদ জানিয়ে রিসিভার রেখে দিল সে।
আরও এক মিনিট চুপচাপ বসে রইল রবিন। শেষে টাইপরাইটার টেনে নিল। এ-যাবৎ যা যা ঘটেছে, বিস্তারিত লিখে ফেলবে।
লেখা শেষ করতে করতে দুপুর হয়ে গেল, ইতিমধ্যে আর ফোন এল।। আশাই ছেড়ে দিল রবিন, এবার কায়দাটা বোধহয় বিফলেই গেল।
রবিন! এই, রবিন! মেরি চাচীর ডাক শোনা গেল স্কাইলাইটের ভেতর দিয়ে। খেতে এসো।
আসছি, মাইক্রোফোনে জবাব দিল রবিন।
কাগজপত্র গুছিয়ে রেখে উঠল সে। দুই সুড়ঙ্গের ঢাকনা সবে তুলেছে, এই সময় বেজে উঠল ফোন। থমকে গেল সে। হাত থেকে ঢাকনাটা ছেড়ে দিয়ে দুই লাফে গিয়ে পৌঁছল ফোনের কাছে। হালো! তিন গোয়েন্দা! রবিন বলছি।
অকটেভিয়ানের খবর চেয়েছিলে? একটা মেয়ে। আমার মা কিনে এনেছে। বাগান সাজাতে চেয়েছিল, কিন্তু বসানোর পর আর পছন্দ হয়নি। পাশের বাড়ির মহিলাকে দিয়ে দেবে ভাবছে।
কোন দরকার নেই, প্লিজ! চেঁচিয়ে উঠল রবিন। জিনিস পছন্দ না হলে রাখার কোন দরকার নেই। আমরা আসছি এখুনি, টাকা ফেরত দিয়ে মূর্তিটা নিয়ে আসব।
নাম-ঠিকানা লিখে নিয়ে রিসিভার রেখে দিল রবিন। হলিউডের ঠিকানা, রকি বিচ থেকে অনেক দূরে। কিন্তু অসুবিধে নেই। গাড়ি নিয়ে গেলে খুব বেশিক্ষণ লাগবে না। চট করে ঘড়ি দেখে নিল।
ইসস, কিশোরটা করছে কী। অকটেভিয়ানের খোঁজ পাওয়া গেছে, ও থাকলে খেয়ে নিয়ে এখুনি বেরিয়ে পড়া যেত। দেরি করে ফেললে পেয়েও না আবার হারাতে হয় মূর্তিটা!
দশ
গাল ফুলিয়ে রেখেছে মুসা, মুখ দিয়ে বাতাস ছাড়ছে। সাইকেল নিয়ে খাড়াইয়ে উঠছে, ছোট একটা টিলা পেরিয়ে বেরিয়ে এল ডায়াল ক্যানিয়নে। তার পেছনে কিশোর আর অগাস্ট।
হলিউডের উত্তর-পশ্চিমে পাহাড়ের বেশ ওপর দিকে এই গিরিপথটা। সরু একটা পথ চলে গেছে, পাহাড়ের ওপরে সমতল একটা জায়গায় গিয়ে শেষ। এইখানেই হোরাশিও অগাস্টের বাড়ি, ঘন সবুজ ঘাসে ঢাকা বিরাট এলাকা জুড়ে।
বাড়িটায় ঘুরে যাওয়ার বুদ্ধি কিশোরের। জানে না, কী খুঁজতে এসেছে। অগাস্টের দাদা কোন বাড়িতে থাকতেন, কেমন জায়গা, না দেখলে মানুষটা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া কঠিন, আসার এটাই প্রধান। কারণ।
যত সহজ মনে হয়েছিল, সাইকেল নিয়ে এই পাহাড়ে চড়ার কাজটা তত সহজ হলো না। দুপুর হয়ে এসেছে, মাথার ওপর গনগনে সূর্য, দরদর করে ঘামছে ওরা, হাঁপাচ্ছে পরিশ্রমে। থেমে মুখের ঘাম মুছে নিল। তিনজনেই, হোরাশিও অগাস্টের খালি বাড়িটার দিকে তাকাল।
তিনতলা বাড়ি, কোন অংশ পাকা, কোন অংশ কাঠের, চমৎকার একটা স্টাইল। চারদিকে খোলামেলা, আলো আর হু-হুঁ বাতাসের অন্ত নেই! কিন্তু একেবারে নির্জন। সাইকেল ঠেলে নিয়ে এল ওরা সদর দরজার কাছে, ঘাসের ওপর শুইয়ে রাখল।
চাবি ছাড়া ঢুকবে কীভাবে? দেখেশুনে বলল মুসা। তখনই বলেছিলাম, চাবিটা নিয়ে নিই রয় হ্যামারের কাছ থেকে।
চলো, জানালা ভেঙে ঢুকে পড়ি, পরামর্শ দিল অগাস্ট।
দরকার পড়লে তা-ই করতে হবে, কিশোর বলল। বাড়ির মালিক হয়তো কিছুই মনে করবে না, দুচারদিনের মধ্যে পুরো বাড়িই তো ভেঙে ফেলবে। পকেট থেকে এক গোছা চাবি বের করল সে। তবে আশা করছি জানালা ভাঙার দরকার পড়বে না, এগুলোর কোনটা না কোনটা লেগে যাবেই। আমেরিকার নাম করা সব কোম্পানির সব রকমের তালার চাবি আছে এখানে।
এক তালার চাবি আরেক তালায় লাগবে? অগাস্টের সন্দেহ রয়েছে।
না লাগারই কথা, তবে লেগেও যেতে পারে।
তিন ধাপ সিঁড়ি ডিঙিয়ে দরজার কাছে চলে এল ওরা, নব ধরে মোচড় দিল মুসা। তাকে অবাক করে দিয়ে পুরো ঘুরে গেল নব, ঠেলা দিতেই নিঃশব্দে খুলে গেল পাল্লা। খোলা! খিল-টিল কিছু লাগানো
অস্বাভাবিক! আপন মনে বিড়বিড় করল কিশোর।
খোলাই ফেলে গিয়েছে হয়তো রয় হ্যামার, মুসা বলল। কিংবা, অন্য কেউ কোন কারণে খুলেছিল, আর লাগায়নি। খালি বাড়ি তো, মালপত্র নেই, লাগানোর দরকার মনে করেনি।
অন্ধকার একটা হলঘরে এসে ঢুকল ওরা। ঘরটার দুপাশে আরও দুটো বড় ঘর, খালি, ধুলোয় ঢাকা, মেঝেতে কাগজের টুকরো ছড়ানো।
একটা ঘরে ঢুকল কিশোর; অনুমান করল, এটা শোবার ঘর। চারপাশে তাকাল, কিন্তু দেখার তেমন কিছু নেই। কোন আসবাব নেই। পাতলা ওয়ালনাট কাঠ দিয়ে দেয়াল পুরো ঢেকে দেয়া হয়েছে, গাঢ় চকলেট রঙের ওপর ধুলোর আস্তরণ।
না, কিছুই দেখার নেই এখানে, ঘুরল কিশোর। হলঘরে এসে ঢুকল আবার, উল্টোদিকের ঘরটায় চলে এল। লাইব্রেরি ছিল, দেয়ালে গাঁথা সারি সারি তাক দেখেই বোঝা যায়, তিন দিকের সব কটা তাক এখন নিঃস্ব, তাতে ধুলোর রাজত্ব। ঘরের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে একে একে সবগুলো তাকের ওপর নজর বোলাল কিশোর, অস্ফুট একটা শব্দ বেরোল মুখ থেকে, আ!