বোকা হয়ে গেল যেন মুসা, সে ভেবেছিল, অগাস্ট আর রবিন তার সঙ্গে যোগ দেবে। হেরে গিয়ে ধীরে ধীরে হাত নামিয়ে নিল আবার। বিড়বিড় করে কী বলল, বোঝা গেল না। কিশোরের দিকে ফিরল। তুমিও মরবে, আমাদেরও মারবে। কোন আক্কেলে যে যোগ দিয়েছিলাম তিন গোয়েন্দায়! …তো, এখন কী করা? পুলিশকে ফোন করব? কালোগুফো খুন হয়েছে যে জানাব?
প্রমাণ আছে? পাল্টা প্রশ্ন করল কিশোর। প্রমাণ ছাড়া বিশ্বাস করবে না পুলিশ। তবে, লাশটা পাওয়া গেলে যা জানি গিয়ে বলতে পারব। একটু থেমে বলল, একটাই উপায় দেখা যাচ্ছে, অকটেভিয়ানের মূর্তি খুঁজে বের করতে হবে এখন। তার জন্যে ভূত-থেকে-ভূতের দরকার। ঘড়ি দেখল। সাতটা বাজে, ছেলেমেয়েরা নিশ্চয় বাড়ি ফিরেছে। এতক্ষণে। চালু করে দেয়া যায় ভূতদের।
দেরি করল না আর কিশোর। এক এক করে তার পাঁচজন বন্ধুকে ফোন করল। পরদিন সকাল দশটার মধ্যে খবর জানাতে অনুরোধ করল। তারপর রবিন ফোন করল পাঁচজনকে, সব শেষে মুসা।
আপাতত আর কিছু করার নেই। রাতটা তার সঙ্গেই অগাস্টকে। থাকার আমন্ত্রণ জানাল কিশোর।
অগাস্ট রাজি।
সাইকেল নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো মুসা আর রবিন।
কী মনে হয়? পাশাপাশি চলতে চলতে বলল মুসা। অকটেভিয়ানটা পাওয়া যাবে?
না পেলে গেল রক্তচক্ষু, বলল রবিন। পানি লেগে হয়তো কোন এক সময় গলে যাবে মূর্তিটা, বেরিয়ে পড়বে পাথর। বাগানে পড়ে থাকবে। যার চোখে পড়বে, সে না-ও চিনতে পারে, দাম না-ও বুঝতে পারে। হয়তো তুলে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেবে, কিংবা ডাস্টবিনে নিয়ে ফেলবে। আর চিনে ফেললে তো মজাই মেরে দিল।
একটা জায়গায় এসে আলাদা হয়ে গেল দুজনে।
বাড়ি পৌঁছল রবিন। ঘরে ঢুকে দেখল, রিসিভার কানে ঠেকিয়ে ডায়াল করে যাচ্ছেন তার বাবা। বিরক্ত হয়ে খটাস করে নামিয়ে রাখলেন রিসিভার। রবিনকে দেখেই বলে উঠলেন, কাণ্ড! সারা রকি বিচই যেন পাগল হয়ে উঠেছে। একটা লাইন খালি নেই, সব এনগেজড! আধ ঘণ্টা ধরে চেষ্টা করছি, লাইন পাচ্ছি না! আশ্চর্য!
কারণটা জানে রবিন, কিন্তু চুপ করে রইল। ভীমরুলের চাকে ঢিল পড়েছে, সবাই এখন টেলিফোন নিয়ে ব্যস্ত।
কাপড় ছেড়ে সোজা গিয়ে বিছানায় উঠল রবিন। কিন্তু ঘুম আসছে না, খালি এটা ভাবে, ওটা ভাবে।
ঘুমের ঘোরে দুঃস্বপ্ন দেখল রবিন: ঘোড়ায় চড়ে একদল খুনে ডাকাত তাড়া করেছে তাকে, সবার হাতে ছুরি লাগানো কালো ছড়ি।
চোখ মেলল এক সময়। পুব আকাশে অনেকখানি উঠে এসেছে। সূর্য। বাতাসে বেকন ভাজার সুবাস, প্রথমেই মুসার কথা মনে এল রবিনের। মুচকে হাসল।
কাপড় পরে তৈরি হয়ে নিচে নামল রবিন। রান্নাঘরে বেকন ভাজায় ব্যস্ত মা।
মা? কিশোর ফোন করেছে?
দাঁড়া, ভেবে দেখি… রবিনের দিকে না তাকিয়েই হাসলেন মা, কড়াইটা চুলা থেকে নামিয়ে ফিরলেন। আঙুল থুতনিতে ঠেকিয়ে গভীর চিন্তার ভান করলেন। করেছিল।
কী বলেছে?
আকাশেতে উড়িতেছে একপাল হাতি, পূর্ণিমা চাঁদ যেন অমাবস্যার রাতি।
ভ্রূকুটি করল রবিন। এটা কোন মেসেজ হতে পারে না। যাহ্, ঠাট্টা করছ! সত্যি, বলো না, কী বলেছে?
হাসলেন মা। তা হলে আরেকবার ভাবি। হ্যাঁ, মনে পড়েছে। এটা আর সেটা, শুধু আমরাই জানি, কাউকে সামলাতে হবে টেলিফোনের কানি! কী মানে রে এর?
তোমার আগের কথাটার কী মানে ছিল?
ওটা তো এমনি বানিয়ে বলেছে, মজা করার জন্যে।
এটাও কিশোর বানিয়ে বলেছে।
তা বলেছে, কিন্তু এর কোন মানে নিশ্চয় আছে। তোদের কাজ কারবার জানতে তো আর আমার বাকি নেই। হ্যাঁ রে, রবিন, আবার কোন একটা আজব কেসে জড়িয়েছিস বুঝি?
হ্যাঁ, মা, তাড়া দিল রবিন, দাও, জলদি নাশতা দাও।
এবার কী? ডানাওয়ালা হাতি খুঁজছিস? প্লেটে ডিম আর বেকন বাড়তে শুরু করলেন মা। টোস্টার থেকে টোস্ট নিয়ে রাখলেন আরেকটা প্লেটে।
রান্নাঘরের ছোট টেবিলেই খেতে বসে গেল রবিন। রোমের সম্রাট অকটেভিয়ানকে খুঁজছি। ওর মালিক এক ইংরেজ কিশোর, অগাস্ট অগাস্ট, পেলে তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
কফি ছলকে পড়ল মায়ের হাতের কেটলি থেকে। চমকে উঠেছেন। হাঁ হয়ে গেছে মুখ।
হাসল রবিন। খানিক আগে মা তাকে বোকা বানিয়েছিলেন, এখন। সে শোধ নিচ্ছে। হ্যাঁ, মা, ঠিকই বলেছি। পরে সব বুঝিয়ে বলব, এখন সময় নেই।
নীরবে ঠোঁট বাঁকালেন মা, কফি ঢালায় মন দিলেন। আবার রবিনের দিকে চোখ পড়তেই বললেন, ও-কী, সবই যে রইল! এই, ভাল হবে না, যা দিয়েছি সব খাবি। নইলে বেরোতেই দেব না।
অগত্যা আবার বসে পড়তে হলো রবিনকে।
যত তাড়াতাড়ি পারল, সাইকেল চালিয়ে ইয়ার্ডে এসে ঢুকল রবিন। অফিসে মেরি চাচী একা। বাইরে কাজে ব্যস্ত বোরিস আর রোভার।
রবিন অফিসে ঢুকতেই মুখ তুললেন চাচী। এই যে, এসে গেছ, বসো। মুসা আর গাসকে নিয়ে বেরিয়েছে কিশোর, এই আধ ঘণ্টামত হবে। তোমাকে ওয়ার্কশপে বসতে বলে গেছে।
মেরি চাচীকে ধন্যবাদ জানিয়ে হেডকোয়ার্টারে এসে ঢুকল রবিন। কিশোরের মেসেজের মানে: হেডকোয়ার্টারে টেলিফোনের পাশে অপেক্ষা করতে হবে রবিনকে। কেন অপেক্ষা করতে বলেছে, তা-ও জানে রবিন। দশটার পর যে-কোন মুহূর্তে ভূতের ফোন আসতে পারে। খবর জানাতে পারে।
রবিন চেয়ারে বসতে না বসতেই ফোন বেজে উঠল। ঘড়ি দেখল, দশটা বেজে পাঁচ। ছো মেরে রিসিভার তুলে নিয়ে কানে ঠেকাল। হালো, তিন গোয়েন্দা। রবিন বলছি।