আর, আবার বলল লোকটা, ও যা নিয়ে গেল সেটা কি এরকম? পকেট থেকে একটা জিনিস বের করে টেবিলে ছুঁড়ে দিল সে।
লাল একটা পাথর!
রক্তচক্ষু! রক্তচক্ষু!
চমকটা সামলে নিতে কিশোরেরও সময় লাগল। ঢোঁক গিলে বলল, হ্যাঁ, স্যর, ওরকমই।
আঁমম! ছড়িতে ভর রেখে দাঁড়াল তিন-ফোঁটা। রক্তচক্ষুর নাম শুনেছ? শুনেছ, ওটা নিলে কী সাংঘাতিক অভিশাপ নেমে আসে? এমনকী যে ছোঁয়, সে-ও রেহাই পায় না?
জবাব দিলে কী হবে, বুঝতে পারছে না কেউ, তাই চুপ করে রইল। অবাক হয়ে ভাবছে পাথরটা তিন-ফোঁটার দখলে এল কীভাবে! বড় জোর ঘণ্টাখানেক আগে এটা নিয়ে পালিয়েছিল কালো-গুফো।
একটা জিনিস দেখাচ্ছি, ছড়ি তুলে বোতাম টিপে দিল তিন ফোঁটা। সড়াৎ করে বেরিয়ে এল বারো ইঞ্চি লম্বা ছুরি। ফলাটার দিকে চেয়ে মুখ বাকাল। নোংরা! পকেট থেকে রুমাল বের করে ছুরি মুছল সে। লাল আঠালো পদার্থ লেগে গেল তাতে।
রক্ত লেগে থাকলে ইস্পাত নষ্ট হয়ে যায়, তিন-ফোঁটার হাসি হাসি মুখ, ভাবভঙ্গি আর বলার ধরন ভয়ঙ্কর। সে যাক গে… ছুরির ফলায় ঠেকিয়ে পাথরটা টেবিলের মাঝখান থেকে টেনে আনল সে। তুলে নিয়ে বাড়িয়ে ধরল কিশোরের দিকে। দেখো! ভাল করে দেখো।
হাতে নিয়ে পাথরটা চোখের সামনে ধরল কিশোর। অন্য তিনজন। ঘিরে এল তাকে, ওরাও দেখতে চায়। বিশেষ কিছু চোখে পড়ল না ওদের।
কই, কিছুই তো দেখছি না! কিশোর বলল।
দাও, পাথরটা নিয়ে ছুরি দিয়ে পোঁচ মারল তিন-ফোঁটা। আবার ওটা কিশোরের হাতে তুলে দিতে দিতে বলল, এবার দেখো।
হালকা একটা দাগ পড়েছে পাথরের গায়ে।
আচড়! কিশোর বলল। আঁচড় লেগেছে! কিন্তু চুনি তো ইস্পাতের চেয়ে শক্ত বলেই জানতাম! দাগ কাটল কীভাবে!
ঠিকই জানো, খুশি হয়েছে তিন-ফোঁটা। তার মানে চেহারা দেখে যা মনে হচ্ছে, তা তুমি নও। ভীষণ চালাক ছেলে তুমি, কিশোর পাশা, বোকার অভিনয় ছাড়ো। বিকেলে বুঝিনি। একটু আগে তোমার স্বাভাবিক চেহারা দেখলাম, তারপর হঠাৎ করেই অভিনয় শুরু করলে। যাক গে, এবার বলো তো, এই আঁচড় লাগার মানে কী?
আড়চোখে মুসার দিকে তাকাল কিশোর, হাসি ছড়িয়ে পড়েছে সহকারী গোয়েন্দার মুখে। ধরা পড়ে গিয়েছে, আর অভিনয় করে লাভ নেই। পাথরটার দিকে চেয়ে রইল এক মুহূর্ত, নীরবে। হঠাৎ মুখ তুলল। এটা আসল পাথর নয়। নকল, ছাঁচে ফেলে বানানো হয়েছে প্লাস্টিক দিয়ে।
চমৎকার! প্রশংসা করল তিন-ফোঁটা। ঠিক বলেছ। আর হ্যাঁ, যা ভাবছ, তা-ই, কালো-ফোর কাছ থেকেই নিয়েছি এটা। আসল রক্তচক্ষু এখনও লুকানোই রয়েছে। আমার ধারণা, অগাস্টাসের আরেকটা মূর্তি কোথাও আছে। তোমরা যেগুলো বিক্রি করেছ, তার মধ্যেও থাকতে পারে। আমি চাই, আমার হয়ে খুঁজে বের করো ওটা।
এক এক করে চার কিশোরের মুখেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বোলাল তিন ফোঁটা।
আমি বলছি, অগাস্টাসের মূর্তি খুঁজে বের করবে! গর্জে উঠল সে হঠাৎ, হাসি হাসি ভাব চলে গেছে। নইলে… বোতাম টিপে ছুরির ফলা আবার খোলসের ভিতর ঢুকিয়ে নিল সে। থাক, তোমরা বুদ্ধিমান ছেলে, বলার আর দরকার নেই। বুঝতেই পারছ। মূর্তিটা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফোন করবে আমাকে।
শান্ত পায়ে হেঁটে গিয়ে গাড়িতে উঠল সে। চলে গেল। হাঁ করে সেদিকে তাকিয়ে রইল ছেলেরা।
ব্যাটা…ব্যাটা, নিশ্চয় কালো-ফোকে খুন করেছে! নীরবতা ভাঙল মুসা। হায়, আল্লাহ, এত তাড়াতাড়ি কী করে জানল সে, ফো পাথর নিয়ে পালিয়েছে?
রহস্য জমাট বাধছে, সূক্ষ্ম খুশির আমেজ কিশোরের কণ্ঠে। মিস্টার হোরাশিও অগাস্ট নকল পাথর কেন রাখলেন অগাস্টাসের ভেতরে? আসল ভেবে নকলটাকে লুকিয়ে রাখেননি তো? নাকি ইচ্ছে করে, জেনেশুনেই আরেকটা পাথর লুকিয়েছেন, ফাঁকি দেয়ার জন্যে? আসলটা তা হলে কোথায়? অন্য কোন মূর্তির ভেতরে? তেরোটার মধ্যে আর কোন অগাস্টাস নেই, তা হলে…
আছে! বিস্ফোরিত হলো যেন রবিনের কণ্ঠ। আছে!
ভুরু কুঁচকে তাকাল কিশোর। অন্য দুজনও অবাক।
ভুলেই গিয়েছিলাম, বলল রবিন। এসেছি সেটা বলার জন্যেই, কিন্তু এমন সব কাণ্ড ঘটতে শুরু করল! বাবা বলল কথাটা। অকটেভিয়ান! রোমের সম্রাট ছিলেন, তাঁর আরেক নাম অগাস্টাস। নিশ্চয় অকটেভিয়ানের মূর্তির কথাই বোঝাতে চেয়েছেন গাসের দাদা। অগাস্ট নামকরণ হয়েছে অকটেভিয়ানের কারণেই। ওই মূর্তিটাই এখন খোঁজা। দরকার।
নয়
রক্তচক্ষুর কথা ভুলে যাওয়াই ভাল! বিড়বিড় করল মুসা। পনেরোজন। মরেছে, সঙ্গে আরও চারটে ছেলে যোগ হতে বাধা কী?
মুসা ঠিকই বলেছে, অগাস্ট একমত হলো। রক্তচক্ষু পেলেও ও। এখন নেবে কিনা জানি না। ভয় করছে!
কালো-গুফোর পরিণতি দেখো, সায় পেয়ে গলার জোর বাড়ল গোয়েন্দা সহকারীর। নকলটা নিয়ে গেল, তাতেই এক ঘণ্টার বেশি টিকল না! আল্লাই জানে, আমাদের কী হবে!
রবিন নীরব, কিশোরের থমথমে মুখের দিকে চেয়ে আছে।
পাথরটা খুঁজে পাইনি এখনও, অবশেষে মুখ খুলল কিশোর। বিপদ আসে কোথা থেকে? আগে তো খুঁজে বের করি, তারপর দেখা যাবে।
খুঁজব কিনা, সেটাও ঠিক করা দরকার, মুসা বলল। এসো, ভোট নিই। যে খোঁজার বিপক্ষে, হাত তোলো।
দেখা গেল, মসা একাই হাত তুলেছে। অগাস্ট সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না, আর রবিনের বিশ্বাস রয়েছে গোয়েন্দাপ্রধানের ওপর, তাই হাত তুলছে না। তা ছাড়া, ওরা ভোটে জিতলেই কি কিশোরকে ঠেকানো যাবে? এর আগে কখনও পেরেছে? কিশোরের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, তাকে বিরত করা মুসা আর রবিনের কর্ম নয়।