গেল! প্রায় গুঙিয়ে উঠল মুসা। নিয়ে গেল রক্তচক্ষু! কিন্তু তখন না আলোচনা হলো, কালো-ফো বলতে কেউ নেই? রয় হ্যামারের কল্পনা? তা হলে ও কে?।
ভুল একটা কিছু হয়েছে, সামান্য কুঁজো হয়ে গেছে কিশোরের পিঠ, চোখে-মুখে রাজ্যের হতাশা।
আজ লাইব্রেরিতে গিয়েছিল কালো-ফো, রবিন বলল। আমি যাওয়ার আগে। রক্তচক্ষুর ব্যাপারে তথ্য খুঁজেছে সে।
এমন কাণ্ড ঘটবে ভাবিইনি! ধীরে ধীরে বলল কিশোর। জিনিসটা পেয়েও রাখতে পারলাম না, ছুঁতেই পারলাম না। সরি, গাস।
তোমার কী দোষ? সান্ত্বনা দিল অগাস্ট। খামোকা মন খারাপ কোরো না।
আমি এতই শিওর ছিলাম যে কালো-ফো নেই… বাধা পেয়ে থেমে গেল কিশোর।
মেরি চাচী বললেন, ঠিকই, তোর কোন দোষ নেই। তুই তো ছেড়েই দিয়েছিলি, ও ধরে রাখতে পারেনি। ওর দোষ। টুকরোগুলো ফেলে দিয়ে আয়। কিন্তু বাকি টাকাটা ফেরত নিল না…
হ্যাঁ, যাচ্ছি।
ফিরে দেয়াল-ঘড়ির দিকে তাকালেন মেরি চাচী। আরিব্বাবা, অনেক বেজেছে! তোরা বসবি নাকি, না বন্ধ করে দেব?
বসব, কিশোর বলল। তবে বেশিক্ষণ না।
গেট খোলাই থাক তা হলে। আরও এক-আধজন কাস্টোমার এসেও পড়তে পারে।
মাথা কাত করে সায় জানাল কিশোর।
অফিস থেকে বেরিয়ে ছিমছাম ছোট্ট সুন্দর দোতলা বসতবাড়ির দিকে রওনা দিলেন মেরি চাচী!
নীরবে ভাঙা টুকরোগুলো তুলে নিয়ে এল চার কিশোর, গোয়েন্দাপ্রধানের নির্দেশে একটা টেবিলে রাখল। টুকরোগুলো পরীক্ষা। করে দেখল কিশোর। দেখো, দেখো, মাথার ভাঙা টুকরোয় একটা ডিম আকারের গর্ত, এর মধ্যেই ছিল রক্তচক্ষু।
ছিল, এখন আর নেই, নিরাশ হয়ে পড়েছে রবিন। ফোর হাত থেকে ওটা আর কোনদিন আনা যাবেও না।
এখন তা-ই মনে হচ্ছে বটে, পরাজয় মেনে নিতে পারছে না কিশোর পাশা। ভালমত ভাবলে উপায় বেরিয়েও যেতে পারে। চলো, ওয়ার্কশপে গিয়ে বসি। অযথা অফিস খোলা রেখে লাভ নেই। আজ আর কেউ আসবে না। ওখানে গিয়ে আলোচনা করব।
ওয়ার্কশপে এসে বসল ছেলেরা।
রবিন, কিশোর বলল, রক্তচক্ষুর ব্যাপারে কী কী জেনেছ?
নোট বের করে পাথরটার রক্তাক্ত ইতিহাস পড়ল রবিন। জানাল। কাটিরঙ্গার প্রতিশোধপরায়ণ ভীষণ উপজাতির কথা।
মারছে রে! খাইছে আর সেরেছে-র মত এই শব্দটাও কিশোরের কাছ থেকেই শিখেছে মুসা। শুনেই লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে! পাথরটা গেছে, ভালই হয়েছে। মরুক গে এখন কালো-গুফো।
কিন্তু, লোকে এটাও বলে: পঞ্চাশ বছর কেউ না ছলে শুদ্ধ হয়ে। যাবে পাথরটা, মনে করিয়ে দিল রবিন। যদি পঞ্চাশ বছর হয়ে গিয়ে থাকে? কিছুই হবে না গুফোর।
তা ঠিক, স্বীকার করল মুসা। কিন্তু ব্যাপারটা সত্যি না-ও হতে পারে।
হুমম! ধীরে ধীরে মাথা দোলাল অগাস্ট। জ্বলজ্বল করছে চোখ। বুঝতে পারছি, কেন দাদা ওটাকে ভয় পেত। কেন লুকিয়ে রেখেছিল মূর্তির মধ্যে। পঞ্চাশ বছর যাতে ওটাকে কেউ ছুতে না পারে! সময় গেলে ওটা অভিশাপমুক্ত হয়ে যাওয়ার পর বের করে বিক্রি করে দিত। কিন্তু সময় পায়নি দাদা, তাই আমার জন্যে রেখে গেছে। আমি শিওর, রক্তচক্ষু শাপমুক্ত হয়ে গেছে।
হতে পারে, কিশোর বলল। কিন্তু লাভ নেই। ফোর হাত থেকে কী করে বের করে আনব ওটা, জানি না।
ভূত-থেকে-ভূতে! আচমকা চেঁচিয়ে উঠল রবিন। কালো-ফোর। সন্ধানে লাগিয়ে দিই। ওর খোঁজ পাওয়া গেলেই…ইয়ে, গেলেই… গেলে কী করবে, সেটা আর বলতে পারল না সে।
গেলেই, বাক্যটা শেষ করে দিল কিশোর, ওর কাছ থেকে ছিনিয়ে। আনা যেত পাথরটা। কিন্তু, নথি, জানো, এই শহরে কালো গোঁফওয়ালা লোক কত আছে? শয়ে শয়ে। তা ছাড়া ওটা যে লোকটার সত্যিকারের। গোফ, তা-ই বা জানছি কী করে? নকলও হতে পারে।
হুঁ! চুপসে গেল রবিন।
দীর্ঘ নীরবতার পর মুখ খুলল অগাস্ট, আর কোন ভরসাই নেই!
আবার নীরবতা। এমনকী কিশোর পাশাও কোন উপায় বের করতে পারছে না।
হঠাৎ তীক্ষ্ণ ঝনঝন শব্দে বেজে উঠল ঘণ্টা।
বেল! লাফিয়ে উঠল রবিন। কাস্টোমার!
যাই, আমি দেখি, ধীরেসুস্থে উঠে দাঁড়াল কিশোর, অফিসের দিকে চলল। তাকে অনুসরণ করল অন্য তিনজন।
খোলা জায়গায় বেরিয়েই খরিদ্দারকে দেখতে পেল ওরা। কালো। চকচকে গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, হাতে কালো ছড়ি।
খাইছে! ফিসফিস করল মুসা। তিন-ফোঁটা!
এই যে, ছেলেরা, মিষ্টি করে হাসল লোকটা। ওগুলো দেখলাম পরীক্ষা করে, ছড়ি তুলে ভাঙা টুকরোগুলো দেখাল সে। নিশ্চয়ই অগাস্টাস অভ পোল্যাণ্ডের। ওটা এলেই আমাকে টেলিফোন করার কথা বলেছিলাম, ভুলে গেছ?
করতাম, স্যর, কিশোর বলল। কিন্তু তার আগেই ভেঙে গেল।
কীভাবে? আবার হাসল তিন-ফোঁটা, ভয়ঙ্কর হাসি, নাদুস-নুদুস হরিণশিশু দেখেছে যেন ক্ষুধার্ত বাঘ। ভাঙা মাথায় একটা গর্তও দেখেছি, ডিমের আকার। ওখানে কিছু লুকানো ছিল মনে হচ্ছে।
হ্যাঁ, স্যর, ছিল, আবার বোকার অভিনয় শুরু করেছে কিশোর, কণ্ঠস্বর ভোতা। এক কাস্টোমার টানাহেঁচড়া শুরু করেছিল, আমার হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়ার জন্যে। ফেলে দিয়ে ভেঙেছে। তারপর কী জানি একটা তুলে নিয়ে পকেটে ভরল। ভাল করে দেখতে পারিনি।
চুপ করে এক মুহূর্ত ভাবল তিন-ফোঁটা। লোকটার কালো গোঁফ ছিল? আর ভারি চশমা?
হ্যাঁ হ্যাঁ, স্যর, হ্যাঁ! জোরে জোরে মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
নীরবে অবাক দৃষ্টি বিনিময় করল অন্য তিন কিশোর।