মেরি চাচীর কণ্ঠ আর চেহারা দেখেই বুঝল রবিন, বেচারীর মন খারাপ। জিনিস বিক্রি করে আবার ফেরত নেয়া যে-কোন ব্যবসায়ীর জন্যে কষ্টকর। তা ছাড়া পুরানো জিনিস, খারাপ বলে ফেরত দিচ্ছে লোকে, এরপর বিক্রি হবে কিনা, তার ঠিক নেই। অনেকগুলো টাকা পানিতে যাবে, মেরি চাচীর খারাপ লাগারই কথা।
তাই? আগ্রহী মনে হলো কালো-ফোকে। দুটো আসছে, বাকিগুলোও আসতে পারে বলছেন? তা হলে তো খুব ভাল। এসব জিনিস সংগ্রহ করা আমার নেশা, এই পাঁচটা নিচ্ছি, বাকিগুলোও নেব, যদি আসে। আর কাউকে দেবেন না, প্লিজ!
দাম জানেন? মেরি চাচী বললেন।
কত?
পঞ্চাশ ডলার করে একেকটা।
রাজি।
যেগুলো ফেরত আসবে, ওগুলোর অবস্থা কেমন থাকবে জানি না। ভেঙেচুরে নষ্ট হয়ে আসতে পারে।
কুছ পরোয়া নেই। আমি নেব, বলতে বলতেই পকেট থেকে নোটের তাড়া বের করল। সাড়ে তিনশো ডলার গুনে নিয়ে বাড়িয়ে ধরল। সাতটার দাম। এখানে পাঁচটা, আর যে দুটো আসছে তার জন্যে।
অবাক হয়েছেন মেরি চাচী। বোকা নাকি লোকটা! টাকাগুলো নিতে দ্বিধা করছেন। শেষে বললেন, আগেই বলে দিচ্ছি, খারাপ জিনিস। পরে আমাকে দুষবেন না, ফেরত নিয়ে আসতে পারবেন না।
আনব না, নিন, টাকা নিন। যেগুলো ফেরত আসবে, সব নেব। আর কাউকে দেবেন না।
টাকাগুলো নিয়ে ড্রয়ারে রাখতে রাখতে বললেন চাচী, দেব না। বসুন, অন্য দুটো এসে পড়ল বলে। আমার ছেলে গেছে আনতে। বাইরের লোকের কাছে কিশোরকে নিজের ছেলে বলে পরিচয় দেন মেরি চাচী।
গুড! একটা চেয়ার টেনে বসল লোকটা। খুব ভাল মূর্তি, জানেন। আমার খুব পছন্দ হয়েছে। সত্যি বলতে কী, ম্যাডাম, দাম আপনি খুব কমই নিয়েছেন। আরে, হ্যাঁ, বসে থাকি কেন? আবার উঠে দাঁড়াল। লোকটা। মূর্তিগুলো এই সুযোগে গাড়িতে তুলে ফেললেই তো পারি। বেরিয়ে গেল সে।
উত্তেজনায় লাল হয়ে গেছে রবিনের চেহারা। বেচাকেনা শেষ, টাকাও নিয়ে ফেলেছেন মেরি চাচী। কথা দিয়ে ফেলেছেন, সবগুলো মূর্তি দেবেন লোকটাকে। এখন কী করা? কিশোর যে দুটো আনতে গেছে, ওগুলোর মধ্যে অগাস্টাসও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে? আইনত এখন ওটাও কালো-ফোর জিনিস। অস্থির হয়ে উঠল সে।
ব্যাপারটা মেরি চাচীর চোখ এড়াল না। আরে, রবিন! এমন করছ কেন? শরীর খারাপ লাগছে?
আগেই আপনাকে বলা উচিত ছিল, চাচী, অনেক চেষ্টায় যেন কথা বেরোল রবিনের মুখ দিয়ে। অগাস্টের খুব ইচ্ছে ছিল, একটা মূর্তি কিনে বাড়ি নিয়ে যাবে। হাজার হোক, তার দাদার জিনিস…
আগেই বলা উচিত ছিল, মেরি চাচীর মুখ কালো হয়ে গেল। এখন তো আর সম্ভব নয়। কথা দিয়ে ফেলেছি ভদ্রলোককে…। ওই যে, কিশোর এসেছে…
শেষ মূর্তিটা সবে গাড়িতে তুলেছে কালো-ফো, এই সময় অফিসের কাছে এসে থামল পিকআপ। ঘোউউউ করে উঠে বন্ধ হয়ে গেল ইঞ্জিন।
গাড়ির পিছন থেকে লাফিয়ে নামল কিশোর আর মুসা। তাড়াহুড়ো করে এসে দাঁড়াল কেবিনের দরজার কাছে। দরজা খুলে গেল। বোরিস নামল, এক এক করে বের করল মূর্তি দুটো। বেকনকে নিল মুসা, কিশোর অগাস্টাসকে। চেপে ধরে রেখেছে বুকের সঙ্গে, নইলে পড়ে যাবে।
দুজনের কেউই প্রথমে দেখতে পেল না কালো-গুফোকে।
লোকটা এসে দাঁড়াল ছেলেদের সামনে। দাও, আর তোমাদের কষ্ট করার দরকার নেই। আমিই তুলতে পারব। অগাস্টাসের দিকে হাত বাড়াল। এগুলো কিনে নিয়েছি। মূর্তিটাকে দুহাতে চেপে ধরে টান মারল সে।
আট
মূর্তি ছাড়ল না কিশোর। লোকটাও টানছে। চেঁচিয়ে উঠল রাগে, এই, ছেলে, ছাড়ছ না কেন? বললাম না, কিনে নিয়েছি?
দিয়ে দে, কিশোর, ডেকে বললেন মেরি চাচী।
চাচী! মূর্তিটাকে আরও শক্ত করে ধরে প্রতিবাদ করল কিশোর। অগাস্টকে এটা দেব কথা দিয়েছি আমি!
দিয়ে দে, বাবা, আমি জানতাম না! ভদ্রলোকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফেলেছি!
কিন্তু ওনার চেয়েও অগাস্টের এটা বেশি দরকার! ভারি মূর্তি, তার ওপর টানাটানি, আর ধরে রাখতে পারছে না কিশোর। ওর কাছে এটা বাঁচা-মরার সামিল!
কী বলছিস! একটা মাটির মূর্তি বাঁচা-মরার সামিল!রাগ করলেন। মেরি চাচী। তোদের মাথা খারাপ হয়েছে! দিয়ে দে ওটা। নইলে বদনাম হয়ে যাবে। লোকে বলবে, কথা দিয়ে কথা রাখে না পাশারা!
দাও! গর্জে উঠল কালো-গুফো। হঠাৎ হ্যাঁচকা টান মারল।
চাচীর কথায় এমনিতেই ঢিল দিয়ে ফেলেছিল কিশোর, আচমকা টানে খসে গেল হাত থেকে, সামলাতে পারল না লোকটা, মূর্তি নিয়ে উল্টে পড়ল। সে-ও ধরে রাখতে পারল না ভারি জিনিসটা, পড়ে গেল। হাত থেকে, ভেঙে খান খান হয়ে গেল।
ভাঙা টুকরোগুলোর দিকে হাঁ করে চেয়ে রইল ছেলেরা।
মেরি চাচী দূরে রয়েছেন, তাই দেখতে পাচ্ছেন না, কিন্তু চার। কিশোর পরিষ্কার দেখছে। লাল উজ্জ্বল একটা পাথর, পায়রার ডিমের সমান বড়, অগাস্টাসের ভাঙা মাথার ভেতর থেকে বেরিয়ে আছে।
নিশ্চল হয়ে গেছে যেন ছেলেরা।
হাঁচড়ে-পাঁচড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে কালো-গুফো। দেখতে পেল পাথরটা, সঙ্গে সঙ্গে উবু হয়ে তুলে নিয়েই পকেটে ভরল।
অফিসের দরজায় বেরিয়ে এসেছেন মেরি চাচী, সেদিকে ফিরল সে। বলল, আমার দোষেই পড়েছে। আর হ্যাঁ, আর কোন মূর্তির দরকার নেই আমার। চলি।
গাড়িতে উঠে দড়াম করে দরজা বন্ধ করে দিল সে। ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে দ্রুত চলে গেল।
ইয়ার্ডের গেট দিয়ে সিড্যানটাকে বেরিয়ে যেতে দেখল ছেলেরা হতাশ দৃষ্টিতে।