চিন্তিতভাবে বইটা নিয়ে র্যাকে রেখে দিল রবিন। একটা এনসাইক্লোপিডিয়া খুলে খোঁজাখুঁজি করতেই পেয়ে গেল কাটিরঙ্গা, কয়েক লাইন লেখা রয়েছে জায়গাটার ওপর। পাহাড়ঘেরা খুব দুর্গম অঞ্চল, অধিবাসীরা ভয়ঙ্কর প্রতিহিংসাপরায়ণ।
ঢোক গিলল রবিন নিজের অজান্তেই, গলা, শুকনো। রক্তচক্ষু আর কাটিরঙ্গার ব্যাপারে যা যা জেনেছে, নোট লিখে নিল। ভাবছে। কিশোরকে ফোন করে জানাবে? না, তত তাড়াহুড়ো নেই। পরে জানালেও চলবে। তা ছাড়া ডিনারের সময় হয়ে এসেছে। বাড়িতে বলে আসেনি, দেরি করলে মা বকবেন!
মিস হকিনসকে গুডবাই জানিয়ে বেরিয়ে এল রবিন। বাড়িতে পৌঁছে দেখল, ডিনার তৈরি করছেন মা, বাবা বসে বই পড়ছেন, মুখে পাইপ।
ছেলের সাড়া পেয়েই মুখ তুললেন মিস্টার মিলফোর্ড। এই যে, এসেছ। ভাবছ কী? মনে হচ্ছে, মস্ত কোন সমস্যায় পড়ে গেছ?
বাবা, এগিয়ে এল রবিন, অগাস্টাস অভ পোল্যাণ্ডের নাম শুনেছ? কে ছিলেন, জানো?
না, মাথা নাড়লেন মিস্টার = মিলফোর্ড। অগাস্টাস…অগাস্টাস…অগাস্ট, হ্যাঁ, অগাস্ট নামটা জানি। কী করে। হয়েছে, তা-ও জানি। তুমি জানো?
রবিন জানে না। খুলে বললেন তাকে মিস্টার মিলফোর্ড। গায়ে পিন, ফোঁটাল যেন কেউ, এমনিভাবে লাফিয়ে উঠল রবিন। প্রায় উড়ে গিয়ে। পড়ল ফোনের কাছে।
কিন্তু কিশোরকে পাওয়া গেল না। জানালেন মেরি চাচী, আধ ঘণ্টা আগে বোরিস আর মুসাকে নিয়ে ম্যালিবু বিচে গেছে। কখন ফিরবে ঠিক নেই।
আমি আসছি, রবিন বলল। এলে ওকে বলবেন। থ্যাঙ্ক ইউ, ফোন রেখে দিল সে।
দরজার দিকে আবার রওনা দিতে যাবে, এই সময় মায়ের ডাক কানে এল। এই, তোমরা খেতে এসো, আমার হয়ে গেছে।
বাধ্য হয়েই আবার ফিরতে হলো রবিনকে। বাবার কাছ থেকে যা জেনেছে, কিশোরকে জানানোর জন্যে পাগল হয়ে উঠেছে সে। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে গলায় বার বার খাবার আটকে যেতে লাগল তার।
.
মিসেস হ্যামলিনের বাড়ি খুঁজছে তখন কিশোর, মুসা আর অগাস্ট।
অবশেষে খুঁজে পাওয়া গেল। বড় বাংলো টাইপের বাড়ি, চারপাশ ঘিরে রেখেছে বাগান।
গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ল তিন কিশোর। লাল ইটের পথ চলে গেছে সবুজ ঘাসে ঢাকা বাগানের মাঝখান দিয়ে। বাড়ির দরজায় এসে বেল বাজাল কিশোর।
সুন্দর চেহারার একজন মাঝবয়েসী মহিলা দরজা খুলে দিলেন, পরনে হালকা পোশাক।
আমি কিশোর পাশা, স্যালভেজ ইয়ার্ড থেকে এসেছি, পরিচয় দিল কিশোর। মূর্তিগুলো কোথায়?
ও, এসো এসো, ওই যে ওখানে।
গলা শুনেই বুঝল কিশোর, মিসেস হ্যামলিন।
পথ দেখিয়ে বাগানের কোণে এক জায়গায় ওদেরকে নিয়ে এলেন মহিলা। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যেন পড়ে আছে অগাস্টাস অভ পোল্যাণ্ড, করুণ অবস্থা। নাক নেই, একটা কান খসে গেছে, শরীরের জায়গায়। জায়গায় খাবলা দিয়ে ছাল-চামড়া-মাংস তুলে নেয়া হয়েছে যেন। কিন্তু ফ্রানসিস বেকন বহাল তবিয়তেই রয়েছে, বোঝা যাচ্ছে, ওটাকে ধোয়া হয়নি, ধুলো জমে রয়েছে গায়ে আগের মতই।
ফিরিয়ে দিতে খারাপই লাগছে, মহিলা আন্তরিক দুঃখিত। খুব শখ করে এনেছিলাম। আসলে, বাগানে বসানোর জিনিস নয় এগুলো, ঘরে রাখার জন্যে বানিয়েছে। পানি লাগলেই শেষ।
ঠিক আছে, ঠিক আছে, ভাববেন না, আশ্বাস দিল কিশোর। ইয়ার্ডে প্রায়ই পুরানো মাল আসে। আপনার কথা মনে রাখব। বাগানে সাজানোর উপযুক্ত, পাথরের তেমন মূর্তি এলেই দিয়ে যাব আপনাকে, অগাস্টাসকে ফিরে পেয়ে খুব খুশি সে। এই যে নিন, আপনার টাকা। নিয়ে যাই তা হলে মূর্তি দুটো?
টাকাটা নিলেন মিস হ্যামলিন, গুনে দেখার প্রয়োজন বোধ করলেন না, সায় জানিয়ে মাথা কাত করলেন।
দুহাতে মূর্তিটাকে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে এগোল কিশোর, ভারের জন্যে তার শরীর বাঁকা হয়ে গেছে পেছন দিকে। মুসা তুলে নিল বেকনকে।
সাবধানে গাড়িতে মূর্তি দুটো নামিয়ে রাখল মুসা আর কিশোর। হাঁপাচ্ছে।
আরিব্বাপ রে! ফোঁস করে মুখ দিয়ে বাতাস ছাড়ল মুসা। কী ভারির ভারি!
অগাস্ট বসল পিকআপের কেবিনে, তার আর বোরিসের মাঝখানে সিটে রয়েছে মূর্তি দুটো। মুসা আর কিশোর উঠল পেছনে। গাড়ি ছেড়ে দিল বোরিস।
তা হলে রক্তচক্ষুকে পেলাম? বলল মুসা। তুমি এখনও শিওর, অগাস্টাসের ভেতরেই পাওয়া যাবে?
নিশ্চয়ই।
ইয়ার্ডে ফিরেই আগে ভাঙতে হবে মূর্তিটা, না কী বলো?
রবিনের জন্যে অপেক্ষা করতে হবে। নইলে মন খারাপ হবে ওর।
ইয়ার্ডের অফিসে মেরি চাচীর সঙ্গে বসে কিশোরদের অপেক্ষা করছে রবিন। সময় যেন দাঁড়িয়ে গেছে মনে হচ্ছে তার। ইতিমধ্যে দুজন খরিদ্দার এসেছে, ছোটখাট জিনিস কিনেই সঙ্গে সঙ্গে চলে গেছে আবার।
গেটে গাড়ির শব্দ হতেই ঝট করে ফিল রবিন। নিরাশ হলো। না, পিকআপ নয়, কালো একটা সিড্যান ঢুকছে। আরে, সিড্যানের জোয়ার এল নাকি! আর কোন গাড়ি আসতে পারে না? অফিসের সামনে এসে থামল গাড়িটা। একজন লোক নামল। দেখেই চমকে উঠল রবিন। মাঝারি উচ্চতা, কালো চুল, হর্নরিমড় চশমা, আর অবশ্যই কালো গোঁফ!
কালো-গুঁফো! এখানে!
গুড ইভনিং, অফিসের দরজা থেকেই বলল লোকটা, মেরি চাচীর। দিকে তাকিয়ে, ফ্যাসফেসে গলা। অফিসের বাইরে টেবিলে রাখা পাঁচটা মূর্তির দিকে আঙুল তুলল। খুব ভাল জিনিস। বিখ্যাত সব লোক! আর আছে, না এই কটাই?
এই কটাই, মেরি চাচী বললেন। একটা কথা আগেই বলে দিচ্ছি, বাগানে বসানোর জন্যে নেবেন না। পানি লাগলেই নষ্ট হয়ে যায়, এই একটু আগে একজন অভিযোগ করেছে। ওগুলো ফেরত আনতে পাঠিয়েছি। মনে হয়, বাকিগুলোর ব্যাপারেও অভিযোগ আসবে শিগগিরই।