তাই তো চাই, রবিন বলল। কী কাজ?
রক্তচক্ষুর ব্যাপারে খোঁজ নেবে। লাইব্রেরিতে কোন বইয়ে দেখো। তো, ওটার উল্লেখ আছে কিনা। আমার মনে হয় রত্ন কিংবা মূল্যবান। পাথরের ওপর লেখা রেফারেন্স বইয়ে পেয়ে যাবে।
ঠিক আছে, মাথা নাড়ল রবিন। তো এখন যাই। লাইব্রেরিতে যাব। আগে। ওখানে কাজ সেরে বাড়ি ফিরব।
যাও। ভূত-থেকে-ভূতে চালু করে দিয়ে ডিনারের আগেই।
সাইকেল নিয়ে চলে গেল রবিন।
বরং বাদই দাও! হঠাৎ বলল অগাস্ট। তোমাদেরকে কতখানি। বিপদে ফেলছি, আমিও জানি না! অবস্থা বিশেষ ভাল ঠেকছে না! রয় হ্যামারের বাড়িতে ডাকাত পড়ল, তিন-ফোঁটা এসে তোমাকে হুমকি দিয়ে গেল। কিশোর, সামনে মহাবিপদ! তোমাদেরকে বিপদে ফেলার কোন যুক্তিই নেই, রক্তচক্ষুর কথা ভুলে বরং বাড়ি ফিরে যাই আমি। অগাস্টাসকে খোঁজার দরকার নেই তোমাদের। পারলে তিন-ফোঁটা কিংবা কালো-গোঁফই খুঁজে নিক, ওটা নিয়ে মারামারি করুক গে ওরা।
খুব ভাল কথা বলেছ, সঙ্গে সঙ্গে সায় দিল মুসা। কী বলো, কিশোর?
কিন্তু গোয়েন্দাপ্রধানের চেহারা দেখেই জবাব পেয়ে গেল সে। জটিল রহস্য সমাধান করতে দেয়া হয়েছে কিশোর পাশাকে, রক্তের গন্ধ পেয়েছে ব্লাডহাউণ্ড, আর তাকে বিরত করা যাবে না।
মাত্র তো শুরু করলাম, সেকেণ্ডু, কিশোর বলল, এখনি কী! রহস্যই তো চাই আমরা, পেয়েছিও, এখন সেটার কিনারা না করেই পিছিয়ে যাব? কাজের কথায় আসি। কয়েকটা ব্যাপার অদ্ভুত ঠেকছে!
যেমন?
আলমারিতে নিজেই নিজেকে আটকে রেখেছিল রয় হ্যামার, বোমা ফাটাল কিশোর।
বিস্ময়ে কয়েক মুহূর্ত কথা বলতে পারল না অগাস্ট। আটকে রেখেছিল! কেন?
সেটাই বুঝতে পারছি না।
আগ্রহে সামনে ঝুঁকে এসেছে মুসা। আলমারিতে কী করে আটকা পড়ল নিজে নিজে? চেহারা দেখে মনে হয়েছে, ঝড়ে পড়েছিল, ওই অবস্থাই বা করল কী করে নিজের?
দেখে যা মনে হয়, তাই হতে হবে এমন কোন কথা নেই, এক আঙুল দিয়ে গাল চুলকাল কিশোর। ভাবো। নিজের মগজকে কাজে লাগাও। …উকিল বলেছে, দেড় ঘণ্টা ধরে আলমারিতে আটকে আছে, বলেনি?
অ্যাঁ! …হ্যাঁ।
বেশ। তা হলে তার কথামত, সে ওই দেড়টি ঘণ্টা খানিক পর পরই চেঁচিয়েছে, দরজায় ধাক্কা দিয়েছে সাহায্যের আশায়। কিন্তু ওইরকম পরিস্থিতিতে একজন মানুষ সাধারণত কী করবে প্রথমে?
প্রথমেই চশমা ঠিক করবে! চেঁচিয়ে উঠল অগাস্ট। হয় নাকে, বসাবে, কিংবা খুলে পকেটে রেখে দেবে। অন্ধকারে পকেটেই রাখে। বেশিরভাগ লোকে। সুতো বেঁধে কান থেকে দেড় ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখা…উঁহু! অসম্ভব!
ঠিকই বলেছ, মাথা চুলকাল মুসা। আরও একটা ব্যাপার, চশমা ঠিক করার পরেই টাই ঠিক করত। টেনেটুনে নট ঢিলা করত, সোজা করত টাইটা, যেভাবে বাকা হয়েছিল খুব অস্বস্তি লাগার কথা। কিশোর, ঠিকই আন্দাজ করেছ। ওই ব্যাটা চশমা আর টাই উল্টোপাল্টা করে রেখেছিল ইচ্ছে করেই, আমাদের বোকা বানানোর জন্যে।
রহস্যের সমাধান করতে হলে সমস্ত ব্যাপার খতিয়ে দেখতে হবে, খুঁটিনাটি কিছু বাদ দেয়া চলবে না, কিশোর বলল। তোমাদের মতই আমিও প্রথমে বোকা বনেছিলাম। …এসো, এখানে এসো। দুজনেই। চেয়ার থেকে উঠে সরে দাঁড়াল সে। চেয়ারের গদিতে হাত দিয়ে দেখো। টেবিলেও হাত রাখো।
কিশোর যে চেয়ারটায় বসেছিল, তার গদিতে হাত রেখে দেখল মুসা আর অগাস্ট। চেয়ারের সামনে টেবিলেরও খানিকটা জায়গায় হাত বোলাল।
কী বুঝলে? ভুরু নাচাল গোয়েন্দাপ্রধান।
চেয়ারের গদি গরম, বলল অগাস্ট। টেবিলও।
মাথা ঝোকাল কিশোর। হ্যাঁ। রয় হ্যামারের চেয়ার তুলতে গিয়েও এই একই ব্যাপার দেখেছি। চেয়ারের গদি গরম, বড়জোর মিনিটখানেক আগে ওতে বসেছিল কেউ। এরপর যখন ওর চশমা আর টাইয়ের কথা ভাবলাম, আর কোন সন্দেহ রইল না। বুঝে গেলাম কী ঘটেছে।
আমাদেরকে আসতে দেখেছে সে, গাড়ি থেকে বেরোতে দেখেছে। তাড়াতাড়ি চেয়ারটা উল্টে রেখে গিয়ে আলমারিতে ঢুকেছে, চশমা আর টাই উল্টোপাল্টা করেছে। আমরা তার ঘরে ঢুকেছি, সাড়া পেয়েই শুরু করেছে চেঁচামেচি। দুতিন মিনিটের বেশি আলমারিতে ছিল না সে।
ইয়াল্লা! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। ওকাজ করতে গেল কেন?
আমাদেরকে বিপথে নেয়ার জন্যে, কিশোর বলল। বোঝানোর জন্যে, চিঠির কপি সত্যিই চুরি গেছে। আসলে মিছে কথা বলেছে।
তার মানে, চশমাধারী, কালো গোঁফওয়ালা, মাঝারি উচ্চতার কোন লোক নেই? অগাস্টের প্রশ্ন।
আমার তো তাই মনে হয়। সব হ্যামারের বানানো কথা। যা মনে হচ্ছে, তিন-ফোঁটা কালিচরণ রামানাথের টাকা খেয়েছে সে, কপিটা দিয়ে দিয়েছে তাকে। আমাদেরকে কী করে বোকা বানাবে, সেটাও হাতুড়ি মিয়ারই পরিকল্পিত।
হাতুড়ি মিয়া! বুঝতে পারছে না অগাস্ট।
হ্যামারের বাংলা হাতুড়ি, কাউকে সম্বোধন করতে মিয়া বলে আমাদের দেশে, অনেক ক্ষেত্রে টিটকারির ছলে
অ। তা হলে দেখা যাচ্ছে, ওই হাতুড়ি মিয়ারই যত শয়তানী। হু, এখন বোঝা যাচ্ছে, তিন. ফোঁটা কার কাছে খবর পেল এখানে মূর্তিগুলো। আছে। চিঠি পড়েই বুঝেছে সে, অগাস্টাসের মূর্তির ভেতর রয়েছে জিনিসটা।
ব্যাটা আবার আসবে বলে গেছে! মুসা বলল। সঙ্গে করে না আরও কয়েকটা কয়েক-ফোঁটাকে নিয়ে আসে! যদি বিশ্বাস না করে আমাদের কথা? যদি ভাবে, অগাস্টাসের মূর্তি কোথায় আছে আমরা জানি, তাকে মিছে কথা বলছি? শুনেছি, ভারতের লোকেরা নাকি কথা আদায়ের জন্যে খুব অত্যাচার করে মানুষের ওপর!