ও অমন করছে কেন? রবিনের কানে কানে বলল মুসা।
নিশ্চয় কারণ আছে, ফিসফিস করে জবাব দিল রবিন। শোনো।
অগাস্টাস! চোখের পলকে উজ্জ্বল হয়ে উঠল তিন-ফোঁটার গোমড়া। মুখ। অগাস্টাসের একটা মূর্তি আমার দরকার! বাগানের জন্যে। ওটাও বিক্রি হয়ে গেছে?
গেছে, মাথা কাত করল কিশোর।
লোকটার নাম-ঠিকানা? আদেশের সুরে বলল ফোঁটা। ওর কাছ থেকে কিনে নেব।
নাম-ঠিকানা তো লিখে রাখি না! হাত কচলে বলল কিশোর, যেন মস্ত অন্যায় করে ফেলেছে। কে যে নিল…
লিখে রাখো না! কঠিন শোনাল লোকটার গলা। এখন থেকে রাখবে। দরকার পড়ে অনেক সময়।
কিশোরও মনে মনে স্বীকার করল কথাটা।
দেখো, নাম-ঠিকানা জোগাড় করতে পারো কিনা, বলল লোকটা। একশো ডলার বকশিশ দেব।
নাম-ঠিকানা লিখে রাখি না, স্যর, আবার একই কথা বলল। কিশোর। তবে, মাঝেসাঝে বাড়ি নেয়ার পর আর জিনিস পছন্দ হয় না। কারও কারও, ফেরত নিয়ে আসে। আপনার কপাল ভাল হলে আসতেও পারে আগুসটাস। আপনার ঠিকানা রেখে যান।
ভাল বলেছ, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিশোরের চেহারায় কী খুঁজল লোকটা। তা রাখতে পারো।
ছড়ির এক মাথায় লাগানো ফিতের ফাসে বা হাত ঢুকিয়ে দিল তিন ফোঁটা, কনুইয়ের কাছে এনে ঝুলিয়ে রাখল। পকেট থেকে কার্ড আর কলম বের করে কিছু লিখে কার্ডটা বাড়িয়ে দিল কিশোরকে। নাও। এলেই ফোন কোরো। তুমি পাবে একশো ডলার, মূর্তিটার দাম আলাদা। হ্যাঁ, শুধু অগাস্টাসের মূর্তি হলেই ফোন কোরো, আর কোনটা দরকার নেই।
আচ্ছা, স্যর, ভোতা গলায় বলল কিশোর।
ভুলে যাবে না তো?
মনে রাখার চেষ্টা করব, স্যর।
রাখলেই ভাল করবে! ছড়ির ডগা নিয়ে মাটিতে হঠাৎ খোঁচা মারল তিন-ফোঁটা। কাগজের টুকরো পড়ে নোংরা হয়ে আছে।
ছড়ির ডগা কিশোরের দিকে ঠেলে দিল লোকটা।
চেঁচিয়ে উঠল অন্য তিন কিশোর।
ছড়ির আগ থেকে একটা ছুরি বেরিয়ে এসেছে, তাতে গেঁথে রয়েছে কাগজের টুকরোটা। তীক্ষ্ণ ধার, পাতলা ঝকঝকে ছুরির ফলা ফুটখানেক লম্বা, চোখা মাথাটা কিশোয়ের বুক ছুঁই ছুঁই করছে।
নোংরামি একদম দেখতে পারি না আমি, বলল লোকটা, ইঙ্গিতে কাগজের টুকরোটা দেখাল। খুলে নিয়ে ঝড়িতে ফেলো।
আস্তে হাত বাড়িয়ে ছুরি থেকে কাগজটা খুলে নিল কিশোর।
ছড়ির হাতলের কাছে বোতাম রয়েছে, তাতে চাপ দিল লোকটা, ওর আঙুলের নড়া দেখেই বোঝা গেল। ঝট করে আবার ছড়ির খোড়লে ফিরে গেল ফলাটা। নিশ্চয় স্প্রিং-সিসটেমে কাজ করে। আবার সেই নিরীহ চেহারার ছড়ি হয়ে গেল মারাত্মক অস্ত্রটা।
তা হলে বুঝতেই পারছ, তীক্ষ্ণ হলো লোকটার গলা, ভুললে কী অবস্থা হবে? আমি আবার আসব। অগাস্টাসের মূর্তি ফের তি এলেই ফোন। করবে আমাকে।
ঘুরে দাঁড়াল লোকটা। টেবিলে রাখা পাঁচটা মূর্তির দিকে আরেকবার ফিরে চাইল, তারপর গটমট করে উঠল গাড়িতে।
চলে গেল চকচকে সিড্যান।
ছয়
গেট দিয়ে গাড়িটা বেরিয়ে যাওয়ার পর ঘুরল কিশোর। চেহারা ফেকাসে। হাতের কাগজটাকে দলা পাকিয়ে মুঠো করে রেখেছে।
ওই লোকের সঙ্গে চালাকি চলবে না! বলে উঠল মুসা। বেশি বাড়াবাড়ি করলে ছুরি ঢুকিয়ে দেবে পেটে!
আমাকে হুমকি দিয়ে গেল! ঢোক গিলল কিশোর। দরজা দিয়ে কাগজটা ছুঁড়ে ফেলে দিল বাইরে। সত্যিই বলেছ, ওর সঙ্গে চালাকি চলবে না। বুঝিয়ে দিয়ে গেল।
মনে হচ্ছে, এই লোকই দশ বছর আগে আমাদের বাড়িতে এসেছিল, অগাস্ট বলল। শিওর না, তবে ওই লোকটার মতই লাগল একে।
তোমাদের বাড়িতে যে এসেছিল, তার কপালেও তিনটে ফোঁটা ছিল, রবিন বলল। এই লোকটাকেও দূর প্রাচ্যের লোক মনে হলো। হয়তো ভারতের কোন অঞ্চল থেকে এসেছে, কপালের ফোঁটা তিনটে হয়তো কোন গোত্র বা ধর্মের প্রতীক চিহ্ন।
কেন ওকে বললে অগাস্টাসের মূর্তিটার কথা? কিশোরের দিকে চেয়ে অনুযোগ করল মুসা। কাজটা বোধহয় ভাল হলো না!
না বললে বিপদে পড়তাম, কিশোর চিন্তিত। গেলাস তুলে ঢকঢক করে গিলল কমলার রস, ভিজিয়ে নিল শুকনো গলা। ও জেনেশুনেই এসেছে। সেটাই শিওর হয়ে নিলাম বলে দিয়ে। উকিল রয় হ্যামারের ফাইল থেকে চিঠির কপিও হয়তো ও-ই সরিয়েছে।
কিন্তু ওর চশমাও নেই, কালো গোঁফও নেই, মনে করিয়ে দিল অগাস্ট।
কাগজ চুরি করার জন্যে তোক ভাড়া করতে পারে, রবিন বলল। যেভাবে যা-ই করুক, অগাস্টাস ওর কাছে মূল্যবান। তার মানে, জানে।
এখানে তথ্যের জন্যে এসেছিল, কিশোর বলল। আমারও তথ্য। দরকার। ও তেমন কিছু জেনে যেতে পারেনি, কিন্তু আমি জেনে নিয়েছি। লোকটার নাম-ঠিকানা রেখে দিয়েছি!।
তিন-ফোঁটার দেয়া কার্ডটা রাখল গোয়েন্দাপ্রধান। সবাই ঝুঁকে এল, কী লেখা আছে দেখতে। ছাপানো রয়েছে:
কালিচরণ রামানাথ
কাটিরঙ্গা, ভারত।
অদ্ভুত ঠিকানা! কাটিরঙ্গার কোথায় থাকে, কী করে, কিছুই লেখা নেই। তার নিচে কলম দিয়ে লিখেছে হলিউডের একটা হোটেলের নাম আর ফোন নম্বর।
ভারত! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল মুসা। রবিন ঠিকই বলেছে! কোন খুনে গোত্রের লোক নয় তো তিন-ফোঁটা! তা, হলে রক্তচক্ষু খোঁজায় ইস্তফা! শুনেছি, আফ্রিকার চেয়েও খারাপ জায়গা ভারত। ওখানে নানারকম হিংস্র উপজাতির বাস, ধর্মের জন্যে মানুষ বলি দেয় যখন-তখন! দৃষ্টি দিয়েই তোমাকে ভস্ম করে দিতে পারে পুরোহিতরা, গলা কেটে মুণ্ডু আলাদা করে…
আরে, দূর, কী যা-তা বলছ! বাধা দিল কিশোর। ওসব বাজে কথা, লোকের বানানো গপ্পো। রবিনকে বলল, তোমার কিছু কাজ বাড়ল, নথি।