নিজের অজান্তেই মুখ বিকৃত করল কিশোর। লস অ্যাঞ্জেলেসের লোকগুলো পাগল! আর শনিবার-রোববারে যেন বদ্ধ পাগল হয়ে যায়! কী করে, না করে তার ঠিক নেই! কিছু একটা যেন কিনতেই হবে, এমনকী পুরানো বাতিল মালের চতুরেও ভিড় জমে যায়। দূরর! বিরক্তি চাপতে পারল না সে। চাচী, যারা নিল, তাদের নাম-ঠিকানা রেখেছ? বলেই বুঝল, বোকার মত প্রশ্ন করে ফেলেছে।
এই দেখো, দিন দিন জ্ঞান বাড়ছে! ওদের নাম-ঠিকানা রাখতে যাব। কেন আমি? টাকা দিল, জিনিস নিয়ে চলে গেল। ওদেরকে আর কী দরকার আমার?
যারা নিয়েছে, তাদের চেহারা কেমন মনে আছে? অগাস্টাস অভ পোল্যাণ্ডটা যে নিল?
কী ব্যাপার, বল তো, কিশোর? ভুরু কুঁচকে গেছে মেরি চাচীর। হঠাৎ ওই মূর্তিগুলোর ব্যাপারে এত আগ্রহ কেন?
চুপ করে রইল কিশোর।
কী বুঝলেন চাচী, কে জানে; বললেন, কালো স্টেশন ওয়াগন নিয়ে এসেছিল এক লোক, সে কিনেছে দুটো মূর্তি। মনে হলো, উত্তর হলিউডে থাকে সে। এক মহিলা নিয়েছে দুটো, ম্যালিবুতে থাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। লাল একটা সিড্যানে করে এসেছিল। বাকি চারটে কারা যে নিল, মনে করতে পারছি না। খুব ব্যস্ত ছিলাম।
বড় করে নিঃশ্বাস ফেলল কিশোর। সঙ্গীদের দিকে ফিরে বলল, চলো, হে, ভেবে দেখি, এরপর কী করা যায়।
ওয়ার্কশপে এসে ঢুকল ওরা। পাইপের মুখ থেকে লোহার পাত সরাতে দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গেল অগাস্টের। দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে তাকে হেডকোয়ার্টারে নিয়ে এল তিন গোয়েন্দা।
খুদে ল্যাবরেটরিটা দেখানো হলো মেহমানকে। ডার্করুম দেখল অগাস্ট। সর্বদর্শন পেরিস্কোপের ভেতর দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখল, সাজানো-গোছানো ছোট্ট অফিস আর সরঞ্জাম দেখে তাজ্জব হয়ে গেল।
চেয়ারে বসল সবাই।
এবার? মুসা শুরু করল। এবার কী? অগাস্টাসের মূর্তি গেল, সে সঙ্গে অগাস্টের জিনিসও। কোথায় কার বাগানে এখন শোভা বাড়াচ্ছে মূর্তিটা, কে জানে! লস অ্যাঞ্জেলেস আর তার আশপাশে কম করে হলেও হাজারখানেক বাগান আছে, ওগুলোর মধ্য থেকে খুঁজে বের করা! এ-জীবনে হবে না! হাত নাড়ল সে।
তবু চেষ্টা করে দেখতে হবে, নিরাশা গোপনের চেষ্টা করল অগাস্ট। ইসস, গতকালই যদি তোমাদের সঙ্গে দেখা করতাম! আজ সকালে একেবারে…যাক গে। যা গেছে, সেটা নিয়ে ভেবে কিছু হবে না। এখন কী করা যায়? দাদা সময়ের ওপর জোর দিয়েছে, তার মানে বেশি সময়ও নেই আমাদের হাতে। তার দুর্ভাবনা ছিল, তাড়াতাড়ি কিছু করতে না পারলে জিনিসটা আমার হাতছাড়া হয়ে যাবে। গেলও তাই।
হয়তো চিরতরেই গেল, অবশেষে মুখ খুলল কিশোর। কিন্তু এত সহজেপরাজয় মেনে নিতে পারব না। খুঁজে বের করবই।
কীভাবে? রবিনের জিজ্ঞাসা।
জানি না। ভাবতে হবে।
আচ্ছা! চেঁচিয়ে উঠল রবিন। এক কাজ করলেই তো পারি! ভূত থেকে-ভূতে!
ভূত-থেকে-ভূতে! চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসবে যেন অগাস্টের। প্রেতজগতের সঙ্গে যোগাযোগ আছে নাকি তোমাদের!
না, হাসল রবিন। তবে কিশোর জগতের সঙ্গে আছে। এটা খুব ভাল আবিষ্কার, অবশ্যই কিশোরের। আচ্ছা, বলো দেখি, আশপাশে কী আছে না আছে কারা বেশি খেয়াল করে? এই, নানারকম অদ্ভুত জিনিসপত্র?
কেন… বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেল অগাস্ট। জানি না!
অবশ্যই বাচ্চারা, মুসা বলল। বাচ্চাদেরকে বড়রা দেখেও দেখে না, ফলে বাচ্চারা এমন সব জায়গায় সহজেই ঢুকে যেতে পারে, যেখানে ঢোকা বড়দের জন্যে কঠিন। তা ছাড়া, নানারকম জিনিসের দিকে বাচ্চাদের আকর্ষণ, এই যেমন, কুকুর, বেড়াল, কোন্ পাড়ায় নতুন কোন্ ছেলে বা মেয়ে এল, কোথায় কার বাগানে ফল পাকল, কোন বাগানে প্রজাপতি বেশি, এমনি সব ব্যাপার। বড়রা এসব খেয়ালই করে না।
বাচ্চারা একে অন্যকে সাহায্য করতে চায়, খুব খুশি হয়ে, নিঃস্বার্থভাবে, মুসার কথার পিঠে বলল রবিন। আর রহস্যের গন্ধ পেলে তো কথাই নেই।
কিন্তু কজন বাচ্চাকে চেনো তোমরা? অগাস্টের প্রশ্ন। এত বড় শহর। সবগুলো বাগান খুঁজতে হলে শহরের বেশিরভাগ ছেলেমেয়েকেই কাজে লাগাতে হবে। কী করে সম্ভব?
ভূত-থেকে-ভূতের সাহায্যে, হাসল মুসা। খুব সহজ। আমাদের সবারই অন্তত কয়েকজন করে বন্ধু আছে, সব ছেলেমেয়েরই থাকে। কিছু জানার দরকার হলে, আমরা আমাদের বন্ধুদেরকে ফোন করব। তারা আবার তাদের বন্ধুদেরকে জিজ্ঞেস করবে। সেই তারা আবার তাদের বন্ধুদেরকে। এভাবে ছড়াতে থাকলে, অবস্থাটা কী দাঁড়ায়, ভেবে দেখো। কোন বাগানে নতুন মূর্তি বসানো হয়েছে, জানাটা আর তত কঠিন মনে। হচ্ছে?
হাঁ করে আছে অগাস্ট।
এখনও বুঝলে না? আবার বলল মুসা। আচ্ছা, ধরো, আমাদের তিনজনের, রবিন আর কিশোরকে দেখাল মুসা, পাঁচজন করে বন্ধু
আছে। তাদেরকে ফোন করে মূর্তির কথা জিজ্ঞেস করলাম আমরা। তারা। হয়তো কিছু বলতে পারল না, কিন্তু তাদের পাঁচজন করে বন্ধুকে জিজ্ঞেস করতে পারবে। ওরা আবার তাদের পাঁচজন করে বন্ধুকে। কী ঘটবে? দাবানলের মত খবরটা ছড়িয়ে পড়বে পুরো লস অ্যাঞ্জেলেসে। কতগুলো ছেলেমেয়ে আছে এই শহরে? সবাই না হোক, তাদের অর্ধেকেও যদি একটা মূর্তি খুঁজতে শুরু করে…
হয়েছে, হয়েছে! আর বোলো না! হাত নাড়তে শুরু করল অগাস্ট। বুঝতে পেরেছি! আরিব্বাপ রে! হিসেব শুরু করল সে। তোমরা তিনজনে পাঁচজন করে বললে হবে পনেরোজন, তারা বলবে পঁচাত্তরজনকে, সেই তারা আবার, তিনশো পচাত্তর…পরের বারেই হাজার পেরোবে! সাংঘাতিক কাণ্ড! শিস দিয়ে উঠল সে।