নেকলেস নেই, এটা যে জানো, জানেন তোমার খালা?
জানে। নেই দেখেই তো গিয়ে ধরেছি। বলল, মা নাকি বলেছে, নেকলেসটা পরিষ্কার করার জন্যে পাঠিয়ে দিতে।
নিশ্চয় বানানো গল্প?
তা তো বটেই, মুখ বিকৃত করল জিনা। মা বাড়িতে নেই, তবু নেকলেসটা পরিষ্কার করাতেই হবে, এতই তাড়াহুড়ো! আর যদি করাতেই হয়, দোকানে পাঠাতে হবে কেন? ফন হেনরিখকে ফোন করলেই সঙ্গে সঙ্গে লোক পাঠিয়ে দিত, বাড়িতে বসে কাজ সেরে দিয়ে যেত।
তার মানে কোন ধরনের গোলমালে জড়িয়েছেন তোমার খালা, কিশোর বলল। কয়েকটা ব্যাপারে উপসংহার টানতে পারি আমরা।
যেমন?
এক, অ্যানি পলের দুর্ঘটনার জন্যে নিজেকে দায়ী করছেন মিস মারভেল। ভাবছেন, শয়তানের সাহায্য নিয়ে কাজটা ভাল করেননি তিনি। পস্তাচ্ছেন এখন।
দুই, তার ওপর কোন ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে ভ্যারাড। সম্মানিত অতিথির অভিনয় বাদ দিয়ে, খোলস ছেড়ে আসল রূপ ধরেছে। ফোর্ডকে প্যাকেট হাতে দেখেছে ভ্যারাড?
না। গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখেছে শুধু।
ও জানে, নেকলেসটা সেফে রাখা ছিল?
কী জানি! মনে হয় না। সেফের কাছে যেতে দেখিনি তাকে কখনও। ও শুধু জানতে চেয়েছে, কেন ফোর্ডকে তাড়াহুড়ো করে বাইরে পাঠাল খালা।
সেই রহস্যময় ফোর্ড! আবার সেই সব প্রশ্ন: সে-রাতে গ্যারাজে সে-ই কি লুকিয়েছিল? নাকি তোমাদের কাজের লোক দরকার শুনে কাজ করতেই এসেছে? সে-রাতের সেই রহস্যময় লোকটা যদি সে হয়, তা হলে এ-বাড়িতে কী করছে? একটা ব্যাপার অবশ্য শিওর হয়ে গেলাম, ভ্যারাডের সহকারী সে নয়, চুপ করে গেল গোয়েন্দাপ্রধান। নিচের ঠোঁটে ঘন ঘন চিমটি কাটছে। কয়েকটা ব্যাপার খুব তাড়াতাড়ি জানা দরকার। প্রথমেই জানতে হবে, নেকলেসটা জুয়েলারের দোকানে সত্যিই দিয়ে আসা হয়েছে কিনা।
তাই তো! জিনা বিস্মিত। আগে ভাবিনি কেন? যাচ্ছি, এখুনি। ফোন করব।
সকালে, বাধা দিল কিশোর। আমাদের অফিস থেকে ফোন করবে, তা হলে তোমাদের বাড়ির কেউ জানবে না। সকালে জানার চেষ্টা করব, মিস পলের অ্যাকসিডেন্টের সঙ্গে শয়তান-সাধকদের কোন যোগাযোগ আছে কিনা। আনমনে বলল, কিন্তু, ভ্যারাড কি সত্যিই সাপ পাঠিয়েছিল?
মনে হয় না, মাথা নাড়ল জিনা। সাপ পাঠানো হয়েছে বলছে। বটে, কিন্তু তার অর্থ অন্য কিছু।
সেই অন্য কিছুটা কী? কী পাঠানো হয়েছে?
কী জানি। হাত নাড়ল জিনা।
তা হলে এত নিশ্চিত হয়ে বলছ কী করে?
আগেই বলেছি, ওরা ঘুরিয়ে কথা বলে। তা ছাড়া বাক্সে বা অন্য কিছুতে ভরে জ্যান্ত সাপ পাঠাবে? মোটেই রাজি হবে না খালা। তার সবচেয়ে বড় শত্রুকেও ওভাবে চমকে দিতে চাইবে না, কামড়াতে পাঠানো তো দূরের কথা!
রবিন বলল, আরেকটা ব্যাপার আছে এখানে। বিলিয়াল শব্দটা। বলেছিল ভ্যারাড। লাইব্রেরিতে বইপত্র ঘেঁটে জেনেছি, বিলিয়াল শয়তানের আরেক নাম
আর শয়তানকেই শ্রদ্ধাভরে ডক্টর কিংবা ডাক্তার শয়তান বলে ডাকে তার পূজারিরা।
গায়ে কাটা দিয়ে উঠল মুসার। খাইছে রে! শয়তানের সঙ্গে সাপের সম্পর্ক! আল্লাই জানে, কী ঘটবে!
এক মুঠো বালি তুলে নিয়ে আঙুলের ফাঁক দিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়ল। জিনা। কার সঙ্গে যে ভাব জমাল খালা!
সেটা আমিও ভাবছি, রহস্যময় শোনাল কিশোরের কথা। আসল। ইবলিশ না হলেও মানুষ-শয়তান তো বটেই।
দশ
বিধ্বস্ত চেহারা নিয়ে পরদিন সকালে পাশা স্যালভেজ ইয়ার্ডে হাজির হলো জিনা, দেখেই বোঝা যায় সারারাত ঘুমোতে পারেনি। অফিসের কাছে তার অপেক্ষা করছে তিন গোয়েন্দা।
খালা কাঁদছে, জানাল জিনা। ভ্যারাড ঘুমোচ্ছে। আর ফোর্ড দেখে। এলাম জানালা পরিষ্কার করছে।
মেরি চাচী বাসন-পেয়ালা ধুচ্ছে, কিশোর বলল। এই সুযোগে ফোনটা সেরে ফেলো।
এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে অফিসে ঢুকে রিসিভার তুলে ডায়াল করল জিনা। হারটার কথা জিজ্ঞেস করে জবাব শুনল চুপচাপ, তারপর থ্যাঙ্কিউ বলে নামিয়ে রাখল রিসিভার।
ওরা হার পেয়েছে, উকণ্ঠা দূর হয়েছে জিনার। দিন কয়েক রাখবে হারটা, কাজ হয়ে গেলেই পাঠিয়ে দেবে। যাক, বাঁচা গেল! স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে।
তা হলে নিরাপদেই আছে, কিশোর বলল। আর যাই হোক, তোমাদের নতুন লোকটা রত্নচোর নয়। এখন সাপের ব্যাপারটা কী, জানা দরকার। অ্যাকসিডেন্টটা কী করে ঘটল জানতে হবে।
তোমার কী ধারণা? কিশোরের দিকে তাকাল মুসা। মিস পলের গাড়িতে সাপ ফেলে রাখা হয়েছিল?
কেঁপে উঠল জিনা।
খুব সম্ভব, জবাব দিল কিশোর। গাড়ির ভেতর হঠাৎ জ্যান্ত সাপ দেখলে চমকে উঠবে না এমন মানুষ কমই আছে।
এখন কী করবে? জিনা জিজ্ঞেস করল।
আমি লাইব্রেরিতে যাব, রবিন বলল। সাপ, শয়তান আর প্রেতসাধকদের ব্যাপারে পড়াশোনা করব। দেখি, আর কী কী জানা যায়।
আমি আর মুসা যাব হাসপাতালে, কিশোর বলল। মিস অ্যানি পলকে দেখতে। লস অ্যাঞ্জেলেসে যাবে বোরিস, আমাদেরকে নামিয়ে দিতে পারবে।
আমি বাড়ি যাচ্ছি, দরজার দিকে রওনা হলো জিনা। সব কটার ওপর নজর রাখতে হবে।
তেমন কিছু যদি জানতে পারি, ফোন করব তোমাকে, কথা দিল কিশোর।
জিনা বেরিয়ে গেল।
দরজায় দেখা দিল বোরিস। রেডি?
হ্যাঁ, বলল কিশোর। মুসাকে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে এসে ট্রাকে চড়ল।
লস অ্যাঞ্জেলেসের দিকে ছুটে চলেছে ট্রাক। গভীর ভাবনায় ডুবে আছে কিশোর, মুসা চুপচাপ।