আরে, দেখো! দেখেছ?
দেখল বব। নিগ্রোর ডান হাতের আঙুলের কয়েক ইঞ্চি দূরে পড়ে রয়েছে ছোট্ট গোল সোনালি একটা জিনিস, মোহর। সেই ডাবলুনটা।
বলেছিলাম না, ওমর বলল, মোহরটা অভিশপ্ত। যার হাতেই যায়, তার সর্বনাশ করে ছাড়ে। ববকে মোহরটার দিকে এগোতে দেখে চেঁচিয়ে উঠল, না না, ছুঁয়ো না! ছুঁয়ো না!
এখানে ফেলে যাব?
মাথা নাড়ল ওমর, ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বসেছে। এখানে নয়, চোখের আড়ালে। ওটাকে দেখলেও ক্ষতি হতে পারে, জিনের আসর আছে ওটাতে, মোহরটার কাছে। এসে দাঁড়াল সে। এক লাথি দিয়ে ফেলে দিল একটা গর্তে, এটাতেই লুকিয়েছিল বব। গড়িয়ে গড়িয়ে চোখের আড়াল হয়ে গেল মোহরটা। বিড়বিড় করে বলল ওমর, যাক, গেল আপদ। ববের দিকে ফিরল। তোমাকে আবার দেখব, আশা করিনি, বব। খুব খুশি লাগছে। মুসা আর কিশোরের যে কি হলো?
আমি দেখেছি ওদের! জানাল বব। ওদের বাঁধন খোলার চেষ্টা করছিলাম। ওই সময় এই লোকটা জেগে উঠে তাড়া করল!
বেঁচে আছে ওরা? ইয়াল্লাহ! অন্তরের গভীর থেকে বেরিয়ে এল ডাকটা, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল ওমর।
আছে, তবে বন্দি, বলল বব।
বন্দি?
সংক্ষেপে সব কথা জানাল বব।
ববের কথা শেষ হতে আরেকবার লম্বা শ্বাস ফেলল ওমর। মুক্ত করতে হবে ওদের। চলল, এখুনি।
নিগ্রোর দেহটা দেখাল বব। এটার কি হবে?
ওর সকার করার সময় নেই এখন, ঠাণ্ডা ওমরের কণ্ঠ, ওর দোস্তরাই যা করার করবে। কথা বলতে বলতেই আবার গুলি আর বারুদ ঠেসে নিল পিস্তলে। ক্ষুরটা নাও। মুসা আর কিশোরের বাঁধন কাটা যাবে।
ওমর ভাই, এই কাপড় পেলেন কোথায়? আর জিজ্ঞেস না করে পারল না বব। বুঝতে পারছি, গতরাতে আপনাকেই দেখেছিলাম, চাঁদের আলোয় ভূতের ভয়ে ছোটার কথা মনে পড়তেই হেসে ফেলল। জলদস্যুর ভূত ভেবেছিলাম।
ওমরও হাসল। পুরনো একটা দুর্গ আছে, উপদ্বীপে। এসব জিনিস ওখানেই পেয়েছি। কিন্তু এখন সব কথা বলার সময় নেই। কিশোর আর মুসাকে ছাড়িয়ে আনা দরকার। এসো, যাই।
পুরো দলটাকে আক্রমণ করবেন? হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞেস করল বব, সৈকত ধরে চলেছে ওরা ল্যাঙ্গুনের উদ্দেশে।
জানি না। লুকিয়ে থেকে আগে দেখব অবস্থা, পরিস্থিতি বুঝে যা করার করব, বলল ওমর। প্রয়োজন হলে আক্রমণ করতেই হবে। তবে একটা লোককে নিয়ে সমস্যা, ইমেট চাব। রিভলভারে হাত নাকি তার খুবই ভাল। আমার এটা আদিম পিস্তল। এ-জিনিস নিয়ে ওর মুখোমুখি হতে পারব না। এটা হাতে আছে, নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল, এই আর কি। বারো গজ দূর থেকে নিশানা ঠিক রাখা। যাবে না… থমকে গেল সে হঠাৎ। কে জানি আসছে!
সামনে একটা পাথরের স্তূপের ওপাশ থেকে আসছে শব্দ। পটার ওপর উঠে সাবধানে উঁকি দিল ওমর। পরক্ষণেই লাফিয়ে নেমে ববের হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে বলল, জলদি! জঙ্গলে!
ববকে টেনে নিয়ে জঙ্গলে ঢুকে পড়ল ওমর। কাটার খোঁচায় দুজনেরই চামড়া ছিঁড়ে গেল জায়গায় জায়গায়।
কী? হাঁপাতে হাঁপাতে বলল বব।
ইমেট চাব বোধহয়, হাতে রিভলভার। হ্যাঁ, ও-ই। এদিকে আসছে, নিগ্রোটাকে খুঁজছে, কিংবা হয়তো গুলির শব্দ শুনে সন্দেহ করেছে। চুপ করে থাকো।
ও দলছুট হলে আমাদের জন্যে ভালই, ফিসফিস করে বলল বব।
মাথা নোয়াল ওমর। ঠোঁটে আঙুল রাখল। শশশশ!।
গাছের আড়াল থেকে ইমেট চাবকে দেখতে পাচ্ছে দুজনে। পাথরের পটার চূড়ায় উঠে মুখ ঘুরিয়ে এপাশ ওপাশ দেখল সে। চেঁচিয়ে ডাকল, ম্যাবরি। এই, ম্যাবরি। তারপরই দেখতে পেল পাহাড়ের ওপর পড়ে থাকা নিগ্রোকে। গাল দিয়ে উঠে তূপ থেকে নেমে ছুটল সেদিকে।
এসো, এই আমাদের সুযোগ, উঠে দাঁড়াল ওমর। জঙ্গলের ভেতর দিয়েই কোনমতে পথ করে এগোল। ইচ্ছে, গাছ-পালার আড়ালে আড়ালে পাথরের স্তূপটার পাশ কাটিয়ে চলে যাবে ওপাশে। তাহলে আর তাদেরকে দেখতে পাবে না। ইমেট চাব।
কিন্তু যে পরিমাণ লতা আর কাঁটা, নিঃশব্দে এগোনো অসম্ভব, এর ভেতর দিয়ে এগোনো সাংঘাতিক কঠিন। যতটা সম্ভব কম আওয়াজ করে এগোল ওরা।
স্তূপটার পাশ কাটিয়ে এসে ঝোঁপ সরিয়ে মুখ বের করল ওমর। ববকে জিজ্ঞেস করল, শেষ কোন জায়গায় দেখেছিলে ওদের?
আরেকটা পাথরের স্তূপ দেখাল বব। পাথর আর ভূমিধস নেমেছিল ওখানে কোন্ আদিমকালে, নারকেল গুচ্ছ গজিয়েছে এখন। ওটার ওপাশে।
এসো। ইমেট চাব আসার আগেই কাজ সারতে হবে আমাদের, পাশে তাকিয়ে ইমেট চাব আসছে কিনা দেখল। দৌড় দাও।
নিরাপদেই ভূমিধসটার কাছে চলে এল ওরা। আরেকবার পেছনে তাকিয়ে দেখল ওমর, ইমেট চাবকে দেখা যাচ্ছে না। বব, এবার তোমার পালা। এখুনি মুক্ত করতে না পারলে আর কখনও পারব না। পিস্তল দেখিয়ে আটকে রাখব আমি বারডু আর হ্যামারকে। তুমি কিশোর আর মুসার বাঁধন কাটবে। মাথা নিচু রাখবে, যে কোন সময় গোলাগুলি শুরু হতে পারে। যা-ই ঘটুক, তুমি কোন দিকে তাকাবে না, ওদের বাধন না কাটা পর্যন্ত। ওদেরকে ছাড়াতে পারলেই প্লেনটা আবার দখল করব। বুঝেছ?
বুঝেছি।
গুড। এসো, যাই।
এক হাতে পিস্তল আরেক হাতে ভোজালি নিয়ে পাথরের দ্বিতীয় স্তূপটার চূড়ায় উঠে গেল ওমর। শক্ত করে ক্ষুর চেপে ধরে বব অনুসরণ করল তাকে। বিমানটা দেখা যাচ্ছে, সৈকতে পড়ে থাকা রবারের ডিঙিটাও, কিন্তু মানুষ নেই।
সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে ববের দিকে তাকাল ওমর।
আরও কয়েকটা বড় পাথর দেখিয়ে বলল বব, ওগুলোর ওপাশে। ওখানেই ক্যাম্প করেছে ব্যাটারা।