বব, কিশোর আর মুসা দাঁড়িয়ে আছে রেলিঙের ধারে। নোঙর তোলা দেখছে। রাতের বেলায়ই কয়েকটা ডলফিন এসে জমা হয়েছে জাহাজের ধারে, ফেলে দেয়া খাবারের টুকরো-টাকরার লোভে। স্বচ্ছ পানিতে খেলা জুড়েছে ওগুলো। কখনও তাড়া করে যাচ্ছে একে অন্যকে, বোতলের মুখের মত নাক দিয়ে গুতো মারছে। পেটে, কখনও লাফিয়ে শূন্যে উঠে ডাইভ দিয়ে পড়ছে। সূর্যের সোনালি আলোয় অপরূপ সুন্দর লাগছে জীবগুলোকে।
জাহাজ ছাড়ল। ডলফিনের দলও চলল সঙ্গে সঙ্গে। কোথা থেকে এসে হাজির হলো একটা সাদা অ্যালট্রেস, উড়ে চলল জাহাজকে অনুসরণ করে।
অভিশপ্তটা মারা গেছে, প্লেনে বাড়ি খেয়ে, পাখিটাকে দেখতে দেখতে বলল মুসা।
কে বলল তোমাকে? ঘুরল কিশোর।
কেন, মরেনি? তাহলে অ্যাকসিডেন্টটা করল কে?
অ্যালট্রেসই, এটার মতই সাধারণ আরেকটা পাখি। অভিশাপ-টভিশাপ কিছু, ঝড়ের তাড়া খেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল, ধাক্কা লাগিয়েছিল প্লেনের সঙ্গে।
মোহরের অভিশাপ তাহলে বিশ্বাস করো না তুমি? বলল বব।
অভিশাপ না কচু। সব মনের ভয়।
তাহলে এই যে, এতগুলো অঘটন ঘটল? মোহরটা যে-ই ছুঁলো, মরল! প্রতিবাদ করল মুসা।
তুমি মরেছ? আমি, বব, কিংবা ওমর ভাই মরেছে? ববের বাবা মরেছেন? আসলে যা ঘটার এমনিতেই ঘটত। হ্যামার আর অন্যরা যারা মরেছে, মোহরের লোভে মরেছে, অভিশাপে নয়। ঠাণ্ডা মাথায় ভালমত বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখো, কোন দ্বিধা থাকবে না আর।
তুমি বলতে চাইছ, ওমর ভাই খামোকাই অভিশপ্ত মোহরটা ফেলেছে? না ফেললেও চলত? বব আফসোস করল। আহ্হা, তাহলে তো ভুল হয়ে গেছে। স্যুভনির রাখতে পারতাম।
ওটাই যে সেই মোহরটা, কি করে জানলে? ভুরু নাচাল কিশোর। গর্তে পেয়েছ, আরও তো মোহর ছিল। সবই একরকম। কোটা তুলতে কোটা তুলে পাথরে রেখেছ, শিওর হচ্ছ কি করে?
তাই তো!
যাক ওসব কথা। দেশে ফিরে এত টাকা দিয়ে কি করবে বলো দেখি?
আমি আর কি করব? ভাল হোস্টেলে থেকে ভাল ইস্কুলে পড়ালেখা করব, ব্যস। তবে বাবা বোধহয় ভাল দেখে একটা জাহাজ কিনবে, হঠাৎ কিশোরের হাত চেপে ধরল বব। কিশোর, আমার একটা কথা রাখবে? তিন গোয়েন্দায় শরিক করে। নাও না আমাকে, চার গোয়েন্দা করে ফেলো। প্লীজ।
হাসল কিশোর। কৌশলে এড়িয়ে গেল অনুরোধটা, বলল, কেন, গোয়েন্দা হতে চাও কেন? ভাল একটা পালের জাহাজ বানিয়ে জলদস্যু হয়ে যাও না? টাকা। তো আছেই।
আহা, তা যদি হতে পারতাম, দীর্ঘশ্বাস ফেলল বব। নীল পানিতে ডলফিনের খেলা দেখতে দেখতে স্বপ্নের জগতে হারিয়ে গেল সে, বোধহয় লুই ডেকেইনির কথাই ভাবছে। এক সময় মুখ তুলে বলল, জলদস্যু হই আর না হই, নাবিক হবই। জাহাজ নিয়ে বেরিয়ে পড়ব খোলা সাগরে। এতদিন মনে মনে দোষ দিয়েছি। বাবাকে, কিন্তু আজ বুঝতে পারছি, কিসের নেশায় ঘর ছেড়েছে বাবা। এই খোলা, আকাশ, খোলা বাতাস, নীল সাগর…আহা! আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করল সে।