পরিচয়পত্র দেখাল যুবক। সরকারী সিল-ছাপ্পর মারা।
আমি সরকারী লোক, কার্ডটা আবার পকেটে রাখতে রাখতে বলল যুবক। জরুরি কিছু কথা আছে। নিরাপদে বলা যাবে কোথায়?
আসুন ভাবনা চলছে কিশোরের মাথায়। সরকারী লোক; তিন গোফ্রেহ্মার কাছে এসেছে! জরুরি কথা! মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফারও বার বার হুঁশিয়ার করেছেন। নাহ কিছু বুঝতে পারছে না সে।
তিন গোয়েন্দার ওয়ার্কশপে ববকে নিয়ে এল কিশোর। পুরানো দুটো চেয়ারের একটাতে বসতে দিল অতিথিকে। নিজে বসল আব্রেকটায়। মুসা আর রবিন বসল দুটো বাক্সের ওপর।
হয়ত বুঝতে পারছ, কেন এসেছি? কথা শুরু করল বব। তাকাল। তিন গোয়েন্দার দিকে।
কেউ কোন কথা বলল না।
ব্যাপারটা ভ্যারানিয়ার প্রিন্স দিমিত্রিকে নিয়ে, বলল আবার বব।
প্রিন্স দিমিত্রি! ভুরু কুঁচকে গেছে মুসার। কেমন আছে সে?
ভাল। তোমাদেরকে তার শুভেচ্ছা জানিয়েছে। কিশোরের দিকে তাকাল বব। দুদিন আগে ওর সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। আগামী দুহপ্তার মধ্যেই অভিষেক অনুষ্ঠান শুরু হবে। তোমাদেরকে দাওয়াত পাঠিয়েছে সে।
ইয়াল্লা! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। ইয়োরোপে যাব! সত্যি বলছেন তো?
সত্যিই বলছি, হাসল বব। তোমরা তার বন্ধু। আমেরিকার আর কোন ছেলেকেই সে চেনে না। দেশেও বন্ধুবান্ধব নেই খুব একটা। তাছাড়া, ভ্যারানিয়ায় কে যে তার বন্ধু, আর কে নয়, বোঝা খুবই মুশকিল। রাজকুমারের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবে সবাই, তাকে তোয়াজ করে খুশি রাখতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। এতে আর যাই হোক, বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে না। তাই, সত্যিকারের কয়েকজন বন্ধুকে কাছে রাখতে চায় অভিষেকের সময়।…আসল কথা কি জান, আইডিয়াটা আমিই ঢুকিয়েছি তার মাথায়।
আপনি? রবিন কথা বলল। কেন?
কারণ, আমাদের, মানে আমেরিকানদের কিছু স্বার্থ জড়িত রয়েছে, বলল বব। শান্তির দেশ ভ্যারানিয়া, অন্তত এতদিন তাই ছিল। কোন শত্রু নেই, সুইটজারল্যাণ্ডের মত। ওভাবেই থাকুক, এটাই চায় আমেরিকান সরকার। কোন শত্রুদেশ ওখানে আস্তানা গেড়ে আমাদের অসুবিধে করুক, এটা মোটেই কাম্য নয়।
কিন্তু, এতক্ষণে কথা বলল কিশোর। ভ্যারানিয়ার মত ছোট দরিদ্র একটা দেশ কি এমন দিতে পারে আমেরিকাকে?
পারে, পারে। ছোট বলে ইঁদুরকে উপেক্ষা করা উচিত না সিংহের। ভ্যারানিয়া একটা স্পাই বেস, দুনিয়ার সব দেশের গুপ্তচরদের স্বর্গ। যাকগে, ওসব বলার দরকার নেই এখন। তো, তোমরা যাবে?
চোখ মিটমিট করছে তিন কিশোরই। যাবার জন্যে ওরা এক পায়ে খাড়া। কিন্তু কিছু সমস্যা আছে। যেমন, এতদূরে অজানা অচেনা জায়গায় যেতে মত দেবেন কিনা অভিভাবকেরা, খরচ দেবেন কিনা ইত্যাদি। বব ব্রাউনকে জানাল ওরা সে কথা।
ওসব কোন সমস্যাই না, বলল বব। রবিন আর মুসার বাবাকে ফোন করবেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। তোমাদের সব দায়িত্ব আমার ওপর, সেকথা বলে দেবেন। কিশোরের চাচীর সঙ্গে আমি কথা বলব। মনে হয় না অরাজি হবেন। আর টাকা পয়সার কোন ভাবনা নেই। সব খরচ বহন করবে আমাদের সরকার। দেশের একটা সম্মান আছে, সেটা বজায় রাখতে হবে। যত খুশি খরচ কর ভ্যারানিয়ায়, পুরোদস্তুর। আমেরিকান সেজে থেক, কোন বাধা নেই।
হাসি একান-ওকান হয়ে গেল মুসার। রবিনের চোখও চকচক করছে। কিন্তু কিশোরের চেহারা দেখে বোঝা গেল না খুশি হয়েছে কি না।
কিন্তু, ভ্রূকুটি করল কিশোর, আমেরিকান সরকারের এত গরজ কেন? টাকা পয়সা খরচের ব্যাপারে কোন দেশের কোন সরকারই দরাজহস্ত নয়। আমাদের সরকারও এর বাইরে নন।
মিস্টার ক্রিস্টোফার বলেছেন, তোমরা খুব বুদ্ধিমান, হাসল বব। বুঝতে পারছি, ঠিকই বলেছেন। ঠিক আছে, বলেই ফেলছি। জুনিয়র এজেন্ট হিসেবে তোমাদেরকে ভ্যারানিয়ায় পাঠাতে চাইছেন ইউএস সরকার।
তারমানে…তারমানে প্রিন্স দিমিত্রির ওপর গুপ্তচরগিরি করতে… হতবুদ্ধি হয়ে গেছে যেন মুসা।
জোরে জোরে মাথা নাড়ল বব। মোটেই না। তবে চোখ খোলা রাখবে। সন্দেহজনক যে-কোন ঘটনা চোখে পড়ক, কিংবা কথা কানে আসুক, সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট করবে। ভেতরে ভেতরে সাংঘাতিক কিছু একটা ঘটছে ভ্যারানিয়ায়। শিগগিরই হয়ত বিস্ফোরণ ঘটবে। কি হচ্ছে বা হবে, কিছু জানি না আমরা। সেটা জানতে আমাদেরকে সাহায্য করবে তোমরা।
আশ্চর্য! ভুরু কুঁচকে আছে কিশোর। আমি জানতাম, গোপন খবর জানার অনেক উৎস আছে সরকারের…
মানুষ নিয়েই গঠিত হয়েছে সরকার, বাধা দিয়ে বলল বব। তাছাড়া, ভ্যারানিয়ায় কোন গোপন খবর খুবই শক্ত ব্যাপার। ছোট্ট দেশ ওটা, কিন্তু এমন কিছু মানুষের জন্ম দিয়েছে, দেশের জন্যে বিনা দ্বিধায় যারা প্রাণ দিয়ে দিতে পারে। দরিদ্র, তবু লোভী নয় ওদেশের মানুষ। বাইরের কোন সাহায্য ছাড়াই চালিয়ে নিয়েছে এতদিন। ওদের ভাঙা হয়ত সহজ, কিন্তু মচকানো প্রায় অসম্ভব। না খেয়ে থাকতে রাজি, তবু কারও কাছে হাত পাতবে না। যেচে পড়ে কেউ সাহায্য দিতে গেলেও নেবে না। দেশের স্বাধীনতাকে বড় বেশি মর্যাদা দেয় ওরা! থামল সে। তারপর বলল, তবে মক্কায়ও খারাপ লোক আছে। ভ্যারানিয়ার বর্তমান রিজেন্ট, ডিউক রোজার বুরবন তেমনি এক লোক। এটা অবশ্যই আমাদের সন্দেহ। তা না-ও হতে পারে। আমাদের সন্দেহ, দিমিত্রিকে প্রিন্স হতে দেবে না সে কিছুতেই। অভিষেক অনুষ্ঠানই হতে দেবে না। রাজ্য শাসন করছে অনেক দিন থেকে, এই লোভ সে ছাড়তে পারবে বলে মনে হয় না। যদি কোন অঘটন ঘটে ভ্যারানিয়ায়, সে-ই হবে এর হোতা।