কি?
সকালের ব্যাপারটা! অ্যাক্সিডেন্ট হয়েই যাচ্ছিল! হ্যানসন ঠিক সময়ে গাড়ি না থামালে…কেন, আশ্চর্য লাগেনি তোমাদের কাছে? কোনরকম খটকা লাগেনি?
আশ্চর্য! খটকা! মুসার মতই বিস্মিত হল রবিন। কপাল ভাল, অ্যাক্সিডেন্ট হয়নি! এতে আশ্চর্যের কি আছে?
আসলে কি বলতে চাইছ, বলে ফেল তো! বলল মুসা।
রিগো, মানে দিমিত্রির শোফার, বলল কিশোর। পাশের রাস্তা থেকে বেরিয়ে এসে সামনে পড়ল। রোলস রয়েসটাকে দেখতে পায়নি, বললে মোটেই বিশ্বাস করব না। নিশ্চয় দেখেছে। ইচ্ছে করলেই গতি বাড়িয়ে আমাদের সামনে দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারত। বরং ব্রেক কষেছে ঘ্যাচ করে। সময় মত হ্যানসন পাশ কাটাতে না পারলে সোজা গিয়ে লিমোসিনের গায়ে বাড়ি মারত রোলস রয়েস। দিমিত্রি যেখানে বসেছিল ঠিক সেখানে। মারাই যেত সে!
দুর্ঘটনার আগে হুঁশজ্ঞান হারিয়ে ফেলে মানুষ, বলল মুসা। রিগোরও সেরকম কিছু হয়েছিল!
বিশ্বাস করতে পারছি না। এদিক ওদিক মাথা নাড়ল কিশোর। কেন যেন মনে হচ্ছে, কোথাও কিছু একটা ঘাপলা রয়েছে।…যাকগে, এস যাই। চাচী হয়ত ভাবছে…
.
০২.
দিন কয়েক পর।
হেডকোয়ার্টারে বসে আছে তিন গোয়েন্দা।
পাশা স্যালভেজ ইয়ার্ডের ভেতর আবর্জনার স্তূপের তলায় চাপা পড়ে আছে একটা ট্রেলার-মোবাইল হোম। ভাঙাচোরা। ওটাকে মেরামত করে নিয়ে নিজেদের গোপন আস্তানা বানিয়েছে তিন গোয়েন্দা। কয়েকটা গোপন পথ আছে, ওরা তিনজন ছাড়া আর কেউ জানে না!
কয়েক মিনিট আগে পিয়ন নিয়ে এসেছে সকালের ডাক। ইতিমধ্যেই মোটামুটি নাম ছড়িয়ে পড়েছে তিন গোয়েন্দার, অভিনেতা জন ফিলবি আর তার টেরর ক্যাসলের সৌজন্যে। অনেকেই চিঠি লেখে এখন ওদের কাছে। বেশির ভাগই বাচ্চা ছেলেমেয়ে, কিংবা ধনী বিধবা। কারও হয়ত বল হারিয়ে গেছে, কেউ এক বাক্স চিউইং গাম। খটুজে পাচ্ছে না, কিংবা কোন বিধবার আদরের বিড়ালটা হয়ত কয়েকদিন আগে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে, আর ফেরেনি। খুঁজে বের করে দেবার ডাক আসে। গ্রাহ্য করে না কিশোর। এসব সাধারণ কাজ হাতে নেবার কোন ইচ্ছেই নেই তার-যদিও মুসার খুবই আগ্রহ, চিঠিগুলো সোজা ময়লা ফেলার ঝুড়িতে নিক্ষেপ করে গোয়েন্দাপ্রধান।
হারিয়ে যাওয়া প্রিয় কুকুরটা খুঁজে দেবার অনুরোধ করে চিঠি পাঠিয়েছে এক বিধবা। এটাই পড়ছে রবিন, এই সময় বাজল টেলিফোন।
তিন গোয়েন্দার ব্যক্তিগত টেলিফোন। ইয়ার্ডের কাজে চাচা চাচীকে সাহায্য করে ওরা অবসর সময়ে। পারিশ্রমিক হিসেবে মেরিচাচীর হাতে তৈরি আইসক্রীম-কেক আর হট-চকোলেট ছাড়াও নগদ কিছু টাকা পায় রাশেদ চাচার কাছ থেকে। ওখান থেকেই টেলিফোনের বিল দেয় ওরা। গোয়েন্দাগিরি করে স্রেফ শখে, এর জন্যে টাকাপয়সা নেয় না মক্কেলের কাছ থেকে।
ছোঁ মেরে রিসিভার তুলে নিল কিশোর।
হ্যালো, বলল গোয়েন্দাপ্রধান। তিন গোয়েন্দা। কিশোর পাশা বলছি।
গুড মর্নিং, কিশোর, স্পীকারে গমগম করে উঠল ভারি কণ্ঠস্বর। আগের মত মাইক্রোফোনের সামনে আর রিসিভার ধরতে হয় না, নতুন ব্যবস্থা করে নিয়েছে কিশোর। টেলিফোন লাইনের সঙ্গে কায়দা করে স্পীকারের যোগাযোগ ঘটিয়ে দিয়েছে। ওপাশ থেকে কেউ কথা বললেই বেজে উঠে স্পীকার। হেডকোয়ার্টারে বসা সবাই একসঙ্গে শুনতে পায় কথা। এ রিসিভারে চেপে বসল কিশোরের আঙুল। চোখ বড় বড় হয়ে গেছে মুসা আর রবিনের। কান খাড়া হয়ে গেছে। মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফার!
কিশোর, তোমাকে পেয়ে যাওয়ায় ভালই হল, আবার বললেন চিত্রপরিচালক, শিগগিরই একজন দেখা করতে যাচ্ছে তোমাদের সঙ্গে।
দেখা করতে আসছে? কোন কেস, স্যার?
টেলিফোনে কিছুই বলা যাবে না, জবাব দিলেন চিত্রপরিচালক। খুব গোপন ব্যাপার। তার সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেছি আমি। অনেক কিছু জেনেছি, বুঝেছি। তোমাদের পক্ষেই সুপারিশ করেছি আমি। আশা করি, নিরাশ করবে না। হ্যাঁ, বিস্ময়কর এক প্রস্তাব আসছে তোমাদের কাছে। আগে থেকেই হুঁশিয়ার করে রাখছি। ভেবেচিন্তে কাজ কর।…রাখলাম।
লাইন কেটে গেল ওপাশে। রিসিভারের দিকে এক মুহূর্ত চেয়ে রইল কিশোর। ধীরে ধীরে নামিয়ে রাখল ক্রেডলে। স্তব্ধ নীরবতা ট্রেলারের ভেতর।
কি মনে হয়? আরেকটা কেস? অনেকক্ষণ পর কথা বলল রবিন।
কিশোর কিংবা মুসা কিছু বলার আগেই বাইরে শোনা গেল মেরিচাচীর ডাক। ট্রেলারের স্কাইলাইটের খোলা জায়গা দিয়ে বাতাস ঢোকে, ওখান দিয়েই আসছে।
কিশোর! বেরিয়ে আয় তো! একজন লোক দেখা করতে এসেছে। তোর সঙ্গে।
কয়েক মুহূর্ত পর। দুই সুড়ঙ্গের মত্ত পাইপের ভেতর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে চলেছে তিন গোয়েন্দা। একজনের পেছনে আরেকজন। চল্লিশ ফুট লম্বা পাইপ, হাঁটুতে খুব ব্যথা পেত আগে। তাই পুরানো কাপেট কেটে পেতে দিয়েছে ওরা ভেতরে।
লোহার পাতটা সরাল কিশোর। বেরিয়ে এল তাদের ওয়ার্কশপে। তার পেছনে বেরোল মুসা, তারপর রবিন। পাতটা আবার পাইপের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বেরিয়ে এল ওরা জঞ্জালের বেড়ার অন্য পাশে।
মেরিচাচীর কাঁচঘেরা অফিসের পাশে একটা ছোট্ট গাড়ি। বনেটে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক তরুণ।
দেখামাত্রই তাকে চিনল তিন গোয়েন্দা। দিমিত্রির সঙ্গে কালো এসকর্ট কারে ছিল ওই যুবক।
হাল্লো! তিন গোয়েন্দাকে দেখেই সোজা হয়ে দাঁড়াল যুবক। হেসে এগিয়ে এল। আবার আমার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে, নিশ্চয় ভাবনি সেদিন তো পরিচয় হয়নি, আজ হয়ে যাক। আমি বব ব্রাউন।—এই যে, আমার আইডেনটিটি।