নৌকাটাকে সিঁড়ির সঙ্গে বেঁধে ফেলা হল। কয়েক ধাপ নেমে বসল। মুসা।
নর্দমা তৈরির সময়ই ওটা দেখতে পেয়েছিল মিস্ত্রিরা, গর্তটা দেখিয়ে বলল মরিডো। বন্ধ করেনি, তেমনি রেখে দিয়েছে। ওটাও একটা সুড়ঙ্গমুখ, প্রাকৃতিক। অনেক আগেই এটা আবিষ্কার করেছি। আমরা। বলতে ভুলে গেছি, ছোটবেলায় একটা দল ছিল আমাদের। প্রায়ই নেমে পড়তাম এই সুড়ঙ্গে। একেক দিন একেকটার ভেতর ঢুকে পড়তাম। এমনি করেই চিনেছি সুড়ঙ্গগুলো। কাজটা খুবই বিপজ্জনক ছিল। কিন্তু কেয়ার করতাম না। এমনকি বাবাও ঠেকাতে পারেনি আমাদের। ছেলেবেলার সেই খেলা আজ হয়ত আমাদের প্রাণই বাঁচিয়ে দিল!
দেরি করে লাভ কি? বলল মেরিনা। এদেরকে নিয়ে যাওয়া দরকার। মনে হচ্ছে, আগের প্ল্যানে চলবে না।
কি কি ঘটেছে, সেটা আগে বল আমাকে, বলল মরিডো। রিতো, তুমি এখানে এলে কি করে?
চাচাকে অ্যারেস্ট করার সময় তোমাদের বাড়িতেই ছিলাম, জানাল রিবাতো। গোপন দরজা দিয়ে পালিয়ে এসেছি। চাচাকে ধরার সময় ক্যাপ্টেন ব্যাটা বলল: তোমার বিশ্বাসঘাতক ছেলেকেও শিগগিরই কোর্টে হাজির করা হবে। মেরিনার কথা কিছু বলল না। বুঝলাম তাকে ধরতে পারেনি রোজারের কুত্তারা। বাড়ি থেকে বেরিয়েই দেখা হয়ে গেল মেরিনার সঙ্গে। পেছনের গলি দিয়ে বাড়িতে ঢুকতে যাচ্ছিল। ঠেকালাম। ছুটলাম তাকে নিয়ে। এই সময় শুরু হল তুমুল বৃষ্টি। তোমাদের কথা জানাল মেরিনা। মিনস্ট্রেলদের গোপন আড্ডায় চলে গেলাম। ওখানেই মুসা আমানকে বসিয়ে রেখে গিয়েছিল মেরিনা। তোমাদেরকে বের করে আনা দরকার। মেসেজ দিয়ে পাঠিয়ে দিলাম একজনকে। আমরা তিনজন নৌকা নিয়ে ঢুকে পড়লাম সুড়ঙ্গে। ডেনজো নদী দিয়ে ঢুকেছি। অনেকদিন আগে শিক ভেঙে রেখেছিলাম। যে মুখটার…।
হ্যাঁ, বলে উঠল মেরিনা। কোন অসুবিধে হয়নি ঢুকতে। তখনও পানি বেরোতে শুরু করেনি ততটা। স্রোত খুব বেশি ছিল না। ঢুকে ডানজনের ওদিক থেকে কয়েকবার ঘুরে এসেছি, আগেই তো বলেছি। অনুমান করতে কষ্ট হয়নি, তোমাদেরকে ডানজনেই আটকে রাখবে ওরা। বেরোতে পারলে, ডানজনের বাইরের ম্যানহোল দিয়েই নামবে তোমরা। ওটা ছাড়া আর কোন পথ নেই ওখান থেকে বেরোবার, জানিই।
রেডিওটা কোথায়? মুসার দিকে চেয়ে বলল রিবাতো।
আছে, পকেট থেকে খুদে একটা রেডিও বের করল মুসা। এই যে! বন্ধ করে রেখেছি। ভাষা তো বুঝি না…
নব ঘুরিয়ে চালু করে দিল রেডিওটা মুসা।
ঝমঝম করে বাজছে যন্ত্রসঙ্গীত। বিশেষ সামরিক সুর। হঠাৎ থেমে গেল। ভেসে এল একটা ভারি গমগমে গলা। খানিকক্ষণ একটানা শব্দ বর্ষণ করে থেমে গেল। আবার বেজে উঠল বাজনা।
একটা বিন্দুও বুঝতে পারল না তিন গোয়েন্দা। ভ্যারানিয়ান ভাষা।
সকাল আটটায় সমস্ত রেড়িও আর টেলিভিশন সেট ভোলা রাখার অনুরোধ জানাচ্ছে, বলল মেরিনা। ভ্যারানিয়ার সকল নাগরিককে সেটের সামনে থাকতে বলছে। জাতির উদ্দেশে এক বিশেষ ভাষণ দেবে ডিউক রোজার।…তারমানে, সকাল আটটায় জানাবে সে: একটা– বিদেশী ষড়যন্ত্র ধরা পড়েছে। অভিযোগ আনবে প্রিন্স দিমিত্রির বিরুদ্ধে। নিজেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্যে রিজেন্ট ঘোষণা করবে। লোককে বোঝাতে বিশেষ বেগ পেতে হবে না। আপনাদেরকে স্পাই ঘোষণা করা তেমন কঠিন হবে না তার পক্ষে। ক্যামেরাগুলো প্রমাণ হিসেবে দেখাবে দেশবাসীকে।
তারমানে, হতাশ গলায় বলল রবিন। দিমিত্রির সর্বনাশ করলাম আমরা! উপকার কিছুই করতে পারলাম না। কার মুখ দেখে যে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম!
আপনাদের কোন দোষ নেই, বলল মেরিনা। আপনারা না। এলেও প্রিন্স দিমিত্রিকে সিংহাসনে বসতে দিত না রোজার। কোন না কোন উপায়ে সরিয়ে দিতই। এখন আপনাদেরকে যাতে ধরতে না পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। পৌঁছে দিতে হবে আমেরিকান। এমব্যাসিতে। রিবাতো, কি বল?
হ্যাঁ, মাথা ঝোঁকাল রিবাতো।
কিন্তু আপনাদের কি হবে? মেরিনার দিকে চেয়ে বলল কিশোর। আপনার বাবা? প্রিন্স দিমিত্রি?
সেটা পরে ভাবব, দীর্ঘশ্বাস ফেলল মেরিনা। অনেক দেরিতে বুঝেছি আমরা রোজারের পরিকল্পনা! আগে জানলে, প্রিন্স দিমিত্রিকে সরিয়ে ফেলতাম। তারপর দেশবাসীকে বোঝানো এমন কিছু কঠিন হত না। কিন্তু, অনেক সময় নিয়ে, চারদিক গুছিয়ে আটঘাট বেঁধে কাজে নেমেছে রোজার। কি করে পারব আমরা তার সঙ্গে? তাছাড়া ক্ষমতায় রয়েছে সে…
হ্যাঁ, মাথা ঝোকাল রিবাতো। মহা ধড়িবাজ! তবে সহজে ছাড়ব না। যতক্ষণ প্রাণ থাকবে, চেষ্টা করে যাব। একটা শয়তান দেশের স্বাধীনতা নষ্ট করবে, এটা কিছুতেই হতে দেয়া যায় না। হয়ত আমরা মরে যাব! কিন্তু দিন আসবেই! কুচক্রী লোক বেশিদিন রাজত্ব করতে পারেনি এখানে, ভ্যারানিয়ার ইতিহাস বলে। ডিউক রোজারের ধ্বংস অনিবার্য। হয়ত সময় লাগবে…….হ্যাঁ, চলুন, আপনাদেরকে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করি। ধরা পড়তে দেয়া চলবে না কিছুতেই।
নৌকা নিয়ে যাওয়া যাবে না, বলল মেরিনা। সকাল হয়ে গেছে। ডেনজো নদীতে দেখে ফেলবে আমাদেরকে। ধরা পড়ে যাব।
হ্যাঁ, বলল রিবাতো। এই সুড়ঙ্গ দিয়েই বেরোতে হবে।
পানিতে নেমে পড়ল রিবাতো। তার পর পরই নামল মরিভো। একে একে নেমে পড়ল অন্যেরাও।
কোমরে পেঁচানো দড়ি খুলে নিল মরিডো। একটা লণ্ঠন হাতে ঢুকে পড়ল সুড়ঙ্গে। দড়ি ধরে তার পেছনে ঢুকে পড়ল আর সবাইকে পাশ কাটিয়ে আগে চলে গেল রিবাতো। হাতে আরেকটা লণ্ঠন। হেঁটে চলল আগে আগে।