সতর্ক হয়ে উঠল তিন গোয়েন্দা। কান খাড়া করল।
পুরুষ: বলেছে। দিমিত্রিকে সিংহাসনে বসতে দেবে না রোজার। সরিয়ে দেবে কোনভাবে। নিজে স্থায়ী রিজেন্ট হয়ে বসবে। তখন আমাদের আর ব্রায়ানের দলই হবে দেশের হর্তাকর্তা-বিধাতা।
মহিলা: গলা নামাও! কেউ শুনে ফেলবে!
পুরুষ: কাছেপিঠে কেউ নেই, কে শুনবে? রিলটা, কি সাংঘাতিক ব্যাপার হবে ভেবে দেখেছ! এমনি একটা কিছুরই স্বপ্ন দেখছিলাম এতদিন। ডিউক রোজার একবার ক্ষমতায় আসতে পারলেই আর আমাদের পায় কে? ছোট হোক, কিন্তু একটা দেশের মালিক হয়ে যাব, ভাবতে পার!
মহিলা: মন্টি কার্লোর মতই আরেকটা কিছু গড়ে তুলব আমরা!
পুরুষ: তার চেয়ে ভাল ব্যাংকিং সুবিধে দেব লোককে। যত খুশি কালো টাকা এনে জমাক, কোন কৈফিয়ত দিতে হবে না। তাদের দেশের সরকারের কাছ থেকে পুরোপুরি গোপন রাখা হবে কথাটা। বড় বড় অপরাধীরা এসে এখানে লুকিয়ে থাকতে পারবে। ওদেরকে বরং ঠাই দেব আমরা। অবশ্যই অনেক টাকার বিনিময়ে। যে-কোন দেশ থেকে যা খুশি করে আসুক যে-কোন লোক, এখানে এসে পড়তে পারলে সে নিরাপদ। ধনী অপরাধীদের স্বর্গ হয়ে উঠবে ভ্যারানিয়া।
মহিলা: শুনতে তো ভালই লাগছে। কিন্তু যদি ডিউক রোজার রাজি না হয় এসব করতে?
পুরুষ: ধ্বংস করে দেব। ক্ষমতায় থাকতে হলে আমাদের কথা মানতেই হবে। রিটা, রসাল একটা আপেলে পরিণত হবে এই ভ্যারানিয়া। আমরা সবাই খুঁটে খাব।
মহিলা: চুপ! আসছে ওরা…
চুপ হয়ে গেল স্পীকার। বোতাম টিপে সেট অফ করে দিল কিশোর।
খাইছে! বলে উঠল মুসা। বব ব্রাউন যা অনুমান করেছে, তার চেয়েও খারাপ অবস্থা! অপরাধীদের স্বর্গ!
তাকে এখুনি জানানো দরকার! বলে উঠল রবিন।
হ্যাঁ, ধীরে ধীরে মাখা ঝোকাল কিশোর। পুরো টেপটাই শোনানো দরকার তাকে। তবে এখন নয়। তাতে অনেক সময় লাগবে। সন্দেহ করে বসতে পারে কেউ। মূল ব্যাপারটা শুধু জানানো যায় এখন।
ক্যামেরা তুলে নিল কিশোর। ফিল্ম বদলাচ্ছে যেন, এমনি ভাবসাব। টিপে দিল রেডিওর বোতাম।
ফার্স্ট বলছি। শুনতে পাচ্ছেন?
পাচ্ছি, বলল বব ব্রাউন। নতুন কিছু?
টেপে কি কি শুনেছে, সংক্ষেপে জানাল কিশোর।
খুব খারাপ! বলল বব। মহিলা আর লোকটার চেহারা কেমন?
বর্ণনা দিল কিশোর।
মনে হচ্ছে, পিটার জোনস আর তার স্ত্রী। জুয়াড়ী। নেভাডায় বাস। ভয়ানক এক অপরাধী সংস্থার সদস্য। আর যে দুজন লোকের কথা বলল, নিশ্চয় আলবার্ট ট্যাঙ্গোরা, ওরফে টেরা, এবং ব্রায়ান বেরেট। সাংঘাতিক দুই খুনে। ওই সংস্থার সদস্য। যা ভেবেছিলাম তারচেয়ে অনেক অনেক বেশি মারাত্মক ষড়যন্ত্র!
আমাদের এখন কি করণীয়? জানতে চাইল কিশোর।
প্রথম সুযোগেই হুঁশিয়ার করে দেবে প্রিন্স দিমিত্রিকে। সব কথা জানাবে। আগামীকাল সকালে চলে আসবে আমেরিকান এমব্যাসিতে। প্যালেসে থাকা এখন নিরাপদ নয় তোমাদের জন্যে। দিমিত্রিকে সাহায্য করতে একপায়ে খাড়া আছি আমরা, তবে আমাদের সাহায্য চাইতে হবে তাকে। গায়ে পড়ে কিছু করতে যাব না। থামল বব। তারপর বলল, অনেক বেশি খবর জোগাড় করে ফেলেছ তোমরা। এতটা আশা করিনি। তবে, এখন থেকে খুব সাবধান! সব সময় সতর্ক থাকবে! ওভার অ্যাণ্ড আউট!
.
০৬.
সারাটা বিকেল শহর আর তার আশপাশের মনোরম দৃশ্য দেখে কাটাল তিন, গোয়েন্দা। প্রাচীন কিছু দোকানপাট দেখল, একটা মিউজিয়মে দেখল পাঁচ-ছশো বছর আগের অনেক ঐতিহাসিক জিনিসপত্র। একটা প্রমোদতরীতে করে ডেনজো নদীতে কাটিয়ে এল কিছুক্ষণ। চলে গিয়েছিল নদীর একেবারে উৎসের কাছাকাছি।
গাড়িতে চড়ার খানিক পরেই মরিডো জানিয়েছে, আবার চর লেগেছে পেছনে। তবে এবার আর আমেরিকান দম্পতি নয়। ভ্যারানিয়ান সিক্রেট সার্ভিস, ডিউক রোজার বুরবনের নিজের পছন্দ করা লোক।
হয়ত মেহমান বলেই নজর রাখছে, বলেছে মুসা।
যথেষ্ট সন্দেহ আছে আমার! মুখ কালো করে বলেছে মরিডো। আপনাদের প্রতি ওদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। কেন, জানতে পারলে ভাল হত!
তিন গোয়েন্দাও ভাবছে, জানতে পারলে ভাল হত। সিক্রেট সার্ভিক্স কেন আগ্রহ দেখাবে তাদের প্রতি? এখনও তেমন কিছুই করেনি ওরা। প্রিন্স দিমিত্রিকে সাহায্য করছে, এটা ডিউক রোজারের জানার কথা নয়। তাহলে?
রাস্তার মোড়ে মোড়ে গায়কদের ছোট ছোট দল দেখা গেল। সবার হাতে একটা না একটা বাদ্যযন্ত্র আছেই। বাজিয়ে গান গেয়ে পথচারীদের মনোরঞ্জন করছে।
মিনস্ট্রেলস, মরিডো জানাল। তিনশো বছর আগে যে পরিবারটা প্রিন্স পলকে লুকিয়ে রেখেছিল, তাদেরই বংশধর। আমিও মিনস্ট্রেলদের ছেলে। বাবা ছিল প্রধানমন্ত্রী, তাকে বের করে দিয়েছে ডিউক রোজার। আমাদেরকে, মানে মিনস্ট্রেলদেরকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেন প্রিন্স দিমিত্রি। সেই প্রিন্স পলের আমল থেকেই আমাদেরকে কোনরকম ট্যাক্স দিতে হয় না। ডিউক রোজার আর তার সাঙ্গোপাঙ্গরা দুচোখে দেখতে পারে না আমাদের। আমরা সব মিনস্ট্রেলরা মিলে একটা গোপন দল করেছি। নাম, মিনস্ট্রেল পার্টি। অনেক ভক্ত জুটেছে আমাদের। দেশের লোক দেখতে পারে না রোজারকে।
মিনস্ট্রেলদের প্রতিটি দলের সামনে গতি কমাচ্ছে মরিডো। তাকাচ্ছে আগ্রহী চোখে। দলের কেউ একজন সামান্য একটু মাথা ঝোকালেই আবার ছুটছে সামনে।
ওদেরকে চোখে চোখে রাখছি আমরা, বলল মরিডো। আপনাদের ওপরও সারাক্ষণ চোখ রয়েছে আমাদের। প্যালেসে আছে। আমাদের লোক, এমনকি রয়্যাল গার্ডেও আছে। অনেক কিছুই জেনে গেছি আমরা। কিন্তু এই একটা ব্যাপার জানতে পারছি না, আপনাদের ওপর রোজারের এত আগ্রহ কেন! সাংঘাতিক কোন প্ল্যান নিশ্চয় করেছে ব্যাটা!