তোমরা আমেরিকান, না হেসে জিজ্ঞেস করল মহিলা। স্বর কেমন খসখসে।
হ্যাঁ, ম্যাডাম্, জবাব দিল কিশোর। আপনারাও আমেরিকান
নিশ্চয়। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এসেছি। তোমাদের মতই।
স্থির হয়ে গেল কিশোর। ওরা ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এসেছে, কি করে জানল দম্পতি।
মহিলা ভুল করে বসেছে, বুঝে গেল পুরুষটি ধামাচাপা দেবার জন্যে সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, ক্যালিফোর্নিয়া থেকেই তো এসেছ তোমরা, না-কি? ক্যালিফোনিয়ান ছেলেদের মতই কাপড়-চোপড় পরেছ।
হ্যাঁ, বলল কিশোর। ক্যালিফোর্নিয়া থেকেই। গতরাতে এসেছি।
সকালে মিউজিয়মে দেখেছি তোমাদের, বলল মহিলা। আচ্ছা, তোমাদের সঙ্গে ছিল, ও প্রিন্স দিমিত্রি না?
মাথা ঝোঁকাল কিশোর। হ্যাঁ। বন্ধুদের দিকে ফিরল। আইসক্রীম আসতে দেরি আছে। চল, হাত মুখ ধুয়ে আসি। ধুলোবালি লেগেছে। ওই যে, ওপাশে ওয়াশরুম লেখা রয়েছে। চল।
পাশের টেবিলের দম্পতির দিকে তাকাল কিশোর। আমরা হাতমুখ ধুতে যাচ্ছি। ক্যামেরাগুলো রইল টেবিলে। একটু দেখবেন? এই যাব আর আসব আমরা।
নিশ্চয় খোকা, হাসল লোকটা। নিশ্চিন্তে যাও। ক্যামেরা চুরি যাবে না।
থ্যাঙ্ক ইউ, স্যার, উঠে দাঁড়াল কিশোর।
রবিন আর মুসাকে নিয়ে সার্কাসের অন্য পাশে চলে এল গোয়েন্দাপ্রধান। খানিক দূরেই ওয়াশরুম!
কি ব্যাপার? পাশে হাঁটতে হাঁটতে ফিসফিস করে বলল মুসা। ক্যামেরাগুলো ফেলে এলে কেন?
শশশ। হুশিয়ার করল কিশোর। এখন কোন কথা নয়।
আগের জায়গায়ই দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। কাছাকাছি কেউ নেই। অনেক কমে এসেছে হাতের বেলুনের সংখ্যা। তার পাশ দিয়ে যেতে যেতে নিচু গলায় বলল কিশোর, দম্পতির দিকে চোখ রাখুন। ক্যামেরাগুলো ধরলেই আমাদের জানাবেন। মিনিটখানেক পরেই আসছি।
চুপচাপ রইল মেয়েটা, যেন শোনেইনি কথাগুলো।
কয়েকটা বড় বড় গাছের তলায় একটা পাথরের বাড়ি, ওয়াশরুম। ভেতরে ঢুকে পড়ল তিন গোয়েন্দা।
উদ্দেশ্যটা কি তোমার? ঢুকেই জিজ্ঞেস করল মুসা।
এগিয়ে গিয়ে একটা বেসিনের ওপরের কল খুলে দিল কিশোর। নিচু গলায় বলল, ওরা দুজন কথা বলবেই। বেফাঁস কিছু বলেও ফেলতে পারে।
তাতে আমাদের কি লাভ? ফস করে বলল রবিন। কলের তলায়। হাত পেতে দিয়েছে।
টেপ-রেকর্ডারটা চালু করে দিয়ে এসেছি, বলল কিশোর। ওদের কথাবার্তা টেপ হয়ে যাবে। আর কোন কথা নয় এখন। কাছাকাছি লোক আছে। কে যে কি, বলা যায় না!
নীরবে হাতমুখ ধোয়া সারল ওরা। বেরিয়ে এল বাইরে। ধীর পায়ে এগোল। মেয়েটার পাশ দিয়ে যাবার সময় একবার তাকাল কিশোর। আধ ইঞ্চি মত মাথা নাড়ল মেয়েটা।
যেমন রেখে গিয়েছিল, তেমনি রয়েছে ক্যামেরা তিনটে। ছোঁয়নি কেউ। কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে দম্পতি।
ক্যামেরার ধারেকাছেও আসেনি কেউ, হেসে বলল লোকটা। সৎলোকের দেশ। তোমাদের আইসক্রীম নিয়ে এসেছিল ওয়েটার, পরে আসতে বলে দিয়েছি। ওই যে, আসছে।
ট্রে-তে খাবার নিয়ে এসে দাঁড়াল ওয়েটার। নামিয়ে রাখল স্যাণ্ডউইচ, হট-চকোলেট আর আইসক্রীমের পাত্র।
দুপুর হয়ে এসেছে। একবারে লাঞ্চ সেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল তিনজনে। আরও কিছু খাবারের অর্ডার দিয়ে খেতে শুরু করল।
আর কয়েক মিনিট পরেই খাওয়া শেষ হয়ে গেল দম্পতির। তিন গোয়েন্দাকে গুড বাই জানিয়ে উঠে চলে গেল।
আমাদের সঙ্গে বিশেষ কিছুই বলল না, বলল মুসা। নিশ্চয় মত বদলেছে।
ওরা নিজেরা নিজেরা কথা বলে থাকলেই আমি খুশি, বলল কিশোর। সবকটা টেবিল খালি। এখনও খাওয়ার জন্যে আসতে শুরু করেনি লোকে। নিজের ক্যামেরাটা টেনে নিল। নিচের দিকের একটা বোতাম টিপে রি-ওয়াইণ্ড করে নিল ক্যাসেটের ফিতে। ভলিউম কমিয়ে। রেখে প্লে বোতামটা টিপে দিল। প্রথমে ফিসফাস শব্দ, তারপরেই স্পষ্ট কথা। আমেরিকান লোকটার গলা।
উত্তেজিত হয়ে পড়ল রবিন। চাপা গলায় বলে উঠল, হয়েছে! কাজ হয়েছে…
শশশ! রবিনকে থামিয়ে দিল কিশোর। শুনি, কি বলে! খাওয়া বন্ধ কোরো না। ক্যামেরার দিকে তাকিও না।
আবার টেপ রি-ওয়াইও করে নিল কিশোর। প্রথম থেকে চালু করল। আরও কমিয়ে দিল ভলিউম। পাশের টেবিল থেকেও কেউ শুনতে পাবে না এখন।
নিজেদের মধ্যে কথা বলছে দম্পতি:
পুরুষ: খামোকাই পাঠিয়েছে আমাদেরকে, টেরা। ওই ছেলে তিনটে গেয়েন্দা হলে আমার নাম পাল্টে রাখব।
মহিলা: ভুল খুব একটা করে না টেরা। ও বলেছে, ছেলে তিনটে খুবই চালাক-চতুর। তিন গোয়েন্দা বলে নিজেদেরকে।
পুরুষ: ওই বলা পর্যন্তই। গোয়েন্দাগিরির গ-ও জানে না ওরা। বড় মাথা যে ছেলেটার, ওটা তো একটা বুদ্ধ। চেহারা দেখেই বোঝা যায়। হাবাগোবা, একটা গরু!
চাওয়া-চাওয়ি করল মুসা আর রবিন। মুখ টিপে হাসল। গ্রাহ্য করল না কিশোর। কোনরকম ভাবান্তর নেই চেহারায়। ওকে বোকা ভাবুক, এইই চেয়েছিল।
মহিলা: টেরার ধারণা, ওরা কারও সঙ্গে যোগাযোগ করবে। সি.আই. এ.-র হয়ে কাজ করছে ছেলে তিনটে।
পুরুষ: আরে দুত্তোর! সারাক্ষণই তো পেছনে লেগেছিলাম। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেখেছ? কথা বলেছে? বড়লোকের বাচ্চা। স্রেফ টাকা ওড়াতে এসেছে এখানে।
মহিলা: কোন কথাই তো বললে না ওদের সঙ্গে। ডিউক রোজারের কথা তোলা উচিত ছিল, নয় কি?
পুরুষ: মোটেই না। ভুল করেছে টেরা। ওরা গোয়েন্দা হতেই পারে না।
মহিলা: আচ্ছা, ডিউক রোজারের পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু বলেছে নাকি টেরা? আমার সঙ্গে বিশেষ কথা হয়নি। তুমি তো অনেকক্ষণ ছিলে? কিছু বলেছে?