ব্যাণ্ডস্ট্যাণ্ডের পাশ কাটিয়ে চলে এল তিন গোয়েন্দা। সামনে পেছনে অনেক, লোক। একবার পেছনে তাকিয়ে ফেলল মুসা। কিন্তু কে অনুসরণ করছে, আদৌ করছে কিনা, বুঝতে পারল না।
শান-বাঁধানো একটা জায়গায় এসে দাঁড়ালা ওরা ॥ ট্রাম্পোনি বসানো হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের বিপজ্জনক উপভোগ্য খেলা দেখাচ্ছে দুজন দড়াবাজ। মাটিতে ডিগবাজি খাচ্ছে, বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করে লোক হাসাচ্ছে দুজন ভাড়। মাঝে মধ্যেই এগিয়ে এসে একটা ভাঙা পুরানো। ছোট কুড়ি বাড়িয়ে ধরছে সামনে। চেহারাটাকে হাস্যকর করে তুলে পয়সা চাইছে! কেউ মানা করছে না। হেসে দুএকটা মুদ্রা ফেলে দিচ্ছে ঝুড়িতে।
সার্কাসের জায়গার পরেই মেয়েটাকে দেখতে পেল ওরা ॥ সুন্দর দেশীয় পোশাক পরনে। হাতে সুতোয় বাধা এক গুচ্ছ বড় বড় বেলুন। সুললিত গলায় গান ধরেছে ইংরেজিতে কথাগুলো বড় সুন্দর। একটা করে বেলুন কিনে নেবার আমন্ত্রণ। কোন একটা ইচ্ছে মলে নিয়ে সেই বেলুন ছেড়ে দিতে হবে। ইচ্ছেটা আকাশের দূরতম প্রান্তে নিয়ে গিয়ে তারার দেশের কোন মনের মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে বেলুন।
অনেকেই কিনছে। ছেড়ে দিচ্ছে সুতো, শাঁ করে শুন্যে উঠে পড়ছে গ্যাস ভরা বেলুন, যার যার ইচ্ছে নিয়ে উড়ে যাচ্ছে নীল আকাশে। ছোট হতে হতে একটা বিন্দুতে পরিণত হচ্ছে। তারপর টুক করে মিলিয়ে যাচ্ছে এক সময়।
ভাঁড়ের ছবি তোলো, মুসা, ফিসফিস করে বলল কিশোর। দড়াবাজদের ছবি তুলছি আমি। রবিন, চারদিকে চোখ রাখী ॥ দেখ, আমাদেরকে লক্ষ্য করছে কিনা সন্দেহজনক কেউ।
ঠিক আছে, বলে ঘুরল মুসা। হাতের তালুতে মাথা রেখে উল্টো হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন দুই ভাড়। সেদিকে এগিয়ে গেল।
রবিনের পাশে দাঁড়িয়ে ক্যামেরার খাপ খুলল কিশোর ॥ পরক্ষণেই বিরক্তিতে ছেয়ে গেল চোখ মুখ। ভাল অভিনেতা সে। দেখলে যে কেউ ধরে নেবে সত্যিই বুঝি ক্যামেরা খারাপ হয়ে গেছে তা বিড়বিড় করে বিরক্তি প্রকাশ করতে লাগল গোয়েন্দাপ্রধান।
রেডিওর বোতাম টিপে দিল কিশোর। নিচু গলায় বলল, কাস্ট বলছি। শুনতে পাচ্ছেন?
স্পষ্ট, প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জবাব এল। ভলিউম কমিয়ে ব্রেখেছে কিশোর, কাজেই একেবারে কাছাকাছি না থাকলে কেউই শুনতে পাবে না কথা। কি অবস্থা?
ফেউ লেগেছে পেছনে, বলল কিশোর। প্রিন্স দিমিত্রি সাহায্যের অনুরোধ জানিয়েছে। চুরি গেছে জাতীয় রূপালী মাকড়সা। নকল একটা ফেলে রেখে গেছে চোর।
তাই! অবাক মনে হল বব ব্রাউনের গলা। যা ভেবেছি, পরিস্থিতি তারচেয়ে খারাপ! সাহায্য করবে ওকে?
কি করে?
জানি না, স্বীকার করল বব। চোখ খোলা রাখ। কিছু না কিছু নজরে পড়বেই।ভেবেচিন্তে এগোতে পারবে তখন। আর কিছু
পার্কে রয়েছি। কারা অনুসরণ করছে জানি না।
জানার চেষ্টা কর। পরে জানাবে আমাকে ছেড়ে দাও। বেশিক্ষণ কথা বললে সন্দেহ করে বসতে পারে।
কেটে গেল যোগাযোগ।
ক্যামেরা ঠিক হয়ে গেছে যেন কিশোরের ॥ চোখের সামনে তুলে ধরল। ছবি তুলে গেলা একের পর এক
চারদিকে নজর ফেলল রবিন। অনেকেই চাইছে ওদের দিকে। পরক্ষণেই চোখ সরিয়ে নিচ্ছে। কাউকেই সন্দেহ করতে পারল না সে। একজন ভাড় এসে দাঁড়ালা সামনে। ঝুড়ি বাড়িয়ে দিল। পকেট থেকে একটা মুদ্রা বের করে তাতে ফেলে দিল রবিন।
নতুন একটা আকর্ষণীয় খেলা শুরু করল দুই ভাড়। অন্যদিক থেকে সরে এসে তাদেরকে ঘিরে স্বরণ দর্শকরা। মেয়েটার কাছে একজনও নেই এখন।
এবার ওর ছবি তুলব, বিড়বিড় করে বলল কিশোর। মুসাকে ডাকল ॥ তিনজনে এঙ্গিয়ে গিয়ে দাঁড়াল মেয়েটার সামনে।
ছবি তোলার প্রস্তাব দিল কিশোর। মাথা কাত করল মেয়েটা। ছবি উঠে গেল কিশোরের ক্যামেরায়।
হাসল মেটো। গুচ্ছ থেকে একটা বেলুন বের করে বাড়িয়ে ধরল। একটা বেলুন কিনুন। মনে কোন ইচ্ছে নিয়ে ছেড়ে দিন আকাশে। ঠিক পৌঁছে দেবে মেঘের দেশের কারও কাছে।
পকেট থেকে একটা আমেরিকান ডলার বের করল মুসা। দিল। মেয়েটাকে। তিনজনের হাতেই একটা করে বেলুন ধরিয়ে দিল মেয়েটা। ডলারটা ছোট থলেতে রেখে খুচরো বের করল। বেলুনের দাম রেখে বাকি মুদ্রাগুলো এক এক করে কেলাতে লাগল মুসার হাতে। যেন গুনে গুনে দিচ্ছে, এমনি ভাবভঙ্গি। নিচু গলা বলল, চর লেগেছে। একজন পুরুষ একজন মহিলা। লোক সুবিধের মনে হচ্ছে না। আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারে হয়ত। একটা টেবিলে বসে পড়ন আইসক্রীম কিংবা অন্য কিছু খান। কথা বলার সুযোগ দিন ওদের।
পয়সা দিয়ে পিছিয়ে গেল মেটো।
দিমিত্রিকে সাহায্য করতে চাই, তিনজনের মনেই এক ইচ্ছে। সুতো ছেড়ে দিল। শাঁ করে শূন্যে উঠে পড়ল বেলুন। লাল, হলুদ, সবুজ। অনেক ওপরে তিনটি কালো বিন্দুতে পরিণত হল। মিলিয়ে গেল পরক্ষণেই।
খানিক দূরেই ঘাসে ঢাকা একটা খোলা জায়গা! তাতে টেবিল চেয়ার পাতা। মোটা কাপড়ের টেবিলক্লথ, লাল-সাদা চেক। একটা টেবিল বেছে নিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়ল তিন কিশোর। এগিয়ে এল একজন ওয়েটার। মোটা গোঁফ। আইসক্রীম হট-চকোলেট স্যাণ্ডউইচ?
অর্ডার দিল কিশোর। চলে গেল ওয়েটার।
চারপাশে তাকাল তিন গোয়েন্দা। ঠিক পেছনেই ওদেরকে দেখতে পেল রবিন। সেই আমেরিকান দম্পতি। সকালে প্রিন্স পলের ছবি দেখার সময় যারা পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল। হুমম! তাহলে এরাই!
ধীরে সুস্থে এগিয়ে এল দম্পতি। একটা টেবিল পছন্দ করল। তিন গোয়েন্দার ঠিক পাশেরটা। কফির অর্ডার দিয়ে হেলান দিল চেয়ারে। তিন গোয়েন্দার দিকে ফিরে হাসল।