কেন? জিজ্ঞেস করল মুসা।
কারণ মাকড়সাটা চুরি গেছে, দিমিত্রির হয়ে বলল কিশোর। ওটা গলায় ঝোলাতে না পারলে অভিষেক হবে না।
হ্যাঁ, মাথা ঝোকাল দিমিত্রি। আসলটা নিয়ে তার জায়গায় একটা নকল মাকড়সা রেখে গেছে চোর। নকল দিয়ে চলবে না। কাজেই, দুহপ্তার আগেই আসলটা খুঁজে পেতে হবে আমাকে। চুরি গেছে, এটা কাউকে জানাতে পারব না। আমাকে অলক্ষুণে ধরে নেবে দেশের লোক। এবং তাহলেই সর্বনাশ। কোনদিনই আর প্রিন্স হতে পারব না। আমি, থামল সে। এক মুহূর্ত কি ভাবল। তারপর বলল, হয়ত ভাবছ, সামান্য একটা রূপার মাকড়সা নিয়ে এত বাড়াবাড়ি কেন? দেশটা আমাদের পুরানো, প্রাচীন রীতিনীতি এখনও মেনে চলি। আমরা। ছাড়তে পারব না কিছুতেই, একে একে তিনজনের দিকেই তাকাল রাজকুমার। তোমরা আমার বন্ধু। মাকড়সাটা খুঁজতে সাহায্য করবে আমাকে?
কেউ কোন জবাব দিল না।
নিচের ঠোঁটে একনাগাড়ে চিমটি কাটছে কিশোর।
দিমিত্রি, অবশেষে কথা বলল গোয়েন্দাপ্রধান। জিনিসটা কি। জ্যান্ত মাকড়সার সমান?
মাখা ঝোকাল দিমিত্রি। হ্যাঁ।
তারমানে খুবই ছোট। লুকিয়ে রাখা সহজ। নষ্টও করে ফেলে থাকতে পারে।
তা মনে হয় না, বলল দিমিত্রি। যে-ই নিয়েছে, বুঝেশুনেই নিয়েছে। ওটা তার দরকার। আমার মনে হয় লুকিয়েই রেখেছে। তবে, মস্ত বড় ঝুঁকি নিয়েছে চোর। ধরা পড়লে এর একমাত্র শাস্তি, মৃত্যুদণ্ড। ডিউক রোজার হলেও মাফ নেই।
চুপ করে রইল তিন গোয়েন্দা।
জোরে একবার শ্বাস নিল দিমিত্রি। আমার সমস্যার কথা বললাম। কি করে সাহায্য করবে, বলতে পারব না। একটা লোক প্রস্তাব দিয়েছিল, অভিষেক অনুষ্ঠানে তোমাদেরকে দাওয়াত দিতে। প্রস্তাবটা লুফে নিয়েছি আমি তোমাদের সাহায্য পাব বলেই। এখানে কেউ জানে না, তোমরা গোয়েন্দা। কাউকে জানানো হবে না। কিশোরের দিকে তাকাল রাজকুমার। তো, করবে সাহায্য?
জানি না! অনিশ্চিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল গোয়েন্দাপ্রধান।ছোট্ট একটা রূপার মাকড়সা, যেখানে খুশি লুকিয়ে রাখা যায়। খুঁজে বের করা প্রায় অসম্ভব। তবে, চেষ্টা করতে পারি আমরা। প্রথমে দেখতে হবে, জিনিসটা কেমন, কোন জায়গা থেকে চুরি হয়েছে। নকলটা দেখে চেহারা বোঝা যাবে আসলটার?
যাবে। নকল করা হয়েছে নিখুঁতভাবে। এস, দেখাব।
ক্যামেরা তুলে নিল তিন গোয়েন্দা। দিমিত্রির পিছু পিছু বেরিয়ে এল করিডরে।
ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে চওড়া আরেকটা করিডরে নেমে এল ওরা। মেঝে, ছাত, দুপাশের দেয়াল, সব পাথরের।
তিনশো বছর আগে তৈরি হয়েছে এই প্যালেস, হাঁটতে হাঁটতে বলল দিমিত্রি। তারও আগে একটা দুর্গ ছিল এখানে। ভেঙে পড়েছিল। ওটাকেই মেরামত করে, সংস্কার করে, তার সঙ্গে আরও কিছু ঘর যোগ করে হয়েছে এই প্যালেস। ডজন ডজন খালি ঘর পড়ে আছে এখনও। বিশেষ করে, ওপরের দুটো তলায় যায়ই না কেউ। এতবড় বাড়ি ঠিকঠাক রাখতে হলে অনেক চাকর-বাকরের দরকার। ওদের পেছনে খরচ করার মত টাকা রাজপরিবারের নেই। তাছাড়া, ওই ঘরগুলো ভীষণ ঠাণ্ডা। আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে গরমের ব্যবস্থা করতে অনেক টাকা দরকার।
আগস্টের এই উত্তপ্ত সকালেও বাড়িটার ভেতরে খুব ঠাণ্ডা। শীতকালে কি ভীষণ অবস্থা হবে, অনুমান করতে অসুবিধে হল না তিন গোয়েন্দার।
দুর্গের ডানজন আর মাটির তলার ঘরগুলো আজও আগের মতই রয়েছে, আরেক সারি সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে বলল দিমিত্রি। অসংখ্য গোপন পথ, দরজা, সিঁড়ি রয়েছে ওগুলোতে যাবার। আমিই চিনি না সবগুলো। ঢুকলে সহজেই হারিয়ে যাব, বেরিয়ে আসতে পারব না আর। হাসল রাজকুমার। হরর ছবি শূটিঙের চমৎকার জায়গা। গোপন দরজা আর সুড়ঙ্গ দিয়ে ভূত আসবে-যাবে খুব বিশ্বাসযোগ্য মনে হবে। না না, ওরকম চমকে উঠ না, মুসার দিকে চেয়ে বলল সে। ভূত নেই প্যালেসে-ই যে, ডিউক ক্লোজার আসছে।
আরেকটা করিডরে এসে শেষ হয়েছে সিঁড়ি। লম্বা একজন লোককে তাড়াহুড়া করে আসতে দেখা গেল। সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল লোকটা, মাখা সামান্য নুইক্সো অভিবাদন কবুলা দিমিত্রিকে।
গুডমর্নিং, দিমিত্রি বলো ডিউক ক্লোজার। এরাই আপনার। আমেরিকান বন্ধু? শীতল কণ্ঠস্বর। তার সঙ্গে মানিয়ে গেছে তার একহারা দীর্ঘ গড়ন, আর ঈগলের ঠোঁটের মত বাঁকানো নাকের নিচে ঝুলে পড়া কালো একজোড়া গোঁক।
গুড মর্নিং, ভিউক ক্লোজার, বলল দিমিত্রি। ঠিকই ধরেছেন। ওরাই আমার বন্ধু। পরিচয় করিয়ে দিল, কিশোর পাশা, মুসা আমাল, রবিন মিলফোর্ড। সবাই এসেছে ক্যালিফোর্নিফ্লা থেকে।
তিনজনের দিকে চেয়ে প্রতিবারে ইঞ্চিখানেক করে মাথা নোয়ালা রোজার। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিন্ত্রে আছে।
ভ্যারানিয়ায় স্বাগতম! বলল ডিউক ক্লোজার। একেবারে মাপজোক করা কথাবার্তা। বন্ধুদেরকে দুর্গ দেখাতে নিয়ে যাচ্ছেন?
মিউজিয়মে নিয়ে যাচ্ছি, বলল দিমিত্রি। আমাদের দেশের ইতিহাস জানতে খুব আগ্রহী ওরা। বন্ধুদের দিকে ফিরে বলল, ডিউক রোজার বুরবন, ভ্যারানিক্সার বর্তমান ব্রিজেন্ট। শিকারে গিয়ে মারা পড়েছিল আমার বাবা। তারপর থেকেই প্রিন্সের প্রতিনিধি হয়ে ব্রাজ্যশাসনা করে আসছে—
প্রিন্স, বলে উঠল ক্লোজার, আমি সঙ্গে আসব মেহমানদের প্রতি একটা সৌজন্যবোধ আছে আমাদের। আপনি একা গেলে, ভাল দেখায় না।