খালি মুখে বেরোতে রাজি হল না মুসা। অগত্যা কিশোর আর রবিনকেও টেবিলে বসতে হল।
খেয়ে দেয়ে মস্ত ঢেকুর তুলল মুসা। পেটে হাত বুলিয়ে বলল, হ্যাঁ, এইবার দানো শিকারে যাওয়া যায়।
আর কিছু খাবে? মুসাকে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
আর? টেবিলের শূন্য প্লেটগুলোর দিকে চেয়ে বলল মুসা। আর তো কিছু নেই!
মুচকি হেসে উঠে গিয়ে ফ্রিজ খুলে একটা জগ বের করল কিশোর। নিয়ে এসে বসল আবার টেবিলে।
কমলার রস। চেঁচিয়ে উঠল মুসা। দাও দাও, জলদি দাও! ইসস, পুডিংটা খাওয়া উচিত হয়নি! তবে তেমন ভাবনা নেই। পানির ভাগ বেশি তো, পেটে বেশিক্ষণ থাকবে না।
দুটো গেলাসে কমলালেবুর রস ঢেলে একটা রবিনকে দিল কিশোর। আরেকটা নিজে রেখে জগটা ঠেলে দিল মুসার দিকে।
প্রায় ছোঁ মেরে জগটা তুলে নিয়ে ঢকঢক করে খেতে শুরু করল মুসা। হঠাৎ কি মনে পড়ে যাওয়ায় মুখের সামনে থেকে জগ সরিয়ে বলল, কিশোর, গোল্ডেন বেল্ট কি করে চুরি হয়েছে, বুঝে গেছি!
অবাক হয়ে মুসার দিকে তাকাল কিশোর আর রবিন। কি করে?
গার্ল স্কাউটের লীডার মেয়েটাকে দেখেছিলে না? ওর মাথায় বড় বড় চুল ছিল। আমার মনে হয় পরচুলা। পরচুলার নিচে করে নিয়ে গেছে বেল্টটা!
মুসার বুদ্ধি দেখে গোঙানি বেরোল কিশোরের।
রবিন বলল, খেয়ে খেয়ে মাথায় আর কিছু নেই ওর! পরচুলার নিচে করে গোল্ডেন বেল্ট? তা-ও যদি বলত চোরা খুপরিওয়ালা কোন লাঠির কথা—কিশোর, পেয়েছি! লাঠি! হ্যাঁ, এক বুড়োকে মোটা লাঠি হাতে দেখেছি সেদিন! নিশ্চয় ওটার চোরা খুপরির ভেতরে ভরে…
তোমাদের দুজনের মাথায়ই গোবর, থামিয়ে দিয়ে বলল কিশোর। পনেরো পাউণ্ড ওজনের তিন ফুট লম্বা একটা বেল্ট! হারটা হলে পরচুলা কিংবা লাঠির ভেতরে করে নিয়ে যেতে পারত। কিন্তু এতবড় বেল্ট…অসম্ভব! অন্য কিছু ভাব।
আর কিছু ভাবতে পারব না আমি, আবার মুখে জগ তুলল মুসা।
আমার মাথায়ও আর কিছু আসছে না! এদিক-ওদিক মাথা নাড়ল রবিন। চুলোয় যাক গোল্ডেন বেল্ট! হ্যাঁ, এনসাইক্লোপীডিয়ায় দেখলাম, রত্নদানো—
..এখন না, গাড়িতে উঠে বল, চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়াল কিশোর। দেখি, বোরিস গাড়ি বের করল কিনা।
সামনের সিটে বোরিসের পাশে গাদাগাদি করে বসল তিন গোয়েন্দা। মিস ভারনিয়ার বাড়ির ঠিকানা দিল বোরিসকে কিশোর। ইয়ার্ড থেকে বেরিয়ে পথে উঠে এল হাফট্রাক, ছুটে চলল লস অ্যাঞ্জেলেস-এর শহরতলীর দিকে।
হ্যাঁ, এইবার বল, রবিন, রত্নদানোর ব্যাপারে কি কি জেনেছ? বলল কিশোর।
রত্নদানো হল, লেকচারের ভঙ্গিতে শুরু করল রবিন, এক ধরনের ছোট্ট জীব, মানুষের মতই দেখতে, কিন্তু স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে অনেক ছোট, বামনদের সমান কিংবা তার চেয়েও ছোট। ওরা থাকে মাটির তলায়, গুপ্তধন খুঁজে বের করাই ওদের কাজ। রত্নদানোদের সঙ্গে বাস করে কুৎসিত চেহারার আরেক জাতের জীব, গবলিন। গবলিনরা দক্ষ কামার। শাবল, কোদাল, গাঁইতি বানাতে ওদের জুড়ি নেই। স্বর্ণকার হিসেবেও ওরা ওস্তাদ। সোনা আর নানারকম মূল্যবান পাথর দিয়ে চমৎকার গহনা বানায় রত্নদানোদের রানী আর রাজকুমারীদের জন্যে।
এসব তো কিসসা! ঘঁউক করে এক ঢেকুর তুলল মুসা। আরিব্বাপরে, খাওয়াটা বেশিই হয়ে গেছে! থাকগে, রাতে দেরি করে খেলেই হবে!..হ্যাঁ, যা। বলছিলাম, রত্নদানো, গবলিন, এসব হল গিয়ে কল্পনা। মি:মিউথো…
মিথোলজি, বলে দিল কিশোর।
হ্যাঁ, মিথোলজির ব্যাপার-স্যাপার। বাস্তবে নেই। মিস ভারনিয়ার বাড়িতে আসবে কোত্থেকে? নড়েচড়ে বসল মুসা।
সেটাই তো জানতে যাচ্ছি আমরা।
কিন্তু রত্নদানো তো বাস্তবে নেই, আবার বলল মুসা।
কে বলল নেই? পথের দিকে নজর রেখে বলে উঠল বোরিস। ব্যাভারিয়ার ব্ল্যাক ফরেস্ট জায়গাটা খুব খারাপ!
দেখলে তো? হাসি চাপল কিশোর। রত্নদানো আছে, এটা বোরিস বিশ্বাস করে।
বোরিস করে, সেটা আলাদা কথা, পেটটা সামনের দিকে ঠেলে দিয়ে বিড়বিড় করল মুসা। বোতাম খুলে দেব নাকি প্যান্টের? যাকগে, হজম হয়ে যাবে একটু পরেই।-হ্যাঁ, এটা ব্ল্যাক ফরেস্ট নয়। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার-লস অ্যাঞ্জেলেস। এখানে রত্নদানো আসবে কোত্থেকে, কি করে?
হয়ত রত্ন খুঁজতেই এসেছে, মুসার হাঁসফাস অবস্থা দেখে হাসছে রবিন। ক্যালিফোর্নিয়ায় কি রত্ব নেই, সোনার গহনা নেই? ১৮৪৯ সালে সোনার খনিও পাওয়া গেছে ক্যালিফোর্নিয়ায়। খবরটা হয়ত অনেক দেরিতে পেয়েছে ওরা, তাই এতদিন পরে এসেছে। মাটির তলায় খবর যেতে দেরি হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
রত্নদানো থাকুক বা না থাকুক, হালকা কথাবার্তা থামিয়ে দিয়ে বলল কিশোর। রহস্যজনক কিছু একটা ঘটছে মিস ভারনিয়ার বাড়িতে, এটা ঠিক। ওখানে গেলেই হয়ত জানতে পারব।
শহরতলীর অতি পুরানো একটা অঞ্চলে এসে ঢুকল ওরা। গাড়ির গতি কমিয়ে রাস্তার নাম্বার খুঁজতে লাগল বোরিস। বিরাট একটা পুরানো বাড়ির কাছে এনে গাড়ি থামাল।
বাড়ি না বলে দুর্গ বলা চলে ওটাকে। অসংখ্য গম্বুজ, মিনার, স্তম্ভ রয়েছে। যেখানে সেখানে নকশা আর ফুল আঁকা হয়েছে সোনালি রঙ দিয়ে, বেশির ভাগ জায়গায়ই বিবর্ণ হয়ে গেছে কিংবা চটে গেছে রঙ। অস্পষ্ট একটা সাইনবোর্ড পড়ে। বোঝা গেল ওটা একটা থিয়েটার-বাড়ি, মূরেরা তৈরি করেছিল। পুরানো। সাইনবোর্ডটার কাছেই আরেকটা নতুন সাইনবোর্ড-বারোতলা অফিস তৈরি হচ্ছে।