ঠিক, মাথা ঝাঁকাল মুসা।
তিন, রেইনবো জুয়েলসের দিকেই লক্ষ্য বেশি ছিল গার্ডদের, ফলে বেল্টটা সহজেই হাতিয়ে নিতে পেরেছে চোর। বাক্সের চারপাশে দড়ির রিঙ, তার বাইরে থেকেই কাজটা করতে পারে একজন লম্বা মানুষ।
গার্ডদের অনেকেই খুব লম্বা, মনে করিয়ে দিল রবিন।
ঠিক, সায় দিল কিশোর। বাক্স ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে অ্যালার্ম বেজে উঠল, দরজার দিকে দৌড় দিল কিছু গার্ড। দর্শকদেরকে বেরোতে দেয়া হল লনে, তাদেরকে তল্লাশি করা হল, তারপর ছেড়ে দেয়া হল।
এগুলো কোন তথ্য নয়, বলল মুসা। এ-থেকে রহস্যের সমাধান করা যাবে না।…আচ্ছা, আমরা যেচে সাহায্য করতে চাইলাম, এমন ব্যবহার করল কেন জাপানী সিকিউরিটি অফিসার?।
ঠোঁট উল্টাল কিশোর। কি জানি! হয়ত আমাদেরকে বেশি ছেলেমানুষ মনে করেছে, তাই। ইস, মিস্টার ক্রিস্টোফার ওই মিউজিয়মের ডিরেক্টর হলে কাজটা পেয়ে যেতাম আমরা!
তিনি নন, বলল মুসা। ওকথা ভেবে আর কি লাভ?
মিস্টার মার্চের ব্যাপারটা বেশ সন্দেহজনক, টেবিলে আস্তে আস্তে টোকা দিল কিশোর।
মানে? প্রায় একই সঙ্গে প্রশ্ন করল রবিন আর মুসা।
মনে আছে কি কি করেছ? টেবিলে দুই কনুই রেখে সামনে ঝুঁকল কিশোর। মিস্টার মার্চ আমাকে বলেছে, এবার অভিনয় শুরু করবে সে। তারপর অভিনয় শুরু করেছে। পকেট থেকে রুমাল বের করে ঘাম মোছার ছলে ইচ্ছে করেই পাথর ফেলেছে। গার্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, সন্দেহ জাগিয়েছে। তারপর কি ঘটল?
কি ঘটল? একই প্রশ্ন করল রবিন, এবং উত্তর দিল নিজেই, গার্ড চেঁচামেচি শুরু করল, অন্য গার্ডদের দৃষ্টি আকর্ষণ করল, দর্শকদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হল মিস্টার মার্চের দিকে।
ঠিক তাই। খুশি খুশি একটা ভাব ফুটেছে কিশোরের চেহারায়। দর্শক আর গার্ডদের নজর অন্যদিকে সরিয়ে দিল লোকটা। ওই সুযোগে অন্য অপরাধীরা তাদের যার যার কাজ করে গেছে নিরাপদে। এমন কিছু, যেটা আমাদের নজরে পড়েনি।
সেই এমন কিছুটা কি? প্রশ্ন করল মুসা।
সেটাই তো জানি না। তবে ওদের সময়জ্ঞানে আশ্চর্য হতেই হচ্ছে! পাথরটা মেঝেতে ফেলল মিস্টার মার্চ, এক গার্ড বাঁশি বাজাল, অন্য গার্ডরা দৌড়ে এল। তার এক কি দুই সেকেণ্ড পরেই দপ করে নিভে গেল সব বাতি। অন্ধকার হয়ে গেল। ঘর, আর সেই সুযোগে গোল্ডেন বেল্ট চুরি করে পালাল চোরেরা। প্রতিটি কাজ নিখুঁতভাবে সেরেছে।
চিন্তিত দেখাল রবিনকে। কিন্তু কারা ওরা? বেল্টটা বের করে নিয়ে গেল কিভাবে?
কিছু একটা বলার জন্যে মুখ খুলল কিশোর, ঠিক এই সময় তীক্ষ্ণ শব্দে বেজে উঠল টেলিফোন।
তৃতীয়বার রিঙ হতেই ফোনের তারের সঙ্গে যুক্ত লাউড-স্পীকারের সুইচ টিপে
অন করে দিল কিশোর। রিসিভার তুলে নিল। হ্যালো।– কিশোর পাশা? মহিলা কণ্ঠ বেজে উঠল স্পীকারে। মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফার চাইছেন তোমাকে।
বিদ্যুৎ ঝিলিক দিয়ে গেল যেন তিন গোয়েন্দার চোখে মুখে। দীর্ঘদিন পর আবার এসেছে ডাক! মিস্টার ক্রিস্টোফার চাইছেন, তারমানে নিশ্চয় জটিল কোন রহস্য।
কিশোর বলছি।
ধরে থাক, প্লীজ।
দুই সেকেণ্ড খুটখাট শব্দ হল স্পীকারে। তারপরই ভেসে এল ভারি গমগমে কণ্ঠস্বর। হ্যালো, কিশোর। কেমন আছ তোমরা?
ভাল, স্যার! উত্তেজনায় কাঁপছে কিশোরের গলা।
হাতে কোন কাজ আছে এখন তোমাদের। মানে কোন কেস?
না, স্যার, কিছু নেই! বসে থেকে থেকে…
তাহলে একটা কাজ দিচ্ছি। আমার এক লেখিকা বান্ধবীকে সাহায্য করতে পারবে?
সাহায্য? কি সাহায্য!
এক মুহূর্ত চুপ করে রইলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। বোধহয় গুছিয়ে নিচ্ছেন। মনে মনে। কি বলল ঠিক বুঝতে পারছি না। ওর সঙ্গে দেখা হয়নি আমার, ফোনে। কথা হয়েছে। রত্নদানোরা নাকি বিরক্ত করছে ওকে।
র-ত্ন-দা-নো! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল কিশোর।
স্তব্ধ হয়ে গেছে যেন রবিন আর মুসা।
তাই তো বলল, বললেন মিস্টার কিস্টোফার। রত্নদানো। ওই যে, খুদে পাতাল-মানব, যারা নাকি চামড়ার পোশাক পরে, পাতালে বাস করে, আর সুড়ঙ্গ কেটে কেটে খালি রত্বের সন্ধানে ফেরে।
রত্নদানো কি, জানি, স্যার। কিন্তু ওরা তো কল্পিত জীব, কেচ্ছা কাহিনীতে আছে। সত্যি সত্যি আছে বলে তো শুনিনি কখনও!
আমিও শুনিনি। কিন্তু আমার বান্ধবী বলছে, সে নিজের চোখে দেখেছে। রাতে চুরি করে তার ঘরে ঢুকে পড়ে দানোরা, সমস্ত ছবি উল্টেপাল্টে রাখে, বই ছড়িয়ে ফেলে দিয়ে যায় যেখানে সেখানে। পুলিশকে বলেছে সে, কিন্তু পুলিশ এমনভাবে তাকিয়েছে যেন মহিলার মাথা খারাপ। ভীষণ অসুবিধেয় পড়ে শেষে আমাকে জানিয়েছে সে।
কয়েক মুহূর্ত নীরবতা।
কিশোর, ওকে সাহায্য করতে পারবে?
পারব কিনা জানি না, তবে চেষ্টা তো নিশ্চয় করব! ঠিকানাটা দেবেন?
কাগজ-কলম টেনে নিয়ে ঠিকানা লিখে নিল রবিন।
ছেলেদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে লাইন কেটে দিলেন চিত্রপরিচালক।
যাক! জোরে একটা শ্বাস ফেলল কিশোর। গোল্ডেন বেল্টের কেন্স পাইনি, কিন্তু তার চেয়েও মজার একটা পেলাম! রত্নদানো! চমৎকার!
.
০৪.
মিস শ্যানেল ভারনিয়া থাকেন লস অ্যাঞ্জেলেস-এর শহরতলীতে। বাসে যেতে অসুবিধে, একটা গাড়ি হলে ভাল হয়। মেরিচাচীকে ধরল তিন গোয়েন্দা। ইয়ার্ডের ছোট ট্রাকটা দিতে রাজি হলেন চাচী। চালিয়ে নিয়ে যাবে দুই ব্যাভারিয়ান ভাইয়ের একজন, বোরিস।