ওই যে দুজন বয়স্কাউট, আঙুল তুলে দেখাল রবিন। লম্বু দুটোকে দেখছ, আমার মনে হয় ওদের কাজ। কুঠার দিয়ে বাড়ি মেরে কাঁচের বাক্স ভেঙেছে… বেল্টটা আছে ওদের কাছেই।
আমার মনে হয় না। এদিক-ওদিক মাথা নাড়ল গোয়েন্দাপ্রধান, ঠোঁট গোল। করে শিস দিল। গোল্ডেন বেল্ট ওদের কাছে পাওয়া যাবে না।
কিশোরের কথা ঠিক হল। স্কাউটদেরকেও তল্লাশি করা হল, কিন্তু পাওয়া গেল সোনার বেল্ট। তাদের ব্যাগে খাবার ছাড়া আর কিছুই নেই, মিউজিয়ম থেকে গ্রিফিথ পার্কে গিয়ে পিকনিকের ইচ্ছে, তাই সঙ্গে খাবার নিয়ে এসেছে। আস্তে আস্তে খালি হয়ে এল লন। তিন গোয়েন্দাকেও তল্লাশি করা হল। এবার বেরিয়ে যেতে পারে ওরা, কিন্তু বেরোল না কিশোর। আরেকবার মিউজিয়মে ঢোকার ইচ্ছে তার।– আর কাউকে তল্লাশি করা বাকি নেই। মিউজিয়মে এখনও আলো জ্বালানর। ব্যবস্থা হয়নি। কয়েকটা টর্চ জোগাড় করে অন্ধকার মিউজিয়মে ঢুকল গিয়ে কয়েকজন গার্ড। মুসা আর রবিনকে নিয়ে কিশোরও ঢুকে পড়ল।
যে কাঁচের বাক্সে বেল্টটা রাখা হয়েছিল, ওটার ওপরের আর একপাশের কাঁচ। ভেঙে চুরমার। অন্য বাক্সগুলো ঠিকই আছে, বেল্টটা বাদে আর কিছু চুরিও হয়নি।
এই সময় পেছনে চেঁচিয়ে উঠল কেউ, আরে, এই যে, ছেলেরা, তোমরা এখানে কি করছ? এখানে কি?
সেই জাপানী ভদ্রলোক।
স্যার। পকেট থেকে কার্ড বের করে বাড়িয়ে ধরল কিশোর, আমরা। গোয়েন্দা। আপনাদেরকে সাহায্য করতে চাই।
টর্চের আলোয় কার্ডটা পড়লেন ভদ্রলোক। তারপর মুখ তুলে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে কিশোরের দিকে তাকালেন।
হেসে বলল গোয়েন্দাপ্রধান। যে-কোন ধরনের রহস্য সমাধান করতে রাজি আমরা। ভৌতিক রহস্য, চুরি, ডাকাতি…
পাগল! আমেরিকান ছেলেগুলো সব বদ্ধ পাগল। যত্তোসব! কার্ডটা ছুঁড়ে ফেলে দিলেন ভদ্রলোক। আমি টোহা মুচামারু, সুকিমিচি জুয়েলারস কোম্পানির সিকিউরিটি ইনচার্জ, আমিই ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছি না গোল্ডেন বেল্ট কি করে চুরি হল! আর তিনটে বাচ্চা খোকা এসেছে এর সমাধান করতে! হুহ!…যাও, খোকারা, বাড়ি যাও। খামোকা গোলমাল কোরো না। বেরোও। প্রায় ধাক্কা দিয়ে তিন গোয়েন্দাকে মিউজিয়ম থেকে বের করে দিলেন মুচামারু।
.
০৩.
পরদিন খবরের কাগজে বেশ বড়সড় হেডিং দিয়ে ছাপা হল গোল্ডেন বেল্ট চুরির সংবাদ, খুঁটিয়ে পড়ল কিশোর। নতুন কিছু তথ্য জানা গেল। মেকানিক-এর পোশাক পরা একজন লোককে মিউজিয়মের সীমানার ভেতরে ঢুকতে দেখা গেছে, এর কয়েক মিনিট পরেই গাড়িতে করে দ্রুত চলে গেছে লোকটা। যারা দেখেছে, তারা প্রথমে কিছু বুঝতে পারেনি। যে-কোন বাড়িতে যে-কোন সময় বৈদ্যুতিক গোলযোগ ঘটতে পারে, সারানর জন্যে মিস্ত্রি আসতে পারে, এতে অস্বাভাবিক কিছু নেই। নিখুঁত পরিকল্পনা করে চুরি করতে এসেছিল একটা দল, মাপ সময়ে যার যার কাজ করে সরে পড়েছে। কেউ বাইরে থেকে কাজ করেছে, কেউ করেছে ভেতর থেকে। কে ছিল ভেতরে?
পেছনের দরজা দিয়ে কেউ বেরোয়নি। কাগজে লিখেছে, বেরোনর উপায় ছিল না, কারণ পেছনের দরজা এমনভাবে বন্ধ করা ছিল, ওটা খুলে বেরোনো অসম্ভব। তারমানে চোরও বেরিয়েছে সামনের দরজা দিয়েই। মিউজিয়মের ভেতরে দর্শক যারা যারা ঢুকেছিল, তাদের সবাইকে লনে আটকানো হয়েছে, ভালমত তল্লাশি করা হয়েছে। তাহলে কোন্দিক দিয়ে গেল চোর?
কাগজে লিখেছে, মিস্টার টোড মার্চকে জেরা করার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এই মিস্টার মার্চের ব্যাপারটাই বুঝতে পারছি না! নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর। রুমাল থেকে ইচ্ছে করেই একটা লাল পাথর ফেলল! আসল পাথর নয়, নকল, কাঁচ-টাচের তৈরি হবে।
হেডকোয়ার্টারে রয়েছে তিন গোয়েন্দা। কিশোরের কথা শেষ হয়নি, বুঝতে পেরে চুপ করে রইল মুসা আর রবিন।
ক্যারাভানের দেয়ালের দিকে চেয়ে ভ্রুকুটি করল কিশোর। কোন সন্দেহ নেই, পেশাদার দলের কাজ। প্রতিটি সেকেণ্ড পর্যন্ত মেপে নিয়েছে। নাহ, কিচ্ছু বোঝা যাচ্ছে না! কি করে সোনার বেল্টটা বের করল ওরা?
গার্ডদের কেউ হতে পারে! চেঁচিয়ে উঠল রবিন। নিশ্চয় চোরের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে! কোন গার্ডকে কিন্তু তল্লাশি করা হয়নি!
প্রশংসার দৃষ্টিতে বন্ধুর দিকে তাকাল মুসা। ঠিক, এটা হতে পারে!– কিন্তু…আরও একটা সম্ভাবনা আছে। হয়ত মিউজিয়মেই কোথাও লুকিয়ে ছিল চোর। সবাই চলে যাওয়ার পর কোন এক সুযোগে বেরিয়েছে।
উঁহু! মাথা নাড়ল কিশোর। কাগজে লিখেছে, দর্শকরা সব বেরিয়ে যাওয়ার পর পুরো মিউজিয়ম খুঁজে দেখা হয়েছে। কারও পক্ষে তখন লুকিয়ে থাকা সম্ভব ছিল না।
হয়ত কোন গোপন ঘর আছে, বলল রবিন। ওসব পুরানো বাড়িগুলোতে থাকে।
চুপ করে কয়েক মুহূর্ত ভাবল কিশোর। তারপর মাথা নাড়ল ধীরে ধীরে, আমার মনে হয় না! তেমন ঘর থেকে থাকলে মিউজিয়ম কর্তৃপক্ষ জানবেই। আর গার্ডদের ব্যাপারটা…কি জানি…! একটা ব্যাপার মাথায় ঢুকছে না কিছুতেই, এটা। বুঝলেই অনেকগুলো প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবহার না নিয়ে বেল্টটা নিল কেন ওরা? হারটার দাম বেশি, লুকানো সহজ, বেচতে পারত সহজে।
চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল গোয়েন্দাপ্রধান। চিমটি কেটে চলল নিচের ঠোঁটে।
দেখি, আবার প্রথম থেকে একটা একটা পয়েন্ট আলোচনা করি, বলল। কিশোর। প্রথমেই লাইট চলে যাওয়ার ব্যাপারটা। এটা সহজ কাজ, বাইরে থেকে সহজেই করা গেছে। দুই, আলো চলে যাওয়ার পর গার্ডরা অসুবিধেয় পড়েছে। কারণ, বাচ্চা আর মহিলারা নরক গুলজার শুরু করে দিয়েছিল মিউজিয়মের ভেতর। গার্ডেরা দর্শক সামলাতেই হিমশিম খেয়ে গেছে, এই সুযোগে কাজ সেরে ফেলেছে। চোর। তারমানে, ইচ্ছে করেই চিলড্রেনস ডে বেছে নিয়েছে চোরেরা। ঠিক কিনা?