দুই লাফে কাছে চলে এল গার্ড। কোত্থেকে চুরি করেছ এটা! গর্জে উঠল সে। এস, এদিকে এস! মার্চের কলার চেপে ধরে টানল লোকটা।
হ্যাঁচকা টান দিয়ে কলার ছাড়িয়ে নিল মার্চ, জোরে এক ধাক্কা মারল গার্ডের বুকে।
আর দ্বিধা করল না গার্ড। হুইসেল বাজাল। বদ্ধ ঘরের বাতাস যেন চিরে দিল বাঁশির তীক্ষ্ণ শব্দ। জমে গেল যেন ঘরের প্রতিটি লোক। সবকটা চোখ প্রায় একই সঙ্গে ঘুরে গেছে গার্ড আর মার্চের দিকে। দেখতে দেখতে ছুটে এসে মার্চকে ঘিরে। ফেলল গার্ডেরা। অপরাধী একটা ভঙ্গি করে দাঁড়িয়ে আছে অভিনেতা।
এই যে, মিস্টার… শুরু করল হেড গার্ড। কিন্তু তার কথা শেষ হল না, তার আগেই গাঢ় অন্ধকারে ঢেকে গেল পুরো ঘরটা।
এক সেকেণ্ড নীরবতা। হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল একটা উত্তেজিত কণ্ঠ, আলো! আলো জ্বেলে দাও!
হারের বাক্সটার কাছে চলে যাও দুজন! শোনা গেল হেড গার্ডের আদেশ। বিল, ডিক, তোমরা গিয়ে দরজা আটকাও। খবরদার, কেউ যেন বেরোতে না। পারে!
এরপর শুরু হল হট্টগোল। যার যেভাবে খুশি চেঁচাচ্ছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের অনেকে ভয়ে হাউমাউ জুড়ে দিয়েছে, চেঁচিয়ে, বুঝিয়ে তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে মায়েরা।
চীফ! চেঁচিয়ে উঠল এক গার্ড। ছেলেপিলেগুলোর জন্যে এগোতে পারছি না! বাক্সটার কাছে যাওয়া যাচ্ছে না!
যেভাবেই হোক, যাও! আবার বলল হেড গার্ড। ডাকাত! ডাকাত পড়েছে!
ঠিক এই সময় ঝন ঝন করে ভাঙল কাঁচ। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তীক্ষ্ণ আর্তনাদ করে উঠল যেন অ্যালার্ম বেল। তারই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চেঁচিয়ে চলল দর্শকরা। অন্ধকারের মধ্যে কে কত জোরে চেঁচাতে পারে তারই প্রতিযোগিতা চলেছে যেন।
রত্নহার! কিশোরের কানের কাছে মুখ এনে বলল মুসা। হারটা চুরি করার তালে আছে কেউ!
তাই তো মনে হচ্ছে, কিশোরের কণ্ঠ শুনেই বোঝা গেল, ব্যাপারটা খুব উপভোগ করছে সে। ভেবেচিন্তে প্ল্যান করেই এসেছে ডাকাতেরা।…চল, সামনের দরজার কাছে চলে যাই। ব্যাটারা ওদিক দিয়েই হয়ত বেরোবে। চল চল।
পেছনেও দরজা আছে, বলল রবিন।
তা আছে। কিন্তু একসঙ্গে দুদিকে দেখতে পারব না। চল, সামনের দিকেই যাই।
দুহাতে বাচ্চাদেরকে ঠেলে সরিয়ে দরজার দিকে এগোল কিশোর। তাকে সাহায্য করল মুসা। ভিড়ের মধ্যে কোনমতে পথ করে এগোল তিন গোয়েন্দা।
দরজার কাছে যেতে পারল না ওরা। গার্ডের কাউকে বেরোতে দিচ্ছে না, ফলে দরজার কাছে ঠাসাঠাসি হয়ে আছে লোকজন। এ ওকে ঠেলা মারছে, সে তাকে অঁতো দিচ্ছে। পাগল হয়ে উঠেছে যেন সবাই। বিপজ্জনক পরিস্থিতি। এখন কোনভাবে এক-আধটা বাচ্চা পড়ে গেলে জনতার পায়ের চাপেই চ্যাপ্টা হয়ে যাবে।
অ্যালার্ম আর হট্টগোল ছাপিয়ে শোনা গেল একটা কণ্ঠ, কথায় জাপানী টান। থামিয়ে দেয়া হল বেল। বোধহয় ইমার্জেন্সী সুইচ অফ করে ব্যাটারি কানেকশন কেটে দেয়া হয়েছে। আবার শোনা গেল সেই কণ্ঠে আদেশ, গার্ডস! জলদি বাইরে। চলে যাও! লোককে হল থেকে বেরোতে দাও। কিন্তু সাবধান! এরিয়ার বাইরে যেন যেতে না পারে কেউ! সবাইকে সার্চ করে তবে ছাড়বে!
দরজার কাছ থেকে বোধহয় সরে দাঁড়াল গার্ডেরা। কারণ, অন্ধকারেই বুঝতে পারল কিশোর, ঢেউ খেলে গেল যেন জনতার মাঝে। নড়তে শুরু করেছে সবাই একদিকে, বেরিয়ে যাচ্ছে। মুসা আর রবিনকে নিয়ে তাদের মাঝে ঢুকে গেল সে।
তিন গোয়েন্দাকে যেন ছিটকে বের করে নিয়ে এল জনতার স্রোত। দেয়াল ঘেরা বড় একটা লনে বেরিয়ে এসেছে ওরা। আশপাশে অসংখ্য গার্ড, দর্শকদের কাউকেই লনের বাইরে যেতে দিচ্ছে না। বাচ্চা আর মহিলাদের শান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে কয়েকজন। পুলিশের সাইরেন শোনা গেল। খানিক পরেই লনের গেট দিয়ে ভেতরে এসে ঢুকল কয়েকটা পুলিশের গাড়ি আর হাফট্রাক। লাফ দিয়ে নেমে এল সশস্ত্র পুলিশ।
শুরু হল তল্লাশি। বয়স্কাউট আর গার্ল গাইডরা পুলিশকে সাহায্য করতে লাগল।
দ্রুত চলল তল্লাশি। সারি দিয়ে গেটের দিকে এগোচ্ছে দর্শকরা, যাদেরকে তল্লাশি করা হয়ে যাচ্ছে তারা বেরিয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করেই রবিন আর মুসাকে নিয়ে। পেছনে রইল কিশোর, যাতে তাদের পালা পরে আসে।
মিস্টার মার্চের পালা এল। বিধ্বস্ত চেহারা তার। একজন গার্ডকে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে? ডাকাতি…।
…এই যে, মিস্টার, মার্চকে দেখেই বলে উঠল হেড গার্ড। আপনাকে এখন যেতে দেয়া হবে না। হাত ধরে টেনে অভিনেতাকে পুলিশ ইন্সপেক্টরের কাছে নিয়ে চলল সে।
কিছু পাওয়া যাবে না ওর কাছে, নিচু গলায় দুই সঙ্গীকে বলল কিশোর। সহজে ছাড়াও পাবে না। জেরার পর জেরা চলবে। কিন্তু ডাকাত ব্যাটারা পালাল কোন পথে?
তাই তো বুঝতে পারছি না! পুরো লনে চোখ বোলাল মুসা। পুরুষ আর তেমন কেউ নেই, খালি মহিলা, আর বাচ্চা! এদের কাউকেই তো ডাকাত মনে হচ্ছে না!
হু! বিড়বিড় করল কিশোর। ওদের কাছে কিছু পাওয়া যাবে না…
হুড়মুড় করে এই সময় মিউজিয়ম থেকে বেরিয়ে এলেন এক ছোটখাট জাপানী ভদ্রলোক, হাতে টর্চ। চেঁচিয়ে গার্ডদেরকে বললেন, লোকেরা চলে গেছে, না? হায় হায়, গেল বুঝি! রেইনবো জুয়েলস না, রেইনবো জুয়েলস না, বেল্টটা নিয়ে গেছে!
উজ্জ্বল হয়ে উঠল কিশোরের চোখ। অবাক কাণ্ড তো! ব্যাটারা বেল্ট চুরি করতে গেল কেন? হারটা নেয়া অনেক সোজা ছিল! এতবড় জিনিস, লুকাল কোথায়!