একটা কথা বার বার এড়িয়ে যাচ্ছ তুমি, হাসলেন চিত্রপরিচালক। আমাদেরকে টেনশনে রাখার জন্যেই বুঝি? কোথায় লুকানো হয়েছিল গোল্ডেন বেল্ট?
যেখানে কেউ খুঁজবে না, কিশোরও হাসল। মিস ভারনিয়ার বাড়িতে জানালায় উঠে ভয় দেখিয়েছিল রত্নদানো, ওরফে বামনেরা। কি করে? হিউম্যান ল্যাডার, স্যার। একজনের কাঁধে আরেকজন উঠে একটা জ্যান্ত মই বানিয়ে ফেলত ওরা সহজেই…
দাঁড়াও, দাঁড়াও, হাত তুললেন পরিচালক। বোধহয় বুঝতে পারছি, কোথায় লুকানো ছিল গোল্ডেন বেল্ট। ফাইলের পাতা উল্টে গেলেন দ্রুত হাতে। একটা জায়গায় এসে থামলেন, হ্যাঁ, এই যে, পেয়েছি। স্পষ্ট করে লিখেছে সব রবিন। মিউজিয়মের ছাত গম্বুজ আকৃতির, তারমানে দেয়াল গোল। দেয়ালের মাথায় খাজ, গম্বুজটা তার ওপর বসানো, অনেকটা ঢাকনার মত করে। ছবি ঝোলানর জন্যে ওরকম খাজ রাখা হয়েছে। ওই খাঁজেই লুকিয়ে রাখা হয়েছিল গোল্ডেন বেল্ট।
আমিও তাই ভেবেছিলাম, স্যার, হাসছে কিশোর। কিন্তু মই লাগিয়ে উঠে দেখলাম, পিঠ-বাঁকা খাজ, ওখানে বেল্ট রাখার উপায় নেই, পড়ে যাবে।
ভুরু কুঁচকে গেল চিত্রপরিচালকের। সামান্য হাঁ হয়ে গেছে মুখ। শব্দ করে মুখ দিয়ে ফুসফুসের বাতাস বের করে দিলেন। তাহলে কোথায় ছিল বেল্টটা?
খাজে চ্যাপ্টা জায়গা নেই, বলল কিশোর। বোকা বনে গেলাম। কোথায় আছে গোল্ডেন বেল্ট, কিছু বুঝতে পারলাম না। ভাবছি, এই সময় গালে এসে লাগল ঠাণ্ডা হাওয়ার পরশ। চকিতে বুঝে গেলাম..
এয়ার কণ্ডিশনিং! স্বভাব-বিরুদ্ধ কাজ করে বসলেন পরিচালক, উত্তেজনায়। চেঁচিয়ে উঠলেন।
হ্যাঁ, স্যার, এয়ার কণ্ডিশনিং। বাতাস চলাচলের জন্যে সরু যে চ্যানেল করা হয়েছে, তারই একটার মুখের জালি খুলে নিয়েছে চোর, কালো সুতো দিয়ে জালির সঙ্গে বেল্টটা বেঁধেছে। বেল্ট সুড়ঙ্গের ভেতরে ঝুলিয়ে দিয়ে আবার জায়গামত লাগিয়ে দিয়েছে জালিটা। ওখানে খুঁজতে যায়নি কেউ, কারণ মই ছাড়া ওখানে। পৌঁছানো অসম্ভব। হিউম্যান-ল্যাডার বানিয়ে বামনেরা এই কাজ করেছে, কল্পনাও। করতে পারেনি কেউ।
একসেলেন্ট, মাই বয়েজ! উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে পরিচালকের চেহারা। ভারনিয়ার কাছে আমার মুখ রেখেছ তোমরা। থ্যাঙ্ক ইউ।
আমরা তাহলে আজ আসি, স্যার, উঠে দাঁড়াল কিশোর। রবিন আর মুসাও উঠল।
আরে বস, বস, হাত তুললেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। আইসক্রীমের অর্ডার দিচ্ছি। এত সুন্দর একটা কাহিনী নিয়ে এলে, আর খালি মুখে চলে যাবে?
হাসি একান-ওকান হয়ে গেল মুসার। বন্ধুদের আগেই ধপ করে বসে পড়ল সে চেয়ারে।
রত্নদানোর এই ছবিটায় শিগগিরই হাত দিতে চাই, বললেন পরিচালক। নাম কি রাখা যায়, বলত? ফোর লিটল নোমস হলে কেমন হয়?
চারটে খুদে রত্নদানো, বিড়বিড় করল কিশোর বাংলায়। ইংরেজিতে বলল, লিটল নয়, স্যার, ডেভিল রাখুন। ফোর ডেভিল নোমস।
ঠিক, ঠিক বলেছ, একমত হলেন পরিচালক।