ভালই করেছে, মাথা দোলালেন পরিচালক। আচ্ছা, এবার কিছু প্রশ্নের জবাব দাও তো! নোটে লেখনি। গোল্ডেন বেল্ট চুরি করল কিভাবে? কোথায় লুকিয়ে রাখল? বামনরা কি করে জানল তোমার কাছে বেল্টটা আছে?
লম্বা শ্বাস নিল কিশোর। পুরোপুরি অন্ধকারে ছিলাম প্রথমে। রবিন সোনার দাঁতটার কথা বলার পর বুঝলাম সব কিছু। শুধু একটা সোনার দাঁত! ভুরু সামান্য কুঁচকে গেছে মিস্টার ক্রিস্টোফারের। শার্লক হোমসও পারত কিনা সন্দেহ!
সহজ ব্যাপার তো, স্যার, বলল কিশোর। ছোট ছেলেদের দাঁত একবার। পড়লে দ্বিতীয়বার গজায়, বাধানো সোনার দাঁত লাগানর দরকার পড়ে না। তারমানে মিউজিয়মের বাচ্চা ছেলেটা আসলে বয়স্ক মানুষ। আর ওই আকারের বয়স্ক মানুষ একমাত্র বামনই হতে পারে।
ঠিকই অনুমান করেছিলে।
যখনই বুঝে গেলাম, বামনরা গিয়েছিল কাব স্কাউট সেজে, দুইয়ে দুইয়ে চার যোগ করে নিতে অসুবিধে হল না। হলিউডে ওদের বাস, সিনেমা টেলিভিশনে ওরা অভিনয় করে, দড়াবাজিতে ওস্তাদ, চুরিচামারিতেও পিছিয়ে নেই ওদের অনেকেই। পিটারসন মিউজিয়মে অলঙ্কারের প্রদর্শনী শুরু হল, চোরডাকাতের ভিড় জমল শহরে। রত্ন-চুরির ফন্দি করল ইঅং। বামনদেরকে দলে টানল। সুন্দর প্ল্যান করেছে। সে। এক মহিলা অপরাধীকে ডেন মাদার সাজিয়ে বামনদের কাব স্কাউটের পোশাক পরিয়ে পাঠানো হল মিউজিয়মে। টোড মার্চকে ভাড়া করা হল মিউজিয়মের ভেতরে বিশেষ একটা সময়ে সামান্য অভিনয় করার জন্যে। অভিনয় শুরু করল মার্চ, লোকের চোখ তার দিকে আকৃষ্ট হল, এই সুযোগে ব্যালকনির সিঁড়ির গোড়ায় চলে গেল চার বামন। বাইরে থেকে কানেকশন কেটে আলো নিবিয়ে দিল বার্ট, মেকানিক সেজে গিয়েছিল সে-ই। দ্রুত ব্যালকনিতে উঠে গেল চার বামন। ওদিকে অন্ধকার। হলঘরে তখন নরক গুলজার শুরু হয়ে গেছে।
তারপর? কিশোরের দিকে ঝুঁকে এসেছে মুসা।
বামনরা সঙ্গে করে দড়ি নিয়েছিল, বলল কিশোর। তিনজন দড়ি ধরে রইল ওপর থেকে, চতুর্থজন দড়ি ধরে নেমে এল বেল্টের বাক্সের ওপর। বাক্স ভেঙে বেল্টটা বের করে নিতে বেশিক্ষণ লাগল না। দড়ি ধরে টেনে আবার তাকে ব্যালকনিতে তুলে নিল তার সঙ্গীরা।
হুমম! আস্তে মাথা দোলালেন পরিচালক। ওরা দক্ষ দড়াবাজিকর, আমার ধারণা, কাজটা করতে তিরিশ সেকেণ্ডও লাগেনি। এখন বুঝতে পারছি, কেন। নেকলেস চুরি না করে বেল্ট চুরি করেছে ওরা। নেকলেসের বাক্সের ওপর নামার কোন উপায় ছিল না।
হ্যাঁ, বলল কিশোর। বেল্টটা বাক্স থেকে সরাল বটে, কিন্তু জানে এত ভারি একটা জিনিস তখন হল থেকে বের করে নিয়ে যেতে পারবে না। কাজেই লুকিয়ে। ফেলল।
হলের ভেতরেই লুকিয়েছে? কিন্তু পুরো মিউজিয়ম তো তন্ন তন্ন করে খোঁজা হয়েছে, পাওয়া যায়নি বেল্ট।
আসল জায়গাতেই খোঁজেনি ওরা। খুব মাথা খাঁটিয়ে লুকানর জায়গা ঠিক করেছে বামনরা। বেল্ট লুকিয়ে ফেলল, পরে সুযোগমত একদিন এসে নিয়ে যাবে। বলে। সেদিন রাতে যদি ব্যাটাদের না ধরা যেত, পরের দিনই চিলড্রেনস ডে-তে আবার কাব স্কাউট সেজে গিয়ে বেল্ট বের করে নিয়ে যেত ওরা, কোন একটা সুযোগ সৃষ্টি করে।
হুমম! মাথা দোলালেন পরিচালক।
ব্যাংক ডাকাতি হয়ে গেল, বার্টকে ধরতে পারল না পুলিশ। চার বামনকেও ধরতে পারল না। বোর্ডিং হাউসে খোঁজখবর করতে গিয়েছিল পুলিশ, কিন্তু মুখে তালা এঁটে ছিল বামনের গোষ্ঠী। অনেক ভেবে ঠিক করলাম, ফাঁদ পেতে ওদেরকে ধরতে হবে, এছাড়া আর কোন উপায় নেই।
অ, এই ব্যাপার! মুখ গোমড়া করে ফেলেছে রবিন। আমাকে আর মুসাকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছিলে!
রাগ কোরো না, রবিন, এছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। পথগুলো বামনদেরকে দেখানর দরকার ছিল, নইলে ঢুকত কি করে ওরা? পরিচালকের দিকে ফিরল কিশোর। হ্যাঁ, রবিন সোনার দাঁতটার উল্লেখ করতেই সব বুঝে গেলাম। তাড়াতাড়ি ছুটে গেলাম মিউজিয়মে। মিস্টার মুচামারুকে সব খুলে বললাম, তারপর দুজনে মিলে খুঁজে বের করলাম সোনার বেল্টটা…
কোন জায়গা থেকে? কথার মাঝে প্রশ্ন করল মুসা।
আসছি সে-কথায়। বেল্টটা কোমরে পরে চলে গেলাম বামনদের বোর্ডিং হাউসে। রত্নদানো সেজেছিল যে চারজন, তাদের নেতাকে ডেকে আনতে অসুবিধে হল না। গোল্ডেন বেল্ট আমি পেয়ে গেছি, সেকথা বললাম তাকে। জ্যাকেট তুলে এক পলক দেখালামও জিনিসটা। বললাম, চল্লিশ হাজার ডলার নগদ দিলে বেল্টটা তাকে দিয়ে দিতে পারি। টাকাটা কোথায় হাতবদল করতে হবে, সেকথাও বললাম। ইয়ার্ডের ঠিকানা দিয়ে বেরিয়ে এলাম বোর্ডিং হাউস থেকে।
তারমানে, পরিচালক বললেন। তুমি ধরেই নিয়েছিলে, ওরা তোমার কাছ। থেকে বেল্টটা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবেই।
হ্যাঁ। ওরা যদি টাকা নিয়েও আসত, তাহলেও কেস ওদের বিরুদ্ধে চলে যেত। এত টাকা ওরা পেল কোথায়, জানতে চাইত পুলিশ। বেল্ট চুরির কেসে না জড়ালেও তখন ডাকাতির কেসে ফেসে যেত ওরা।
রাস্তার পাশের ছেলেগুলো তাহলে ছেলে নয়! বিড়বিড় করল রবিন। বামনরাই ছেলে সেজে আমার আর মুসার ওপর চোখ রেখেছিল। বিরক্তি ঝরল তার কণ্ঠে। ওদেরকে জানাতে চেয়েছিলে, কোন পথে হেডকোয়ার্টারে ঢোকা সহজ
হ্যাঁ, চেয়ারে সামান্য নড়েচড়ে বসল কিশোর। মিস্টার মুচামারুকে সব বুঝিয়ে বলেছি, কি করে কি করতে হবে। ঠিক সময়ে দলবল নিয়ে এসে ট্রেলারের আশপাশে লুকিয়ে রইলেন চীফ ইয়ান ফ্লেচার। সঙ্গে মিস্টার মুচামারুও এলেন। বামনরা আক্রমণ করল আমাদের, ধরা পড়ল।