পুলিশও পৌঁছে গেছে। বোরিসের ক্ষমতা দেখেছে ওরা, কাজেই সাবধানে এগোচ্ছে। হাতে রিভলভার।
বোরিসের হাতের নাগালের বাইরে দাঁড়িয়ে রিভলভার নাচাল অফিসার। ইউ আর আণ্ডার অ্যারেস্ট! খবরদার, নড়বে না! গুলি খাবে!
আরে, আমাকে পরে ধরতে পারবেন! লঞ্চটার দিকে আঙুল তুলে চেঁচিয়ে। বলল বোরিস, ওদেরকে ধরুন! পালাচ্ছে তো!
ইতিমধ্যে কিশোর আর মুসার বস্তার বাঁধন কেটে দিয়েছে রবিন। দ্রুতহাতে বাঁধন কেটে মুক্ত করে দিল কিশোরকে। দুজনে মিলে মুক্ত করল মুসাকে।
ছেলেদেরকে দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গেছে অফিসারের। আরে, কি কাণ্ড! তোমরা বস্তার ভেতরে কি করছিলে?
রবিনের হাত থেকে ছুরিটা নিয়ে একটা ছোট বস্তার বাঁধন কেটে ফেলল কিশোর। ভেতরে হাত ঢুকিয়ে বের করল একমুঠো নোট। ছুঁড়ে দিল অফিসারের দিকে। এই হল কাণ্ড! ব্যাংক ডাকাতি!
কিছুই বুঝতে পারল না যেন অফিসার। হাঁ করে চেয়ে আছে কিশোরের মুখের দিকে।
ভ্যান থেকে নামল কিশোর। অফিসারের সামনে এসে দাঁড়াল। জলদি করুন! নইলে পালিয়ে যাবে ডাকাতেরা! জলদি ধরুন ওদের!
ইয়ে, মানে তোমরা কারা!…মানে… এখনও কিছু বুঝতে পারছে না অফিসার।
বুঝিয়ে বলতেই হল অফিসারকে। মূল্যবান অনেক সময় নষ্ট হল তাতে।
.
১৭.
পাঁচ দিন পর, শনিবার। হেডকোয়ার্টারে বসে আলাপ আলোচনা করছে তিন। গোয়েন্দা।
ওই অফিসারটা একটা আহাম্মক! ঝাঁঝাল কণ্ঠে বলল মুসা। তাড়াতাড়ি করলে ধরতে পারত ব্যাটাদের, কিন্তু ওকে বোঝাতেই তো সময় গেল।
ইন্টারপোল দায়িত্ব নিয়েছে, বলল কিশোর। ধরেও ফেলতে পারে।
কি জানি! তবে, রিকের সোনার দাঁত ভরসা। ওটাই চিনিয়ে দেবে ওকে। ধরা। পড়লে ওই দাঁতের জন্যেই পড়বে।
আরে না-আ! হাত নাড়ল রবিন। সোনার দাঁত অনেকেই বাধায় ওরকম। এই তো, সেদিন পিটারসন মিউজিয়মেও তো একজনের দেখলাম। একটা ছেলে…
তড়াক করে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল কিলোর। অদ্ভুত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে রবিনের মুখের দিকে, যেন তাকে আর কখনও দেখেনি। পিটারসন মিউজিয়মে সোনার দাঁত! উত্তেজনায় রক্ত জমছে তার মুখে। রবিন! আগে বলনি কেন? কেন বলনি আগে?
একটা কাব স্কাউটের মুখে সোনার দাঁত, এতে অবাক হওয়ার কি আছে? কিছুই বুঝতে পারছে না রবিন। বলারই বা কি আছে? ভুলেই গিয়েছিলাম…এখন কথা উঠল…
ইসস, আরও আগে যদি বলতে! এদিক-ওদিক মাথা নাড়ল কিশোর। আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, এই সময় বাইরে থেকে মেরিচাচীর ডাক শোনা গেল, কিশোর, আছিস ওখানে? মিরো এসেছে।
মুসা গিয়ে মিরোকে নিয়ে এল।
অবাক চোখে হেডকোয়ার্টারের জিনিসপত্র দেখল মিরো। তারপর একটা চেয়ারে বসতে বসতে বলল, কিশোর-স্যান, তোমাদেরকে বিদায় জানাতে এলাম। আগামীকালই জাপানে ফিরে যাচ্ছি আমরা।
এত তাড়াতাড়ি টেবিলে দুই কনুই রেখে সামনে ঝুঁকল কিশোর। প্রদর্শনী শেষ?
না, প্রদর্শনী চলবে, বিষণ্ণভাবে মাথা নাড়ল মিরো। শুধু বাবা আর আমি ফিরে যাচ্ছি। বাবাকে বরখাস্ত করেছে কোম্পানি। আর একদিন মাত্র চাকরি আছে তার।
আন্তরিক দুঃখিত হল তিন গোয়েন্দা।
কি যেন ভাবল কিশোর। তারপর বলল, মিরো, পিটারসন মিউজিয়মে আর মাত্র একদিন প্রদর্শনী চলবে, না?
হ্যাঁ। আগামীকাল চলে বন্ধ হয়ে যাবে। অন্য শহরে চলে যাবে।
কাগজে পড়লাম, কালও চিলড্রেনস ডে।
হ্যাঁ। আগেরবার গণ্ডগোলের জন্যে ঠিকমত দেখতে পারেনি ছোটরা, তাই আরেক দিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তারমানে সময় বেশি নেই হাতে। মিরো, তোমার বাবা শেষমেশ একবার সাহায্য করবেন আমাকে? বলে দেখবে?
সাহায্য? ভুরু কোঁচকাল মিরো।
আমার কথামত কাজ করবেন?
হয়ত করবে! গোল্ডেন বেল্ট ফিরে পেলে এখনও সম্মান রক্ষা হয়, চাকরি থাকে বাবার। বলে হয়ত রাজি করাতে পারব তাকে।
তাহলে চল যাই, উঠে দাঁড়াল কিশোর। গাড়ি নিয়ে এসেছ?
কোম্পানির গাড়ি।
গুড। রবিন, মুসা, তোমরা থাক। রবিন, রত্নদানোর কেসটা লিখে ফাইল করে ফেল, মিস্টার ক্রিস্টোফারকে দেখাতে হবে। মুসা, ছাপার মেশিনের একটা রোলার ঠিকমত ঘুরছে না, দেখবে ওটা? আমি আসছি। কাল নাগাদ গোল্ডেন বেল্ট রহস্যের কিনারা হয়ে যাবে।
হাঁ হয়ে গেছে মুসা আর রবিন। তাদেরকে ওই অবস্থায় রেখেই মিরোকে নিয়ে দুই সুড়ঙ্গে নেমে পড়ল কিশোর।
সামলে নিতে পুরো এক মিনিট সময় লাগল রবিন আর মুসার।
রবিন, অবশেষে বলল মুসা। কি করে কিনারা হবে?
জানি না! দুই হাত নাড়ল রবিন, মাথা নাড়ল এদিক-ওদিক। কাগজ-কলম টেনে নিল। খানিকক্ষণ গুম হয়ে বসে থেকে শেষে চেয়ার ঠেলে উঠে পড়ল মুসা। অযথা ভেবে লাভ নেই। তারচেয়ে মেশিনটা সারিয়ে ফেললে একটা কাজ হয়ে যায়।
শেষ বিকেলে রহস্য আরও জমাট হল। কিশোরের কাছ থেকে ফোন এল হেডকোয়ার্টারে। দুই সহকারীর জন্যে নির্দেশ: হেডকোয়ার্টারে ঢোকার সবকটা পথ ভাল মত পরীক্ষা করে দেখ। জরুরি এক আর গোপন চার-এ যেন কোন গোলমাল না থাকে। বার বার বেরিয়ে দেখ, কোনরকম অসুবিধে হয় কিনা। সবুজ ফটক এক, দুই সুড়ঙ্গ, সহজ তিন আর লাল কুকুর চার দিয়েও বেরোও বার বার। দেখ, ছয়টার মধ্যে কোন্ পথটা দিয়ে সবচেয়ে সহজে, সবচেয়ে কম সময়ে ঢোকা যায়।
মুসা কিংবা রবিন কোন প্রশ্ন করার আগেই লাইন কেটে গেল ওপাশ থেকে।
রবিনের নোট লেখা শেষ, মুসারও মেশিন সারানো হয়ে গেছে। কেন গোপন পথগুলো দিয়ে ঢুকতে-বেরোতে বলেছে কিশোর, কিছুই বুঝতে পারল না ওরা। তবু দেরি না করে কাজে লেগে গেল। কিশোর যখন করতে বলেছে, নিশ্চয় কোন না কোন কারণ আছে।