বোধহয় কোন জাহাজে, ফিসফিস করে জবাব দিল কিশোর। সাগর পাড়ি দেয়ার কথা বলছিল, মনে আছে?
শেষে পানিতে ডুবেই মরণ ছিল কপালে! বিষণ্ণ শোনাল মুসার কষ্ঠ। বার্ট কি বলল শুনলে না? পয়সার বস্তা পায়ে বেঁধে ছেড়ে দেবে।
শুনেছি, বলল কিশোর। মুসা, হ্যারি হুডিনির নাম শুনেছ? ওই যে সেই বিখ্যাত ম্যাজিশিয়ান, হাত-পা বেঁধে ড্রামে ভরে পানিতে ফেলে দিলেও যিনি বেঁচে ফিরতেন?
তার মত জাদুকর হলে মোটেই ভাবতাম না, গোঁ গোঁ করে বলল মুসা। কিন্তু আমি হুডিনি নই, মুসা আমান। বড় জোর মিনিট খানেক কোনমতে টিকে থাকতে পারব পানির তলায়, তারপরই জারিজুরি খতম।
মুসার কথার ধরনে হেসে উঠল এক বামন। বন্দিদের সঙ্গে ওরা চারজনও চলেছে ভ্যানের পেছনে বসে।
যদি পানিতে না ফেলে? যে বামনটা হেসেছে, সে বলল। যদি কোন আরব শেখের কাছে বেচে দেয়? শুনেছি, আরবের কোন কোন আমির নাকি এখনও গোলাম কিনে রাখে।
ব্যাপারটা ভেবে দেখল মুসা। সিনেমায় দেখেছে, গোলামদের ওপর কি রকম। অকথ্য অত্যাচার করে মনিবেরা। কোটা বেছে নেবে? পানিতে ডুবে মৃত্যু? নাকি শেখের গোলাম হওয়া? দুটোর কোনটাই পছন্দ হল না তার।
ছেলেদের কাছ থেকে জবাব না পেয়ে চুপ করে গেল বামনটা।
ভ্যানের গতি কমতে শুরু করল, ঝাঁকুনিও কমে এল।
বার্টের গলা শোনা গেল, বামনদেরকে বলছে, বাস ধরে চলে যাবে হলিউডে। আবার বলছি, বুঝেশুনে টাকা খরচ কর। লোকের চোখে যাতে না পড়ে।
আর বলতে হবে না, বলল বামন। টাকা এখন খরচই করব না আমরা।
আরেকটা কথা, মুখ বন্ধ রাখবে!
রাখব।
থেমে দাঁড়াল ভ্যান। পেছনের দরজা খুলে নেমে গেল বামনরা। দড়াম করে আবার বন্ধ হয়ে গেল দরজা, আবার ছুটল গাড়ি। কোনরকম ঝাঁকুনি নেই আর এখন, নিশ্চয় মসৃণ হাইওয়েতে উঠে এসেছে। কয়েক মাইল দূরেই রয়েছে সাগর। সেখানে ডাকাতদের অপেক্ষায় রয়েছে কোন একটা জাহাজ, ভাবল কিশোর।
প্রায় গুঙিয়ে উঠল মুসা। কিশোর, এইবার আমাদের খেল খতম! ইসস, কেন। যে এই গোয়েন্দাগিরির ব্যবসা শুরু করেছিলাম!
আমাদের মেধাকে কাজে লাগানর জন্যে, শান্তকণ্ঠে জবাব দিল কিশোর।
মেধা জমে বরফ হয়ে গেছে আমার! ঝাঁঝাল গলায় বলল মুসা। রবিনটাও যদি সময়মত আসত! চিহ্নটা দেখত! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল সে, কিশোর, দোহাই তোমার, চুপ করে থেক না! কিছু অন্তত বল! বল, বাঁচার আশা আছে আমাদের!
নেই, সত্যি কথাটাই বলল কিশোর। বার্ট খুব চালাক। কোনরকম ফাঁক রাখেনি।
.
ভ্যানকে অনুসরণ করে চলেছে ট্রাক। রবিন উত্তেজিত, বোরিস গম্ভীর।
বোরিস যখন ফিরেছিল, সবুজ ভ্যানটা তখন মাত্র গলির মোড় পেরিয়ে গেছে। পুলিশ আনতে পারেনি সে, রাস্তায় পুলিশ ছিল না। রবিন একবার ভেবেছে, কোন পুলিশ স্টেশনে ফোন করবে। কিন্তু পরে ভেবেছে, আজ রোববার, দোকানপাট সব বন্ধ, টেলিফোন করবে কোথা থেকে? কাজেই তখন যা করা উচিত, ঠিক তাই করেছে, বোরিসকে নিয়ে ট্রাকে উঠে পড়েছে, পিছু নিয়েছে ভ্যানের।
রোববার সকালে গাড়ির ভিড় কম, পথ প্রায় নির্জন, গতি বাড়াতে কোন অসুবিধে নেই। তীব্র গতিতে ছুটেছে ভ্যান, ওটার সঙ্গে তাল রেখে চলা কঠিন হয়ে পড়েছে ইয়ার্ডের পুরানো ট্রাকের পক্ষে। বার বার পিছিয়ে পড়ছে।
দেব নাকি বাড়ি লাগিয়ে! আপনমনেই বলল বোরিস। কোনভাবে আটকে দিতে পারলে…
না না, এতবড় ঝুঁকি নেয়া যাবে না! ভ্যান উল্টে যায় যদি? যেভাবে যাচ্ছেন, যেতে থাকুন।
চলতে চলতে এক সময় গতি কমে গেল ভ্যানের, থামল। পেছনের দরজা খুলে টপাটপ লাফিয়ে নামল চারটে ছেলে। তাড়াহুড়ো করে চলে গেল বাস স্টপের দিকে।
ধরব নাকি পিচ্চিগুলোকে! ভুরু কুঁচকে গেছে বোরিসের। গোটা কয়েক চড়থাপ্পড় দিলেই গড়গড় করে বলে দেবে সব।
কি বলবে? হাত তুলল রবিন। না, ভ্যানটা হারাব তাহলে!
পেছনের দরজা বন্ধ হয়ে গেল, আবার চলতে শুরু করল ভ্যান। মোড় নিয়ে পুরানো রাস্তা ছেড়ে হাইওয়েতে উঠে গেল। এগিয়ে চলল নাক বরাবর পশ্চিমে, উপকূলের দিকে।
পেছনে ট্রাক নিয়ে আঠার মত লেগে রইল বোরিস। কিন্তু আর বেশিক্ষণ লেগে থাকা বোধহয় সম্ভব না। ভ্যানটা নতুন, ওটার সঙ্গে পাল্লা দিতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে পুরানো ট্রাক।
নড়েচড়ে বসল রবিন। পকেটে টান পড়তেই গায়ে শক্ত চাপ অনুভব করল সে, মনে পড়ল ওয়াকি-টকিটার কথা। তাই তো? যোগাযোগ করা যায়। তাড়াতাড়ি পকেট থেকে ছোট্ট রেডিওটা বের করল সে। একটা বোতাম টিপে দিয়ে কানের কাছে ধরল যন্ত্রটা। এক মুহূর্ত বিচিত্র গুঞ্জন উঠল স্পীকারে, পরক্ষণেই তাকে অবাক করে দিয়ে ভেসে এল একজন মানুষের গলা। কেমন পরিচিত। জোরাল, স্পষ্ট কথা: হাল্লো, হারবার! হাল্লো, হারবার! অপারেশন থিয়েটার কলিং! শুনতে পাচ্ছ? শুনতে পাচ্ছ?
টানটান হয়ে গেছে রবিনের সমস্ত স্নায়ু, উল্কর্ণ হয়ে আছে সে। জবাব এল অতি মৃদু গলায়: হালো, অপারেশন থিয়েটার। হারবার বলছি। কাজ শেষ? কোন গোলমাল?
হাল্লো, হারবার! আরে, বার্ট ইঅং-এর কষ্ঠ। শেষ। কোন গোলমাল হয়নি। তবে দুজন যাত্রী নিয়ে আসছি সঙ্গে। ডকের কাছাকাছি পৌঁছে আবার কথা বলব। ওভার অ্যান্ড আউট।
চুপ হয়ে গেল স্পীকার।
হঠাৎ বুমম করে কান ফাটানো শব্দ উঠল। নিজের অজান্তেই মাথা নিচু করে ফেলল রবিন। ভ্যান থেকে বোমা ছুঁড়ল না তো!