পুলিশকে খবর দিতে হবে… বলতে বলতে থেমে গেল রবিন। এই ছবি পুলিশকে দেখালে তাদের কি প্রতিক্রিয়া হবে, ভেবে, দ্বিধা করল। না, আগে সে আর বোরিস খুঁজে দেখবে। না পাওয়া গেলে তখন অন্য কথা। বোরিস, এ-বাড়িতে নেই ওরা। যাওয়ার সময় কোন সূত্র রেখে গেছে হয়ত। আরও ভালমত খুঁজতে হবে। আমাদের। এখানে না পেলে পুরো ব্লকটা খুঁজে দেখব।
আরও একবার খোঁজা হল মিস ভারনিয়ার বাড়ি। কিছু পাওয়া গেল না। বেরিয়ে পড়ল ওরা ও-বাড়ি থেকে।
আগে আগে পথে এসে নামল রবিন, তার পেছনে বোরিস। কাউকে দেখা গেল রাস্তায়; একেবারে নির্জন। গলিপথ ধরে থিয়েটার-বাড়ির পেছনে চলে এল ওরা।
নীল চকটা রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখল রবিন। অর্ধেক ক্ষয় হয়ে গেছে, তারমানে কিছু লিখেছে মুসা। এখানে এল কি করে এটা? মুসা ইচ্ছে করে ফেলে রেখে গেল? নাকি কোনভাবে তার পকেট থেকে পড়ে গেছে।
তীক্ষ্ণ চোখে আশপাশটা পরীক্ষা করে দেখল রবিন। আর কোনরকম চিহ্ন নেই। বাড়ির দেয়াল দেখল, ধীরে ধীরে তার নজর উঠে যাচ্ছে উপর দিকে। হঠাৎ চোখে পড়ল চিহ্নটা। নীল চক দিয়ে মস্ত বড় করে আঁকা হয়েছে একটা প্রশ্নবোধক। কোন সন্দেহ নেই, মুসাই এঁকেছে! কিন্তু খাড়া দেয়াল, ওখানে উঠল কি করে সে? ভেবে কোন কূলকিনারা পেল না রবিন।
বোরিস, হাত তুলে প্রশ্নবোধক চিহ্নটা দেখাল রবিন। ওটা মুসা এঁকেছে! আমার মনে হয় এই বাড়ির ভেতরেই আছে ওরা!
দরজা ভাঙতে হবে! বন্ধ পাল্লার দিকে চেয়ে বলল বোরিস। পা বাড়াল। দরজার দিকে।
খপ করে বোরিসের হাত চেপে ধরল রবিন। না না, ভাঙতে গেলে শব্দ হবে। অনেক দরজা আছে, একটা না একটা খোলা পাওয়া যাবেই।
মিস ভারনিয়ার বাড়ির পেছনের গলিপথটার কাছে বোরিসকে নিয়ে এল রবিন। ফিসফিস করে বলল, সাবধানে এগোতে হবে!
পকেট থেকে ছোট গোল একটা আয়না বের করল রবিন। কিশোরের ধারণা, তিন গোয়েন্দার কাজে লাগবে এই জিনিস, তাই তিনজনেই একটা করে সঙ্গে রাখে।
উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল রবিন। হামাগুড়ি দিয়ে এগোল। গলিপথটার মোড়ে। এসে থামল, পাঁচ আঙুলে আয়নাটা ধরে হাত বাড়িয়ে দিল সামনে। আয়নার ভেতরে। দেখা যাচ্ছে পথটা। ইমার্জেন্সী ডোরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটা সবুজ ভ্যান। আগেরদিন ওখানে ওটা ছিল না।
দরজা খুলে বেরিয়ে এল একজন মানুষ। তাকে দেখেই চমকে উঠল রবিন। বার্ট ইঅং, হাতে একটা বস্তা, ভেতরে ঠাসাঠাসি করে ভরা হয়েছে কিছু। বার বার এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে ইঅং, যেন ভয় করছে, কেউ তাকে দেখে ফেলবে।
রবিন, কিছু দেখেছ মনে হচ্ছে? পেছন থেকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল। বোরিস।
নাইটগার্ড! নিশ্চয় কিছু চুরি করছে ব্যাটা! আর কোন সন্দেহ নেই, ভেতরেই আছে মুসা আর কিশোর।
তাহলে চল ঢুকে পড়ি! গার্ড ব্যাটা কিছু বললে… শার্টের হাতা গোটাল বোরিস।
না না, এভাবে যাওয়া ঠিক হবে না, বাধা দিল রবিন। নিশ্চয় ভেতরে গার্ডের আরও সাঙ্গোপাঙ্গ রয়েছে।-হা হা, ওই যে আরও দুজন বেরোচ্ছে, হাতে বস্তা! বোরিস, পুলিশ ডাকতে হবে! জলদি যান! আমি আছি এখানে!
বোরিসের ধারণা, তিন চোরকে সে একাই সামলাতে পারবে। বলল, পুলিশ ডাকার কি দরকার? আমিই…
না, ঝুঁকি নেয়া উচিত না! শিগগির যান!
আর দ্বিরুক্তি না করে উঠে চলে গেল বোরিস।
হাত মাটির সঙ্গে প্রায় মিশিয়ে রেখেছে রবিন, তাই তার হাত কিংবা আয়নাটা। চোখে পড়ছে না তিন চোরের। একের পর এক বস্তা এনে গাড়িতে তুলছে ওরা।
সময় যাচ্ছে। অস্থির হয়ে উঠছে রবিন। এখনও আসছে না কেন বোরিস?
গাড়িতে বস্তা তোলা বোধহয় শেষ হয়েছে চোরদের। গাড়ির কাছেই দাঁড়িয়ে কি যেন পরামর্শ করল ওরা। একসঙ্গে তিনজনেই আবার গিয়ে ঢুকল বাড়ির ভেতরে। খানিক পরে বেরিয়ে এল, দুজনের কাঁধে দুটো বড় বস্তা, ভেতরে ভারি কিছু রয়েছে।
হঠাৎ নড়ে উঠল যেন একটা বস্তার ভেতরে কিছু! চোখের ভুল? আরও ভাল করে তাকাল রবিন। না না, ঠিকই নড়ছে। বস্তা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে যেন ভেতরের কিছুটা! ভ্যানের ভেতরে অন্যান্য বস্তার ওপর নামিয়ে রাখা হল বড় বস্তাদুটো।
বোরিসের দেরি দেখে হতাশ হয়ে পড়ছে রবিন, ঘামছে দরদর করে। বুঝতে পারছে, দুটো বস্তার ভেতরে রয়েছে কিশোর আর মুসা। বোরিস থাকলে দুজনে ছুটে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারত লোকগুলোর ওপর, মুক্ত করতে পারত দুই বন্ধুকে। একাই যাবে কিনা ভাবল রবিন, পরক্ষণেই নাকচ করে দিল চিন্তাটা। সে গিয়ে একা কিছুই করতে পারবে না, বরং ধরা পড়বে।
ভ্যানের পেছনের দরজা বন্ধ করে দিল এক চোর। তিনজনেই উঠে বসল। সামনের সিটে। মুহূর্ত পরেই ইঞ্জিন স্টার্ট নিল, চলতে শুরু করল গাড়ি।
রবিনের চোখের সামনে দিয়ে বস্তায় ভরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কিশোর আর মুসাকে, অথচ কিছুই করতে পারছে না সে! রাগে দুঃখে মাথার চুল ছিঁড়তে বাকি রাখল সে।
.
১৫.
বড় বেকায়দা অবস্থায় রয়েছে মুসা আর কিশোর। হাত-পা বাঁধা, বস্তার পাটের আঁশ সুড়সুড়ি দিচ্ছে নাকে মুখে। টাকা-পয়সার উঁচু নিচু বস্তার ওপর পড়ে আছে, তার ওপর অমসৃণ পথে গাড়ির প্রচণ্ড ঝাঁকুনি, ব্যথা হয়ে গেছে দুজনের পিঠ।
টেনে হাতের বাধন খোলার ব্যর্থ চেষ্টা করল কিশোর।
সঙ্গীকে নড়তে দেখে মুসা বলল, কিশোর, আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। ওরা?