বড় বড় দুটো চটের বস্তা নিয়ে এল রিক। কিশোর আর মুসাকে বস্তায় ভরে বস্তার মুখ বেঁধে ফেলা হল।
ট্রাকে তুলে দাও, বলল বাট।
খামোকা ঝামেলা, বলল রিক। ওরা আমাদের কথা শুনবে বলে মনে হয় না।
তাই মনে হচ্ছে, না? পয়সার বস্তা দুটো কেন নিয়েছি তেমন বুঝলে পায়ে বেঁধে পানিতে ফেলে দিলেই হবে, শব্দ করে হাসল বার্ট।
.
১৪.
রোববার সকাল।
জানালা দিয়ে রোদ এসে পড়েছে ঘরে। ঘুম ভাঙল রবিনের, কিন্তু চুপচাপ বসে রইল অলস কয়েকটা মুহূর্ত। মুসা আর কিশোরের কথা মনে পড়তেই লাফ দিয়ে উঠে বসল। রাতে কতখানি কি করেছে ওরা? কিছু দেখেছে? রত্নদানো ধরতে। পেরেছে? ফোন করেছে?
তাড়াতাড়ি কাপড় পরে নিল রবিন। ওয়াকি-টকিটা পকেটে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে লাফাতে লাফাতে নিচে নামল। রান্নাঘর থেকে গরম কেরে গন্ধ আসছে। ম্যাপল গুড়ের তাজা সুগন্ধ সুড়সুড়ি দিচ্ছে যেন নাকে।
মা, কিশোর ফোন করেছে? রান্নাঘরে ঢুকেই জিজ্ঞেস করল রবিন।
না।
তারমানে, রাতে তেমন কিছু ঘটেনি, ভাবল রবিন। তাড়াহুড়োর কিছু নেই। ধীরেসুস্থে নাস্তা সারল সে। তারপর সাইকেল বের করে নিয়ে রওনা হল স্যালভিজ ইয়ার্ডে।
খোলা সদর দরজা দিয়ে ইয়ার্ডের আঙিনায় ঢুকে পড়ল রবিন।
হাফ-ট্রাকটা ধোয়া-মোছায় ব্যস্ত বোরিস। তার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল রবিন, কিশোরের কোন খবর আছে?
না, মুখ না ফিরিয়েই জবাব দিল বোরিস।
ভাজ পড়ল রবিনের কপালে। ইয়ার্ডের অফিসে ঢুকল। মিস ভারনিয়ার বাড়িতে ফোন করল। রিঙ হচ্ছে, কিন্তু কেউ ধরছে না ওপাশ থেকে। কেন? আবার ডায়াল করল সে। এবারেও ধরল না কেউ। কি ব্যাপার? চিন্তিত হয়ে পড়ল সে। অফিস থেকে বেরিয়ে এল। বোরিস, কেউ রিসিভার তুলছে না! মনে হচ্ছে কেউ বাড়িতে নেই।
ফিরে তাকাল বোরিস। রত্নদানোদের শিকার হয়ে গেল না তো?
জলদি চলুন! একটা কিছু ঘটেছে!
চল!
ঠিক এই সময় বেজে উঠল টেলিফোন।
নিশ্চয় কিশোর! চেঁচিয়ে উঠল রবিন। ছুটে এসে আবার ঢুকল অফিসে, প্রায়। ছোঁ মেরে তুলে নিল রিসিভার। হ্যাল্লো! পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ড।
কিশোর-স্যান আছে? মিরোর গলা চিনতে পারল রবিন। বলল, না, বাইরে গেছে। আমি রবিন।
ও, রবিন-স্যান। কিশোরের জন্যে একটা মেসেজ আছে। আবার তন্ন তন্ন করে খোঁজা হয়েছে মিউজিয়মে, ছবিগুলোর পেছনেও দেখা হয়েছে।
গোল্ডেন বেল্ট পাওয়া গেছে? রিসিভার জোরে কানে চেপে ধরল রবিন।
নাহ! বাবা খুব রেগে গেছে আমার ওপর। অযথা হয়রানি করা হয়েছে বলে। আমার কিন্তু এখনও পুরোমাত্রায় বিশ্বাস রয়েছে কিশোর-স্যানের ওপর। গোল্ডেন বেল্ট পাওয়া যায়নি, বল তাকে।
বলব, রিসিভার নামিয়ে রাখল রবিন।
ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে রেখেছে বোরিস, রবিন এসে তার পাশে উঠে বসতেই গাড়ি ছেড়ে দিল।
ছবির পেছনে গোল্ডেন বেল্ট পাওয়া যায়নি! কিশোরের জন্যে একটা বড় দুঃসংবাদ, ভাবল রবিন। এমন তো সাধারণত করে না কিশোর! তাহলে?
একে রোবার, তার ওপর খুব সকাল, রাস্তায় গাড়ির ভিড় কম। সাংঘাতিক স্পীড দিয়েছে বোরিস, থরথর করে কাঁপছে ট্রাক। পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মাথায় মিস ভারনিয়ার গেটে এসে পৌঁছুল ওরা।
ইঞ্জিন থামার আগেই দরজা খুলে লাফিয়ে ট্রাক থেকে নেমে পড়ল রবিন। ছুটে এসে বেলের বোতাম টিপে ধরল। ধরেই রাখল, কিন্তু কোন সাড়া এল না বাড়ির ভেতর থেকে। পুরোপুরি শঙ্কিত হয়ে উঠল সে। বোরিসকে ডাকল।
ট্রাক থেকে নামছে বোরিস, এই সময় রবিন লক্ষ্য করল মিস ভারনিয়ার বাড়ির গেট পুরোপুরি বন্ধ নয়। ঠেলে পাল্লা আরও ফাঁক করে ঢুকে পড়ল আঙিনায়। তার পেছনেই ঢুকল বোরিস। বারান্দায় এসে উঠল দুজনে।
দরজার পাশে আরেকটা বেলের বোতাম, টিপে ধরল রবিন, কিন্তু এবারও সাড়া দিল না কেউ।
নিশ্চয় পাথর বানিয়ে ফেলেছে দানোরা! নিচু গলায় বলল বোরিস।
দরজায় ঠেলা দিল রবিন। হাঁ হয়ে খুলে গেল পাল্লা। বাইরে থেকে চেঁচিয়ে কিশোর আর মুসার নাম ধরে কয়েকবার ডাকল সে, জবাব এল না। ঘরের দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে এল তার চিৎকার।
পুরো বাড়ি খুঁজে দেখল রবিন আর বোরিস, ভঁড়ারও বাদ দিল না। কিন্তু কাউকেই পাওয়া গেল না। সিঁড়ির মাথার ঘরে কিশোরের ব্যাগ, মুসার পাজামা আর হাতব্যাগ পড়ে রয়েছে।
নিশ্চয় কিছু দেখেছে মুসা আর কিশোর! দ্রুত চিন্তা চলছে রবিনের মাথায়। হয়ত আরও কাছে থেকে দেখতে গিয়ে ধরা পড়েছে! দুজনের পিছে পিছে গিয়েছেন মিস ভারনিয়া, তিনিও ধরা পড়েছেন!
রত্নদানোরাই ধরেছে! মুখ শুকিয়ে গেছে বোরিসের।
বাইরে খুঁজে দেখি, চলুন! গলা কাঁপছে রবিনের। তিনজন জলজ্যান্ত মানুষকে দানোরা পাথর বানিয়ে ফেলেছে, এটা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না সে। তার ধারণা, অন্য কিছু ঘটেছে। আঙিনা থেকে শুরু করব।
কিশোরের ক্যামেরাটা খুঁজে পেল রবিন। ঝোঁপের একটা সরু ডালে বেল্ট পেঁচিয়ে আছে। হ্যাঁচকা টান মেরে ডাল থেকে বেল্ট ছাড়িয়ে দিল সে। এখান দিয়ে গেছে কিশোর! নিশ্চয় কোন কিছুর ফটো তুলেছে!
ক্যামেরা থেকে ছবি বের করল রবিন। দেখার জন্যে ঝুঁকে এল বোরিস।
ছবি দেখে থ হয়ে গেল দুজনেই। জানালায় দাঁড়িয়ে আছে ভয়ঙ্কর চেহারার রত্নদানো!
কি…কি বলেছিলাম! তোতলাতে শুরু করল বোরিস। ওদেরকে ধরে নিয়ে গেছে।