আমিও সঙ্গে আসব? কিশোর জিজ্ঞেস করল। কি করে কাজ সারেন। আপনারা, দেখতে ইচ্ছে করছে।
হ্যাঁ হ্যাঁ, এস। কাজ দেখার পর ভক্তি এসেও যেতে পারে। হয়ত তখন আমাদের দলে যোগ দিতে আর দ্বিধা থাকবে না।
কিশোরের পায়ের বাধন কেটে দেয়া হল। বার্ট আর তিন বামনের পিছু পিছু সুড়ঙ্গে গিয়ে ঢুকল সে। মুসা বসে রইল আগের জায়গায়।
খুব বোকা বানিয়েছি তোমাদের! হাসল বামনটা। জানালায় টোকা দিলাম, যাতে আমার দিকে ফিরে চাও। জানতাম তাড়া করবে, করলেও, থিয়েটার হাউসে তোমাদেরকে নিয়ে আসতে কোন অসুবিধে হল না।
কিন্তু এখানে আনার কোন দরকার ছিল? জিজ্ঞেস করল মুসা।
ছিল। মাটি খোঁড়ার শব্দ শুনে সন্দেহ জাগতই তোমাদের, পুলিশ ডেকে নিয়ে আসতে হয়ত। অহেতুক কেন ঝুঁকি নিতে যাব? তার চেয়ে তোমাদেরকে আটকে ফেলাটাই কি ভাল হয়নি?
কিন্তু তাতেই কি ঝুঁকি চলে গেল? পুলিশ কি পরেও ধরতে পারবে না তোমাদেরকে? বামনদের সহজেই খুঁজে বের করা যাবে। পুলিশকে গিয়ে সব বলব আমরা, তারা তোমাদেরকে খুঁজে বের করবেই।
যদি গিয়ে বলতে পার তবে তো? রহস্যময় হাসি হাসল বেঁটে মানুষটা। আর পুলিশ এলেই বা কি? ওটা হলিউড, ওখানে ছবি বানানো হয়।
তাতে কি?
তাতে অনেক কিছু। সারা দুনিয়ায় যত বামন আছে, তার অর্ধেক রয়েছে ওই হলিউডে। ওখানকার অনেকেই সিনেমা কিংবা টেলিভিশনে অভিনয় করে, ডিজনিল্যাণ্ডে কাজ করে। বেকারও রয়েছে অনেক। আমিও বেকার, বামনদের একটা বোর্ডিং হাউসে থাকি। ওখানে আরও তিরিশ-বত্রিশ জন থাকে। বেকারদেরও পেট আছে, তাদেরও বাঁচতে ইচ্ছে করে, তাই সব সময়ই নানারকম কাজের ধান্ধায় থাকি আমরা। লোকের বাড়ির স্কাইলাইটের ভেতর দিয়ে কিংবা জানালা খুলে ঢুকে যাই ভেতরে, টুকটাক জিনিস নিয়ে কেটে পড়ি। বড় ধরনের কাজও মিলে যায়। মাঝে মাঝে, এখন যা করছি। আকার ছোট হওয়ায় আমাদের অনেক সুবিধে। এমন অনেক কাজ আমরা অনায়াসেই করতে পারি, স্বাভাবিক মানুষ যা পারে না।
স্বাভাবিক মানুষ আমাদের সম্পর্কে যা খুশি ভাবে ভাবুক, কিন্তু আমরা সুখেই। আছি। এক বোর্ডিং হাউসে অনেকে মিলে এক পরিবারের মত থাকি, কেউ কারও বিরুদ্ধে কিছু করি না। বাইরের কেউ আমাদের কারও সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করতে এলে আমরা কেউ কিছু জানি না, কিছু দেখিনি, শুনিনি, কিছু অনুমান করতে পারি না। নকল কানটা আবার জায়গামত বসিয়ে দিল বামনটা। কাজেই আমাদেরকে খুঁজে বের করতে পারবে না পুলিশ। তোমরাও আমাদের আসল চেহারা দেখনি, চিনিয়ে দিতে পারবে না। উঠে দাঁড়াল সে।যাই, দেখি, ওদিকে কদ্দূর হল। সুড়ঙ্গে ঢুকে অদৃশ্য হয়ে গেল বামনটা।
কংক্রিটের দেয়ালের বাইরে একটা গুহায় দাঁড়িয়ে আছে কিশোর। দেয়ালে একটা ফোকর করা হয়েছে, ছোট একটা ছেলে ঢুকতে পারবে ওই পথে। দরদর করে ঘামছে শ্রান্ত জিম আর রিক। রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছছে।
ফোকরটা আরও বড় করা যায়, বার্টের দিকে ফিরে বলল জিম। কিন্তু তাতে সময় লাগবে। তাছাড়া দরকার কি? বামনরা তো ঢুকতে পারবে এর ভেতরে।
হ্যাঁ, তা পারবে, এক বামনকে ইশারা করল বার্ট।
একের পর এক বামন ঢুকে গেল ভল্টে। ওদের টর্চের আলোয় চারকোনা একটা ঘর দেখা গেল। দেয়ালের তাকে থরে থরে সাজানো রয়েছে কাগজের নোট, গহনার বাক্স। মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে মুদ্রার বস্তা।
দশ লাখ ডলারের বেশি! নোটগুলোর দিকে চেয়ে আছে বার্ট, জ্বলছে চোখের তারা। সোমবার অ্যারোপ্লেন কোম্পানির বেতনের দিন। তাই হেড অফিস থেকে এত টাকা তুলে এনে রাখা হয়েছে। কিশোরকে জানাল সে।
গভীর আগ্রহ নিয়ে বামনদের কাজ দেখছে কিশোর। তাক থেকে নোটের তাড়া নামিয়ে ছোট ছোট বস্তায় ভরল ওরা। অলঙ্কারের বাক্সগুলো ভরল আলাদা একটা বস্তায়।
পয়সার বস্তা নিয়ো না, বামনদেরকে বলল জিম। বেশি ভারি।
শুধু দুটো বস্তা নিয়ে এস, হাত নাড়ল বার্ট। দরকার আছে।
নোট আর গহনার বস্তা এপাশে পাচার করে দিল বামনরা। মুদ্রার ভারি বস্তা পার করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হল। ভল্ট থেকে বেরিয়ে এল ওরা।
ঝুড়িতে বস্তাগুলো সব তুলে ধরাধরি করে নিয়ে আসা হল সুড়ঙ্গের বাইরে, কয়লা রাখার ঘরে। একটা বস্তা খুলে নোটের বাণ্ডিল বের করল বার্ট। বামন সর্দারের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, এই নাও, এক লাখ। চারজনে ভাগ করে নিয়ো। সাবধানে খরচ কোরো, নইলে বিপদে পড়বে। যাও এখন। তোমাদের কাজ শেষ। আমরাও এখুনি যাব।
অত তাড়াহুড়ো নেই, বলল রিক। অনেক আগেই কাজ শেষ করে ফেলেছি।
রিকের কথার কোন জবাব না দিয়ে কিশোরের দিকে ঘুরল বার্ট।খোকা, আমাদের কাজ তো দেখলে, কি ঠিক করলে? আমাদের সঙ্গে থাকবে? আমি বলি থাক, কাজ কর, প্রচুর টাকা কামাই করতে পারবে। তোমার যা ব্রেন, খুব বড় গ্যাঙ লীডার হতে পারবে একদিন।
কি জবাব দেবে কিশোর?-ভাবল মুসা। কিশোর কি রাজি হবে?
আরও ভাবতে হবে আমার, বলল গোয়েন্দাপ্রধান। আসলে অর্ধেক কাজ শেষ হয়েছে তোমাদের, কঠিন কাজটাই বাকি রয়ে গেছে এখনও। অপরাধ করা। সহজ, কিন্তু করে পার পাওয়া খুব কঠিন। বেশির ভাগ অপরাধীই সেটা পারে না।
কিশোরের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ল বার্টের, হাসল। সঙ্গীদের দিকে ফিরে বলল, বলেছি না, ছেলেটার বুদ্ধি আছে। কিশোরকে বলল, একটু কষ্ট করতে হবে তোমাদের। রিক-মাথা নেড়ে ইঙ্গিত করল সে।