কি করে রাতের পর রাত দুই সঙ্গীকে নিয়ে সুড়ঙ্গ খুঁড়েছে বার্ট, সব বলল। আলগা মাটি ঝুড়িতে করে বয়ে এনে ফেলেছে কয়লা রাখার ঘরগুলোতে। কয়লার ঘরে কয়লা কিংবা জঞ্জাল ছাড়া আর কিছু থাকতে পারে, ভাবেনি মিস্টার রবার্ট, তাই ওই ঘরগুলোতে ঢোকেনি। ফলে সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়েনি তার।
অ। মিস্টার রবার্ট তাহলে নেই এসবে, বলল কিশোর। আমি ভেবেছিলাম সে-ও জড়িত।
না, সে নেই এতে। একমাত্র সমস্যা হল মিস ভারনিয়াকে নিয়ে। রাতে মাটি কোপানর শব্দ তার কানে যাবেই। পুলিশকে গিয়ে বলে দিতে পারে। তাই কয়েকটা। রত্নদানো আমদানি করতে হল। পুলিশকে বলল মিস ভারনিয়া, রাতে রানোরা মাটি কোপায়। তার কথা হেসেই উড়িয়ে দিল পুলিশ। আর বেশি চাপাচাপি করলে হয়ত মানসিক হাসপাতালেই পাঠাত, হা হা করে হাসল বার্ট। ভাবলাম, এরপর ভয়ে বাড়ি ছেড়ে দেবে মিস ভারনিয়া। ভয় পেল ঠিকই, কিন্তু বাড়ি ছাড়ল না। তোমাদের সাহায্য চেয়ে বসল। আমার সবকিছু প্রায় ভেস্তে দিয়েছিলে তোমরা, অল্পের জন্যে বেঁচে গেছি।
যদি মিস ভারনিয়ার ভাইপো বব বিশ্বাস করে বসত? প্রশ্ন রাখল কিশোর। যদি সে রাতে ফুফুর বাড়িতে থাকত, মাটি কোপানর শব্দ শুনত? দুজনের কথা হেসে উড়িয়ে দিতে পারত না পুলিশ।
মিটিমিটি শয়তানি হাসি হাসল বার্ট। এত কাঁচা কাজ কি আমি করি? ববের সঙ্গে আগেই ভাব করে নিয়েছি।
ভাব বুঝতে পারছে না মুসা।
হ্যাঁ। ওকে বলেছি, মিস্টার রবার্ট মিস ভারনিয়ার বাড়িটা কিনতে চায়, কিন্তু মহিলা বেচতে রাজি নয়। তাই ভয় দেখানর ছোট্ট একটা ব্যবস্থা করেছে মিস্টার। রবার্ট। বব যেন তার ফুফুকে সাহায্য না করে, এমন ভাব দেখায়, যেন ফুফুর মাথায় গোলমাল দেখা দিয়েছে। বুবু তো এক পায়ে খাড়া। ফুফু বাড়ি বেচলে তার লাভ। পটিয়ে মোটা টাকা নিয়ে নিতে পারবে ফুফুর মৃত্যুর আগেই। হাসল বার্ট।
ইয়াল্লা, কিশোর। প্রায় চেঁচিয়ে উঠল মুসা। বব সত্যিই তাহলে আছে এর। মাঝে!
আগেই সন্দেহ করেছ নাকি তোমরা? ভুরু কোঁচকাল বার্ট। চালু ছেলে। আবার বলছি, আমার দুলে চলে এস। পুলিশের মুণ্ডু ঘুরিয়ে দিতে পারব আমরা। তাহলে।
কিন্তু… চিন্তিত দেখাচ্ছে কিশোরকে। ভয় পেয়ে গেল মুসা, সুপার ক্রিমিন্যাল হওয়ার লোভ না আবার পেয়ে বসে গোয়েন্দাপ্রধানকে। তার ভয়কে সত্য প্রমাণ। করার জন্যেই যেন কিশোর বলল, ঠিক আছে, আরও ভেবে দেখতে হবে আমাকে। সামান্য সময় দরকার।
আরে নিশ্চয়, নিশ্চয় সময় দেয়া হবে, হেসে বলল বার্ট। যাই দেখি, জিম আর রিক কতদূর কি করল।
যাওয়ার জন্যে ঘুরে দাঁড়াল বার্ট, ডেকে তাকে ফেরাল মুসা। একটা কথা। ওই রত্নদানো আমদানি করা হল কোত্থেকে? মানুষের কথা শুনতে রাজি হল কি করে। ওরা?
শব্দ করে হাসল বার্ট। সেটা ওদেরকেই জিজ্ঞেস কর। হাত তুলে ডেকে। বলল, এই, বিচ্ছুরা, এদিকে এস। তোমাদের সঙ্গে আলাপ করতে চায় এরা, বলে আর দাঁড়াল না।
উঠে দাঁড়াল একটা দানো। লাল জ্বলজ্বলে চোখ, ময়লা দাড়ি। অদ্ভুত ভঙ্গিতে হেলেদুলে হেঁটে এসে দাঁড়াল সে ছেলেদের সামনে। কি হে, ইবলিসেরা, কি বলবে? এহ, মেলা জালান জ্বালিয়েছ। হাতটা প্রায় ভেঙেই দিয়েছিলে আমার। কিন্তু মাপ করে দিয়েছি, জানি তো কপালে অনেক দুঃখ আছে তোমাদের। লম্বা। সাগরপাড়ি দিতে হবে।
ভাল ইংরেজি বলে দানোটা। স্লান আলোয় যতখানি সম্ভব ভাল করে ওটাকে দেখল মুসা। লাল চোখ, চোখা রোমশ কান, কুচকুচে কালো রোমশ বড় বড় হাত, পৃথিবীর ওপরে থাকলে এই জীব মানুষের অগোচরে থাকতে পারত না কিছুতেই। মাটির তলায় লুকিয়ে থাকে বলেই লোকের চোখে পড়ে না।
তুমি কি সত্যিই রত্নদানো? জিজ্ঞেস করল মুসা।
হাসল দানোটা। খুব জানতে ইচ্ছে করছে, না? টান দিয়ে রোমশ একটা কান খুলে আনল সে। অবাক হয়ে দেখল মুসা, কানটা নকল, আসল কানের ওপর। বসানো ছিল।
এরপর টান মেরে রোমশ বিশাল একটা হাত খুলে আনল দানো। বেরিয়ে পড়ল ছোট একটা হাত, বাচ্চাছেলের হাতের চেয়েও ছোট। আসল পাটির ওপর থেকে খুলে আনল নকল দাঁত। তারপর চোখে হাত দিল। সাবধানে এক চোখের ওপর থেকে সরাল পাতলা একটা জিনিস। হেসে বলল, দেখলে তো, খোকা, লাল। চোখও নেই, চোখা দাঁতও নেই। লোকটার একটা চোখের মণি এখন স্বাভাবিক নীল। চোখের ওপর থেকে সরানো জিনিসটা দেখিয়ে বলল, টিনটেড কনট্যাক্ট লেন্স। নাকে আঙুল ছোঁয়াল। নকল নাক। দাড়িতে হাত দিল, নকল দাড়ি। রত্নদানোর ছবি দেখে তৈরি করা হয়েছে প্রতিটা জিনিস। আসলে আমি একজন। বামন, খোকা।
অনুমান করেছি, বলল কিশোর! তবে দেরিতে।
হ্যাঁ, বড্ড দেরি করে ফেলেছ। আজ আমাদের কাজ শেষ হয়ে যাবে। আগামীকাল রোববার, সোমবারের আগে কেউ কিছু জানতে পারবে না।
মিস ভারনিয়া আমাদেরকে না দেখলে পুলিশে খবর দেবেন, গলায় জোর পাচ্ছে না কিশোর।
দেবে না, মাথা নাড়ল বামন। এতক্ষণে তার ভাইপোর বাড়িতে পৌঁছে গেছে। কাঁচা কাজ করি না আমরা, খোকা। আগামী চব্বিশ ঘণ্টার আগে কেউ জানতেই পারবে না ব্যাংকটা লুট হয়েছে।
কপালে চিকন ঘাম দেখা দিয়েছে মুসার। কিছু একটা বলতে মুখ খুলল, কিন্তু বলা হল না, ঘরে এসে ঢুকল বার্ট। ভল্টে ঢোকার পথ হয়ে গেছে। বামনদের সর্দারকে বলল, তুমি এখানে থাক। অন্য তিন বামনকে দেখিয়ে বলল, ওদেরকে নিয়ে ভল্টে যাচ্ছি আমি, কাজ আছে।